প্রেম ভালোবাসা বিষয়ে আমার আগ্রহ একটু বেশি। আগ্রহ না বলে এটাকে অবশ্য কৌতূহল বলা ভালো! যাই হোক, এই কৌতূহলের কারনে চেনা অচেনা সব মানুষের প্রেমে পড়ার কাহিনী আমি খুবই মনোযোগ দিয়ে শুনি। ব্রেক আপ হবার কাহিনীও শুনি! তারপর মনে মনে সেইসব কাহিনীর পোস্টমর্টেমও করি! তো এত গবেষনা করার পর আমি কিছু বিষয় উপলব্ধি করলাম।
সেগুলো নিয়েই এই লেখা। লেখার কিছু অংশ আমি মাঝে মাঝে ফেসবুকে স্ট্যাটাস আকারে দিয়েছিলাম। তবে আজ বিস্তারিত আলোচনা করবো। আলোচনা শব্দটা দেখে বিভ্রান্ত হবেন না! ভয় নেই, জ্ঞানভান্ডার খুলে বসবো না।
১)
শুরু করি একটা নাটকের কাহিনী দিয়ে। নাটকের নায়ক সজল, নায়িকা তিশা। এক বিশেষ রোমান্টিক দৃশ্যে নায়ক নায়িকাকে বলল, “আমি জীবনে অনেক মেয়ের সাথে মিশেছি। অনেকের সাথে প্রেমও করেছি। কিন্তু বিশ্বাস করো, একমাত্র তোমাকে দেখেই আমার বিয়ে করতে ইচ্ছা হয়েছে! তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে??”
এই কথা শুনে নায়িকা আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ল! এক্সপ্রেশন দেখে মনে হলো, এমন চমৎকার কথা যেন সে জীবনেও শোনেনি! তার চোখ দিয়ে টপাটপ আনন্দ অশ্রু গড়াতে লাগল! আর মুখে হ্যা সূচক হাসি! তারপর আর কী… তাদের ভালোবাসা হয়ে গেল। কয়দিন পর বিয়েও হয়ে গেল।
আর আমি তো হতবাক! এইডা কি হইলো?? বিয়ে করার ইচ্ছা জাগলেই সাত খুন মাফ???
“আমি জীবনে অনেক মেয়ের সাথে মিশেছি। অনেকের সাথে প্রেমও করেছি।” এমন ‘মধুর’ বানী শুনেও নায়িকার চোখে আনন্দে জল আসে??
আজকাল বাস্তবেও এমনটা দেখা যায়। বিভিন্ন রঙের ঢঙের কথা বলে একটা ছেলে প্রোপোজ করে একটা মেয়েকে। আচ্ছা, প্রোপোজ করলে কী হয়?? ধরলাম, একটা ছেলে প্রথম দেখাতেই একটা মেয়েকে খুব “ভালোবেসে” ফেলল। তারপর ছেলেটা মেয়েটাকে প্রোপোজ করল। ছেলেটা অবশ্যই মেয়েটার কাছ থেকে “হ্যা” শুনতে চায়। তো এখন মেয়েটা যদি “হ্যা” বলে, তার মানে কি এই- যে মেয়েটাও ছেলেটাকে ভালোবাসে ফেলেছে?? কখনোই না। ভুলটা আসলে এখানেই হয়।
মেয়েটা হ্যা বললে ছেলেটা মনে করে, মেয়েটাও বুঝি তাকে ভালোবাসে। তখন শুরু হয়ে যায় প্রেম প্রেম খেলা। পার্কে যেয়ে বাদাম খাওয়া, ফেসবুকে ওয়াল-টু-ওয়াল প্রেমবার্তা আদানপ্রদান করা! কিন্তু দুইদিন পর দেখা যায় যে আসলে মেয়েটাও ভালোবাসে না, ছেলেটাও ভালোবাসে না। তখন ধুমধাম করে ব্রেক আপ! কান্নাকাটি… মেয়ে বলে ছেলেজাত খারাপ, ছেলে বলে সব মেয়ে রাক্ষসী!
কিন্তু এমন হয় কেন? একটা ছেলে যখন একটা মেয়েকে প্রোপোজ করে, এর আসল অর্থ কী? এর আসল অর্থ হওয়া উচিত- “আমি তোমাকে ভালোবাসতে চাই। আমরা কি কিছুটা ক্লোজ হতে পারি? বন্ধুত্ব করা যাক!”
আর যখন মেয়েটা হ্যা বলে, এর মানে হওয়া উচিত- “হ্যা, কাছে আসা যাক, বন্ধুত্ব করা যাক।”
তারপর আন্ডারস্ট্যান্ডিং, তারপর গভীরভাবে একে অপরকে জানা, তারপর যদি ভালোবাসা হয়, তো হবে, নাহলে নাও হতে পারে।
এই জন্য “প্রোপোজ” ব্যাপারটা আমার কাছে পছন্দ হয় না। ভালোবাসা এমনিতেই হয়ে যায়। এত আয়োজন করা লাগে না।
তাহলে ভালোবাসা কিভাবে হবে?? আমার মনে হয়, একটা সত্যিকারের ভালোবাসা শুরু হয় বন্ধুত্ব থেকে। হ্যা, বন্ধুত্বকে ভালোবাসার সিড়ি বলা যেতে পারে। বলাই বাহুল্য, আমি এখানে একটা ছেলে ও একটা মেয়ের বন্ধুত্বের কথা বলছি!
কিছু কিছু মানুষকে খুব ভাবের সাথে বলতে দেখি- প্রেমের চেয়ে বন্ধুত্ব বড়! এগুলো দেখে আমার খুব হাসি পায়। আবার তাদের জন্য দুঃখও হয়। আফসোস, তারা নিজের প্রেমিকাকে নিজের বন্ধু ভাবতে পারে না। তাদের কাছে প্রেম আর বন্ধুত্ব দুটো আলাদা বিষয়। কিন্তু আগেই বলেছি, এ দুটোর শুরু একই জায়গা থেকে। শুধু বিস্তৃতিটা ভিন্ন।
একটা ছেলে ও মেয়ে যখন একে অপরের বন্ধু হবে, তখন তারা গল্প করবে, আড্ডা দেবে। এই গল্প আর আড্ডায় উঠে আসবে জীবনের চাওয়া পাওয়া, প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির কথাগুলো। উঠে আসবে একান্ত কল্পনা আর লালিত স্বপ্নের কথাগুলো। এভাবেই দিনে দিনে সম্পর্কের ডালপালা গজাবে। দুজন একেঅপরের মাঝে মাঝে খুজে নিতে শুরু করবে সুখ আর হাসি। ভাগাভাগি করে নেবে কষ্টগুলো। তারপর উপলব্ধি করবে যে এই মানুষটাকেই সে এতদিন চেয়েছিল, এই মানুষটাকেই রূপকথার রাজ্যে দেখেছিল। আমার তো মনে হয় এটাই ভালোবাসা।
খেয়াল করুন, এই ভালবাসার মাঝে কিন্তু দৈহিক সৌন্দর্যের কোনো প্রভাব নেই। মেয়ে ফর্সা নাকি কালো, এটা গুরুত্বপূর্ণ না। পুরো ব্যাপারটাই ঘটছে মনস্তাত্ত্বিকভাবে। চেহারার প্রসঙ্গ এখানে আসবেই না! আমার কী মনে হয় জানেন, মেয়েদের চেহারা আসলে দুই ধরনের। (১) মায়াময় (২) মায়াময় না।
যে আপনার সাথে ভালো ব্যবহার করবে, তার চেহারায় আপনি অবশ্য একটা মায়া খুঁজে পাবেন। যে আপনার খুব ভালো বান্ধবী, তার চেহারা খুব মায়াময় মনে হবে। সে কালো কিংবা ফর্সা, এটা বিবেচ্য বিষয় না। কারন খুব ফর্সা একটা মেয়ে যদি আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করে, তখন তার চেহারায় আপনি স্পষ্ট রুক্ষতার ছাপ খুঁজে পাবেন। তাকে আর ভালো লাগবে না।
সুন্দরী-অসুন্দরীর ধারনা বাদ দিয়ে যদি এই মায়বতী-অমায়াবতীর ধারনা প্রতিষ্ঠিত করা যায়, তাহলে কালো ফর্সার ভেদাভেদ থাকবে না।
সব ছেলের মা বলবে, “একটা মায়াবতী মেয়ে পেলেই ছেলের বিয়ে দিয়ে দেবো।”
ছেলে তার বন্ধুদের বলবে, “দোস্ত, মেয়েটা অনেক মায়াবতী, তাই না?”
পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আসবে, “সুযোগ্য ইঞ্জিনিয়ার পাত্রের জন্য মায়াবতী পাত্রী চাই।”
কোনো কালো মেয়েকে আর তখন বালিশে মুখ লুকিয়ে কিংবা ছাদের কোনায় দাড়িয়ে কাঁদতে হবে না। কালো ফর্সা নির্বিশেষে সবাই তখন রং ফর্সাকারী ক্রীম না মেখে নৈতিকতার শিক্ষা নেবে। বই পড়বে। আচার ব্যবহারে মিষ্টতা আনবে। মায়াবতী হতে হবে তো!
তাই না?? যাই হোক, যা বলছিলাম, সে বিষয়ে ফিরে আসি। বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা। কিন্তু কেউ যদি কারো সাথে বন্ধুত্ব করে শুধুমাত্র প্রেম করারই উদ্দেশে, তাহলে ব্যাপারটা কেমন হয়ে যায়?? দাড়ান, বুঝিয়ে বলছি-
মনে করুন, একটা মেয়েকে খুব ভালো লেগে গেল একটা ছেলের। ছেলেটার ভাষ্য অনুযায়ী, সে নাকি মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলেছে। এখন ভালোবাসার কথা তো বলতে হবে! কিন্তু এভাবে এত তাড়াতাড়ি বললে তো হবে না! অপরিচিত একটা ছেলেকে ঐ মেয়েটা পাত্তা দেবেই বা কেন! তাহলে কী করা যায়? ছেলেটা সিদ্ধান্ত নিল যে সে মেয়েটার সাথে বন্ধুত্ব করবে। আস্তে আস্তে ক্লোজ হবে। তারপর মনের কথা জানাবে।
আমার মনে হয়, এই ধরনের বন্ধুত্ব আসলে প্রতারণা। হ্যা, প্রতারণা। কারন মেয়েটা ছেলেটাকে বন্ধু ভেবে বন্ধুত্ব করল, সে কিছুই জানল না। অথচ ছেলেটার মনে একটা গোপন ইচ্ছা, বাসনা চুপি চুপি রয়ে গেল। বন্ধুত্বের আবরণে ছেলেটা আসলে একটা বিশেষ উদ্দেশ্য পূরণ করতে চায়। তাই এটা অবশ্যই প্রতারণা।
খুব পেচানো হয়ে যাচ্ছে, না?? এত নিয়ম মেনে কি ভালোবাসা হয়?? আসলেই হয় না। “প্রেম করব, প্রেম করব, প্রেম আমাকে করতেই হবে” এমন মনোভাব থাকলে প্রেম করা সম্ভব না। নিজের ক্যারিয়ারে মনোযোগী হোন। সেই সাথে নিজের মনকে খুলে রাখুন। সবার সাথে মিশুন। দিন কেটে যাবে। একদিন দেখবেন, আপনি হাবুডুবু খাচ্ছেন। কোথায় আবার! চেনাজানা কোনো বন্ধুরই প্রেমে! শুধু আপনি একাই না, সেই মানুষটাও হয়তো আপনার প্রেমেই হাবুডুবু খাচ্ছে!
চেহারা দেখে প্রেমে পড়া, Love at first sight এই ব্যাপারগুলো আসলে ভিত্তিহীন। ব্যাপারগুলো হয়তো জীবনকে সাময়িকভাবে মধুময় করে তোলে, কিন্তু সুদূরপ্রসারী ফলাফল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সুখকর হয় না। (ব্যতিক্রম থাকতে পারে)
২)
আচ্ছা, প্রেমে তো পড়া গেল! কিন্তু কজন প্রেমে পরার পর এই সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে পারে? বলা হয়ে থাকে, গার্লফ্রেন্ড পাওয়ার চাইতে গার্লফ্রেন্ড রক্ষা করা কঠিন। 😛 অন্য সবার কথা বাদ দিলাম। আপনি নিজে টিকিয়ে রাখতে পারবেন তো?? দেখা যাক। নিজের সাথে মিলিয়ে নিতে পারেন।
যদি প্রশ্ন করি- “আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে আপনি কেন ছেড়ে যাবেন না??”
অধিকাংশ মানুষই এমন উত্তর দেবে- “কারন তাকে ছাড়া আমি বাঁচব না, তাকে ছাড়া আমি কিছুই ভাবতে পারি না।” ইত্যাদি ইত্যাদি। খেয়াল করুন, প্রতিটা উত্তরই নিজের স্বার্থকেন্দ্রিক।
আমরা মানুষ। আমাদের চাওয়া পাওয়া প্রতিনিয়ত বদলায়। চাওয়া পাওয়ার সাথে এই স্বার্থগুলোও বদলে যায়। ব্যাখ্যা করা যাক “উত্তরগুলো” দিয়েই।
“তাকে ছাড়া আমি বাঁচব না” -ভালো কথা। সে আপনার বাঁচার অবলম্বন। অকুল পাথারে ভেসে থাকার জন্য মানুষ সবসময় শুধুমাত্র একটা অবলম্বনকেই ধরে থাকে না। যখন হাতের কাছে যা পায়, তখন তাই আঁকড়ে ধরে। তাই অবস্থা অনুযায়ী আপনার বাঁচার অবলম্বনও যে বদলে যাবে না, তার কোনো ভরসা নাই।
“তাকে ছাড়া আমি কিছুই ভাবতে পারি না” -দুনিয়ায় ভাবনা চিন্তা করার মত মানুষের অভাব আছে নাকি? অস্বীকার করতে পারেন, রাস্তায় কোনো সুন্দরী মেয়ে দেখলে কিছুক্ষণের জন্য হলেও আপনি তার কথা ভাবেন না? সুতরাং, এই ভাবনার ব্যক্তিটিও বদলে হয়ে যেতে পারে।
এভাবে প্রতিটা আত্ম স্বার্থকেন্দ্রিক উত্তরের এমন ব্যাখ্যা আমি দিতে পারব। তাহলে বুঝতেই পারছেন কেন ব্রেক আপ হয়?? হ্যা, এই স্বার্থগুলো বদলে যায়, তাই।
এবার আসল কথায় আসি। উত্তরগুলো যদি এমন হত- “কারন সে আমাকে ছাড়া বাঁচবে না, সে আমাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারে না, আমি ছাড়া আর কেউ তাকে বোঝে না” ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ প্রতিটা উত্তরের মাঝেই ঐ ভালোবাসার মানুষটির স্বার্থ জড়িয়ে আছে। নিজের স্বার্থ নয়।
আবার ব্যাখ্যায় ফিরে যাই। সময়ের পালাবদলে যখন আপনার বাঁচার অবলম্বন বদলে যাবার সম্ভাবনা আসবে, কাউকে দেখে ভাবনার মোড় ঘুরে যাবার সম্ভাবনা আসবে, তখন আপনার বিবেক আপনাকে বাধা দেবে। আপনার মনে পড়ে যাবে ভালোবাসার মানুষটির কথা। আপনার উপরেই নির্ভর করছে তার সুখ দুঃখ হাসি কান্না। আপনি যদি চলে যান, তাহলে সে বাচবে না, সে আপনাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারে না, আপনি ছাড়া আর কেউ তাকে বোঝেনা…
স্বার্থহীন উত্তরগুলো আবার খেয়াল করুন- “কারন সে আমাকে ছাড়া বাঁচবে না, সে আমাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারে না, আমি ছাড়া আর কেউ তাকে বোঝে না”
তাই আপনি যদি আপনার জায়গায় সৎ থাকেন, তাহলে কখনোই আপনার দিক থেকে ব্রেক আপ হবে না। অপর মানুষটিও যদি ঠিক এভাবেই ভাবে, তাহলে তার দিক থেকেও কখনো ব্রেক আপের সুর বাজবে না। জীবনে যাই ঘটুক না কেন, আপনারা ফিরে আসবেন, আপনারা দুজন অবশ্যই ফিরে আসবেন স্বর্গীয় ভালোবাসার টানে। আর এভাবেই কিছু পবিত্র সম্পর্ক আজীবন টিকে থাকে। 🙂
৩)
প্রেম ভালোবাসা নিয়ে তো অনেক কথা হলো। এবার আসি বিয়ে প্রসঙ্গে। বিয়ে করতে কে না চায়?? 😉
ছোটবেলায় অবশ্য বলতাম, আমি কোনোদিন বিয়ে করব না। আস্তে আস্তে যখন বড় হলাম, দিনদুনিয়া বুঝতে শিখলাম, তখন সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেললাম, না, বিয়ে আমাকে করতে হবেই! আর তখন থেকেই বিয়ে নিয়ে আমার অনেক চিন্তা ভাবনা শুরু হলো।
আমরা সাধারনত দুই ধরণের বিয়ের সাথে পরিচিত। অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ এবং লাভ ম্যারেজ।
আপনি কোন ম্যারেজ করবেন?? ভাবতে থাকুন। ব্যক্তিগতভাবে, অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ ব্যাপারটাকে আমি মেনে নিতে পারি না। আমার মতের পক্ষে আমার যুক্তি আছে।
ছোটবেলা থেকে গুরুজনেরা আমাকে বলেছেন, “মেয়েদের সাথে খুব একটা মিশবা না। ভদ্রতা করে দু একটা কথা বলবা। কিন্তু বেশি ঘনিষ্ট হওয়া যাবে না।”
অথচ, অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের সময় কী হচ্ছে? সেই গুরুজনেরা একটা অচেনা মেয়েকে আমার ঘরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন! এমনকি তখন তারা মনে মনে প্রার্থনা করা শুরু করছেন, ওদের দুইজনের মধ্যে খুব মিল মহব্বত হয়ে যাক!
ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই অদ্ভুত লাগে। আমি একটা কাগজে স্বাক্ষর করে দিলাম। আর সাথে সাথেই গুরুজনেরা তাদের এতদিনের উপদেশবানী ভুলে অজানা অচেনা দুইটা ছেলেমেয়েকে এক করে দিলেন। দুজনার মধ্যে “মিল মহব্বত” তৈরী করার জন্য ঘরের দরজাও বন্ধ করে দিলেন।
আচ্ছা, ওটা তো আমার নিজের ঘর। সেখানে নতুন একজন মানুষ ঢুকেছে। নিজের আপন পরিবেশে আমার খুব বেশি অস্বস্তি লাগবে না। আমি সহজেই মানিয়ে নিতে পারব। কিন্তু ঐ মেয়েটার কেমন লাগবে একবার ভেবে দেখেছেন?? অচেনা পরিবেশে অচেনা মানুষের সাথে। যে মেয়েটা সারাজীবন ইভটিজারদের ঝামেলা সহ্য করে এসেছে, সেই মেয়েটা কিভাবে নিশ্চিত হবে যে আমি খুব ভদ্রলোক?? এই ভরসা তাকে কে দিবে?? আরো কাহিনী আছে, বিয়ের আগে তাকে আবার বলে দেয়া হয়েছে, “বাসর রাতে স্বামী যা করতে বলবে, তাই করবা। স্বামীর আদেশ অমান্য করা মহাপাপ।” ভেবে দেখুন, মেয়েটার মনের অবস্থা তখন কেমন হয়।
এভাবে আর যাই হোক, বন্ধুত্বপূর্ণ সুস্থ সম্পর্ক তৈরী হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেয়েটা নিজেকে ঐ পরিবারের আশ্রিতা হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হয়। হ্যা এটা ঠিক, পরবর্তীতে অনেক স্বামী স্ত্রীর মাঝেই একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু বিয়ের দিন, বিয়ের রাত এবং বিয়ের পরবর্তী কয়েক দিন বা কয়েক বছর একটা মেয়েকে যে মানসিক যন্ত্রনা, অপমান সহ্য করতে হয়, তার দায়ভার কে নেবে?? ভদ্র পরিবারে এই যন্ত্রনা, এই অপমান অদৃশ্য রয়ে যায়, শুধু মেয়েটাই বোঝে। আর অভদ্র পরিবারে এটা তো শারীরিক নির্যাতনের পর্যায়েও চলে যায়। (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, তবে তা খুব খুব কম)
“মিল মহব্বত” তৈরী করতে ঘরের দরজা আটকে দিতে হয় না। শুধু দুটো হৃদয়ের স্বাধীনতা থাকলেই হয়।
লেখার এই পর্যায়ে এসে পাঠক হয়তো আমাকে ভুল বুঝছেন। হয়তো ভাবছেন যে আমি প্রেম করে বিয়ে করতে বলছি? না, প্রেম করেই যে বিয়ে করতে হবে এমনটা আমি বলছি না। আমি চাই, বিয়ের আগে অন্তত ছেলেটা আর মেয়েটা একে অপরের বন্ধু হোক। যদি সেটা পারিবারিকভাবে হয়, তাহলে তো খুবই ভালো। আবার কোনো ছেলে মেয়ে যদি নিজেই ভালোলাগার ভালোবাসার মানুষটিকে খুঁজে নিতে পারে, তাহলেও কোনো সমস্যা নেই। তবে, সমস্যা শুধু তখনই, যখন দুজন ছেলেমেয়ে বাবা মায়ের অমতে পালিয়ে বিয়ে করবে। পালিয়ে বিয়ে করার মত একটা ভুল কাজ কখনোই সুখী জীবনের সুচনা করতে পারে না। (আবারো বলছি, ব্যতিক্রম থাকতেই পারে।)
৪)
কিভাবে প্রেম হবে, কিভাবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হবে, কিভাবে বিয়ে করতে হবে সব কিছুই নিয়েই তো ব্যাপক আলোচনা(!) হলো! এখন সমস্যা হচ্ছে, আমাদের বাবা মায়েরা তো ছেলেমেয়েদেরকে প্রেম করতে দিতেই চান না! আসলে কী জানেন? ছেলেমেয়েদের প্রেম করতে দিলে কিন্তু কিন্তু বাবামায়েদেরই লাভ! কিভাবে? বলছি,
নেপোলিয়ন কী বলেছিলেন মনে আছে তো? নেপোলিয়ন বলেছিলেন, “তোমরা আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেবো।”
সময় বদলে গেছে। এযুগের ছেলেমেয়েদের ধ্যানজ্ঞান হচ্ছে গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড। তাই নতুন করে বলি, “তোমরা আমাকে একজন ভালো গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড দাও, আমি তোমাদের একটি ভালো জাতি উপহার দেবো।”
একটু আগেই তো বললাম, কোনো বাবা মা চান না যে তাদের ছেলেমেয়ে প্রেম করুক, তার গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড থাকুক। গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড বিষয়টাকে খুব খারাপ চোখে দেখেন বাবা মায়েরা। ধরুন, কোনো বাবা মা যদি জানতে পারেন যে ছেলের গার্লফ্রেন্ড আছে, তখন তারা খুব রেগে যাবেন। বিভিন্নভাবে ছেলের উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকবেন। মোবাইল কেড়ে নেবেন। স্পাই নিয়োগ করবেন। আরো কত কি! এতে বাবা মা এর সাথে ছেলের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে। ছেলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে।
কিন্তু ছেলের এই গার্লফ্রেন্ডের কাছ থেকে বাবা মা ইচ্ছা করলে অনেক উপকার পেতে পারেন। গার্লফ্রেন্ডের মাধ্যমে বদলে দিতে পারেন ছেলের জীবন। যেমনঃ
প্রত্যেক গার্লফ্রেন্ড তার বয়ফ্রেন্ডকে বলবে, “তুমি সিগারেট খাবা না। যদি খাও তাহলেই ব্রেকআপ!”
এখন কোনো স্মোকার ছেলে যদি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেয় কিংবা কোনো নন স্মোকার ছেলে যদি কখনো সিগারেট না খায়, তাহলে কত ভালো হবে! বাবা মা নিশ্চিন্ত হতে পারবেন।
আর গার্লফ্রেন্ডও বুঝতে পারবে যে তার বয়ফ্রেন্ড তাকে কত ভালোবাসে, তার কথার কত মূল্য দেয়!
যদি ছেলেটা তবুও সিগারেট খায়, তাহলে বুঝতে হবে ছেলেটা তার গার্লফ্রেন্ডের চাইতেও সিগারেটকে বেশি ভালোবাসে।
এখানে গার্লফ্রেন্ডের উপকারঃ মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়া বয়ফ্রেন্ডের আসল রূপ চিনতে পারবে। পরবর্তী জীবনের কষ্ট থেকে বেঁচে যাবে মেয়েটা।
বাবা মা এর উপকারঃ ছেলের গার্লফ্রেন্ড আর থাকছে না। অন্তত একদিক দিয়ে তারা চিন্তামুক্ত হতে পারবেন।
😛 😛
এভাবে আরো অনেকদিক দিয়ে সুফল পাওয়া সম্ভব। তাই গার্লফ্রেন্ডের নাম শুনলেই বাবা মায়ের রেগে যাওয়া উচিৎ না। বরং যাচাই বাছাই করে দেখা উচিৎ যে মেয়েটা কেমন। একটা ছেলের জীবনে একটা ভালো মেয়ের সুপ্রভাব অনেক অনেক অনেক বেশি।
আমাদের সমাজের সমস্যা হচ্ছে, আমরা আমাদের দুর্বল দিকগুলো জীবন থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাই। অথচ, এই দুর্বল দিকগুলোকে ইচ্ছা করলে শক্তিতে পরিণত করা যায়। দুর্বলতা যখন শক্তিতে পরিণত হয়, তখন তা হয় দুর্ভেদ্য, স্বর্গীয়।
৫)
আমার এত কথা বলার উদ্দেশ্য নিজের জ্ঞান জাহির করা না। বরং আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত প্রেম নিয়ে যে নোংরা ঘটনাগুলো জন্ম নিচ্ছে, সেগুলো প্রতিরোধ করা। ব্রেক আপের সংস্কৃতি যেভাবে ফুলেফেপে উঠছে, তা প্রতিরোধ করা। আমাদের অভিভাবকেরা “প্রেম ভালোবাসা”কে ভয় পান কেন?? তারা ভয় পান ঐ নোংরা ঘটনাগুলোকে, তারা ভয় পান ব্রেক আপ ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়া মেধাবি শিক্ষার্থীর করুন পরিনতিকে। দেখুন, দোষ করছে অন্য একজন, কিন্তু তার নেতিবাচক প্রভাব ও অভিভাবকদের বাড়তি শাষন এসে পড়ছে আমাদের সবার ওপর। নোংরা মানুষগুলোর নোংরামির কারনে, কিছু মানুষের ভুলের কারনে কেন দুটি পবিত্র তরুন তরুনীর হৃদয় দেয়া নেয়া বাধাগ্রস্থ হবে??
আসলে সমস্যাটা হচ্ছে, ভালোবাসা কি জিনিস, এটাই আজকাল অনেক মানুষ বোঝে না। আমার মনে হয়,এক বাক্যে ভালোবাসার সংজ্ঞা দেয়া সম্ভব। সেটা হচ্ছেঃ “সুখ ও সততা”
যে আপনাকে তার কথায়, কাজে, ব্যবহারে, দৃষ্টিতে সবসময় সুখে রাখতে পারে এবং যে নিজে তার কথায়, কাজে, ব্যবহারে, দৃষ্টিতে আপনার প্রতি সৎ থাকতে পারে, সেই আপনাকে ভালবাসে।
সবার ভালোবাসা বেঁচে থাকুক।
অসাধারণ বললেও কম বলা হবে! একদমই মনের কথাগুলো তুলে ধরলেন। সবশেষে সুখ আর সততাই পরিচয় দেয় ভালোবাসার।
প্রিয়তে নিয়ে নিলাম এই অসাধারণ পোস্ট! :huzur:
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ! :happy:
“প্রোপোজ” ব্যাপারটা আমার কাছেও পছন্দ হয় না।
নদীকে কেউ রাস্তা তোইরি করে দিয়ে বলে না যে এই পথেই তাকে আরেক নদীর সাথে মিশতে হবে, মোহনার পথ নদী আপন মনেই চিনে নেয়, জেনে নেয়।
ভালোবাসার পোস্টমর্টেম ভালো লাগল।
তবে অনেক বড় পোস্টে যেটা হয়, মূল মেসেজগুলো একটু হাইলাইট করে দিলে বুঝতে সুবিধা হয়।
মজার ব্যাপার হল, আপনার এই পোস্টের একটা মিনি ভার্সন আমি সাম্প্রতিক সময়ে লিখেছি! যদিও আমারটা এত জ্ঞানবহুল পোস্ট ছিল না। 😛
টাইপোর জন্য দুঃখিত। 🙁
* তৈরি
অনেক ধন্যবাদ আপু। মূল মেসেজ হাইলাইট করার ব্যাপারটা এর পর থেকে মাথায় থাকবে।
ফেবুতে বলেছি তো! আপনার ঐ লেখাটা দেখেই এটা পোস্ট করার অনুপ্রেরনা পেয়েছি।
অনেক সুন্দর একটা লিখা 😀
ধন্যবাদ আপু
চমতকার লেগেছে লিখাটি! যদিও আমার মতো অধৈর্য মানুষ এতো বড়ো ললহা দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম!! :p
তবে একটা প্রশ্ন ছিলো…
আপনি সিগারেটের সাথে যে তুলনা দিলেন সেটা কি একটু একপেশে হয়ে গেলো না?? কারণ কেউ যদি তার চাকরী আর পছন্দের মানুষের মধ্যে একটা ভারসাম্য ধরে রাখতে চায় তাহলে কী বলা যাবে যে সে আসলে দুটাকেই সমান ভালোবাসে???
মনে হয় একটু খারাপ হয়ে যাবে তা!! :p
টাইপো!!
ললহা>>লেখা
ধন্যবাদ ভাইয়া।
সিগারেট আর চাকরী কি এক জিনিস?? আচ্ছা, সে চাকরী করছে কেন? সচ্ছল জীবনের জন্য, তাই না?? সচ্ছল জীবনটা কার জন্য?? সেই ভালোবাসার মানুষটার সুখের জন্যই।
এই লেখায় কমেন্ট করব বলে অপেক্ষায় ছিলাম। অফিসে বসে পড়েই মুগ্ধ।
চমৎকার গুছানো একটা লেখা।
কোন বয়স থেকে প্রেম ভালোবাসা শুরু করা যাইতে পারে বলে মনে করো? 😀
প্রেম করলে বাবা মা’র লাভ…
ব্রেক আপ এর কারণে যে মানসিক সমস্যা হবে সেটার সমাধান কে করবে?
আর যদি সেই প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে বিয়ে না হয় অন্য কাউকে বিয়ে করতে হয় তাহলে পরবর্তীতে স্পাউজকে কি সম পরিমাণ ভালোবাসা সম্ভব?
এইটা নিয়ে তরুণদের মধ্যেই আলোচনা দেখতে চাই! আগের প্রেম যেই রকম ছিল, কেমন যেন একটা পবিত্র ব্যাপার ছিলো, এখন অবশ্য আমরা উত্তরাধুনিক যুগে আছি, আমরা পবিত্র বলে কিছু রাখি নাই/রাখি না। এখন আসল কথা বায়োলজি!
ভালোবাসি আমার কারনেই। একমত সেটাই দেখতে পারছি।
আমাদের মুভি/ নাটক/ মোবাইল বিজ্ঞাপন এই সব এর ভূমিকা কী হতে পারে? 😀
প্রেম নয়, ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করার রীতি প্রচলনের আন্দোলন শুরু হোক… অসুস্থ সমাজটা কিছুটা সুস্থতা ফিরে পাক… :beshikhushi:
ভালবাসি শুধু তাকে,ভুলতে পারবো না কখণও।
টুটুল কে ভালবাসি