আমি মনে হয় দুনিয়াতে সব থেকে ভয় পেতাম আব্বুকে তারপর আমার টিচার দের। না পারতে আমি টিচারদের সামনে পরতাম। দূর থেকে যদি কোনো স্যার বা ম্যাডামকে দেখতাম হয় উলটো দিকে ফিরে আসতাম না হয় রাস্তা পালটে নিতাম। আমি কিন্তু এই সব পাগলামি ভয় পেতাম বলেই করতাম। এখন ভাবি যদি উনারা জানতেন হয়ত খুব অবাক হতেন, কারন আমি ছিলাম সব থেকে চুপচাপ শান্ত মেয়ে, যদিও পড়াশোনা নিয়ে সবাইকেই খুব হতাশ করেছি। কিন্তু আমি ভয় কাটাতে পারিনি কখনো। এই যে এত গুলো বছর ধরে আমি ছাত্রী ছিলাম কতজন টিচারের। সবাইকেই ভয় পেতাম কিন্তু তার সাথে মিশে থাকত শ্রদ্ধা।
আমার দাদা কর্মজীবনে শিক্ষক ছিলেন। আমার প্রথম শিক্ষকও ছিলেন দাদা। সেই ছোট্ট বেলায় যে বই গুলো পড়তাম দাদার কাছে এখনো আমার কাছে ২টা বইয়ের কিছু পাতা আছে । ১টা বই যেখানে, বাংলা অ,আ,ক,খ ইংরেজি, অংক, আরেকটা বই আরবি হরফের।
আমার প্রথম স্কুলের টিচারদের মাঝে কিছু নাম সব সময় মনে পরে – নিলু আপা, কাওসার আপা, হুজুর স্যার। উনাদের হাতেই আসলে আমি গড়ে উঠেছি। এরপর সেলিনা আপা, লিপিকা ম্যাডাম, নিনা ম্যাডাম। লিখতে বসে একেবারেই হারিয়ে গিয়েছিলাম।
আমি কখনো কল্পনাও করিনি নিজেকে একজন টিচার হিসেবে কারন সেই ভয়। এটা আমার ইচ্ছেতেও ছিল না। সব সময় কাউকে পড়ানো কে খুবই ভয় পেতাম। আর আজ আমার সব কল্পনাকে ছাড়িয়ে শেষ মেস সেই টিচারই হলাম।
কিন্তু খুব উপভোগ করছি স্কুলের বাচ্চাদের মাঝে। সত্যি বলতে সারাটা দিন পিচ্চিদের বিচার শুনে আর করে আর পড়ানোর ভয়ঙ্কর দিন কাটলেও দিন শেষে মনে হয় দারুন দিন কেটে গেল! প্রতিটা দিনই নতুন দিন, নতুন কাহিনী 🙂 । স্কুলে কত রকম ভাল, মন্দ আর মজার সব অভিজ্ঞতা হয়!
এই যেমন –
এস এস সি রেজাল্টের পর মেয়েরা দল বেধে দেখা করতে আসল আর দোয়া চাইতে আসল। আমি তখন জয়েন করেছি মাত্র ১ মাস। কয়েকটা মেয়ে সব আপাদের সালাম করছে, সে এ+ পেয়েছে তাই। এক মেয়ে হুট করে এসে টুপ করে আমাকে সালাম করে বসল! আমি পুরাই টাসকি! খুবই অবাক আর লজ্জা পেয়েছি আমি সেদিন। কারন আমি নিজে কখনো এই বাচ্চা গুলোর মত এ+ পাইনি কোন পরীক্ষায়।
আমি ক্লাস নেই প্রথম শ্রেণিতে। প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা হলো আমার গলা ভেঙ্গে আওয়াজ চলে যাওয়া! পিচ্চিদের শান্ত করতে কিংবা তাদের কিছু কথা বলতে সেই পিচ্চিদের উচু গলাকে ছাড়িয়ে কথা বলতে হয়েছে, যার ফলাফল গলায় ব্যাঙ! 🙁
মেয়েদের ক্লাস যাও থামানো যায় কিন্তু ছেলেদের ক্লাস! উরে বাবা! টিচারদের এত টুকুও ভয় পায় না। উলটো আরো গল্প করে!!!
“মিস, আজকে আমি ১০ এ ১০ পেয়েছি!”
“মিস, কালকে আমি গেম বয় কিনেছি!”
“কালকে আমি ঐ খানে বেড়াতে গিয়েছিলাম!”
“মিস জানেন আজকে কি হয়েছে!”
“মিস, আজকে আমাকে Good দিতে হবে”
“আরও আছে শতেক বিচার!”
“মিস ও আমাকে ঘুসি দিয়েছে” তার উত্তরে ঘুষি দেয়া বাচ্চা বলবে, “মিস ও আমাকে লাত্থি মারছে! ” আমি আর কি বিচার করব! নিজেরাই বিচার করে বসে থাকে!
আরো দেখা যায় এই বাচ্চাদের শতেক রকমের বাঁদরামি, আর দুষ্টুমি! আমি সারাজীবন চিন্তা করলেও মনে হয় এসব করতে পারতাম না!
গত শুক্রুবার শিক্ষক নিবন্ধনের পরীক্ষা ছিল ৪ ঘন্টার। আমার একটা চূড়ান্ত হিসাব মিলাতে এক ঘন্টা লেগেছে। আর সেখানে অনেকে আলোচনা করে ২০ মিনিটে শেষ করেছে! সবাই দেখা দেখি করে লিখেছে। রুমে যে লোকটা ছিলেন কাউকে কিছুই বলেন নি। মাঝে উনি বিরতি নিয়ে একজন মহিলা কে রেখে যায়। তিনি আবার যতক্ষন ছিলেন খুব কড়া ছিলেন মানে কাউকে দেখা দেখি করতে দেন নি। আমার তখন মনে হলো আমিও কিন্তু এমনি করেছি আমার স্কুলের পরীক্ষা হলে। দেখা দেখি করতে দেইনি কাউকে। একবার এক ছেলে বলেই ফেলল মিস “এত কড়া গার্ড দিচ্ছেন কেন!” কিন্তু আমি তখন জানতাম না যে কিভাবে পরীক্ষার হলে গার্ড দিতে হয়।
আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে নতুন নতুন সব বানানের আপডেট পাই এখন। এই যেমন শ্রেণি লেখা হয় ই-কার দিয়ে ! কি আর কী বাদ দিয়ে সব এক কি দিয়ে লিখতে হয়! ধুর! পড়াশোনা বাদ আজকে 🙂
একটা সময় যখন মাত্র ব্লগে লেখা শুরু করেছি সারাটা দিন পরে থাকতাম ব্লগে। এরপর একটার পর একটা মোর এসে আমার সময়কে ভাগ করে নিয়ে গেল আর লেখা লেখির সুযোগ টাও। খুবই ইচ্ছে করে লিখতে কিন্তু লেখালেখিই যেন উধাও হয়ে গেছে আমার মাথা থেকে।
লিখতে পারছি অনেকদিন পর তাতেই খুব খুশি লাগছে 🙂
ম্যাডাম, আপনাকে এক গাদা হিংসা।
শিক্ষকদের ভয় করার ব্যাপারে আপনার চেয়ে আমি এক কাঠি সরেস। এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সামনে সহজ হয়ে কথা বলতে পারি না। হে হে।
আর বাচ্চাদের শান্ত করানো আমার মতে আমেরিকা জয়ের চেয়ে সহজ।
তবে তাদের ছোট ছোট ব্যাখ্যা গুলো, এত সহজ সরল দর্শন, মনে নাড়া দেয়। 🙂
ম্যাডাম, এ্যাকটা অনুরোধ করতে পারি? (হাত তুলে বলছি)
আপনি আপনার ক্লাসের কিছু রিয়েল-লাইফ অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন না!
এর পর থেকে মনে মনে খাতা কলম নিয়ে থাকব 🙂 লেখার মত কিছু হলেই লিখব 🙂 অনেক কিছু হয় তার সব কিছু চাপে ভুলে যাই।
বাচ্চাদের শান্ত করানো এত সহজ নাকি? কিছু অভিজ্ঞতা বলেন শুনে রাখি। যদি আমার উপকারে আসে। 🙂
🙂 বীরবলে একটা কৌতুক আছে। রাজ্য পরিচালনার চেয়ে শিশুর রাগ থামানো কঠিন। মন্তব্যে, ভুল করে, কঠিনের স্থানে সহজ লিখে ফেলেছি।
অভিজ্ঞতা তো তেমন নাই, কেন জানি পিচ্চিরা আমার কাছ থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলে। তবে কিছু চন্ডালের দেখা যে জীবনে প নি, তা বলি না। এক বাচ্চা তো, আমাকে পুরো দোষী করে দিচ্ছিলো যে, আমি তার খেলনা ভেঙ্গে ফেলেছি। অথচ, আমি স্রেফ তার পাশে দাঁড়িয়ে খেলতে দেখছিলাম। হঠাৎ কি একটা করতে গিয়ে ভেঙ্গে ফেলল। তারপর চুপচাপ তার মাকে ডেকে নিয়ে এসে আমাকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। হে হে।
😛 হি হি হি ! মাঝে থেকে আপনি ফেসে গেলেন! 😛
আপু, আপনাকে এতদিন পর দেখে আমারও খুব খুশি লাগছে। :happy:
আমার আপুও টীচার, ওর কাছ থেকেও এরকম অনেক মজার মজার গল্প শুনি। টীচিং জিনিসটা আসলেই অনেক ইন্টারেস্টিং, কষ্ট যাই হোক! 😀
কষ্ট আসলে কিছুই না আপু। আসলে আমি যে ছুটি আর অবসর পাই সেটাই কয়জন পায় অন্য কাজে? আর বাচ্চাদের পড়ানো! একটু কঠিন তো অবশ্যই কিন্তু অসম্ভব না 🙂 নতুন বলে হয়ত কাঁচা আমি কিন্তু এক সময় ঠিক হয়ে যাবে সব। লেখাটার কারন, আমি সত্যি খুব অবাক আমার প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষিকা যাদের আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম তাদেরই অনুসরণ করেছি । ভাবিতেই ভাল লাগছে 🙂
ইশ কী দারুন লাগল আপু আপনার পোস্ট পড়ে!
পিচ্চিদের দুষ্টুমিতে টিচার নাজেহাল!
নাজেহাল টিচারের লেখা যখন তারা বড় হয়ে পড়বে তখন তাদের কেমন লাগবে?
সবকিছু ভাবতেই দারুণ ভালো লাগছে! :happy:
না পড়াই ভাল 😛 ওদের কে এসব জানাতে চাই না। মাঝে মাঝে ভাবি আমি কি আমার টিচারদের খুব জালাতাম কিনা! 😛