মধ্যম আয়ের মধ্যম সারির একজন ব্যাংক কর্মকর্তার কথা জানলাম । সোনালী ব্যাঙ্কের প্রধান কার্যালয়ের আন্তর্জাতিক অর্থায়ন বিভাগের জিএম এবং এক কালের রাষ্ট্রায়ত্ব অর্থলগ্নি খাত “সোনালী ব্যাঙ্ক লিমিটেডের” সাম্প্রতিক সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লুটের ঘটনায় গঠিত অডিট টিমের সাহসী পরিচালক তিনি। সরকারের হোমরাচোমরা এবং উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সংঘটিত “হলমার্ক কেলেঙ্কারী”-র রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে অসংখ্য চোখ রাঙানি, হুমকি, ধামকি কিম্বা লোভের কাছে অপরাজিত এই মানুষটির নিরলস পরিশ্রমে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সব চাইতে বড় অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারীর জন্যে দায়ী প্রকৃত অপরাধীদের নাম । অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে লিখিত নোটিশ দেয়ার পরও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার অনুমতি পেতে এই কর্মকর্তাকে উপরওয়ালাদের বহু হুমকি, ধমকি সহ্য করতে হলেও এখন সোনালী ব্যাঙ্কের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পর্ষদের ভুড়ি সর্বস্ব কর্মকর্তাদের হাল চাল দেখে মনে হচ্ছে, তাদের “সর্বাত্নক সহযোগীতাতেই” এই কেলেঙ্কারীর প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে এসেছে ! অন্তত BBC-বাংলাকে দেয়া সোনালী ব্যাঙ্কের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার বিবৃতির স্টাইল দেখে আমার তাই মনে হয়েছে !
উন্নত বিশ্বে এই ধরনের ঘটনায় এতদিনে তোলপাড় হয়ে যাওয়ার কথা । দ্রুত বিচারে দোষী সাব্যস্ত করে জড়িতদের ধরে শ্রীঘরে পাঠানোর কথা । অথচ বাংলাদেশে বহুল আলোচিত “হলমার্ক কেলেঙ্কারী”-র ঘটনা এখন নিজেই হিমঘরে যেতে বসেছে প্রায় । কারণ – ঘটনার সাথে উচ্চ পর্যায়ের হর্তাকর্তারা জড়িত ! যেখানে সরকারের উচিত ছিলো সোনালী ব্যাঙ্কের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে দোষী পরিচালক ও সহকারী পরিচালকদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো, সেখানে তাদের স্রেফ সাময়িক বরখাস্ত করে “তদন্ত চলমান” বলে জনগণকে চম্পা কলা দেখানো হচ্ছে ! নাটেরগুরুদের দুনিয়ায় মুক্ত বিচরণশীল রেখে দাবার গুটি হলমার্কের এমডি , জিএমকে শতদিনের(!) রিমান্ডে নেয়ার মাধ্যমে শুরু হয়েছে নখ-দন্ত বিহীন দুদকের ধুক পুকানি। যেদেশে কোটি টাকা গায়েব হয়ে যাওয়া শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারীর রহস্য উন্মোচনের দুদকীয় রিপোর্ট অর্থমন্ত্রীর ওয়েস্ট পেপারবিনের শোভা বাড়ায়, রেলের “কোটি টাকার বস্তা” রহস্যের রিপোর্ট টাকা সমেত “কালোবিড়ালের” পেটে চলে যায় কিম্বা পদ্মা সেতু প্রকল্পের “আবুলীয় দুর্নীতির” অভিযোগ তদন্তের রিপোর্ট আলোর মুখ দেখার সুযোগ পায় না, সেদেশে কবে দুদকের এই তদন্ত ট্রেন তার গন্তব্য স্থলে পৌছবে, কবে পাওয়া যাবে চূড়ান্ত রিপোর্ট, বা আদৌ কিছু পাওয়া যাবে কিনা – সেটা নিয়ে ঘোরতর সন্দেহ করার যথেষ্ট অবকাশ আমাদের আছে বৈকি ! দুর্নীতি দমন কমিশন এখন আর দুর্নীতি দমন নয়, বরং দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়ার যন্ত্রে পরিণত হয়েছে । তাই অবিলম্বে দুদকের নাম কিঞ্চিত পরিবর্তন করে “দুর্নীতি ধামাচাপা কমিশন – দুধাক” রাখার প্রস্তাবনা আসা উচিত।
আরো বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, যে সাহসী কর্মকর্তার নায়কোচিত নেতৃত্বে “হলমার্ক কেলেঙ্কারীর” রহস্য প্রথম উন্মোচিত হলো, তাকেই কিনা নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে ঢাকা থেকে বদলি করে মফস্বলে ! কি দারুণ প্রতিদান !! ইতোমধ্যে তার নামে করা হয়েছে ১১ টি মামলা, হয়েছেন বিভিন্নমহলের বিরাগভাজন।এর চূড়ান্ত ফলাফল কি হতে পারে, তা অনুমান করতেও দম বন্ধ হয়ে আসে। বেডরুমে নিরাপত্তা দিতে অপারগ এই সরকারের আমলে আরো অনেক “হারিয়ে যাওয়ার” মতো হয়তো একদিন আমরা পত্রিকা খুলে এই নির্ভীক মানুষটার হারিয়ে যাওয়ার খবরও পড়ব ,আর আফসোস করবো! সেইদিনটা হবে আমাদের ইতিহাসে আরেকটা কালোদিন । এরকম অসংখ্য কালোদিন আর কালো অধ্যায়ে জর্জরিত একটুকরো ইতিহাস নিয়েও আমরা রাজনৈতিক মঞ্চে, টিভির ক্যামেরায় কিম্বা হালের জনপ্রিয় কোনো R.J-র কন্ঠে শুনতে পাবো – বাঙ্গালীর গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের বিপন্নপ্রায় অবস্থিতির দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা !
যাইহোক । চম্পা কলা খাওয়া জনগণ সব কিছুতেই সন্তুষ্ট থাকে, ভবিষ্যতেও থাকবে ।
তবে সময়ের এই সাহসী বীর জনাব মাসরুরুল হুদা সিরাজী এবং এই দু:সাহসিক কাজে তাঁর ওপর দুই সহযোগী ডিজিএম জনাব আবু জাফর ও এজিএম জনাব শওকত আলীর জন্যে লাখো তরুনের হৃদয়ে থাকবে নিখাদ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। লজ্জা হচ্ছে – এই দেশপ্রেমিক অকুতোভয় মানুষগুলো এবং তাঁদের পেছনে থাকা পরিবারগুলোর জন্যে এই দুঃসময়ে দুয়া আর সহমর্মিতা জ্ঞাপন ছাড়া আর তেমন কিছুই করতে পারছিনা দেখে।
বিভিন্ন স্থানে, নানান প্রয়োজনে বহু মানুষের সাথেই দেখা করতে হয়। আমি মনে প্রাণে চাই,এই নির্ভীক মানুষগুলোর সন্তানদের সাথে দৈবক্রমে দেখা হয়ে যাক কোনো একদিন। কিম্বা আমার এই লেখা তাদের কারো চোখে পড়ুক। তারা জানুক – “ভাষাসৈনিকের সন্তান”, “মুক্তিযোদ্ধার সন্তান” কিম্বা কোনো “শহীদ বুদ্ধিজীবির সন্তান” অপেক্ষা তোমরা আমাদের কাছে কোনো অংশে কম মূল্যবান নও । তোমাদের বাবাদের মত অসমসাহসী অকুতোভয় মানুষের জন্যেই এতো হতাশার মাঝেও আমাদের এই স্বপ্ন দেখা, নতুন দিনের আশায় মাথা উচুঁ করে নিরন্তর সামনে এগিয়ে যাওয়া।
অনেক ভাল লাগলো লেখাটা।
“চম্পা কলা খাওয়া জনগণ সব কিছুতেই সন্তুষ্ট থাকে, ভবিষ্যতেও থাকবে।” 🙁
🙁 🙁 🙁
“চম্পা কলা খাওয়া জনগণ সব কিছুতেই সন্তুষ্ট থাকে, ভবিষ্যতেও থাকবে।”
আমাদেরকেই জাগাতে হবে এদের!
কতো রাত কেটে গেলো –
বিষাদের শতদলে ,
কতো স্বপ্ন ধুয়ে গেলো
হতাশার নোনাজলে।
কতো প্রাণ অস্ফুটে –
ঝরে গেলো নির্জনে ,
তবু ভাবি ভোর আসুক
কোটি জনতার জাগরণে।
অনেকক্ষণ চেষ্টা করছি মন্তব্য লেখার।
কিন্তু কি লিখব!!!
…
🙁 🙁
ভালো লেগেছে
ঘটনাটা জানা, তবু বারবার এই বিষয়ের লেখা পড়লে মন্তব্যের ভাষা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হই।
আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?