এই সিরিজের এটাই প্রথম লেখা। প্রথম লেখাটা প্রজ্ঞাকে নিয়ে হওয়া উচিত। প্রজ্ঞা? আমার মেয়ে। এখনও অনাগত। তবে তাকে অন্তরে ধারণ করেছি সেই যে কবে! লেখাটা প্রজ্ঞা কে নিয়ে না হলেও প্রজ্ঞা’র জন্যই। যদি কোনদিন প্রজ্ঞা এই পৃথিবীতে না আসে তবুও। প্রজ্ঞা না এসে যদি প্রজ্ঞা’র ভাই আসে? রাগ করবে? কষ্ট পাবে? ভাববে অনাগতের জন্য এই, আমার জন্য কই? হয়ত ভাববে। আর যদি প্রজ্ঞা’র ভাই প্রজ্ঞা’র আগে বা পরে আসে তাহলে হয়ত ভাববে সবই আপু’র জন্য; আমার জন্য কিছুই নেই। হয়ত। তবে আমার সন্তানের কাছে আমি এটুকু আশা করি, সে হয়ত কোন একদিন বুঝবে তার মা’কে। বুঝবে কেন প্রজ্ঞা এত বিশেষ। হয়ত সেই বিশেষত্ব সেও তার বোনকে দেবে। আর সব ছোটমনিদের জন্যই তো এ গল্প। তাদের কাছে ভাল কিছু পৌঁছে দেবার আকাঙ্খা থেকেই আমার এই ছোট্ট প্রয়াশ। আর সে? যে এই লেখায় সব চেয়ে বেশি উৎসাহ দিল? যে মনে করল আমি এটা পারব? তার কথা কি করে ভুলি। আর তাইতো “পিংপিং এর জন্য পিগলা পিগলা গল্প”।
মেঘ খেকো দৈত্য (অনুবাদ)
একদা এক বিশাল দৈত্য ছিল। নাম তার “সপ্প”। এত বড় দৈত্য পৃথিবীতে আগে কখনই ছিল না। সপ্প এতই বিশাল ছিল যে একটি নদী’র সব পানি একবারে শেষ করে ফেলতে পারত অথবা এক বনের সব গাছ সালাদ খাবার মত করে খেয়ে ফেলত।তবে তার সবচেয়ে প্রিয় খাবার ছিল আকাশের মেঘ- তাজা, ফাঁফানো। সপ্প’র মেঘ এতই প্রিয় ছিল যে সে একবারে অনেকগুলো মেঘ খেয়ে ফেলত। তারপর তার এত পেটে ব্যাথা করত যে সে পেট ব্যথায় কেঁদে ফেলত। আর তার কান্নায় সেখানে বন্যা হয়ে যেত।
সপ্প খুবই শান্ত স্বভাবের ছিল। কিন্তু সে কোনকিছুকে, কাউকে ভয় পেত না; আর তাই যখন যেখানে খুশি চলে যেত। কিন্তু এ সবকিছুর পরও সে সুখি ছিল না; কারণ তার কখনো কোন বন্ধু ছিল না। সে যখনই কোন দেশে যেত, সেখানেই সে অনেক কষ্টের কারণ ঘটাত; অনেক মেঘ খেয়ে ফেলত বলে বৃষ্টি হত না, তাই ফসলের মাঠে সব ফসল নষ্ট হয়ে যেত। আবার বেশি মেঘ খেয়ে ফেলার পর পেট ব্যাথায় কেঁদে ফেলত। আর বন্যা হয়ে সব ভেসে যেত। সপ্প গাছপালা খামার সব খেয়ে শেষ করে ফেলত। তাকে দেখলেই তাই সবাই ভয়ে পালিয়ে যেত। সপ্প আর কাউকেই পেত না বন্ধু করার জন্য, গল্প করার জন্য।
এক রাতে সপ্পকে কাঁদতে দেখে নক্ষত্র নেমে এল। আর জানতে চাইল কেন সে এত দুঃখী। তার সব কথা শুনে নক্ষত্র তাকে বলল-
“দুঃখী দৈত্য, সে জানেই না কি করে বন্ধুত্ব করতে হয়। পৃথিবী হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর গ্রহ যেখানে সব ধরণের বন্ধু আছে।”
সপ্প- “কিন্তু আমি কোথায় বন্ধু পাব? আমি কি করে বন্ধুত্ব করব?”
“মানুষের দিকে হাত বাড়িয়ে দাও অথবা তাদের জন্য কিছু কর। এভাবে করেই বন্ধুত্ব হয়। তুমি জান না?”- নক্ষত্র উত্তর দিল।
সপ্প বিস্মিত হয়ে গেল। আবার হতাশ হয়ে বলল, “কিন্তু আমার সাথে এমন কখনও হয়নি।”
“তোমরা বন্ধু হবার জন্য কি কি কর?”- জানতে চাইল সপ্প নক্ষত্রের কাছে।
নক্ষত্র উত্তর দিল- “আচ্ছা, আমরা শিখেছি রাতের অন্ধকারে মানুষকে পথ দেখাতে, অনেক নাবিককে আমরা পথ প্রদর্শন করি। তারা খুব ভাল বন্ধু। তারা আমাদের গল্প শোনায় আর সারা রাত আমাদের সাথে থাকে।”
এভাবেই নক্ষত্র আর সপ্প আরও কিছুক্ষণ গল্প করল। তারপর কিছুদিন সপ্প অনেক ভাবল কি করে বন্ধু হবে সবার, কিন্তু সে কোন উপায়ই খুঁজে পেল না। কিছুদিন পর সে চাঁদের কাছে সাহায্যের জন্য গেল।
চাঁদ বুড়ি’র অনেক বুদ্ধি, সে বলল, “তুমি কখনই কাউকে সাহায্য করতে পারবে না যদি তুমি তাকে ভাল করে না জান।তুমি যাদের বন্ধু হতে চাও, তাদেরকে তুমি কতটুকু জান?”
সপ্প কিছুক্ষণ ভেবে দেখল আসলে সে মানুষের সম্পর্কে কিছুই জানে না। মানুষতো খুব ছোট তাই তাদেরকে নিয়ে কখনই সে নিয়ে ভাবেনি, তাদেরকে জানতে চায়নি।
সপ্প এবার ভাবল, তাকে মানুষ সম্পর্কে জানতে হবে। আর এভাবেই সে বুঝতে পারল কেন মানুষ তাকে দেখলেই দৌড়ে পালিয়ে যায়। সে বুঝতে পারল সে আকাশের মেঘ খেয়ে ফেলে মানুষের কষ্টের কারন হয়। আবার তার কান্না তাদের সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সে এমন অনেক কিছু জানল এবং সে অনেক দুঃখিত হল। আবার অনেক আনন্দও পেল।
সেই রাতে সপ্প নক্ষত্রের কাছে গেল অভিনন্দিত করতে।
“এখন আমি জানি আমি কি করে বন্ধুত্ব করব- খেয়ে আর কেঁদে”।
আর সে তাই করতে লাগল। এর পর থেকে সপ্প আকাশের দিকে খেয়াল রাখত, আর যখন দেখত মেঘেরা ঝড়ের জন্য তৈরি হচ্ছে তখন সে কিছু মেঘ খেয়ে ফেলত। এরপর খুঁজে বের করত কোথায় খরা চলছে; সেখানে সে তার চোখের পানি ফেলত। আর এভাবেই সবার কষ্টের কারণ হওয়া থেকে বদলে যেয়ে সে সবার জন্য সৌভাগ্য নিয়ে আসতে লাগল। আর সবার বন্ধু হয়ে গেল।
লেখক- Pedro Pablo Sacristan
:welcome:
ছোটদের জন্য গল্প লেখাটা মনে হয় দারুণ অনুভূতি!
ধন্যবাদ।
হুম, অনেক ভাল লেগেছে লিখতে যেয়ে। আর অনেক বিশেষ অনুভূতি নিয়ে লেখা বুঝতেই পারছেন 🙂
:welcome:
😀
ধন্যবাদ 🙂
অনুবাদ খুব ভালো লাগল আপু! :beshikhushi:
আপনার সাথে আমার একটা অদ্ভুত মিল আছে।
আমিও আমার অনাগত সন্তানের সাথে কথা বলি। ওকে অন্তরে ধারণ করে রেখেছি সেই কবে থেকে! তাই ওর জন্য সরবে একটা পোস্টও লিখে ফেলেছিলাম একদিন! আপনারটা যেমন রুপকথার গল্পের ঝুলি, আমারটাও তেমনি ছোট্টবেলার কবিতার ঝুলি। 😐
ওহ বলতে তো ভুলেই গেছি!
:welcome:
ভালো লেগেছে জেনে আমারও অনেক ভাল লাগল।
ধন্যবাদ।
আপনার ঘরে ঘুরতে যাচ্ছি 🙂
সবার মনেই বুঝি এমন একজন লুকানো থাকে আপু!!
যেদিন আমারও এরকম একটা পিছকি হবে এইরকম গল্পগুলো আলাদা করে রেখে দিবো!! ওর পড়ার জন্য আর খিলখিলিয়ে হাসি শোনার জন্য…
:welcome:
উফ!! আবার টাইপো!! 🙁
পিচকি!!
পিচকি’র হাসিতে ভরে থাক আপনার জীবন 🙂
অসাধারণ।
ইসসস… অনেক ভাল লাগছে শুনে। কতদিন পর যে লিখছি। আপনাদের উৎসাহ হয়ত আবার আমায় লেখায় ফিরিয়ে আনবে।
ধন্যবাদ।