কোন কোন বিষণ্ন বিকেলে জানালার কাছে বসে ছন্নছাড়া মেঘগুলোর লুকোচুরি দেখতে বড় ভালো লাগে। জনমানবহীন বিকেলগুলো তখন বড্ড একা, শুধু দেয়াল ঘড়িটার একটানা টুক টুক শব্দ জানান দেয় সময় বয়ে চলেছে গুঁটি গুঁটি পায়ে। সেই লাগামহীন শব্দের রেশ যখন মাথার ভেতরেও করুণ সুর তুলে বাজতে শুরু করে ঠিক তখনই হয়ত পাশের ঘর থেকে ভেসে আসে কি-বোর্ডে টাইপ করার খটাখট শব্দ অথবা কোন মোবাইলের আচমকা করুণ রিং টোন। কোন কোন বিষণ্ন বিকেলে জানালার কাছে বসে ছন্নছাড়া মেঘগুলোর লুকোচুরি দেখতে দেখতে এইসব যন্ত্রের বিরামহীন শব্দতরঙ্গ শুনতে আমার বড় ভালো লাগে। যন্ত্রসঙ্গীতের আবেশে তখন আমি পাশে থাকা সবগুলো যন্ত্রের কথা বুঝতে পারি। একেকটি যন্ত্রের ভেতরে থাকা প্রতিটি যন্ত্রাংশের গল্পকথা আলাদা করে শুনতে পারি।
এমনি এক বিষণ্ন বিকেলে যন্ত্রের বদলে মোহ ভাঙায় আমার এক ভাতিজী। বছর সাতেক বয়সের কচি কণ্ঠে কাঁদতে কাঁদতে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।
– কী হয়েছে আম্মু?
– আম্মু আমাকে মেরেছে (অনেক কষ্টের ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে জবাব)
– ইশ অনেক ব্যথা পেয়েছ বুঝি? কোথায় মেরেছে?
– (ইশারায় যে জায়গাগুলো দেখায়, সেখানে ইতিমধ্যে লাল লাল দাগ বসে গেছে)
– কেন আম্মু মেরেছে তোমাকে, মা?
– আমি ক্লাসে ফোর্থ হয়েছি বলে আম্মু বলেছে যে আমাকে দিয়ে নাকি কিচ্ছু হবে না।
কথা বলতে বলতে যেন হঠাৎ করেই মনের ভেতরে জমে থাকা আমার এতদিনের প্রশ্নের উত্তরটা খুঁজে পাই। আমি জানতে পারি যে আজকের এই তুমি কীভাবে এমন হলে। জানতে পারি, তোমার মনের ভেতরে বাস করা এই হতাশা, স্থায়ী বিষণ্নতা, না পারার গ্লানি কী করে জন্ম নিল। আর সাথে সাথে ভীষণ একটা ভয় এসে তখনই আমাকে গ্রাস করে। মনে হয়, তোমার-আমার মত শুধু আমাদের এই প্রজন্ম নয়, আমরা আমাদের পরের প্রজন্ম, তার পরের প্রজন্ম, তারও পরের প্রজন্মের জন্য আসলে কী রেখে যাচ্ছি? একটু খোঁজ নিতে গিয়ে দেখতে পাই, যুক্তরাষ্ট্রে নাকি প্রতি ৩৩জন বাচ্চার ভেতরে অন্তত একজন হতাশায় ভোগে, যার সংখ্যা টিনএইজারদের ক্ষেত্রে গিয়ে দাঁড়ায় প্রতি ৮জনে একজন করে ((http://kidshealth.org/parent/emotions/feelings/understanding_depression.html)) ! বাংলাদেশে এমন কোন পরিসংখ্যান খুঁজে পেতে ব্যর্থ হওয়ায় নিখুঁত তথ্যচিত্রটা কল্পনায় আঁকতে পারি নি তখন। কিন্তু আশেপাশের দশটা চেনা পরিবার নিয়ে ভাবতে গিয়ে সত্যি শিউরে উঠি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এদেশের প্রায় প্রতিটি ঘরেই কোন না কোনভাবে আজ তোমার মত করে একেকটি শিশু বেড়ে উঠছে। খুব বেশি দূরে কিন্তু যেতে হবে না তোমাকে। একটু মনে করলেই দেখতে পাবে, তোমার ছোট কোন বোন, ভাতিজী বা ভাগ্নের কথা- ঠিক তোমারই মত বেড়ে ওঠার গল্প তাদের, ঠিক তোমারই মত একই চিত্র তাদের ঘরে অথবা সেই চিত্রটা তোমার থেকেও ভয়াবহ।
আমি জানি, বিষণ্নতা মানুষকে দেয়া প্রকৃতির এক অনন্য উপহার, ঠিক ব্যথার মত। ব্যথা কিংবা বিষণ্ন অনুভূতি তোমাকে কষ্ট আর তার প্রতিকার নিয়ে ভাবতে ও বুঝতে সাহায্য করে ((http://www.youtube.com/watch?v=ndsB37KUAso)) । কখনো তুমি ব্যথা না পেলে কিংবা বিষণ্ন না হলে বুঝতেই পারবে না যে আসলে ঠিক কোথায় আঘাত লাগল তোমার। আর বুঝতে না পারলে তার প্রতিকারও কখনো তুমি করতে পারবে না। ঠিক একারণেই বিষণ্নতার সাথে জড়িত নিউরোট্রান্সমিটারের গ্রাহকের জিনগত বৈশিষ্ট্য প্রাকৃতিক বিবর্তনের সাথে সাথে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয় না ((http://www.scientificamerican.com/article.cfm?id=depressions-evolutionary)) । কিন্তু জানো, আঘাতকে প্রতিহত করার জন্য প্রকৃতির দেয়া এই বোধ আজকাল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসুস্থতায় পরিণত হয়। মানুষের মাঝে ক্রমাগত চাপ নিতে পারার মত মানসিক স্থিতিশীলতা এক পর্যায়ে গিয়ে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। আর সেটা হয় তখনই যখন এই চাপ কিংবা আঘাত পাবার প্রক্রিয়াটা শুরু হয় একেবারে তোমার মত করে, শৈশবের সময়টা থেকে। কিছু বুঝতে শেখার আগেই যখন একটি বাচ্চা তার নিকট আত্মীয়দের কাছ থেকে অবিরত আঘাত পেয়ে পেয়ে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে, বিষণ্নতার সাথে তার গাঢ় বন্ধুত্ব হতে হতে একসময় সে আর সবার মাঝে নিজের আলাদা কোন অস্তিত্ব খুঁজে পায় না।
তুমি একটিবার ভেবে দেখ তো, যে বাচ্চা আজ নিজের ওজনের চেয়ে তিন কেজি ভারি ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে রোজ স্কুলে যায়, কোচিং করে, বাসায় টিউটরের কাছে পড়ে, গান-নাচ-ছবি আঁকা শেখে, সেই অতটুকু বয়সে নিজের প্রতিদিনের রুটিন থেকে যে বাচ্চাটা খেলার সময়টুকু পর্যন্ত বের করতে ভুলে যায়, তার কাছ থেকে আমরা বড়রা আসলে কি প্রত্যাশা করি? ভালো ফলাফল? এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিতে ফাটাফাটি পারফরমেন্স?
আমাদের এত এত চাহিদার এই বোঝা আমরা যে ছোট্ট মানুষটার ওপর চাপিয়ে দেই, তা কি আমরা নিজেরা একটাবার বহন করে বুঝতে চেষ্টা করি যে সেই বোঝার ভার আসলে কতখানি? শুধু তাই নয়, সেই ছোট্ট মানুষটা বড় হতে হতে কি আমরা আমাদের আরও অনেক চাহিদার ভার সেই বোঝার ভেতর ঠেসে ভরে দেই না? তোমার ক্ষেত্রেই কি ঠিক এমনটা হয় নি? তোমার ছোট কোন বোন, ভাতিজী কিংবা ভাগ্নের ক্ষেত্রেও কি আজ এমনটাই হচ্ছে না?
শুরুটা তো ঠিক এভাবেই হয়। আমরা বাবা-মা-আত্মীয়রা ছোটদের কাঁধে চাপিয়ে দেই প্রত্যাশার এক অসহনীয় বোঝা। সেই তখন থেকেই অবুঝ বাচ্চাগুলো বিষণ্নতার বেড়াজাল ডিঙিয়ে নিজেকে নিয়ে হতাশ হতে শুরু করে। তারা হতাশ হতে শুরু করে যখন তারা প্রতিযোগিতায় ধীরে ধীরে পিছিয়ে যায়, যখন তাদের চোখের সামনে তাদের মা-খালারা পার্লারে সাজতে ব্যস্ত থাকে অথচ তাদেরকে বোঝাতে ব্যর্থ হয় যে গায়ের রঙ কোন ব্যাপার নয়। কারণ সৌন্দর্য অবয়বে-আব্রুতে নয়, সৌন্দর্য থাকে আচরণে-জ্ঞানে-মানসিক উৎকর্ষতায়। আরেকটু বড় হতে হতে নিজের ব্যর্থতার গ্লানির সাথে যুক্ত হয় নিজেকে অবাঞ্ছিত মনে করার প্রবণতা। এই প্রবণতার সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হল, নিজেকে অবিরত অন্যের সাথে তুলনা করে যাওয়া। অন্যদের সব গুণের ভিড়ে তখন নিজেকে রিক্ত, শূন্য মনে হতে থাকে, আর একসময় হীনমণ্যতার এই ভার তার নিজের কাছেই অসহ্য বোধ হয়। যে কাজটা এতদিন তার এতটুকু দখলে ছিল তা দুশ্চিন্তা, হতাশা, হীনমণ্যতা আর অলসতায় একসময় ক্রমাগত ভুল হতে থাকে। তারপর একদিন সবার মাঝে নিজেকে বেমানান মনে হবার সাথে সাথে তার নিজের প্রতি রাগটাও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আর এর মাঝে যদি কখনো এমন হয় যে বাবা-মা কিংবা ভালোবাসার মানুষটি কোন কারণে কষ্ট দিয়ে ফেলে তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়ায় আগুনের মাঝে আরও খানিকটা কেরোসিন ঢেলে দেবার মত। যার পরিণতি আত্মহত্যায় রূপ নিতে সময় নেয় না একটুও ((http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/23035300)) !
কোন কোন বিষণ্ন বিকেলে জানালার কাছে বসে ছন্নছাড়া মেঘগুলোর লুকোচুরি দেখতে দেখতে আমি আর সব কথা ভুলে যাই। একাকী সেই সময়ে যন্ত্রসঙ্গীত শুনতে শুনতে আমি পাশে থাকা সবগুলো যন্ত্রের কথা বুঝতে পারি। যন্ত্রের ভেতরে থাকা প্রতিটি যন্ত্রাংশের গল্পকথা আলাদা করে শুনতে পারি। আর ঠিক তখনই আমার মনে হয় যে এই পৃথিবীটাও একটা বিশাল বড় যন্ত্র। যার ছোট ছোট অংশ হল তুমি-আমি-আমরা। আমরা কেউই তাই বাড়তি নই, কোন যন্ত্রেরই কখনো কোন বাড়তি অংশ থাকে না। আমরাদের প্রত্যেকের আছে আলাদা কাজ, আলাদা সুর, আলাদা বৈশিষ্ট্য। তাই সমাজের চাওয়া-পাওয়ার কথা ভেবে তুমি কখনো হতাশ হবে না, নিজেকে নিয়ে হীনমণ্যতায় ভুগবে না। কারণ তুমি কখনোই ফেলনা নও, বড়জোর অন্যদের থেকে আলাদা হতে পার, কারণ তোমার মত বৈশিষ্ট্য, সুর আর কারও মাঝে নেই। তাই তুমি বিষণ্ণ হবে, দুঃখ পাবে কিন্তু কখনো নিজের অপারগতায় হতাশ হয়ে পড়বে না। যে যন্ত্রাংশের রূপ নিয়ে তুমি পৃথিবীর তরে কাজ করতে এসেছ, হয়ত তার কাজ কেবল ঐ ক্ষুদ্র অপারগতায় নয়, তার কাজ হয়ত আরও বিশাল, আরও মহৎ। সে মহৎ কাজের খোঁজ যে তোমায় পেতেই হবে, কারণ তুমি না করলে সে কাজটা যে আর কেউ কখনোই করে উঠতে পারবে না।
মনের ভেতর দ্বিধা
পা বাড়াতে বাধা,
শেকল পরা পায়ে
কদিন বাঁচা যায়?
বেঁচে থাকা যে দায়।
দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভোল্
মনের আগল খোল্
রক্ত-আবীর অঙ্গে মেখে
সূর্যস্নানে চল্।।
[ অনুপ্রেরণায়:
১. ম্যাথিউ ম্যাকে এবং প্যাট্রিক ফ্যানিং এর বই ‘সেলফ-এসটিম’
২. ব্রায়ান সেজনিক এর বই ‘দ্য ইনভেনশন অব হিউগো ক্যাবরেট’ ]
এই পোস্টের আগের পর্ব:
বিষণ্ন বিকেল, ছন্নছাড়া মেঘ আর তোমার গল্পআমার সাম্প্রতিক পোস্ট:
ভালোবাসার বায়োফিলসফিক্যাল ব্যবচ্ছেদ: একটি সম্পূর্ণ প্রেমময় পোস্ট
তুমি এত সুন্দর করে লেখ কি করে?
:love: :love:
এত তেল মারার কারণটা কী? 😳
ওহ নো আপু !
প্রশংসার প্রতিদানে এইভাবে বসায় দাও তুমি !!
আমি তো আরো লেখা পড়তে পড়তে ভাবতেছিলাম, চাকুম চুকুম একটা কমেন্ট দিবো !!!
পড়া শেষে প্রথম কমেন্টেই তোমার এহেন খোচা দেখে একটু দমে গেলুম … :voypaisi: :voypaisi: :voypaisi:
প্রশংসা পরিত্যাজ্য!
সমালোচনা করলে করবি আর না করলে আমার লেখার মেসেজ বুঝে থাকলে মাথায় রাখবি।
তোর সন্তানের জন্য যেন অন্তত কাজে লাগাতে পারিস। 😀
সত্যি কথা বললে তেল মারা লাগে নাহ? 😛
এতে তেল মারার কি আছে? কষ্ট পেলাম তোমার কথা শুনে :crying:
আমার কাছে ভালো লেগেছে তাই বলেছি। 😛
আচ্ছা বাবা ঠিক আছে, ঠিক আছে, কষ্ট পাবার কোন দরকার নেই।
আমি তো একটুশখানি দুষ্টুমি করেছি তোর সাথে। :love:
অনেক ভাল এক্সপ্লানেশান দিয়েছেন, কিন্তু লাভ নাইকা,কোন কিছুরই পরিবর্তন হবেনা
আপনার মন্তব্য পড়ে মনে হল যে আপনি আমার এক্সপ্লানেশানের সাথে একমত।
অন্যের কথা মূল্যায়ন করার আগে একবার নিজের কথা চিন্তা করে দেখুন।
অন্তত আপনার ছোট ভাই-বোন বা সন্তানের ক্ষেত্রে মানসিকভাবে আপনি পরিবর্তিত হবেন তো?
তা না হলে এই পোস্টের এক্সপ্লানেশান বুঝে কোন লাভ নেই।
ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন।
লেখাটা খুবই ভালো লাগলো আমার কাছে। আমাদের বিষণ্ণতাগুলো কেমন যেন ছড়িয়ে যাচ্ছে, গেছে… চারপাশে সবসময়ে জাজ হতে হতে আমাদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরে বলেই আমার মনে হয়েছে।
আপনার লেখাতে ছোট্ট বাচ্চাটার কথা শুনে খারাপ লাগা থেকে চিন্তার সেই স্রোতটা বয়ে এসেছে লেখাতে, সেটা খুব বাস্তবধর্মী আর চমতকার লেগেছে আমার কাছে।
অনেক ধন্যবাদ
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
কাছের মানুষগুলোকে ইতিবাচকভাবে ভাবতে ও কাজ করতে প্রভাবিত করুন।
পরিবর্তন আসবেই।
মচৎকার লিখছ কা’পু।
আসলে সন্তানের সাইকোলোজিটা আমাদের বাবা মা-রা খুব একটা বুঝতে চাইতেন না হয়তো সেসময় ।
নিজের একটা ঘটনা শেয়ার করি ।ছোটবেলায় কলকব্জার মাঝে থাকতে ভালো লাগতো । একটা ঝোলা ভরা নাট-বল্টু, চাক্কা, তার, মোটর ছিলো । স্বপ্ন দেখতাম ইঞ্জিনিয়ার হবো । ক্লাস নাইনে ওঠার পর আমার বাবা মা সাফ জানিয়ে দিলো, এইসব “মিস্তিরিগিরী” চলবে না । বংশে নাকি ডাক্তার নাই ,একটা ডাক্তার দরকার । সেই জন্যে তখন থেকেই বায়োলজি পড়তে হপে বেশি বেশি ! 😯 😯 😯
স্বভাবতই বেঁকে বসলাম । ফলাফলে একদিন স্কুল থেকে বাসায় ফিরে দেখলাম, ঝোলা সমেত আমার যন্ত্রপাতি সব গায়েব ! কাজের লোক জানালো, মার আদেশক্রমে ছেলেকে বায়োলজি মুখী করার নিমিত্তে সব বস্তাখানা ফেলে দেয়া হইছে !!
কি যে মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করছি কয়টা দিন !
কি লাভ হইলো তাতে ? ইন্টারের পর একটা বছর নষ্ট হইলো মেডিক্যাল মেডিক্যাল করে। শেষমেষ কিন্তু সেই আগের ট্র্যাকেই ফিরে আসলাম, ঘর ভরে ফেললাম কলকব্জা দিয়ে! মাঝখান থেকে হারায় গেলো কতগুলা সুন্দর সময় … ।
ছোটবেলার মতো বাবা মাকে দোষ দেই না এখন আর । বুঝি, এতো কষ্ট যাদের জন্যে করেন তাঁরা, সেই সন্তানের কাছে বাবামার অধিকারটুকুই তাঁদেরকে ওভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করে ।
কিন্তু তারপরও, একটু যদি সন্তানদের দিকটাও ভেবে দেখত , তাহলে হয়তো ছোটবেলায় অনেক বাচ্চাকেই আর তোমার ভাতিজির মতো এমন যন্ত্রণা ভোগ করতে হতো না ।
তবে আশার বিষয় এই যে, তোমরা যারা আগামী প্রজন্মের পিতামাতা হতে যাচ্ছ, তাদের মানসিকতা অনেক পরিবর্তিত । তোমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে আর এমন চাপ সহ্য করতে হবেনা আশা করি । 😛 😛 😛
বি.দ্র : একটুও তেল দিইনাই কিন্তু … :voypaisi: :voypaisi: :voypaisi:
“তোমরা যারা আগামী প্রজন্মের পিতামাতা হতে যাচ্ছ, তাদের মানসিকতা অনেক পরিবর্তিত । তোমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে আর এমন চাপ সহ্য করতে হবেনা আশা করি ।”>> শব্দটা ‘তোমরা’ না হয়ে ‘আমরা’ হলে শুনে বেশি ভালো লাগত।
আমি-তুমির বিভেদ যতদিন থাকবে ততদিন লক্ষ্য অর্জনে একটা ঘাটতি থেকেই যাবে।
“আমরা” 😛
:happy: :beshikhushi:
সেইম থিং হ্যাপেনস টু মাই একমাত্র ভাগ্নি… :'(
তুমি তোমার ভাইয়া-আপুকে বোঝাতে চেষ্টা কর।
ভাগ্নির এই দুর্দশা দেখতে নিশ্চয়ই ভালো লাগে না কারো। 🙁
গতকাল রাতেই এক মেয়ের সাথে অনেকক্ষণ কথা বললাম, সে আর তার বান্ধবী ডিপ্রেশনের রোগী। কথা বলতে বলতে আবারো বের হয়ে আসল, তাদের বাবা মা তাদের একাডেমিক সাফল্যে খুশি নন। এটা থেকে হীনম্মন্যতায় ভুগতে ভুগতে এখন নিজের যে কোন যোগ্যতা নিয়েই সন্দেহ। সত্যি, বাবা মায়েরা কি পড়ার জন্য চাপটাকে ছেলেমেয়েদের ‘লাইনে’ রাখার হাতিয়ার মনে করেন? আবার এমনো দেখি, পড়াশুনায় ভাল করলে তারপর তুমি যা ইচ্ছে কর, কোন বাধা নেই। পড়াশুনায় তাগাদা দেবেন ভাল কথা, সেটা একাডেমিকই হতে হবে কেন?
এখানে এক বড় ভাইয়ের কাছে প্রথমবারের মত ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দেখলাম, উনি বলেন, আমার ছেলে যদি পিজা ডেলিভারি জব নিয়ে খুশি থাকে, আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ যদি খুশি থাকেন ওর উপর, who am I to complain about? কান জুড়িয়ে গেছে শুনে।
যাই হোক, আপু! এই লেখাটা ছড়ানো খুব দরকার, স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েদের কাছে। চিন্তা করে দেখ ত, কোন মাধ্যম আছে কি না ছড়ানোর?
সেই ভাইয়ার চিন্তা-চেতনা জানতে পেরে আমারও মনটা জুড়িয়ে গেল আপু। :beshikhushi:
ডিপ্রেশনের রোগীদের জন্য আসলে সাইকোলজিকাল সাপোর্ট খুব দরকার।
একটা টেডটকে শুনেছিলাম যে ডিপ্রেশনের কারণ একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হয়। সেই কারণ সনাক্ত করে একেবারে গোড়া থেকে মানসিক চিকিৎসা দেয়া উচিত।
ওষুধের চেয়ে মানসিক সাপোর্ট অনেক বেশি ভূমিকা রাখে বিষণ্নতা লাঘবে।
লেখাটা ছড়ানোর আইডিয়া আসলে আপাতত আমার জানা নেই আপু।
তবে লেখাটা স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকদের পড়াতে পারলে খুব খুশি হতাম।
এইবার লেখাটা পড়ে মন্তব্য করছি। রেফারেন্স এর জন্য ধন্যবাদ। কাজে লাগবে। আমার একটা নতুন শ্লোগান আছে, ‘বাংলার জমিন রাখিব ডিপ্রেশন মুক্ত’
শিবলী ভাই এর দুটো ভিডিও আছে ‘১০০ তে ১০০ পেতে হবে’, চমৎকার!
ডিপ্রেশন নিয়ে মনে হয় অনেকেই কাজ করতে আগ্রহী হবে, কারণ ভুক্তভোগী অনেক। কী করা যায় আইডিয়া দাও।
লিঙ্কও সাথে দিলে পাঠকের সুবিধা হয়! অনেক সময় মানুষ বুঝতে পারে না কী নিয়ে আলোচনা হচ্ছে! 😀
ভাল কথা বলেছ। লিংক কীভাবে দেয়? এই সহজ কাজটা পারিনা, মানে শিখিনি এখনও।
আপু, ফেসবুক নোটে যেভাবে হাইপারলিংক যোগ করে সেভাবেই এখানে লিংক যোগ করা যায়।
নিয়মটা হল:
< a (স্পেস) href = " তারপর আকাঙ্খিত পোস্টের লিংক যা সরাসরি ব্রাউজারের অ্যাড্রেস বার থেকে কপি-পেস্ট করে দেয়া যায় " > যে শব্দ/বাক্যকে আপনি হাইপারলিংক হিসেবে বোঝাতে চান যেমন, বোহেমিয়ান তার মন্তব্যে হাইপারলিংক বোঝাতে লিখেছেন, লিঙ্কও
ব্যস হয়ে গেল!
এবার ‘মন্তব্য প্রকাশ’এ ক্লিক করলেই হয়ে যাবে! 😀
dekhi to
pari kina!
এতবার স্পেস আর এন্টার দিয়ে লিখলাম তাও সব গুবলেট হয়ে গেল! 🙁
আমি ফেবু ইনবক্সে তোমাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি আপু।
ওহ না, হয়েছে দেখছি! :happy:
শিবলী ভাইয়ার ভিডিওর লিংক দিয়ে দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ বোহেমিয়ান ভাইয়া। 😀
লেখার বিষয় বস্তু পরিবেশনা বরাবরের মতো জোশ। এই রকম জরুরি লেখাগুলোর জন্যই তো সরব!
(শুরু আর শেষটায় কি সামান্য মেদ জমেছিল? মানে এই জায়গায় কেউ কেউ বিরক্ত হয়েছে – এই রকম ঘটনা ঘটেছে কি?)
শিরোনামে ডিপ্রেশন আসা উচিৎ ছিল? মানে কাব্যের ভীরে হারিয়ে গেল লেখার আসল কথা?
এখন পর্যন্ত যারা ফিডব্যাক দিয়েছেন তারা কেউ শুরু আর শেষটা নিয়ে অভিযোগ করেন নি, এটা অবশ্য তোমাকে ফেবুতেও বলেছি। তোমার কী মনে হয় ভাইয়া? মেদ জমেছিল? :thinking:
বিষণ্নতার পোস্টগুলো একই শিরোনামের পর্ব হিসেবে রাখতে চেয়েছিলাম, পোস্ট তুলনামূলক বুঝতে পারার সুবিধার জন্য।
এটা ভুল হল কিনা, বুঝতে পারছি না। 😳
তবে ভুল যেটা হয়েছে সেটা হচ্ছে আমার টার্গেট অডিয়েন্স যারা তারা অনলাইনে খুব একটা সুপ্রাপ্য নয়। অভিভাবকদের কাছে মেসেজটা পৌঁছাতে এ কারণেই ব্যর্থ হয়েছি। :crying:
যদি সত্যিই সত্যিই আমার মনের কথাগুলি লিখতে থাকি এই বিষয়ে, তবে দেখা যাবে তোমার লেখার ৫ গুন বড় হয়ে যাবে আমার মন্তব্য। কিন্তু মজার বিষয় এই যে, বিগত ২৮ সেপ্ট ও ৫ অক্টবরে যে দুটো parenting conference এ বক্তব্য দিলাম সেখানে আমার বিষয় ছিলো ‘expectation vs. reality’ বা ‘প্রত্যাশা ও বাস্তবতা’।
ঠিক এই বিষয়গুলিই উঠে এসেছে। সেখানে ৪টি বাস্তব ঘটনা তুলে ধরি যেখানে মা ও শিক্ষক কিভাবে শিশুদের নির্যাতন করেছে শুধুমাত্র তাদের expectation full fill হয়নি বলে। বিশ্বাস করো ছন্দা, সেখানকার প্রায় ২০০-২৫০ মায়েরা ও প্রায় ১০০ বাবারা বুঝতে পেরেছেন আসলেই আমরা মা-বাবারা কতোটা aggressive হয়ে গেছি।
তবে আরেকটি কথা বলি, আমি খুব রিয়ালাইজ করতাম যে, শুধু অনলাইনে লেখা লেখি করে বা কিছু ভিডিও ক্লিপ বানিয়ে খুব অল্প কিছু parents দের সচেতন করা যায়। কিন্তু যারা অনলাইনে বসতে পারেন না তাদের কাছে পৌঁছুতে হলে প্রোগ্রাম করতে হবে, meeting করতে হবে, parenting adda করতে হবে। এই parenting conference দুটো করে আমি একটা বিষয় বুঝতে পেরেছি যে, লাইভ প্রোগ্রাম বেশি বেশি করতেই হবে আর সম্ভবত সেটাই হবে care করা।
আপু, তুমি নিজেই এই লেখাটা ‘শিশু লালন পালন’ গ্রুপে শেয়ার দিয়ে দাও। 🙂
ঠিক এই কথাটাই বোহেমিয়ানের রিপ্লাই এ বললাম আমি!
অনলাইনে অভিভাবকদের পাওয়াটা কষ্টকর। তাই আমার পোস্টটা তাদের দোর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি নি। 🙁
প্যারেন্টিং আড্ডা মিস করলাম দুটোই!
ভাইয়া, পরেরবার আমাকে প্লিজ একটু নক করবেন।
এরকম একটা আড্ডায় যোগ দেবার আমার খুব ইচ্ছা!
গ্রুপে শেয়ার দেব আমি?
আচ্ছা, ইনশাআল্লাহ দিয়ে দেব।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
এইতো ঈদের আগেই একটা ধানমন্ডিতে parenting meeting (ছোট আকারে) করার প্ল্যান করলাম কিন্তু হঠাৎ করে সেখানে বিল্ডিং আর রং এর কাজ শুরু হওয়ায় বাদ দিলাম। কারণ শব্দে আর রং এর গন্ধে প্রোগ্রাম সম্ভব হবে না। তাই ঈদের পরেই হয়তো করবো। ইন্শাআল্লাহ্ নক করবো। 🙂
খুব সুন্দর। :happy: পড়তে খুব ভালো লাগছিল… কেন শেষ হয়ে গেল…
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
তোমার আশেপাশের মানুষগুলোকেও পারলে এই মেসেজটা বোঝাতে সাহায্য ক’রো।
কষ্ট করে এমন পোস্ট যেন আমাকে আর লিখতেই না হয়! 😛
পুরোন কথা নতুন করে………তাও ভালোই লাগলো………
পুরনো কথা বারবার লেখাটা সত্যি কষ্টের।
যদি লেখার মেসেজ বুঝে থাকেন তাহলে কাছের মানুষগুলোকে সেই মেসেজটা বুঝিয়ে দিতে সাহায্য করবেন, যাতে আমাকে এমন পুরনো কথা আর লিখতে না হয়।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। 🙂
চেতনার গভীরে, আপনজনের অনুভূতির অন্তরালে আমি কাঁদি। ধুলো পড়া পুরনো অনুভূতির খাতায় হাত দিয়ে ভাল কিছু কর নি মা পা। অন্যের জন্য সুন্দর পৃথিবী চাইতে গিয়ে আমার ক্ষত কে জাগিয়ে দিলে।
মাঝে মাঝে নিজের ক্ষত দেখে অনেক কিছুই শেখা যায় নতুন করে- অন্তত আমি তাই বিশ্বাস করি। হয়ত নিজের সুয়টা পার হয়ে গেছে কিন্তু আগামী প্রজন্মের জন্য এটাই কিন্তু শুরু। নিজের ক্ষত আগামী প্রজন্মকেও যেন গ্রাস করতে না পারে, তার জন্য চেষ্টা করতে হবে আমাদের সবাইকে।
কঠিন তবে অসাধ্য নয়। চেষ্টা করবো মা পা।
চেষ্টাটাই জরুরি! 🙂
🙁
লেখার বিষয়বস্তুকে সাধুবাদ জানাই।
তোর এই টুকরো টুকরো অনুভূতিকে আর উপলব্ধিগুলোকে শব্দে সাজানো ভালো পাই। তবে লেখার সমাপ্তিটুকু আগের রম্য লেখাটার মত পাঞ্চিং হলে জমতো আরও ভালো। 😐 :beshikhushi:
এই লেখাআ লিখে আমিও খুব একটা সন্তুষ্টির ভেতরে নেই।
এবারের পাঞ্চটা আগেরটার মত শক্তিশালী ছিল না, সত্যি। 🙁
পরেরবার চেষ্টা করব আপু।
এত দেরি করে হলেও তুমি যে আমার লেখাটা পড়েছ, আবার সময় বের করে মন্তব্যও করেছ সেজন্য তোমার প্রতি অনেক ভালোবাসা জানিয়ে গেলাম।
কাছের মানুষকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না। :beshikhushi:
লাব্বিউ 🙂
আমি ঠিক বুঝি না, আজকাল মা-বাবারা বাচ্চাদের উপর এতো চাপিয়ে দেন কেন সবকিছু! আজ থেকে দশটা বছর আগেও তো এমন অবস্থা ছিলো না। তাতে কি আমরা ফেলনা হয়ে গিয়েছি? ছেলেমেয়ের সবকিছুই বাবা-মা নির্ধারণ করে দিব-এই ভুল ধারণা থেকে বের না হয়ে আসতে পারলে ভবিষ্যৎ-এ একটা ভয়ংকর প্রজন্ম আসতে যাচ্ছে, যারা এমনকি নিজের সিদ্ধান্তও নিজে নিতে পারবে না।
সবাইকে নিজের ঘর থেকে শুরু করতে হবে, এই অর্থহীনতার বিরুদ্ধে পথচলা।
সুন্দর লেখা।