সোনার কাঠি, রূপার কাঠি দিয়া ঘুম ভাঙ্গিবার পর জানিতে পারিলাম- আমাকে নাকি কোথা যাইতে হইবে 😯 😯 😯 ড্যাব ড্যাব করিয়া কিছুক্ষণ তাকাইয়া ভাবিতে লাগিলাম,সুদূর অতীতে কি কোনোদিন এমন কোনো নামের সাথে পরিচয় ছিল??? :thinking:
চোখ কচলাইতে কচলাইতে গেলাম সেই মধুর জায়গায়, যেখানে আমাদের প্রাণভোমরা থাকে! ইহাকে নাকি ক্যাম্পাস বলে! :love:
ঢুকিতেই দেখিতে পাইলাম ছোট্ট ছোট্ট চতুষ্কোণ কিছু বাক্সের আনাগোনা!!! ইহাদের মাধ্যমে নাকি আজ আমাদের ‘বুয়েট প্রত্যাবর্তন দিবস’কে স্মরণীয় করিয়া রাখা হইবে, ব্যাপক চমকপ্রদ তো!!! 8)
আমাদের দেশেও এমন কিছু যন্ত্র ছিল। আন্দোলনের নামে রাস্তায় ল্যাপ্টাইয়া বসিয়া শোরগোল করিতাম আর মানুষ জন তাহা বাক্সের মধ্যে ঢুকাইয়া রাখিত । আহা! কিই না ছিল দিন গুলি… :happy: :happy: :happy:
কোথা হইতে জানি খবর পাইয়াছিলাম ক্লাস নামক এক খানে যাইতে হইবে। তবে যাহাই বলো না কেন-দেশ খানা কিঞ্চিত উন্নত, আমাদের দেশের মতোই। আমাদের দেশের লিফটের মতন এইখানেও একখানা কী জানি জিনিস আছে! বিল্ডিঙের তলায় দাঁড়াইয়া ভাবিতে লাগিলাম- ক্লাস খানা কোথা থাকিতে পারে? সিঁড়ি ভাঙ্গিয়া দোতলায় যাইবো নাকি লিফটের মতন বস্তুতে চড়িয়া তিন তলায় যাইবো…??? আশেপাশের চেহারা গুলো একটু যেন চেনা চেনা লাগে… তাই তাহাদের সাথে পা মিলাইয়া সিঁড়ি ভাঙ্গিয়া গেলাম দুই তলায়। 🙂
যাইয়া কী দেখিলাম আর কী শুনিলাম তা আর কী বলিবো! 😡 😡 😡
একজন প্রবেশ করিলেন-বোধ করি তিনি স্যার হইবেন। আসিয়াছেন ভালো কথা- কই ভাল্লুক শিকার আর রাজা বধ এর কথা বলিবেন, নাআ তা না বলিয়া কী সব অদ্ভুত শব্দ উচ্চারণ করিতে লাগিলেন! কী সব ক্রেডিট, ক্লাস টেস্ট… 😯 তা বলিলেন, ভালো কথা-এবার তো থামুন! :voypaisi:
না! তা না করিয়া কেমনে কেমনে জানি আবার এইসব ক্রেডিট ও ক্লাস টেস্টের মাঝে সম্পর্ক স্থাপন করিয়া ফেলিলেন! বড়ই তাজ্জব কাণ্ড! আচ্ছা বাবা আপনি যাহা বলিলেন তাহাই সই। বুঝিতে পারিলাম- ক্রেডিট ও ক্লাস টেস্টের মাঝে সম্পর্ক আছে। তাহা বড়ই সুখের কথা কিন্তু ক্লাস টেস্টের সাথে আবার তারিখের সম্পর্ক স্থাপন কেন বাপু? :crying: তোমাদের দেশে আসিয়াছিলাম বলে কি দু’দন্ড একটু শান্তিতে থাকিতে দেবে না? স্মৃতিপটে যেন ঝাপসা হয়ে ‘কিছু’ মনে পড়িতে লাগিলো। একি! চোখের সামনে বাঁশ বাগান আসে কেন! :wallbash: :wallbash: :wallbash:
বাতাসে আরো কী সব যেন শব্দ ভাসে! ল্যাব, রিপোর্ট। এ কী রে বাবা! এ দেখি সোজা রূপকথার রাজ্যে আসিয়া পড়িলাম। ল্যাবে নাকি আবার রাজা প্রজাদের উপর ‘রিপিট’ নামক বস্তু চাপাইয়া কর আদায় করেন! :fire:
সবই যেন রূপকথা!! রূপকথা!! :dhisya:
আর স্যারদের মুখের যা কথা, তাহার কথা আর কী বলিবো। শুনিলে যেন বুক ফাটিয়া, চক্ষু ভাসিয়া অশ্রু ঝরিতে আরম্ভ করে! এ তো আমাদের জগতের কথা নয়। এ তো রূপকথার রাজ্যের পায়রার বাকবাকুম। :multitalk:
তবে এই দেশে ক্লাস নামক বস্তু করিতে মজা আছে। কিছুক্ষণ পর পর কতোগুলো মানুষ ওই চতুষ্কোণ বাক্সগুলো নিয়া হাজির হয়। আর তাঁহাদের লাজ-শরমের কথা কী আর বলিবো। তাঁহাদের ক্লাসে ঢুকিতে অনুমতি দিলেও তাঁহারা প্রবেশ করেন,অনুমতি না দিলেও প্রবেশ করেন! 😛
তারপর কক্ষে কিছুক্ষণ বিচরণ করেন আর একই বুলি বার বার আওড়ান। আবার ছোট একখান দন্ডমতন কী জানি একখানা জিনিস লইয়া আসিয়া কহেন-“আপনার অনুভূতি জানান!” আমি এখনও বুঝিলামই না আমি কিসের মধ্যে আসিয়া পড়িলাম, আমার নাকি আবার অনুভূতি!!! :haturi:
এইসব নাকি আবার টেলিভিশনে দেখাইবে। তাঁহারা দেখাইবে যে আমাদের আজ বুয়েটে ক্লাস হইয়াছে। আমাদের দেশেও দেখাইত-ওই যে রাস্তায় বসিয়া গান গাইতাম তখন। :guiter:
তা বাবা দেখাইবা ভালো কথা। আর কোনো কাজ-কর্ম কি নাই! সেই সাত সকাল থেকে আসিয়া ঘোরাফেরা করিতে হইবে?! আসিয়াছ, ক্লাসে গিয়াছ, ঘটনা বাক্স বন্দী করিয়াছ-তাও ভালো কথা। এবার তো যাও। 😐
ওমা একি! এঁরা আবার কেন ঘোরেফেরে? আবার কেন ক্লাসে ঢোকে?! এঁরা কি দেখাইবে-প্রথম ঘন্টা ক্লাস হইয়াছে, দ্বিতীয় ঘন্টা ক্লাস হইয়াছে, তৃতীয় ঘন্টাও ক্লাস হইয়াছে………! :angel_not:
পথে-ঘাটেও এঁদের আনাগোনা! নাহ্! দেশটার সাথে আমাদের দেশের ব্যাপক মিল আছে! এই জায়গাটা দেখিয়া আমাদের দেশে এফ ডি সি-নামে এক জায়গা আছে, তাঁহার কথা মনে পড়িয়া গেলো! ঠিক যেন এফ ডি সি’র মতন…! :penguindance:
এমনই করিয়া কাটিয়া গেলো রূপকথার রাজ্যে একদিন। 😀
বাক্স মানবের বোধ করি এবার একটু খানি বিশ্রাম নেবার অবকাশ পাইবেন। তাঁহাদের সুদীর্ঘ দুই মাসের কর্মের সমাপ্তি হইলো। এবার হয়ত তাঁহারা তাঁহাদের গৃহে ফিরিয়া যাইবেন। 🙂
আর আমরা???
ধীরে ধীরে আমাদের পদচারণায় এই রূপকথার রাজ্যই একদিন আবার মুখরিত হয়ে উঠবে। রূপকথার রাজ্যই হবে আমাদের নিত্য বিচরণস্থল। আমরা দেখব এই রূপকথা আর বাস্তবের এক হয়ে মিশে যাওয়াকে। দেখব কীভাবে এই রূপকথাই একদিন বাস্তব আর বাস্তব হয়ে যাবে রূপকথা। তখন পড়ন্ত বিকালে, ল্যাব শেষে ক্লান্ত পায়ে হলে ফেরার পথে হয়ত টুক করে মনে পড়ে যাবে এই ‘রূপকথা’র কথা,
ঠোঁটে ফুটিয়ে দিয়ে যাবে এক টুকরো হাসি……
মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া কাকটি কা কা করতে করতে হয়ত বলবে-
“অতঃপর তারা ক্লাস টেস্ট, ল্যাব, রিপোর্ট ইত্যাদির সাথে মিলিয়া-মিশিয়া সুখে শান্তিতে ঘর-সংসার করিতে লাগিলো”
:yahooo: :yahooo: :yahooo:
ভালো লাগলো লিখাটা! কিন্তু আসলেই গতকাল টিভিতে রিপোর্টটা দেখিয়া বেমালুম বেকুবান্বিত হয়ে গেলাম!! এটা কী করে করতে দিলো লোকজন!! ক্লাসের মধ্যে ঢুকিয়া ভ্যাট ভ্যাট করার কী অর্থ থাকিতে পারে?? পুরাই তব্দা মারিয়া গিয়াছিলাম!! আমার জম্মে বুয়েটে এমনখানি দেখি নাই! 🙁
টিভিতে তো একবার ভ্যাট ভ্যাট করিতে দেখাইয়াছে। আর সেই একবারের জন্য চার বার শুটিং করিছে!!! 😯 আর ভ্যাট ভ্যাট শুরু করিবার পূর্বে উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম দিক থেকে বহুক্ষণ দৃশ্য ধারণ করিয়াছে 🙁
আমাদিগকেও নাকি দেখাইয়াছে শুনিলাম! :babymonkey:
আমার বোন তো আমাকে ‘হিরোইন অব দি ডে’ আখ্যা দিয়াছে… :crying: :crying: :crying:
হুমম তাই তো বলি, চতুষ্কোণ বাক্সের ভিতরে বৈরাগীকে কেন দেখা যায়! :thinking:
তোর রসাত্মক লেখনীর প্রতি তিন চামচ হিংসা প্রদর্শন করিয়া গেলাম! 😛
হুম চিড়িয়াখানার সঙ আরকি আমরা… :fire:
:happy: :happy: :happy:
টিংকু টিংকু টিংকু :love:
কাউকে হিংসা করলে কেউ এত খুশি হয় জানতাম না! 😯 😛
আচ্ছা দুঃখ প্রকাশ করলাম… 🙁 🙁 🙁
কী আশ্চর্য মন খারাপ করাতে চাই নি তো! :crying:
আহা মজাই তো করলাম 🙂
অসাধারণ!! খুব মজা পেয়েছি পড়ে। :happy: বুয়েটের ঠিক প্রথমদিনের ক্লাসটার কথা মনে পড়ে গেল। তোমারও মনে হচ্ছে তাই। “অতঃপর তারা ক্লাস টেস্ট, ল্যাব, রিপোর্ট ইত্যাদির সাথে মিলিয়া-মিশিয়া সুখে শান্তিতে ঘর-সংসার করিতে লাগিলো” তাই যেন হয়, তাই যেন হয় এই প্রার্থনাই করি… 🙂
ধন্যবাদ 🙂
আসলেই প্রথম দিনের মতোই সব নতুন লাগছিল