আছি কোনরকম, যদি বলো একে থাকা;
তবে আছি কোনরকম এক নিরন্তর বেঁচে থাকা ।
বেঁচে থাকার আবর্তে, প্রতিটি সকালে ঘুম ভাঙা;
জীবনের একঘেয়ে অনুভবে শার্ট-প্যান্ট-মোজা পড়া,
তারপর গলায় দড়ি, পকেটে মোবাইল আর দুটো পয়সা
ঠেসে, নেতিয়ে পড়া বাসে হল্লা করে ঝুলে অফিস যাওয়া ।
জীবনের খোঁজ করছো তো! এটাকেই নাহয় জীবন বলো ॥
সকালে না খাওয়া পেটে তেল চিটচিটে পরটা আর ভাজি,
নিকষ বিস্বাদে একটু একটু করে খাওয়ার চেষ্টা,
তারমাঝে রঙিন স্বপ্নের ফানুস বুনে, কিংবা হলিউডি মুভি দেখে
ভাব নেয়ার একঘেয়ে রঙচঙে অপচেষ্টা – নিত্য অযথা ।
আবার হয়তো, কালরাতে পড়া ব্লগের থেকে কোট করে
মন্ত্রী-মিনিস্টারকে আর নিজের কপালটাকে গাল দিতে দিতে,
ঠিক দিগ্বিজয়ী বুদ্ধিজীবির মতো, চায়ের কাপে ঝড় তোলা ।
জীবনটাকে তুমি চাইলে কখনোবা এভাবেও দেখতে পারো ॥
জীবনের রঙ অমলিন নয়, খসখসে নিউজপ্রিন্ট কাগজ যেনো,
শুধু ঠিক করে কিছু লেখা হয় নি — সব এলোমেলো খসড়া;
সেই সাতরঙা খসড়ার খৈ ভাজতে ভাজতে রোজ
দুপুরবেলা, আধাসিদ্ধ মুরগির ঝোল কিংবা পানসে সবজি
আর পানি ট্যালট্যালে ডাল দিয়ে পেটে ভাত ।
তারপর, মনের মানুষের একটুকু খোঁজ, কিংবা প্রিয়জনের;
নাইবা রইলো আমার কেও, তবুও ভাবতে থাকি,
ঠিক কী কী বলার থাকতো প্রিয়তমা-কে ।
জীবনটাকে সাজানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে থাকি প্রতিদিন ॥
হলমার্ক-আর্চিসের কোন উপহার শোভা পায় না
আমার এই নিস্তরঙ্গ অফিসের ম্যাড়ম্যাড়ে ডেস্কে,
কীবোর্ডের খটখট, কানে হেডফোন দিয়ে আইসোলেশন
খুঁজে একটুকু মনসংযোগ;
দৈনিক কাজের অপচেষ্টা, মেধার প্রাত্যহিক অবমূল্যায়ন ।
তারপর, দুই টাকা বেড়েছে বাসভাড়া বলে
আরেক প্রস্থ বাসআলা, ব্যর্থ সরকার, আরও বেশি ব্যর্থ
আপন কপালকে
গালাগাল করতে করতে বাসার পানে বাসে চড়ে বসা ।
এইতো জীবন, প্রতিদিন বাসের অর্ধশত যাত্রীকে
ডিওডরেন্ট কিনে দিতে চাওয়া ।
একটু বসার সুযোগ পেলে, জং-ধরা জ্যামের অতল গহ্বরে,
হারিয়ে যাওয়ার অনবসরে, কানে এয়ারফোন দিয়ে ঘুম – নিশ্চুপ ।
কিংবা দ্রুততার সাথে মেসে ফেরা,
ঘরে রেখে যাওয়াটা ল্যাপটপটা ঠিক আছে মনে করে ।
তারপর একটু ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব বা বাংলাব্লগ;
এসব ভালো না লাগলে, ওটমিল, এক্সকেসিডি, উইকিপিডিয়া;
তারপর আবার ফেসবুক, জিমেইল, লাইভ, নিউজপত্রিকা;
অবসন্ন মনে ‘মুভিজ’ লাইব্রেরিতে হলিউডি ফিল্ম
আর আইএমডিবি ওয়াচলিস্ট থেকে টরেন্টে উৎসুক সার্চ ;
হাউজ, বিগ ব্যাং থিউরি, ডেক্সটার; কারো নারুতো, ব্লিচ ।
তারপর মাউসে এক হাত, খসে পড়া হেডফোন,
আধবাঁকা বিছানায় ঘটঘট শব্দ করা ফ্যানের হাওয়ায়
লোডশেডিং আর আইপিএস সঙ্গী করে
পরিশ্রান্ত ঘুমের জগতে তলিয়ে যাওয়া ।
জীবনটা এরকমই, প্রতিদিন ॥
পৌনঃপুনিক জীবনেও কোন কোন দিন হয়তো একটু অন্যরকম,
অবসন্ন সকালে অফিসে যাওয়া নাই বলে দীর্ঘঘুম,
তারপর দোস্তদের সাথে আড্ডা, এদিক সেদিক ঘুরান্তিস;
বিলাসী ভ্রমণের পরিকল্পনা নিয়ে সেন্টমার্টিন, বিরিশিরি;
হাতে ক্যামেরাওলা স্মার্টফোন, এজ নেটওয়ার্ক পেলে ছবি আপলোড!
কারো কারো পয়েন্ট-এন’-শুট, ডিএসএলআর, সেমি…
নীলচে কিংবা কালচে আকাশ চেয়ে একটু পরিষ্কার হাওয়ায়
একরাশ দম বুকে টেনে নিয়ে শহুরে শ্রান্তি থেকে অবসর ।
জীবন তখন সত্যিই পেখম তুলে উদ্দাম হাওয়ায় নাচে ।
পেঁজা তুলোর মতো শাদা মেঘেরও অনেক উপরে
হারিয়ে যাওয়ার সাধ জাগে —
অকারন সব স্মৃতির মাঝে সাঁতরে বেড়াই,
প্রকৃতির এলোমেলো পরিচ্ছন্ন বিন্যাস
দেখে স্বপ্নরাজ্যে ভেলা ভাসাই ।
রঙে চঙে বর্ণহীন জীবন বর্ণময় হয় ॥
জীবনটা এরকমই,
নিয়মিত সাইনুসয়ডাল কার্ভে আচমকা কিছু ইতস্তত ইম্পাল্স ।।
কবিতাটি সাধের ব্যক্তিগত ব্যক্তিগত অপসাহিত্যস্তুপ সুলল সংগ্রহ তে “সনির্বন্ধ” বিভাগে একই নামে প্রকাশিত
“নিয়মিত সাইনুসয়ডাল কার্ভে আচমকা কিছু ইতস্তত ইম্পাল্স ।।” কথাটা জটিল লাগল! ব্যস্ত শহুরে জীবনটা আসলেই খুব বেশি একঘেয়ে…তার মাঝে মাঝে কিছু বৈচিত্র্য ইম্পালস এনে দেয়…আর ঐ চক্রটাই চলতে থাকে মৃত্যু অবধি…”পৌনঃপুনিক” যথার্থই। 🙂
:welcome:
ধন্যবাদ
:happy:
কম্পিউটার প্রকৌশলীর ব্যস্ততার আড়ালে জীবনদর্শন এখনো মরে যায় নি!
ভালো লাগা এখানেই। 🙂
:welcome:
আপনাকে নিয়মিত আশা করছি। 🙂
জীবন তো প্রতিদিন যাপন করি; দর্শন তো থাকবেই । আর সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং তো একপ্রকার দর্শনই বটে! 8)
হাহা! ভালো লাগছে!
নিজের জীবনে কী করলাম, কী করছি সেটা ভাবা জরুরি আসলে!
আরে কলাম কি, আর বুঝলো কি!
এত্ত ভাবাভাবির কি আছে? জীবন রঙবেরঙে কেটে যাচ্ছে যাবে; টেনশন কেন এত্তো? 😛
সেটা নিয়েই টেনশান। লুকজনের টেনশান নাই কেন?
আর কবির কবিতার যে পাঠক একভাবে নেবে সেটা কেডা কইলো?!
সেডা অবশ্য কেউ কয় নাই; কবিতায় তো আসলে খালি প্রাত্যহিকতার বর্ণনা করছি; ইন্টার্প্রেটেশন নানারকম হতে পারে । তয় টেনশনমুক্ত হোক সবাই; তাইলে ভালো 🙂
ভালো লেগেছে 🙂
:welcome:
নিয়মিত লিখবেন আশা করি। 😀
লেখার চেষ্টা চালিয়ে যাবো…
আসলে বেশি লেখা হয় না; নিজের কবিতাগুলো সুলল সংগ্রহেই জমা করে রাখি; এটাকে মনে হলো যে কম্যিউনিটি ব্লগে দেয়া যায়; তাই দিলাম ।
সরবে এর আগে টেকি লেখছি ২টা; কিন্তু আর লেখার সময় কই… দেখেননা প্রাত্যহিক জীবন কেমন পৌনঃপুনিক ব্যস্ততায় কেটে যায়; ২৪ ঘন্টাই নানা chores এ ব্যস্ত ।