সায়েন্সের নাকি অদ্ভুত সৌন্দর্য আছে। আমার এক সহপাঠী বিজ্ঞানের নিত্য নিত্য সৌন্দর্য আবিষ্কার করে গদগদ্ হয়ে আমাকে বলে। আমি মুখ ব্যাদান করে শুনি আর নিজের এক্সপেরিমেন্ট কে একশ’ বার গাল দেই। কেন ঈস্ট ভদ্রলোকগুলি হঠাৎ করেই কাজ করা বন্ধ করে দেয়, কেন যে তুচ্ছ থেকে তুচ্ছতম পরীক্ষাগুলিও সমাধা করতে গলদঘর্ম হতে হয়, কে দেবে তার জবাব! ক্যালেন্ডারের পাতায় তাকিয়ে হা পিত্যেস করি, কে তুলে দিল দিনগুলিকে রেসের ঘোড়ায়? কেন পাঁচটা কাঁচের বোতল আর ছ’টা পেট্রিডিশ এলোমেলো করে দিল আমার দিনরাত্রির সব হিসাব?
পিএইচডির অন্য স্টুডেন্টদের এসব বললে তারা মুখ টিপে হাসে। সবাই নাকি অমন হতাশার মধ্য দিয়ে যায়। অন্যদের তখন জিজ্ঞাসা করি, তখন কী কর তোমরা? বলে, ‘কী আর করব? বাসায় ফোন করে ঘ্যানঘ্যান করি, বলি সব ছেড়েছুড়ে যাব গিয়ে।’ কেউ বলে, সব বাদ দিয়ে ঘুরে আসি বা ইচ্ছেমত গিলি। তারপর আবার সুস্থ হলে ফিরে আসি। আমি ত এগুলো কাজে লাগাতে পারিনা। আমি কেবলই হন্যে হয়ে খুঁজে ফিরি প্যাশন, পারস্পেক্টিভ, মিশন, গোল… বার বার জিজ্ঞাসা করি, কেন করছি? কী হবে করে? এছাড়া আর কিছু কি পাওয়া গেল না করার?
আমার এক দার্শনিক বন্ধু, যার জীবনের লক্ষ্যই হচ্ছে বিজ্ঞানের মাঝে দর্শন খুঁজে বেড়ানো – সে একদিন বলল, গুরুর কাছে দীক্ষা নিতে গেলে প্রথমে তাকে অনেকগুলো অর্থহীন আচার পালনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। জীবনের সৌন্দর্য এখানেই, আপাত অর্থহীন কাজের মধ্যেও সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া। তুমি গবেষণার মাঝে এখন আর মানবকল্যাণ খুঁজে পাওনা, তুমি পুরো প্রক্রিয়াটার মাঝে সুন্দর খুঁজতে থাক! মানুষ ফিলোসফি দিয়ে বিজ্ঞানকে উন্নত করে, তুমি না হয় বিজ্ঞানের মাঝে ফিলোসফি খুঁজলে!
অর্ধেক বুঝলাম, অর্ধেক বুঝলাম না। কষে কতক্ষণ কটুকাটব্য করলাম।
এর মাঝে জীবনে প্রথমবার ভীনদেশে একটা কনফারেন্সে যাওয়ার সুযোগ হল। ভিসা জোগাড় থেকে শুরু করে স্বামীর ক্যান্ডিডেসি পরীক্ষা সহ পোস্টার বানানোর বিভিন্ন হ্যাপা সামলে শেষ পর্যন্ত যখন প্লেনে চড়লাম, পাশে বসা কলিগ কাম স্বামীকে বললাম, আল্লাহ যে আমাদের কী পরিমাণ স্ট্রেস সহ্য করার ক্ষমতা দিয়েছেন তা আজকে বুঝলাম। আর কোনদিন কাজের চাপ নিয়ে অনুযোগ করব না। এই কনফারেন্সের জন্য পোস্টার বানাতে গিয়ে যখন একটার পর একটা পেপার ঘাঁটছি পাগলের মত, হঠাৎ করেই দেখলাম, আগে সায়েন্টিফিক পেপারের প্রতি যেমন একটা পূজনীয় শ্রদ্ধা ছিল, এখন আর তা নেই। এখন কেবল আমার দরকারি তথ্যটা কেটে ছেঁটে নিয়ে বাকিটা সম্পর্কে নিরপেক্ষ একটা মনোভাব দেখিয়ে রেখে দেই। তখনই মনে হল, মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কটাও ত ঠিক এমনটাই হওয়ার কথা। এক্সপ্লোর করব, এক্সপ্লোর করব… যেটুকু কাজে লাগে নিব… তারপর বাকিটা নিয়ে ভাল না খারাপ ওসব বাছবিচারেই যাব না। (হ্যা, সৎ কাজের উপদেশ, অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা এসব আছে… কিন্তু সে অন্য প্রসঙ্গ)
এত বড় আর নামী দামী কনফারেন্সে আগে যাইনি, তাই একটু ভয়ে ভয়ে ছিলাম। পোশাক আশাক না জানি কেমন পরতে হয়.. দেখলাম খুব ক্যাজুয়াল কাপড়েও বড় বড় বিজ্ঞানীরা টক দিচ্ছে। কী পরল এটা কোন ব্যাপারই না। ভাল লাগল দেখে। হ্যা, রুচিশীলতার ছাপ আছে মোটামুটি সবার পোশাকে, কিন্তু মেকি ভাবটা নেই।
প্রতিটা টক শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে অন্যান্য বিজ্ঞানী, বা ছাত্রছাত্রীরা প্রশ্ন করে। হয়ত কিছু অংশ বুঝতে পারেনি, এভাবে অনুরোধ করে, ‘তুমি বোধহয় আগেই বলেছ, আমি মিস করে গেছি… তুমি কি এই অংশটা আবার একটু বলবে?’ কেউ বলে না যে, ‘তোমার কথার মাথামুন্ডু বোঝা যাচ্ছেনা’ – যেমনটি আমরা নন-একাডেমিক আলোচনায় বলি। আবার কিছু প্রশ্ন হয় এমন, ‘তুমি ত বললে এই এই কারণে এটা এটা হয়। অন্য কোন কারণ কি থাকতে পারে? এই যেমন…’ তখন আবার সবাই মিলে মাথা ঘামায়। উত্তরদাতা হয় বলে, হ্যা, তোমার কথায় যুক্তি আছে, আমাদের এটা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে হবে। অথবা বলে, ‘ভাল প্রশ্ন, আসলে আমরা ইতিমধ্যে পরীক্ষা করেছি, পরীক্ষায় দেখেছি যে এটা আসলে হয় না।’ পুরো ব্যাপারটার মধ্যে এত বিনয়, অন্যের জ্ঞানের প্রতি এত শ্রদ্ধা, নিজের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার প্রতি এত সচেতন… এত যে ভাল লেগেছে, কেবলই মনে হয়েছে, আহা! আমরা ইসলাম বোঝার বেলায় কবে এমন করে কথা বলতে পারব?
ভালর সাথে খারাপও যে নেই তা কিন্তু নয়। বেশির ভাগ বিজ্ঞানীই নিজের করা এক্সপেরিমেন্টের রেজাল্টকে অন্যের রেজাল্টের চেয়ে বেশি গুরূত্ব দেয়। বয়স একটু বেশি হলে সে বোধটা গোয়ার্তুমির পর্যায়ে চলে যায়। আরেক বিজ্ঞানীর বহুকাল আগে দাঁড় করানো এক্সপেরিমেন্ট তার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট, অন্য এক বিজ্ঞানী নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছে। এখন আর উনি সেই নতুন বিজ্ঞানীর কোন ডাটা, কোন পেপার বিশ্বাস করতে চান না।
সে যাই হোক। কনফারেন্সের লাঞ্চ, ডিনার এ কে কোথায় বসছে কোন বিধি নিষেধ নেই। ইয়াব্বড় আইনস্টাইন মার্কা স্বপ্নের বিজ্ঞানীর সাথে কথা বলতে চাইলে টুক করে প্লেটটা নিয়ে পাশে বসে পড়লেই হল। এর পরে আর মনে হবে না যে সে কেউকেটা একজন। একদম কলিগের মত স্বাভাবিকভাবে কথা বলবে। পোস্টার সেশনেও তাই। আমার কাজ প্রেজেন্ট করা মানে আমি সবচেয়ে ভাল জানি। এ বিষয়ে কারো কোন মতবিরোধ নেই। তুমি যত বাঘা বিজ্ঞানীই হওয়া কেন, আমার পোস্টারের সামনে তুমি ছাত্র, আমি শিক্ষক। কেউ বক্তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে না, বলবে না, আমার ল্যাব থেকে বছরে পাঁচটা পিএইচডি বের হয়, তুই কোথাকার চুনোপুঁটি রে! বড়জোর বলবে, আরো বেশি মেটারিয়াল থাকলে জিনিসটা আরো ভাল হত। আইডিয়া শেয়ার করবে.. ভবিষ্যতে কী কী করার প্ল্যান শুনে নিজেদের কোন আইডিয়া থাকলে বলবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই ত গেল বিজ্ঞানীদের সামাজিক আচার আচরণ। নিজেদের ল্যাবে আবার একেকজন একেক রকমের। গ্র্যাড স্টুডেন্টরা এক হলে সবচেয়ে বেশি কথা বলে নিজেদের রিসার্চ নিয়ে, আর একটু আপন হলে সুপারভাইজর নিয়ে। এই অসাধারণ সব গবেষণার পুরোধাদের মধ্যে অনেকেই হয়ত বস হিসেবে জঘন্য, আবার হয়ত যে ভাল বস্, তার কাজ হয়ত এমন কিছু না। আবার কেউ হয়ত ভাল গবেষক, ভাল সুপারভাইজর, কিন্তু পারিবারিক জীবনে দুঃখজনক রকমের এলোমেলো। এসব দেখি আর ভাবি, সম্মান জিনিসটা আস্ত মানুষটার প্রতি না দেখিয়ে খন্ড খন্ড আচরণের প্রতি দেখালে ভাল। আমি তোমাকে তোমার কাজের জন্য শ্রদ্ধা করি, কিন্তু উন্নাসিকতার জন্য অপছন্দ করি। তোমার ছোট মন দেখলে আমার গা জ্বলে যায়, তাই বলে তোমার রিসার্চ এর ডাটা গ্রহণ করতে আমার কোন আপত্তি নেই।
তেমনি করে, অনেক বড় বিজ্ঞানীও যখন একটা ডাটা দেখিয়ে বড়সর উপসংহার টানতে চায়, সবাই তির্যক চোখে তাকায়। তুমি বাপু যত বড় বিজ্ঞানীই হওনা কেন, কথায় যুক্তি না থাকলে আমি তোমাকে ধুই না। এ থেকে বি হয়, বি থেকে সিতে না গিয়ে সোজা ডি তে চলে গেলে – এটা কি মগের মুল্লুক নাকি? আমি দেখি আর ভাবি, হায়! ইসলামিক স্কলারদের (বিশেষ করে নর্থ আমেরিকান চোস্ত ইংরেজি বলা স্কলারদের) প্রতি এই দৃষ্টিভঙ্গিটা আমাদের থাকলে কতই না ভাল হত! মানি, উনারা যা বলেন, সবই অনেক বেশি তথ্যনির্ভর। কিন্তু উনাদেরও ত কখনও সখনও বোঝায় ভুল হতে পারে! আমাদের চেয়ে অনেক কম ভুল হবে উনাদের, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু টেক্সট এর পাশাপাশি তাদের নিজস্ব ইন্টারপ্রিটেশন ও যখন মানুষ চোখ বন্ধ করে নিতে চায়, তখন মন মানে না।
যে কোন বক্তব্য শোনার পর নিজের বোধ বুদ্ধি, পরিস্থিতি অনুসারে যাচাই বাছাই করা, একই সাথে, আমি যেটা বুঝি, সেটাই সবসময় ঠিক নাও হতে পারে, অন্যরাও ঠিক হতে পারে – এই উদারতাটা থাকা – এই যে পারস্পরিক সম্মান ও আত্মসমালোচনার একটা সুন্দর পরিবেশ – সেটাই শিখে আসলাম ‘ribosome synthesis’ নামক খটোমটো কনফারেন্স থেকে। এখন একটু আধটু বুঝতে পারছি, সায়েন্স এ দর্শন এর প্র্যাক্টিসগুলি বহুকাল ধরে হচ্ছে, তাই জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও কিছু দরকার পড়লে সায়েন্স থেকে ধার করে নেয়া যেতে পারে। এ ব্যাপারটা আমার অনেক আগে আমার সেই বন্ধু ধরতে পেরেছিল বলেই বিজ্ঞানের প্রতি তার এত মোহ।
আপু, একেবারে নিরস বিজ্ঞানের একটা কনফারেন্সকে অসাধারণ বর্ণনায় তুলে আনলেন। তার মাঝে ছিঁটিয়ে দিলেন একমুঠো দর্শন আর এক চিমটি রস। হয়ে গেল, পোস্টারিংএর শরবৎ 🙂
জ্ঞানীদের প্রতি বিনয়টাকে অনেক বড় বলে মনে হলো আমার। এটাই প্রথম। আর কিছুই নয়। ব্যক্তিজীবনে কে কি করে খায়, কি ভাবে ব্যবহার করে এসব বাদ দিয়ে, কেবল, যে লোক যে বিষয়ে জানে, তাকে সে বিষয়ে গুরুত্ব ও সম্মান দিতে পারতে হবে।
পুরাই মুখ ব্যাদান করে দিলেন। 😛
কী মন্তব্য করলে হে! মধু মধু!
“সম্মান জিনিসটা আস্ত মানুষটার প্রতি না দেখিয়ে খন্ড খন্ড আচরণের প্রতি দেখালে ভাল। আমি তোমাকে তোমার কাজের জন্য শ্রদ্ধা করি, কিন্তু উন্নাসিকতার জন্য অপছন্দ করি। তোমার ছোট মন দেখলে আমার গা জ্বলে যায়, তাই বলে তোমার রিসার্চ এর ডাটা গ্রহণ করতে আমার কোন আপত্তি নেই।”-খুব চমতকার দৃষ্টিভঙ্গি ।
জ্ঞানের সমাদর করা বা জ্ঞানীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনও অনেক উন্নত মানসিকতার পরিচয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা এই কাজটা না করে সামগ্রিকভাবে একজনকে বিচার করতে লেগে পড়ি।
কনফারেন্সের অভিজ্ঞতা এবং চিন্তা-ভাবনা শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। :love:
আপনার মত এত সুন্দর করে যদি চিন্তা করতে পারতাম… … …! 🙁
(পুনঃ ভাইয়া কি ফিরে এসেছেন?? 😛 )
উঁহু! আসুক ধীরে সুস্থে, আমিও একা বিদেশ বিভুঁইয়ে থাকার অভিজ্ঞতা অর্জন করি।
সরব এর মেম্বারদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও আশা অনেক। যে যাই লেখে স্বর্ণখনি হয়ে বের হয়। আমার অনুরোধ থাকবে এই বিষয়গুলি নিয়ে সবাই যেন নিজের নিজের মত করে লেখে। এই দিক থেকে এই লেখাটা আমার জন্য মনে হয়েছে ভাল উদাহরণ – http://idream4life.blogspot.com/2012/09/blog-post_1319.html
এই কি তবে ‘ফিলোসফি অফ সায়েন্স’? 😀
আপুর লেখা নিয়ে নতুন করে আর বলবো না। এত ভাল হয়েছে লেখাটা, কিন্তু ভিউ দেখে হতাশ হলাম। শিরোনাম দেখে পোস্টে ঢোকে নি কিনা কেউ ভাবছি। 🙁
“পুরো ব্যাপারটার মধ্যে এত বিনয়, অন্যের জ্ঞানের প্রতি এত শ্রদ্ধা, নিজের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার প্রতি এত সচেতন… এত যে ভাল লেগেছে, কেবলই মনে হয়েছে, আহা!” – অসাধারণ একটা গুণ এটা। আর ঠিক জানি না কেন, ইদানিং বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে আসা মানুষদের (কিছু, সবাই হয় তো না) মধ্যে এরকম বিনয় একটু বেশি খেয়াল করছি। হয়তো আপনার মত এই উপলব্ধিটা অনেকেরই হয়।
ভিউ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সত্য হাসে..
সত্যটা হচ্ছে, এই শিরোনাম দেখে অনেকে ঝাঁপিয়ে পরে পড়তে আসবে, অনেকে দূর দিয়ে রাস্তা মাপবে। আমি বুঝতে পারছি, আমার লেখাগুলি সর্বসাধারণে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে ধীরে ধীরে। অসুবিধা নেই। লেখকেরও বিবর্তন হওয়া দরকার। তা না হলে নতুন লেখক তৈরি হয়না। আমার চিন্তাভাবনা এখন সব ‘লাইটবেয়ারার্স’ এ আটকে গেছে, যেটা কিনা সেকেন্ডারি লেভেলের জনসংযোগ। সরব থেকেই দেখবা আস্তে আস্তে বেশ কয়েকজন সেকেন্ডারি লেভেলে চলে যাবে, ফিনিক্স ত যাবেই, কোন মিস্ নাই, তোমার ব্যাপারটা এখনো বুঝতেসিনা। এরকম বেশ কিছু লোকজন তৈরি হয়ে গেলে সমাজের চেহারা পাল্টাতে বেশিদিন লাগেনা।
সরবের প্ল্যাটফর্ম এত ক্লীন, এখানে লেখা পোস্ট করতে খুব ভাল লাগে। এস বি ব্লগ এও গোবরে পদ্মফুলের মত একটা পাঠক সার্কেল আছে। অ্যাক্টিভ না, কিন্তু রিসেপ্টিভ।
আপু, সরব একটি পরিবারের মতো। সমস্যা হলো এই পরিবারের সবাই কোন না কোন ভাবে ব্যক্তিগত জীবনে ব্যস্ত থাকেন। 🙁
আপু, সাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টা হয়তো আপনার ভুল ধারনা। কারণ, আগে পরের সব লেখারই পাবলিক ভিউ অনেক কম। এটা আমাদের মতো নালায়েক পাঠকদের দোষ। 🙁
আমাদের আসলে লেখা শেষার করার অভ্যাস কম। তারপরও, মৌলিক বিজ্ঞান (যা নিয়ে আমি মাঝে মধ্যে লেখার চেষ্টা করি), দর্শন এসব বিষয় নিয়ে খুব কম মানুষই সাড়া দিয়ে থাকেন। আপনি এ ব্যাপারে একমত হবেন। আশা করি, আপনি হাল ছাড়বেন না। লিখে যান। সাড়া একদিন পাবেনই।
গোবরে পদ্মফুলের কথা বললেন না আপু? আমার মতামত, গোবর গোবরই। এর থেকে ভাল কিছু আশা করি উচিৎ নয়। বরং ক্ষতিকর। ঐ ব্লগ গুলো যারা লিড করে তারা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে না। অনেকে হয়তো বলবেন, লিডে কি আসে যায়। আমি বলবো, সবকিছুই।( আমি আমার ব্যক্তিগত মতমত দিলাম,আশা করি কেউ ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না)।
গোবর গোবরই :)) ভাল বলেছ! না, আমার কোন ব্লগ নিয়েই আলাদা আবেগ নাই, সরব নিয়ে আশা আছে, এই আর কি।
এইখানে এত কমেন্ট কবে আসলো, দেখলামই না!
জ্ঞানচোর বললেন না, আগে-পরের পোস্টগুলোতেও ভিউ কম? অল্প সময়ের ব্যবধানে বেশি লেখা পাবলিশ হলে এরকম হয়। মন্তব্য করার সময় খেয়াল ছিল না আমার।
নূসরাত আপুর লেখা ভালবাসে না এমন মানুষ খুব বেশি নাই। 😀
এর মাঝে আমি ঢুকে গেলাম কীভাবে?! 😯
আমি আপ্লুত, ধন্য এবং দোয়াপ্রার্থী আপু।
জীবনের কোন লেভেলে কতটুকু যাব জানি না। তবে আমার ইচ্ছেটা হল জলের মত পথচলায়। যত বাধাই আসুক না কেন, পথ করে নিয়ে চলতে হবে আমাকে। 🙂
ভাইরে, যত বাধাই বললা… এই বাধাটাই যখন আসবে নিজের স্বামীর থেকে (আল্লাহ না করুক), সবচাইতে শ্রদ্ধার শিক্ষকের থেকে.. তখন সব টলোমলো হয়ে যাবে। তুমি সেদিন আমাকে কয়েকজনের আচরণ দেখে প্রশ্ন করলা না, তোমার জীবনের লক্ষ্য ঠিক আছে কি না? একটা সময় আসবে, যখন সবাই বলবে, না ঠিক নাই। কাউকে পাবা না। তখন দেখো, জলে ভাসা পদ্মটা যেন থই হারিয়ে না ফেলে।
বিজ্ঞানকে যে দর্শনের সাথে মিলিয়ে চিন্তা করা যায় এই ব্যাপারটা মারাত্মক লাগে। আর আসলেই আমাদের সমস্যাটা এখানেই, সব জায়গায় “তালগাছ আমার” মনোভাব। কনফারেন্সের খুঁটিনাটি তুলে ধরার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আর বরাবরের মতই আপুর সাবলীল লেখা পড়ার সুন্দর একটা অনুভূতি। 🙂
খুব চমৎকার একটা লেখা। প্রিয় স্বর করে নিলাম 😀
😀
একটা জিনিস জানেন আপু?
যে কোন সম্পর্কে, হোক সেটা কোন বিষয়ের প্রতি অথবা মানুষের প্রতি, শ্রদ্ধা, বিনয়, ইতিবাচক চিন্তাগুলো দারুণ কাজে দেয় সম্পর্কের বাঁধন মজবুত করতে।
বিদেশে শ্রদ্ধা আর বিনয় জিনিসটা আছে কিন্তু বিজ্ঞানীদের ভেতর মারামারি ভাবটাও কিন্তু আছে!
ছোট্ট একটা বায়োইনফরমেটিক্স টুল ব্যবহার করে পেপার সাবমিট করলেও দেখা যাবে একেক জায়গায় একেক টুলের একেক অ্যালগোরিদমের গ্রহণযোগ্যতা বেশি!
মানুষের জীবনেও ঠিক তাই, না?
প্রিয় মানুষগুলোর গ্রহণযোগ্যতা কাছের আর দশটা মানুষ থেকে সবসময়ই একটু ভিন্ন।
সবাই চায় নিজে জয়ী হতে, প্রিয় মানুষটাকে বিজয়ীর কাতারে দেখতে।
আর অন্য মানুষগুলো জীবনের খাতা থেকে কেমন করে যেন আলাদা হয়ে যায়, স্থূল চিন্তার খাতায় স্থান করে নেয়!
আপনার বিজ্ঞানীদের সম্পর্কে দার্শনিক চিন্তাভাবনাকে সাধারণভাবে প্রয়োগ করে ফেললাম আপু! আসলে লেখাটা পড়তে পড়তে চোখের সামনে অনেকগুলো গল্প হেঁটে গেল!
নিত্যদিনের গল্প, সাধারণের গল্প।
বিজ্ঞানের সাথে কেমন অদ্ভুত মিল সবগুলোর!
আপনার লেখা পড়ে পুরো দার্শনিক হয়ে গেলাম আপু! 😛
লিখে ফেল, লিখে ফেল!
মানুষের অন্তরঙ্গতার যে কথা বললা, ঠিক ই।
ইশ আপু, ধুমধাম লিখে ফেলার মত গুণ থাকলে কত ভালোই না হত।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমার এই গুণটা নেই।
যে কোন বিষয়ে একটা লেখা লিখতে আমার অনেক সময় লাগে। তারপর আবার কাটাকুটি, নতুন করে সাজানো এসব তো আছেই। 🙁
আপু, খুব খুব ভালো লেগেছে লিখাটা, অনেক কিছু নতুন করে ভাবতে শিখলাম…
কিন্তু এই কথাটা বুঝলাম না- 🙁
“মানুষ ফিলোসফি দিয়ে বিজ্ঞানকে উন্নত করে, তুমি না হয় বিজ্ঞানের মাঝে ফিলোসফি খুঁজলে!”
এই কথাটারই ব্যাখ্যা করতে চেয়েছি পুরো লেখাটায়। এই যেমন, বিজ্ঞানে ইন্টেলেকচুয়াল হিউমিলিটির ব্যাপারটা মেনে চলা হয় খুব ভালভাবে, তর্কাতর্কি স্ট্রিক্ট লজিক ধরে হয়, তারপর নলেজ/ইনফরমেশন কে কতটুকু পাত্তা দেয়া উচিৎ সেটাও সায়েন্স থেকে ভাল বোঝা যায়, এই আর কী!