জানো সাদি,
মাঝে মাঝেই আমার জানতে ইচ্ছে করে ওখানে তুমি কেমন আছ? তোমার নীল রুমালটা কি এখনো আছে? তোমার দুঃখবিলাসি মন এখন কেমন আছে? অনেক দুরের যে দেশে তুমি আছো, সেখানে কী ভীষণ নির্জন কোন পথ আছে, সেখানে কী তুমি একা একা হেঁটে বেড়াও? জানো! তোমার বলা কথাগুলো সত্যি হয়েছে, শাহেদ আর নিপার সম্পর্ক আর শেষ পর্যন্ত টেকেনি। আর আমার খুব সাদামাটা কিন্তু সুন্দর একটা সংসার হয়েছে, আমার স্বামীটা বোকাসোকা কিন্তু একজন ভালোমানুষ। বিয়ের পর একদিন রাতে তোমার কথা বলতে বলতে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেছিলাম আমি, তিনি তখন আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দীর্ঘক্ষণ; বসেছিলেন। তোমার কথা শুনে, আমার দুঃখ দেখে চোখ ভিজে এসেছিলো উনার। আমার পুতুলের মত ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছে। ওর নাম বুবলি। বয়স আঠারো মাস। এখন অল্প অল্প কথা বলতে পারে। “”র”” উচ্চারণ করতে পারে না ও ““র”” কে বলে ““ল””। আমি যদি ওকে প্রশ্ন করি- মামনি, তুমি আমার হৃদয়ের কী? তাহলে ও একগাল হেসে কী উত্তর দিবে জানো? “- “টুকলা”” । আমার
মেয়ে টুকরা বলতে পারে না। জীবন, সময় সব কিছু আসলে আগের চেয়ে বদলে গেছে। তুমিও কী অনেক বদলে গেছো সাদি? আমি কিন্তু এখনো আগের মত কান্নাকাটি করি। মন খারাপ হলে কাঁদি, আমার বুবলিটার কান্না দেখে যখন ওকে থামাতে পারি না তখন নিজেই কেঁদে ফেলি। মাঝে মাঝে আবার ছাদের কার্ণিশের পাশে বসে একা একাই কাঁদি। কাঁদলে হালকা হয়ে যায় মন। আবার কখনো যদি মনে ভালো থাকে তাহলে গুনগুন করে গান শোনাই বুবলিকে-
আজ খেলা ভাঙ্গার খেলা,
খেলবি আয় আয় আয়
সুখের বাসা ভেঙ্গে,
খেলবি আয় আয় আয়……।।
তুমি বলেছিলে ভালোবাসা অনেক রকম হয়। আমি তখন এই কথাটার অর্থ বুঝতাম না, এখন বুঝি। বন্ধুর জন্যে ভালোবাসার কথা বলেছিলে তুমি, আমি এখন বুঝি। আমি এখন প্রতি বছর হেমন্তের স্নিগ্ধ বিকেলের পেঁজা তুলোর মতো মেঘময় আকাশের জন্যে অপেক্ষা করি। শেষ বিকেলের কোন এক অদ্ভুত আলোর জন্যে অপেক্ষা করি। আমার কেন যেন বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় এমন কোন বিকেলে তুমি আসবে। আমি আমার বাবুটাকে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে তোমার জন্যে অপেক্ষা করবো। আমাদের দেখে হয়তো তুমি কিছুই বলবে না, কিন্তু আমি অনুভব করতে পারবো তুমি আমাদের দেখছো। অন্য এক ভুবনে থেকেও কাছেই আছ… খুব কাছে… আমাদের খুব কাছে ছায়া হয়ে থাকার মত করে……
কিছু বলার খুঁজে পাচ্ছি না আপু। এমন করে কেন লেখেন আপনি? একটা বোবা থম ধরে থাকা অনুভূতি।
সুন্দর মন্তব্যের জন্যে থ্যাঙ্কু প্রিয় মাধবীলতা 🙂
তখন তো ঘোরের মধ্যে ছিলাম। আজ প্রিয়তে নিয়ে নিলাম একুপ্পু।আপু তোমার এই লেখাটা মনে হল ঠিক যেন আমার কথা, আমার অনুভূতিগুলো চুপি চুপি কেউ দেখে নিয়ে তোমাকে বলে দিয়েছে। নাকি সবার অনুভূতিগুলোর কিছু কমন জোন থাকে! বড়ই অদ্ভূত :thinking:
খুব ভালো থাকো মাধবীলতা <3
অনেক অনেক ভালো লেগেছে।
:love: :love:
ধন্যবাদ শারমিন।
হা হা ইমোটা বেশ মজাদার। 🙂
আয়রে সখী আমার সাথে
বৃষ্টি ভিজি কান্না লিখি,
শঙ্খচিলের নীল ডানাতে।
থাকব ভেসে
দিনের শেষে
নতুন প্রাতের অপেক্ষাতে,
আয় সখী তুই আমার সাথে…
উপরের পঙতিগুলো কেন লিখলাম জানি না, হয়ত ভেতরের অগোছালো বোধের সাথে কী এক মিল খুঁজে পেয়েছি, হয়ত গহীন গোপনে কেউ চুপি চুপি ঠিক এই কথাগুলোই বলে গেছে।
“আমার জীবনের দুঃখগুলোকেও আমি ভীষণ ভালোবাসি। যারা দুঃখ দিয়েছে তাদেরকেও……”>> এই কথাটা যে কী ভীষণ মিলে গেল আমার সাথে! আমি সবাইকে ভালোবাসি, যারা আমাকে ভালোবাসে, তাদেরকে, যারা নিন্দা করে, তাদেরকেও।
অন্যরা শুনলে হাসে, পাগল ভাবে আমাকে! তবু এই পাগলামিতেই ভালো লাগা আমার।
কিছু টাইপো আছে মনে হয় আপু। একটু ঠিক করে নেবেন প্লিজ।
পুর্ণতা > পূর্ণতা
আমাকে নিয়ে রাস্তা পাড় হত সাদি> পার
স্বচ্ছ কমেন্ট। 🙂
টাইপো ঠিক করে নিলাম।
আমি কিন্তু পাগলাটে ধরণের মানুষ ব্যাপক ভালো পাই 😀
খুশি হয়ে গেলুম আপু! :happy:
আমিও তোমাকে ব্যাপক ভালো পাই কিন্তু! :love:
তুমিই প্রথম মানুষ যে আমার স্বচ্ছতাকে এত স্বচ্ছভাবে টের পেলে। :beshikhushi:
:beshikhushi: 😐
চমৎকৃত! আর কী বলবো?
ব্লগে বড় পোস্ট পড়ার যে ক্লান্তি, সেটা আপনার বড় গল্পগুলো পড়তে এলে এক মূহুর্তের জন্যও স্পর্শ করে না। এত এত এত বেশি মসৃণ, নিখুঁত – একটা শব্দও অতিরিক্ত মনে হয় না, একটা বাক্য পড়েও মনে হয় না যে এটা অনর্থক লিখেছেন।
গল্প যদিও বন্ধুকে নিয়ে, এখানে বন্ধুত্বের শুরুর দিকটা নিয়েই মন্তব্য করি। ভালবাসা আবেগসর্বস্ব হলেই সম্ভবত এভাবে ভালবাসার মানুষকে কষ্ট দেওয়া সম্ভব, গল্পে যেরকম প্রেমিকার বান্ধবীর সাথে জড়িয়ে গেছে একজন সম্পর্কে। আমরা যতই আবেগ আবেগ করি না কেন, তার সাথে নীতিবোধ কিংবা পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ যদি পাশাপাশি না থাকে, তাহলে এক সময় এরকম পরিণতি হতেই পারে।
যদিও জানি, তৃতীয় পক্ষ হিসেবে অনেক কথাই বলা যায়, বলাটা সহজও – তারপরেও লিখে ফেললাম। 🙂
আমরা যতই আবেগ আবেগ করি না কেন, তার সাথে নীতিবোধ কিংবা পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ যদি পাশাপাশি না থাকে, তাহলে এক সময় এরকম পরিণতি হতেই পারে। একদম ঠিক বলেছ সামিরা। সমস্যা হলো মানুষের আবেগ অনেক সময়ই মানুষকে অন্ধ করে দেয়। তখন নীতিবোধ কাজ করে না। এর উদাহরণ আশে পাশে দেখেছি প্রচুর। তাই ভালোবাসাকে সম্মান জানাই তবে অন্ধ ভালোবাসাকে নয়। 🙂
একমত আপু।
🙂
এত বড় একটা গল্প। কীভাবে ধরে রাখেন পাঠক! খুব ভালো লেগেছে আপু। ব্যস্ততার কারণে পড়তে পারি নাই। এত দেরিতে কেন পড়লাম নিজের উপরই রাগ হচ্ছে।
মন্তব্যের জন্যে অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া 🙂