ইন্ডিয়া এসেছি, অফিসের কাজে ((লেখাটি ইন্ডিয়া থাকাকালীন লেখা)), টুকটাক কেনাকাটা করব সেটাই স্বাভাবিক। কিন্ত কী কেনাকাটা করব? আপু আর ছোটবোন বলল অমুক প্রিন্ট এর শাড়ি/জামা পাওয়া যায়। [চুনরি প্রিন্ট ছিল কি??!] এসব আমার মাথার উপর দিয়ে! শাড়ি/কাপড় জীবনে কিনি নাই। নিজের জন্য জিন্স টি শার্ট কেনা আর মেয়েদের পোশাক কেনা অবশ্যই আলাদা জিনিস।। আমি কেনাকাটায় ঠকি বলেই আমার ধারণা, মানুষ বলে কতটা জিতল… আর আমি চিন্তা করি কতটা কম ঠকলাম! সে যাক গে বই কিনেও যে ঠকি না তা না- বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না’র বাপ্পিফায়েড ভার্শন হচ্ছে বই কিনে কেউ ঠকে না !
অফিসের সিনিয়র ভাইয়াদের জিজ্ঞেস করছিলাম দিল্লীতে ভালো বই কোথায় পাওয়া যায়। একজন GIP’র ((http://www.thegreatindiaplace.in/)) (একে দিল্লীর বসুন্ধরা শপিং মল বলতে পারেন) ওম বুকস ((http://www.ombooks.com/index.php)) এর নাম বলল। এই বুকস্টোরটা দারুণ। অনেক বই- কিন্ত বেশি দাম। একদম গলাকাটা দাম। আমার মত গরিবদের জন্য না! কয়েকটা বই অবশ্য এখান থেকে নিয়েছি।
গুগল সওয়ারি ((এই শব্দটা অনেক দিন ধরেই ব্যবহার করি। মজা লাগে। আমরা সবাই ই তো গুগলে চড়ে অনেক কিছু খুঁজি অনেক সাইটে ঘুরে বেড়াই।)) হয়ে খুঁজতে খুঁজতে দরিয়াগঞ্জ এর নাম পেয়ে গেলাম! উইকিতে ছবি দেখে তো মুগ্ধ! এত বই। টাও আবার পুরান! মানে কম দামে বেশি বই!
দরিয়াগঞ্জ যাবার আগের দিন থেকেই অন্য রকম আনন্দ উত্তেজনা ছিল। এ যেন প্রেয়সীর সাথে প্রথম দেখা করার অনুভূতি 😛 কি বই পাব না পাব এই সব ভাবছিলাম। আমি আর জেহিন হোটেল থেকে নিকটস্থ দিল্লী মেট্রো স্টেশনে গেলাম (আমি দিল্লীর মেট্রোর ((http://www.delhimetrorail.com/)) সেই রকম পাঙ্খা হয়ে গেছি! দিল্লীর মধ্যে যাতায়াতের এই ট্রেইন সিমপ্লি জটিল! অনেক অনেক লোক প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে। জ্যাম কমেছে অনেক, জীবনযাত্রা অনেক সহজ, সহনীয়। আমরা কতবার যে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছি!) মেট্রোতে করে ম্যান্ডি হাউজ নামে একটা জায়গায় নামলাম। সেখান থেকে অটো নিয়ে দরিয়াগঞ্জ যাব বলে ঠিক করলাম। অটো ঠিক করার সময় ড্রাইভারভাইয়া (আমরা এখানে যেমন মামা বলি ওখানে গিয়ে তেমনি ভাইয়া ডাকতাম, ড্রাইভার/দোকানদার সবাইকে) বলল আজ রবিবার বই এর বাজার বন্ধ!
আমার তো আরেকটু হলে হার্ট এটাক হয়ে যেত! কী বলে! উইকিতে দেখে এলাম রবিবারে বড় বই এর বাজার বসে কারণ রবিবারে অন্য দোকানগুলো বন্ধ থাকে! এই মামা কী বলে?!
জেহিন বলল, চল যাই আসছি যখন! কী আছে জীবনে?!
আমরা সেই অটোতে করে পৌছুলাম। প্রথম যেই দোকান এ গেলাম সেটাতে গিয়েই তো আমি মুগ্ধ! ম্যালকম গ্ল্যাডওয়েল এর আউটলায়ার্স, ব্লিঙ্ক! অমর্ত্য সেন এর আর্গুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান সহ পপুলার সায়েন্স এর বই, পপুলার ইকনমিক্স এর বই ফ্রিকোনোমিক্স সহ কত নন ফিকশন! ফিকশন তো ছিলই! আমার তো মাথা খারাপ অবস্থা! কোনটা ছেড়ে নেব কোনটা।
এবং বেশির ভাগ বই সেকেন্ড হ্যান্ড। আমি তো কম দামেই বই চাচ্ছিলাম!
রাস্তার এক পাশে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম! বেশ লম্বা বই এর দোকান এর সারি! আহা আহা! অনুভূতি যেন প্রেয়সী হ্যা বলছে সেই রকম একটা 😛
বই এর দোকানের পরিমাণ নীলক্ষেত এর ফুটপাথের চেয়ে বেশি হবে। নানান ধরনের টেক্সট বই [কম্পিউটার আর মেডিক্যাল বই এর আধিক্য দেখতে পেলাম।] ফিকশন নন ফিকশন এর বিপুল বই, এ ছাড়া খাতাও বিক্রি হচ্ছিলো। আমি একটা ৭০ রূপি দিয়ে খাতা নিলাম। জেহিন এর পিসিতে এইবারের দিল্লী যাত্রায় ফেইসবুকিং করেছি। ব্লগিং এর সময়ই পাচ্ছিলাম না এই খাতায় বসে লেখালেখি করব এই জন্য নিলাম।
যেসব/যাদের বই দেখেছি- হ্যারি পটার, টোয়াইলাইট, ড্যান ব্রাউন, জেমস প্যাটারসন, শেকসপিয়ার, শার্লক হোমস, সিডনী শ্যালডন, সান্দ্রা ব্রাউন, সালমান রুশদি, চেতন ভাগত, জেফরি আর্চার, এলিজাবেথ গিলবার্ট…
শেকসপিয়ার, শার্লক হোমস এর ক্লাসিক সব বই গুলা, নতুন বেষ্ট সেলার চেতন ভাগত এর পাশেই ছিল মাথা উঁচু করে। একই দোকানীর কাছে সান্দ্রা ব্রাউনের হট বই আর ন্যাড়া সেথ গোডিন পাশাপাশি। অরুন্ধতীর বই এর পাশে টোয়াইলাইট বেমানান ভাবে জায়গা দখল করে ছিল।
নন ফিকশন এর বৈচিত্র্য আমাকে বেশি মুগ্ধ করেছে। হু মুভড মাই চিজ, সেথ গোডিন থেকে শুরু করে অনেক বই ই পাওয়া যাচ্ছিলো। ম্যানেজমেন্ট এর বই ও পাওয়া যাচ্ছিল। (তবে আমার জন্য খুব কিছুটা হলেও হতাশাজনক ছিলো যে আমি যেগুলা পড়েছি সেগুলাই চোখে পড়ছিল। ভাবছিলাম ইশ! কি কষ্ট করেই না ইবুক পড়েছি!)
নানা পুরনো ম্যাগাজিন, ভৌগসহ দুষ্টু/ বড়দের পত্রিকার নায়িকারা উকি ঝুঁকি মারছিলো। ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ম্লান থাকলেও পুরোপুরি নীরব ছিলো না। টিনটিন দেখে তো মনেই হল নিয়ে নেই কয়েকটা! স্বল্প বসনা ওয়ান্ডার ওমেন এর কমিক্স, সবুজ সুপার হিরো হাল্ক এর পাশেই ছিল। বিদেশী রোমান্স বিষয়ক বই ছিল প্রচুর (এই গুলার প্রচ্ছদ বড্ড বেশি ইয়ে…! কিশোরদের ভিড় সেখানেই বেশি ছিল।)
কিছু কিছু দোকানে দেইখ্যা লন ১০০, বাইচ্ছা লন ১০০ স্টাইলে ফিক্স দাম ছিল। এর মধ্যে একটায় ছিল ৫০ করে। সেটায় পেয়ে গেলাম ড্যান পিঙ্ক এর এ হোল নিউ মাইন্ড। হার্ড কভার এর বইটাও ৫০ লেখা দোকানে ছিল! আমি তো ভাবলাম আর যাই হোক এটা নিশ্চিত ৫০ রূপি হবে না! ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে দেখি এটাও ৫০! তাড়াতাড়ি সেটা নিয়ে নিলাম! জেমস প্যাটারসন আর জেফরি আর্চার এর একটা করে নিলাম।
দামাদামি নীলক্ষেত এর মতই! আপনি পারলে কমিয়ে নিতে পারবেন। আমার মনে হয়েছে একটায় বেশি দাম দিয়ে ফেলেছি (সেই লোক যেভাবে একদম রজনীকান্ত স্টাইলে বলছিল, কিচ্ছু করার ছিলো না!), অন্য ২ টায় বাজিমাৎ করেছি 😛
ক্রেতাদের মধ্যেও নানান বৈচিত্র্য ছিলো। প্রায় সব বয়সের, সব শ্রেণীর লোকই দেখেছি। হিন্দি বই/ ম্যাগাজিন এর পরিমাণ খুবই কম। বাংলা একটাও চোখে পড়ে নি, আশাও করি নি অবশ্য।
যেসব বই কেনার প্ল্যান ছিলো পরবর্তীতে তা ফ্লিপকার্ট ((http://www.flipkart.com/)) থেকে কিনেছি (সেই লিস্টি সরবেই দিব ইনশাআল্লাহ) এখান থেকে কিনে অবশ্য দেউলিয়া হয়ে গিয়েছি! :wallbash:
ওভারাল ইম্প্রেশন অনেক ভালো লাগছে। নীলক্ষেত এর মতই। শুধু একটু বড়, আর বৈচিত্র্য কিছু বেশি। দিল্লী আসলে এখানে আসাটা অবশ্যই উচিৎ হবে।
ব্লগিং এর সময়ই পাচ্ছিলাম না এই খাতায় বসে লেখালেখি করব এই জন্য নিলাম।
আমিত খাতায় লেখালেখি ভুলে গেছি 🙁 লিখার দরকার হলে কখনও কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকি 🙁
হাতের লেখা আগেও ভাল ছিলনা এখন আরো খারাপ…..।
লম্বা একটা সাইফাই লেখা শুরু করেছিলাম ভাইয়া! যদিও শেষ করতে পারি নাই! শেষের দিকে কাজের চাপ বেড়ে গেলো, আর ঘুরাঘুরি, শপিংও 😛
আমিও খাতায় লিখতে পারি না এখন। ‘ই’যুগ 😀
নীলক্ষেতের বই এর ছাপাগুলো পঁচা, আমার পড়তে অসুবিধা হয়। কানা তো… 😛
কী কয়!
ভারতে গেলে দিল্লীর নীলক্ষেত এ ঢু দিব একবার হলেও…. 8)
খাতা-কলম নিয়ে, ডায়েরীতে লেখালেখি আসম্ভব প্রিয় একটা জিনিস, কেন জানি কিছুতেই মেলাতে পারি না ল্যাপিতে বসে লেখালেখি’র সাথে।অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করে কলমে লিখতে…… অবশ্য টাইপিং স্পিড কম বলেই হয়তো……..
তবে দিন দিন বাংলা লেখা কমে যাচ্ছে…… ভাবছি বাড়িয়ে দেবো……….
বইয়ের কথা পড়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম, কখনো দিল্লি গেলে অবশ্যই যেতে হবে দেখছি…….
বুকশপে গেলে দিশেহারা হয়ে যাই- কোনটা ছেড়ে কোনটা কিনবো, ইচ্ছে হয় সব কিনি………….. 🙂
হুহহহ !!!! আইচ্ছে !!!! কই নীলক্ষ্যাত আর কই কি !!!
নীলক্ষেত কি শুধু বই এর জন্যই বিখ্যাত ??? “মামা লাগবো নাকি?” এইটা কি দরিয়াগঞ্জে বলে? বলেনা, আমি শিউর !!!!! 😛
গল্প পড়ে ভালো লাগলো। “ইয়ে” প্রচ্ছদের বই কয়টা আনছেন? একটাও দিয়েন না আমারে, আচ্ছা??? ;D ;D হে হে হে হে হে
দিল্লী ঘুরতে উপযোগী লেখা 🙂
দরিয়াগঞ্জে যাইতে মনে চায়……… :crying:
আমরা বোহেমিয়ান এর কাছ থেকে বেশ কিছু বইয়ের রিডিং এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার পেতে পারি। 🙂
ইংলিশ ই-বুক পড়তে আর ভাল্লাগে না… দরিয়াগঞ্জ যাইবার মন চায়… :crying:
তবে একটা কথা, আপনার খাতা কেনা দেখে মনে হলো, আমি তো হাতে কলমে বাংলা লেখার হাতই কেন জানি চলতে চায় না.. ল্যাপটপে টাইপ করতে করতে অভ্যাস খারাপ হয়ে গেল..
🙁
দরিয়াগঞ্জতো দেখি পুরা বইয়ের দরিয়া।
তা আমার জন্য কয়টা বই আনছেন?
🙂
তোমার গায়ে গাছসুদ্ধা ফুল-চন্দন পড়ুক (খালি মইরো না)! 😛
তুমি বারবার দিল্লী যাও। আর এবারের মত প্রতিবারেই যেন আমি একটা করে অন্তত বই গিফট পাই। কারণ নতুন বই হাতে নিলে আমারও প্রথম প্রেমের মত অনুভূতি জাগে! :love:
বাপ্পিফায়েড ভার্শনটা পুরাই ভচাম হইছে বস! 😛
আমারেও যদি এমনে বই গিফট করত… … 🙁