আমাদের এই পৃথিবী যদি গোলকার বা গোলের মত আকৃতি না হত তাহলে কেমন হত ? ধারণা মতে, জিওমেট্রিক্যাল যে কয়টা বেসিক শেপ দিয়ে আমরা সব সময় কাজ করি বা দেখা যাবে পরীক্ষা করলে এইগুলোর আলোকে করা প্রাকৃতিক ডিজাইনকে স্টেবল ধরা যেতে পারে। আমরা কিন্তু বিশ্লেষণ পরে করেছি, এই প্রক্রিয়ায় প্রকৃতি আগে থেকেই চলে আসছে। প্রাকৃতিক কাজ থেকেই অনেক গাণিতিক সূত্র বা স্ট্রাকচারাল ভিউ বা সবচেয়ে কম ইনারজিতে তৈরি পারফেক্ট ডিজাইন কনসেপ্ট আমরা সহজে পেয়ে যাই। তার মানে প্রকৃতি আমাদের একধরণের আইডিয়া বা শিক্ষা দিচ্ছে প্রতিনিয়ত, আমাদের কীভাবে কাজ করা দরকার বা চিন্তা করা দরকার ইত্যাদি।
একটা ঊদাহরণ দেই, জাপানে প্রথম “মস” শৈবালের উপর গবেষণা করে সিটি প্ল্যান করা হয়েছে, যা একেবারে নিখুঁত। মস আসলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বংশ বিস্তারের সময় মূল ও অসংখ্য উপশাখার তৈরি করে থাকে। এরপর আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডে একইভাবে সেই কনসেপ্ট কাজে লাগিয়ে একটি প্রধান শাখা থেকে অন্যান্য দিকে সবচেয়ে ভালো এবং তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য ট্রেন রাস্তার উপায় বের করেছিল। এরকম বহু কাজ হচ্ছে প্রতিনিয়ত প্রকৃতিকে বিশ্লেষণ করে।
নাসার জন্য অনেকগুলো রোবটের পায়ের ডিজাইন নেয়া হয়েছিল বহু পা বিশিষ্ট কীট পতঙ্গ থেকে। এই “সিমফনিই” বা এর অন্তঃনিহিত সুশৃঙ্খল গোপন অনুপাত আমাদের গাণিতিক সব হিসাবের শুরুতে চিন্তা করতে শিখায় এবং একে বাস্তব জীবনের সকল সমস্যার সমাধানের এক অণুলিপি বলা যেতে পারে। আমরা সবকিছুতে একটা শৃঙ্খল পরিয়ে দিতে চাই, একটা সিমিলারিটি চাই। আর ব্যতিক্রম আমাদের দ্বিধায় ফেলে দেয়। ঠিক যেমনটি সংখ্যা গুনতে থাকলে ৫ এরপর ২৩ দেখলে অনেকেই বলবে, ওইখানে ৬ হবে।
ইতিহাস বিবেচনা করলে দেখা যাবে, দিনদিন মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিস হিসাবের দরকার হতে থাকে। হাজার বছর ধরে চলে আসা প্রকৃতি এবং মানুষের হিসাবের প্রয়োজন আমাদেরকে একটি নিয়মে বাঁধতে চায় আর সেটাই ভাবা হয় জগতের অন্তঃনিহিত ভাষা, যাকে আমরা গণিত বলি। কিন্তু আসলেই কী প্রকৃতিতে সকল জীব হিসেব কষে কাজ করে বা ধরলাম মসের মত হিসেব কষে ক্ষুদ্রতম পথে শাখা বিছানোর একটা সুন্দর বিদ্যা আত্মস্থ করে, না তাদের জেনেটিক কোডে সংখ্যার আইডিয়া আগেই রাখা হয়েছে। আর এইখানেই রয়েছে জগতের স্রষ্টার মহান ভূমিকা। আর যদি তাই হয় তাহলে আসল ঘটনায় আসি, আজকে আসছিলাম ট্রেনে। অনেক্ষণ পরে দেখলাম ছোট একটা মেয়ে তার বাবকে নিয়ে উঠেছে। কিভাবে যেন তারা ঠিক আমার পাশে এসে বসলো। আমি তখনো জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে। এক সময় দেখলাম বাচ্চাটিকে তার বাবা শান্ত রাখার জন্য ব্যাগ থেকে একটা খেলানা বের করে দিলেন। খেলনাটা এরকম যে একটা স্বচ্ছ বৃত্তাকার প্লাসটিকের মধ্যে একটা হাঁস পানিতে ভাসছে এবং সাথে কিছু খুব ছোট বিভিন্ন রঙের বল। ব্যাপার হচ্ছে , যেভাবেই এটাকে ঘুরানো হোক না কেন প্লাস্টিকের হাঁস সব সময়ই সোজা থাকছে সব দিক থেকেই একে সমান দেখাচ্ছে। আমার মাথায় তখন কেন যেন একটা জিনিসই ঘুরছিল সেটা হল, প্রকৃতি যদি নিয়ম মোতাবেক সবচাইতে স্টেবল ডিজাইন করতে চেষ্টা করে তাহলে এই বিশ্বভ্রমান্ডের ডিজাইন অন্যভাবে করা সম্ভব হোত না।
অন্য ডিজাইনে কোনভাবেই আমরা ভারসাম্য রাখতে পারবো না। চারকোণা গ্রহ কি হতে পারতো না এই ভাবে কেউ কি ভেবে দেখেছি ?? সবকিছুতেই কেন গোলাকার বা বৃত্তের প্রভাব বেশী ? ন্যাচারাল ডিজাইন অ্যানালাইসিস করলে দেখা যাবে এটাই সৌরজগতের জন্য পারফেক্ট। আমাদের সৌরজগতের ঠিক সেন্টারে গ্যাস বলয় নিয়ে নিজের অক্ষে ঘুরে চলেছে বাকী সব গ্রহ ও নক্ষত্রপুঞ্জ।
যদি শুধু পৃথিবীর কথা চিন্তা করি, সেখানে আমাদের মহাদেশগুলো প্লেটের মত সরে যাচ্ছে সবসময়ই কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি না। যেমনটি সেই বাচ্চা মেয়েটি যখন বলটি ঘুরাচ্ছে.. বলের সাথে তুলনা করলে আমাদের নীল আকাশও পরিবর্তনের মত মেয়েটির বলের উপরের সারফেস বদলাচ্ছে কিন্তু খেলনা হাঁস সব ক্ষেত্রেই একটা ভারসাম্যে রাখছে, যেমনটি আমরা সবাই।
প্রতিনিয়ত আমি ভাবী কত অসাধারণ এক মায়াবী সংখ্যার খেলা আমাদের ঘিরে রেখেছে। আমরা কেউ এই সাংকেতিক কোড ধরতে পারছি কেউ না। ব্যতিক্রম আমাদের দ্বিধায় ফেলে না বরং চিন্তার নতুন দিক খুলে দেয়। আমি বিমুগ্ধতায় হারাতে থাকি !! বলে উঠি, “আহা কি অসাধারণ”।
এভাবে তো ভেবে দেখিনি! :O চারকোণা পৃথিবী! দেবদাস ভাইয়েরা তখন কবিতা লিখত, পৃথিবীর তিন নম্বর কোণা থেকে ঝাঁপ দেব!! হাহা!
ফাজলামো বাদ দিই, আসলেই দারুণ হয়েছে লিখাটা। প্রকৃতি সর্বদাই আমাদেরকে ইশারা দিয়ে যাচ্ছে, আমাদের কাজ ইঙ্গিতের সঠিক অনুবাদ করা।
আর মসের ব্যাপারটা দারুণ লাগলো!! ধন্যবাদ সুন্দর পোস্টের জন্য।
ধন্যবাদ আপনাকেও :happy:
দারুণ! চমৎকার একটা থিম নিয়ে লিখেছেন।
ছোট ছোট প্যারা করে লিখলে চোখের ওপর চাপ কম পড়ে কিন্তু! 😀
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আমার বন্ধু আমাকে অনেকবার এই কথা বলেছে। আমি খুবই অলস প্রকৃতির মানুষ তাই ভুলে যাই। একটু ঠিক করেছি দেখেন :thinking:
অসাধারণ একটা পোস্ট! এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আমিও অবাক হয়ে ভাবি আর ভাবি, মনে মনে বলি “আহা! কী অসাধারণ ভারসাম্য!” প্রকৃতিবিজ্ঞান নিয়ে চিন্তাগুলো আসলেই মাথা নষ্ট রকমের! ভাইয়া, লেখাটা অসাধারণ, তবে কিছু টাইপো না থাকলে মনে হয় আরও দৃষ্টিনন্দন হত। কিছু মনে করবেন না যেন, পাঠক হিসেবে বললাম। 😀
থ্যাংকস তোমাকে (তুমি করেই বললাম)… আমি টাইপো মাস্টার পুরাই ফাঁকিবাজ। তোমাদের জন্য আমার মনে হয় একটু… ভেবে কাজ করতে হবে, লেখকের চেয়ে পাঠক অনেক বেশী মনযোগী 😀
আমার অনেক ভাল লাগে কারণ সবাই অনেক ভালভাবে পড়ে। দেখি নিজেকে কতোটা ভাল করতে পারি…. :thinking:
এভাবে আমিও ভেবে দেখি নি তো!
দারুণ লাগল থিমটা!
থ্যাংকস ভাই।