রিপাবলিক অফ গেমারস (১ম পর্ব)

আজকে লিখবো কম্পিউটার গেমস নিয়ে।
না না! ছোটদের ব্যাপার ভেবে চলে যাওয়ার দরকার নেই। গেমস ব্যাপারটা এখন আর ছোটদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।
বরং বড়দের টার্গেট করে বানানো গেমসের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গেম ইন্ডাস্ট্রির আয় এখন হলিউডের আয়কে ছাড়িয়ে গেছে অনেকাংশে!

আপনার বাসায় যদি কোন ছোটভাই থাকে তাহলে, গেমস খেলা থেকে তাকে কখনোই থামিয়ে রাখতে পারবেন না। অনেক সময় সেটা উচিতও না (আমার মনে হয়)।

নিজের চোখে দেখা/কানে শোনা কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি।

“আমার গেমিং লাইফ” যদি বলি তাহলে এটার পার্ট ৩টা।
১। ক্লাস ৬ থেকে HSC পরীক্ষার দেয়ার আগ পর্যন্ত।
২। HSC থেকে নিজের কম্পিউটার কেনার আগ পর্যন্ত।
৩। নিজের কম্পিউটার কেনার পর।

ক্লাস ৬ থেকে HSC পরীক্ষার দেয়ার আগ পর্যন্ত নিজের বাসাতেই খেলতাম। সবাই যেটা করে। মোটামুটি নিরীহ ধরনের গেমস খেলতাম। তবে কলেজে উঠার পর তেমন একটা খেলতে পারিনি, লো কনফিগারেশনের কম্পিউটার এর জন্য।

HSC থেকে নিজের কম্পিউটার কেনার আগ পর্যন্ত:

এই সময়টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাসার পাশেই একটা গেমিং জোনের খোঁজ পাই। শুরু হলো ল্যান এ গেমস খেলা।

ঢাকায় এখন এরকম অনেক গেমিং জোন আছে। প্রচুর পরিমাণ স্কুলের ছেলে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সেখানে যায়। বড়লোকের কিছু ছেলে মোটামুটি সারাদিন সেখানে থাকে।
খেলতে গিয়ে কি পরিমাণ গালাগালি, চিল্লাচিল্লি হয় সেটা না দেখলে কোনভাবেই বিশ্বাস করা যাবে না!

আমরা ৩-৪ বন্ধু যেতাম। গালাগালির গেমস শুরু হলেই চলে আসতাম। তখন দেখেছি, “সামান্য” একটা গেমস নিয়ে কত ধরনের ঘটনা!
এত অল্পবয়সী ছেলেগুলো জীবনের ভালো-মন্দ কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই এমন সামান্য কিছু বিষয় নিয়ে এত বেশি প্রতিক্রিয়া দেখায়!! ভাবতেই অবাক লাগে!

ধানমন্ডির এক গেমিং জোনে এক গেমার অন্য আরেকজনের পেটে ভাঙা সেভেন আপের বোতল ঢুকিয়ে দেয়! কেন??
গেমস এর মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি।!!

নিজের কম্পিউটার কেনার পর আর গেমিং জোনে যাইনি তেমন। ভার্সিটিতে যোগ দিলাম গেমিং ক্লাবে।
বেশ কয়েকটা কম্পিটিশনে রেফারি/অর্গানাইজার ছিলাম।
তখন দেখেছি আপাত নিরীহ কিছু বাচ্চা ছেলেও কি পরিমাণ উন্মাদ হতে পারে!!

আমাদের ক্যাম্পাসে একবার এক টুর্নামেন্ট হয়।
ক্লাস সেভেনে পড়ুয়া এক ছেলে ক্লাস ১০ এ পড়ুয়া এক ছেলেকে একটা গেমসে হারিয়ে দেয়। পরাজিত ছেলেটা তারপর পারলে যেন বিজয়ীকে মাইর দেয়!!! আমরা হতবাক!!

বাংলাদেশী গেমারদের নিয়ে একটা ফোরাম আছে অনলাইনে।
কথাবার্তার সাথে এদের ম্যাচুরিটি লেভেলের কোন মিল নেই। পুরাই হাস্যকর!
ভাবছেন, এরা তো খুবই সামান্য একটা অংশ।
মোটেও না!

যেসব ভার্সিটির হলে ল্যান আছে, সেখানে ৩টি গেমস মোটামুটি সব সময়ই চলতে থাকে
১। ফিফা (ফুটবল)
২। Counter Strike (প্রতি টীমে ৫ জন করে ২টা টীম থাকে। রাইফেল, ছুরি, গ্রেনেড দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এক দল আরেকদলকে মেরে সাফ করে) :dhisya:
৩। DoTA (প্রতি টীমে ৫ জন করে ২টা টীম থাকে)

অফিস থেকে এসে DoTA খেলে এমন মানুষও অনেক!
………………..
আমি ব্যক্তিগতভাবে যে ২৫-৩০ সিরিয়াস গেমার কে চিনি, তাদের মধ্যে সামাজিক দায়বদ্ধতা বলে কিছু নেই।
টাকা না পেয়ে ক্লাস ফোর/ফাইভের এক ছেলে গেমিং জোনে এসে “নিজের বাবা”কে যেভাবে গালিগালাজ করছিলো সেটা দেখে শিউরে উঠেছিলাম।
একবার USA তে এক ছেলে নিজের মাকে খুন করে, কম্পিউটার থেকে প্রিয় গেমস মুছে ফেলার কারণে।
আমাদের দেশে এমন ঘটনা ঘটলে মোটেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
……………………………..

আপনার ছোট ভাই-বোন কে গেমস কিনে দেয়ার আগে কয়েকটা জিনিস যাচাই করে দেখা ভালো।
আপনার পক্ষে তো আর পুরো গেমস খেলে তারপর অনুমোদন দেয়া সম্ভব না!
তাই ভরসা করতে পারেন ESRB এর উপর।
Entertainment Software Rating Board। এদের অন্যতম কাজ হলো, বিভিন্ন গেমসের সেন্সরশীপ যাচাই করে রেটিং দেয়া।সেই রেটিংগুলো গেমসের ডিভিডি’র কাভারে থাকে। না থাকলে ইন্টারনেটে চেক করে নিতে পারেন।

Games Rating

  • Teen
  • Everyone
  • Mature
  • Adults Only

এগুলোই মোটামুটি থাকে।

Mature, Adults Only এগুলো ১৭+ বয়সের জন্য।
কেন?

Adults Only মূলত Nudity’র জন্য রেটিং করা হয়। নিয়ম হলো, ক্রেতার সাথে বড় কেউ থাকলেও যেন এধরনের গেমস যেন বিক্রি করা না হয়। গেমস পাবলিশার কোম্পানি সাধারণত এই রেটিং এ গেমস পাবলিশ করতে চায় না । গেমসের বিক্রি কমে যায় এতে। একটু কাটছাট করে Mature বিভাগে নেয়ার চেষ্টা করে।

Mature:
এই রেটিং এর অনেক গেমস পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা উচিত। আশংকাজনক সত্য হলো, এ ধরনের অনেক গেমস আমাদের দেশে তুমুল জনপ্রিয়।
যেমন: Grand Theft Auto বা GTA।

সম্ভবত অস্ট্রেলিয়াতে এটা নিষিদ্ধ।
কেন?
আপনি চাইলে রাস্তার যে কোন মানুষ কে মেরে ফেলতে পারবেন।
মোটামুটি সব ধরনের উপায়ে! রাইফেল, মেশিনগান, দা, ছুরি, বটি…….. করাত দিয়ে কেটে দুই টুকরা করে ফেলতে পারবেন। তরবারির এক কোপে মাথা আলাদা করতে পারবেন।

এবং বাচ্চার ঠিক এই কাজগুলোই করে। কয়েকটা ছোট বাচ্চাকে দেখে মনে হয়েছে এরা সব সময় মারামারি করার জন্য প্রস্তুত! এ কী অবস্থা!

ছোট্ট একটা ঘটনা বলি। গ্রাম থেকে এক কাজিন আসছে। ক্লাস ৬ এ পড়ে।
ওকে নিয়ে একটা গেমসে গাড়ি চালাচ্ছি। সেখানে অন্যের গাড়ি জোর করে কেড়ে নেয়া যায়, গুলি করে মেরেও ফেলা যায়। তবে GTA এর মত নৃশংস না।
খেলার এক পর্যায়ে আমি একজনের গাড়ি দখল করলাম, তারপর আমার কাজিন কে বললাম, “লোকটাকে মেরে ফেলি?”
সে বললো,  “না না! এমনি এমনি মারবা কেন, কষ্ট পাবে???”

তার expression ছিলো দেখার মত!
ও একদম সকাল বেলা উঠে মাদ্রাসা যায়, সেখান থেকে এসে স্কুলে, তারপর খেলাধুলা, পড়া,ঘুম। ওর দুনিয়া তে এত রক্তপাত-হানাহানি নেই।
হোক সেটা গেমস, তারপরেও কেন অযথা একটা মানুষ কে মারবো?? এটাই ছিলো ওর লজিক।

আমার পাশের বাসার ৫ বছরের পিচ্চি এসে আমাকে বলে,””মামা একটা ভূতের গেমস দাও।”
(আমি খেললে ও দেখে, এটাই ওর জন্য খেলা )

আমি বললাম, “নাহ!!! আমি ভয় পাবো!”
আমাকে জবাব দিলো, “ভয় পাবা না, আমি আছি না!”

………………………………………………

গেমস যে সব সময় খারাপ এমন কিন্তু না!
ভালো দিক গুলো থাকবে পরের পর্বে 🙂

 

ইয়াদ সম্পর্কে

সারাদিন আগডুম বাগডুম ভাবি! মন খারাপ থাকলে নিজেই নিজেকে কাতুকাতু দেই! মন ভালো থাকলে উলিয়া উলিয়া করি!
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চিন্তাভাবনা, বিবিধ, সচেতনতা-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

14 Responses to রিপাবলিক অফ গেমারস (১ম পর্ব)

  1. কৃষ্ণচূড়া বলেছেনঃ

    ভাল লেগেছে ইয়াদ। অনেক কিছু জানলাম 🙂
    নিজের ভাইয়ের উপর খবরদারি করতে পারব এটা ভেবেই আনিন্দিত :yahooo:

  2. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    এইমাত্র নিজের ছোট ভাইয়ের GTA খেলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করলাম। বেচারা সামনে বসে ছিলো দেখে ধরা খেলো…………আমারে বললো ডিলিট না করে রেখ দিবে গেমটা। ১৭ বছর বয়স হলে খেলবে (কনফিউশনের ইমো হবে)

    ভালো লেখা। অনেক কিছু জানলাম 🙂

  3. এলাম
    দেখলাম
    পড়লাম
    ভালো লাগলাম (একটু পালটে বলতে হলো, নাইলে মিলে ছিলো না! :P)

    আর গেমিং নিয়ে আমিও প্রায় ফ্রিক ছিলাম, এনএফএস এমডব্লিউ এর পর আর খেলা হলো না, লো কনফিগারেশন এর জন্য!! আমার সেই অনুভূতিটা ফেরৎ পাচ্ছি বলে মনে লয়!! 😀

    :dhisya: :dhisya: :dhisya: :dhisya: :dhisya:

  4. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    খাইছে!! :S

    আমি গেমিং দারুণ কাঁচা! এই কারণে খেলা হয় নাই! ভবিষ্যতে একটা কিনেক্ট কেনার প্ল্যান আছে। তখন যদি খেলা হয়!

    এই পোস্ট তো ছড়িয়ে দেয়া দরকার!
    ভয়াবহ তো!

  5. সামিরা বলেছেনঃ

    আগে ভালই গেইম খেলতাম, বহুদিন খেলা হয় না। 🙁
    আমার এক কাজিন, এখন বয়স ৬, কয়েক বছর ধরেই GTA খেলতেছে। এখন মনে হয় নিষেধাজ্ঞা জারি হইছে, আর খেলে না। 😛

  6. কিনাদি বলেছেনঃ

    আমি গেইম খেলিনা 🙂

  7. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    অসাধারণ ইয়াদ! অনেক কিছু শেখার আছে এখনো জীবনে।
    “আমাকে জবাব দিলো, “ভয় পাবা না, আমি আছি না!”” >>আমরা সবাই একসাথে থাকলে কেন মারামারি-হানাহানির ভয় থাকবে আর বল?

  8. নিলয় বলেছেনঃ

    :yahooo: অনেকেই মুভি নিয়ে লেখে, গেমস নিয়ে অনেক ভালো একটা লেখা পড়লাম অনেক দিন পর…

    পরের পর্বগুলোর আশায় থাকব 🙂

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।