পথের জীবন

একটা বাঁকা অপুষ্ট পা কাঁপতে থাকে থরথর। সেই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। ঘুমের মধ্যেও মনে হয় চমকে ওঠে মাঝে মাঝে। ফুটপাতের মাঝ বরাবর চটের বস্তায় শুয়ে সেই কাঁপানোকে আপন করে নিয়েছেন তিনি। ধুলা-রোদ-মেঘ নিত্যদিনের সঙ্গী সেখানে।
আর আছে, টং করে টিনের থালায় আছড়ে পড়া এক এক টুকরো আনন্দ……

সেই ভোরবেলা পৃথিবীতে পিঠ পেতে নেন তিনি। হেঁচড়াতে শুরু করেন খাট থেকে নেমে। আকাশের লালিমা হারিয়ে যাওয়ার কালে বের হয়ে পড়েন কাঁদা গোলা পথে। সেখান থেকে ভাঙাচোরা, ইট বিছানো, পিচ ঢালা-কতো পথ পেরিয়ে পৌঁছান তবে এই ফুটপাতে। ওভারব্রিজের নিচে একটা চট বিছয়ে দখল নেন জায়গার। কাঁপতে থাকা পা নিয়ে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়েন একটুখানি ছায়ার মাঝে।
টং করে একটা কয়েন পড়ে তার থালাতে……..

বেলা বাড়তে থাকে। বাবা-মা’র হাত ধরে স্কুলে ছুটতে থাকে ছোট্ট ছেলেমেয়েরা। বয়সকে সঙ্গী করে বাবা-মার হাত ছাড়িয়েও ফেলেছে কেউ কেউ। একা একা বা বন্ধুর সাথে ছুটে যায় রঙ্গিন পোষাকে। আরও একটু সময় পেরুলেই একদম পৃথিবী ভেঙে পড়ে রাস্তায়! চারপাশ দিয়ে চলে যায় হাজারো জুতা। ঝকঝকে পালিশ করা, কাদা মাখা, পুরানো ছিঁড়ে যাওয়া, মেয়েদের বা ছেলেদের। হনহন করে ধুলা উড়িয়ে ছোটে সবাই অফিসের দিকে। কেউ কেউ বিরক্ত হয়ে তাকায় ফুটপাথ দখল করে রাখা অপুষ্ট পা-ওয়ালার দিকে।
জ্যাম এ বসে থাকা বাসগুলো বড্ড বেশি হর্ন দেয়……

একটু করে বেলা বাড়ে আর তিনি একটু করে সরে যান ফুটপাতের মাঝে। ওভারব্রিজের ছায়ার সাথে সখ্য গড়ে  না তুললে এই মাঝ রাস্তায় মরেই পড়ে থাকতে হবে। সারা গায়ে চিটচিট করতে থাকা বালির মাঝে রোদে পুড়ে ঝলসে যাবে পুরো দেহ। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় পা-টা টানতে ঝপ করে নেমে যেতে বাসের চাকার নিচে। জীবনের রাশ টেনে ধরা অপুষ্ট পায়ের দিকে তাকিয়ে ঘৃণায় থু-থু ফেলেন তিনি।
দরদর করে ঘাম নেমে আসে চোখের উপর……..

আস্তে আস্তে নেমে আসে বিকেল। ক্লান্ত মানুষেরা পথে নামে ঘরের টানে। ক্লান্ত চোখ, ক্লান্ত মুখ, তার চেয়েও ক্লান্ত পা দু’টো বাসের অপেক্ষায় আরও ক্লান্ত হয়ে আসে। হঠাৎ হঠাৎ বয়ে যাওয়া ঠাণ্ডা বাতাসে শরীর জুড়িয়ে আসে তার। চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসে মাঝে মাঝেই। ক্লান্তির বাহনে চড়ে ঘুরে আসা ঘুমের জগৎ থেকে। তারপরই চমকে ওঠা, থালার মধ্যে টং করে নতুন শব্দে। আস্তে করে নতুন পাঁচ টাকার কয়েনটা কোমরের গাটের কাছে আরও অনেক কয়েন ও টাকার মাঝে হারিয়ে যায়।
উফ, পিঠটা কেন যে এতো ব্যথা করে!

দিন শেষ হয়ে আসে। তিনি আবার ফেরার পথ ধরেন। বাঁকা, অপুষ্ট পা টেনে টেনে এগিয়ে চলেন ঘরের দিকে। কোমরে গোঁজা সারাদিন পাওয়া টাকার থলে। আকাশে আলো হারাতে থাকে দ্রুত। ক্ষুধার জ্বালায় তিনি আরও জোরে হেঁচড়ে হেঁচড়ে নিয়ে যান নিজেকে।
প্রতিদিন, প্রতিদিন, প্রতিদিন……তবুও জীবন শেষ হয় না।

স্বপ্ন বিলাস সম্পর্কে

বাস্তবে মানুষ হবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। জীবনের নানা পথ ঘুরে ইদানীং মনে হচ্ছে গোলকধাঁধায় হারিয়েছি আমি। পথ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি আর দেখে যাই চারপাশ। ক্লান্ত হয়ে হারাই যখন স্বপ্নে, তখন আমার পৃথিবীর আমার মতো......ছন্নছাড়া, বাঁধনহারা। আর তাই, স্বপ্ন দেখি..........স্বপ্নে বাস করি.....
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে গল্প-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

14 Responses to পথের জীবন

  1. অনাবিল বলেছেনঃ

    কি বলবো বুঝতে পারছি না……………

  2. সামিরা বলেছেনঃ

    অনেক ভাল লিখেছেন ভাইয়া। কিন্তু ইদানিং শুধু নেতিবাচক লেখা লিখছেন দেখি। 🙁

  3. বৈরাগী বলেছেনঃ

    বেশি নিষ্ঠুর…

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।