ইসরাইলের এক ডে কেয়ার সেন্টারে অনেক অভিভাবকই বাচ্চাদের নির্ধারিত সময়ের পরে এসে নিয়ে যেতেন। এই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য ডে কেয়ার সেন্টার জরিমানা করা শুরু করল অভিভাবকদের। ভাবল জরিমানার ভয়ে অভিভাবকরা তাড়াতাড়ি নিতে আসবে! কিন্তু ফলাফল দেখা গেলো উলটা হলো। অভিভাবকরা এবারে বেশি করে লেইট করা শুরু করলেন। অভিভাবকরা আগে যেখানে গিল্টি ফিল করতেন নিজেদের দায়িত্ব পালন না করার জন্য, এখন ভাবলেন তারা তো বিনিময়ে টাকা দিচ্ছেনই! এবারে তাদের মধ্যে গিল্টি ফিলিংসটাও রইলো না!
কোন একটা মানবীয়/ সামাজিক সম্পর্কে টাকার প্রশ্ন আসলে সেটা বদলে যেতে পারে। সেটা শুধু অর্থনীতির জন্যই খারাপ এমন না। সেটা সামাজিক মানুষ হিসেবে আমাদের জন্যও খারাপ।
পড়ছিলাম পাবলিক ফিলোসফার ((http://www.justiceharvard.org/)) হার্ভার্ডের পলিটিকাল ফিলোসফার মাইকেল স্যান্ডাল এর হোয়াট মানি কান্ট বায় ((উনি বিখ্যাত জাস্টিস বইটির লেখক। আর উনার এই বিষয়ে লেকচারও দারুণ রকমের জনপ্রিয়))। উদাহরণ আর প্রশ্ন। শুধু এর মাধ্যমেই তিনি বইটাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আর তাঁর চিন্তার পথ ধরে আমরাও এগুতে থাকি। নৈতিকতার সংজ্ঞায়ন/ এলাকা নির্ধারণ ছাড়াই নৈতিক সব প্রশ্ন করে ভাবিয়েছেন এবং ভাবনার খোরাক যুগিয়েছেন। কিছু দিন আগে নৈতিকতা নিয়ে আরেকটি চমৎকার বই পড়েছি, দি রাইচাস মাইন্ড, লেখক একজন মোরাল সাইকোলজিস্ট জোনাথন হাইড ((http://people.virginia.edu/~jdh6n/))।
কয়েকটি উদাহরণ দেখা যাক।
৮২ ডলার। ক্যালিফোর্নিয়া সহ কিছু শহরে, অন্য কয়েদীদের জ্বালাতন থেকে বাঁচার জন্য শান্তিপ্রিয় অপরাধীরা টাকার বিনিময়ে পরিচ্ছন্ন আর নিরালা কামরার ব্যবস্থা করতে পারেন। কয়েদীদের মধ্যেও উঁচু নিচু আছে বৈকি!
৮ ডলার। মিনিয়াপলিস, সান দিয়েগো, হিউস্টন, সিয়াট্ল, আর অন্য কিছু শহর যানজট কমানোর জন্য যাত্রীবিহীন, শুধু চালকসহ গাড়িকে টাকার বিনিময়ে কারপুল লেইনে চলার অনুমতি দিয়েছে। টাকার পরিমাণ রাস্তায় গাড়ির সংখ্যার ওপর নির্ভর করে ওঠানামা করে। জ্যাম বাড়ানো হালাল, পকেট এ যদি থাকে মাল!
২৫০,০০০ ডলার। দক্ষিণ আফ্রিকায় বিপন্ন প্রজাতির রাইনো হত্যা করতে পারবেন আপনি যদি পর্যাপ্ত টাকা দিতে পারেন!
ধনী দেশগুলো টাকার বিনিময়ে পরিবেশ দূষণের লাইসেন্স পায়/নেয়/দেয়!
শুধু অর্থ ব্যয় নয়! আয়ের ক্ষেত্রেও অনেক কিছুই বদলেছে!!
বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের জন্য কপালের জায়গা বিক্রি: ১০,০০০ ডলার। ছেলের পড়াশোনার জন্য টাকার দরকার – ইউটাহ্ প্রদেশের এমন এক সিঙ্গেল মাদারকে এক অনলাইন ক্যাসিনো ১০,০০০ ডলার দিয়েছে, বিনিময়ে ঐ ক্যাসিনোর ওয়েব অ্যাড্রেস লেখা একটা স্থায়ী উলকি আঁকা হবে তার কপালে। অস্থায়ী উলকির বিজ্ঞাপনের পারিশ্রমিক অবশ্য তুলনামূলকভাবে কম।
টাকা পয়সার আদান প্রদান কোথায় এসে থামলে আমরা বলতে পারব যে আমরা নৈতিক ভাবে ঠিক আছি? The Moral Limits of Markets বইটির সাব টাইটেল। নৈতিকভাবে বাজার এর লম্বা হাত কত দূর পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য?
আমরা এমন একটা সময়ে বাস করি, যখন প্রায় সবকিছুই কেনাবেচা করা যায়। বিগত তিন দশক ধরে বাজার আর বাজারমূল্য এমনভাবে আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছে, যেমনটা আগে কখনো হয় নি। আমরা যে নিজেদের কোন সিদ্ধান্তের কারণে ইচ্ছা করে এই পরিস্থিতিতে এসে পৌঁছেছি এমন নয়। এটা যেন অবধারিতভাবেই আমাদের জীবনে চলে এসেছে।
বইতে ৫ টি চ্যাপ্টার আছে।
Jumping the queue (আপনি আপনার প্রিয় ফুটবল দলের ফ্যান। বিশাল লম্বা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন ৫ ঘণ্টা ধরে। টিকিট বিক্রির ঠিক আগ মুহুর্তে বুঝলেন আপনার সামনে দাঁড়ানো লোকটি আর কেউ নন একজন ভাড়াটে লোক। টাকার বিনিময়ে আরেকজনের জন্য দাঁড়িয়ে আছে। আপনার কেমন লাগবে? আপনার কাছে নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে এই বিষয়?)
Incentives (আপনার বাচ্চাকে আম্মু/আব্বু ভালোবাসি বলার জন্য ক্যাশ টাকা দিবেন? বই পড়ার জন্য? ইন্সেন্টিভ নির্ভর আলোচনার জন্য ফ্রিকোনোমিক্স বইটির ব্যাপারে ব্যাপক প্রশ্ন তোলা হয়েছে।)
How Markets Crowd out Morals (রক্তদানের মতো চমৎকার প্রক্রিয়ায় টাকা পয়সা আসলে কীভাবে সেটা নেতিবাচক হয় সেটা দেখানো হয়েছে)
Markets in life and death (এই চ্যাপ্টার সবচেয়ে ভয়াবহ মনে হয়েছে। ভয়াবহ কিছু উদাহরণ দিয়ে বুঝানো হয়েছে। ভবিষ্যতে আরেকটা লেখা দেয়া যেতে পারে এটার উপর)
Naming Right (বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে নানান জায়গায় আপনি টাকা ঢাললেই আপনার নামে সেই প্রতিষ্ঠান ডিপার্টমেন্ট এর নাম হয়ে যাবে?)
প্রতিটি চ্যাপ্টারেই চিন্তা জাগানিয়া নানান সত্য উদাহরণ এর মাধ্যমে প্রশ্ন তোলা হয়েছে আমাদের নব্য বাজার নির্ভর, বাজার কেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থার!
বইটিতে স্যান্ডালের মূল প্রশ্ন
“The question of markets is really a question about how we want to live together. Do we want a society where everything is up for sale? Or are there certain moral and civic goods that markets do not honor and money cannot buy?”
চিন্তা জাগানিয়া বইটা বেশ ছোট। মাত্র ২০৩ পেইজ!
এই বইটি যিনি লিখেছেন তিনি একজন রাজনৈতিক দার্শনিক, তাই স্বাভাবিক ভাবেই অর্থনীতি নিয়ে তাঁর দর্শন সব অর্থনীতিবিদ ভালোভাবে নেন নি। তাঁর এই বই নিয়ে চমৎকার বেশ কিছু আলোচনা হয়েছে। সেই সবও পাঠক দেখতে পারেন। একটা বই পড়ে সেটাই অন্ধের মতো বিশ্বাস করা ক্রিটিকাল থিংকার এর বৈশিষ্ট্য না!
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যদি চিন্তা করি তাহলে কেমন হতে পারে? (আপনাদের কাছেই উদাহরণ চাচ্ছি)
আমাদের ২১ শে ফেব্রুয়ারি/ ১৬ ডিসেম্বর/ মুক্তিযুদ্ধ/ ধর্মীয় আচার … সব কিছুতেই কি বাজার ঢুকে পড়ছে না? আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলির অবস্থাও কি এক হচ্ছে না? কিছুদিন আগে একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপন নিয়ে যে আমরা এত হৈচৈ করলাম এর পেছনে বাজার এর ভূমিকা কতটুকু ছিল?
সব জায়গাতেই কি বাজার আমাদের হ্যাপিনেস নির্ধারণ করছে না? KFC is Happiness / Happiness is Speed এই রকম বিজ্ঞাপন কি সুখকে নতুনভাবে নির্ধারণ করার চেষ্টা করছে না?
রমজানের ইফতারের আজান পর্যন্ত বিজ্ঞাপনদাতার নামে হয় ((এই বই এর চ্যাপ্টার ৫ এই নাম প্রদান নিয়েই)) ‘মোবারক সল্ট’ মাগরিবের আজান। অনেককেই দেখেছি রেগে উঠতে এই রকম করায়। আমাদের জাতীয় সংগীত প্রচার করার সময় যদি কেউ এই রকম বলে আমাদের কেমন লাগবে? কিংবা ধরুন জাতীয় পতাকার গায়ে লিখল সৌজন্যে গ্রামীণ ফোন!
আসুন বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বাজার এর নৈতিক সীমা নির্ধারণ নিয়ে কথা বলি!
এইত কদিন আগেই ফেবুতে স্ট্যাটাস দিলা- অনেক টাকা দরকার !!!
হাহা! ভাই টাকার দরকার আর টাকায় সব পাওয়া যাওয়াটা তো আলাদা বিষয় 😛
btw ব্যবস্থা হইছে? 😀
need bangla translation of the book 🙁
বইটা পড়তে আগ্রহ হচ্ছে।
লেখকের ভাবনাগুলির সাথে একমত। সমালোচনা পড়ার আগেই বোঝার চেষ্টা করছি এটার বিপক্ষে কী কী কথা আসতে পারে।
আরেকটু ভেবেচিন্তে পরে মন্তব্য করবো ইনশাআল্লাহ্। 🙂
ভাবনা জাগানো লেখা!! অনেক আলোচনা হতে পারে……
বাজার আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে কিংবা আমাদের অতি ভোগ প্রবণতা এবং পণ্য প্রেম আমাদের কে বাজার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে direct করছে, মনে হয় এভাবেও দেখা যায়……
পরিবেশ দূষণ কেনা-বেচা নিয়ে মজার কিছু জিনিস মনে পড়ছে। আমাদের ইউনিতে ১-১ এ একটা কোর্স পড়তে হয় আমাদের ডিপার্টন্টে, নাম-energy, environment, society. সেখানে kyoto protocol পড়ানো হয়। kyoto protocol er তিনটা মার্কেট বেইজড মেকানিজম এর এক্টাই হলো –কার্বন ক্রেডিট। ধনী দেশ গুলো[ অন্য দেশের সামর্থ নেই, বলাই বাহুল্য… ] টাকার বিনিময়ে আরো বেশি কারন নির্গমন করতে পারবে। আর দরিদ্র দেশ গুলো যেহেতু প্রযুক্তিতে এগিয়ে নেই, সো তারা নিয়ন্ত্রিত মাত্রার কার্বন ও নির্গমন করে না, আর তাই বেচে দাও উন্নত বিশ্বের কাছে!! আর তাইএই protocol এর success analysis করতে গেলে protocol এর মেকানিজমটাই প্রথমে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।
সো, আমদের এমন একটা কিছু করা উচিত, যেটা ইউনিফর্ম ওয়েতে সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট এর কথা বলবে। কিন্তু ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট হল–আমাদের এই কোর্স এর বদলে আগে সোশিওলজি পড়তে হত। আর সেটা নাকি বেশ মুখস্ত বিদ্যা, প্রযুক্তির সাথে আমাদের চারপাশ এর নিবিড় সংযোগ, এই বোধ ছাত্রদের মাথায় ঢোকাতেই নতুন কোর্সের আগমন। কিন্তু দেখা গেল, তারা পরিবেশ সচেতনতার কথা উপলব্ধি করার চাইতে সোশিওলজি মুখস্ত করতেই আগ্রহী। তা্রা প্রযুক্তির নতুন উদ্ভাবনে আগ্রহী, কিন্তু এর সাথে মানুষ ও প্রতিবেশ এর ভেতরকার সম্পর্ক নিয়ে ভাবিত হতে নারাজ।
মনে হয় এখন আমরা নগদ কিছু লাভ সংগ্রহ করতে অতি উৎসাহী। আমাদের ভাবনায় গভীরতা কমছে, কিন্তু ব্যাপ্তি বাড়ছে। তাই আমাদের চিন্তা-চেতনা সবকিছু হচ্ছে product কেন্দ্রিক, আর আমরাই এর ফলে বাজারকে প্রসার এর সুযোগ করে দিচ্ছি নৈতিকতার সীমারেখার বাইরে।
এ জাতীয় কথাবার্তা আমিও শুনেছিলাম। আর অবাক হয়েছিলাম। টাকার বিনিময়ে পরিবেশের ক্ষতি করার লাইসেন্স দেওয়ার একটা অদ্ভুত নিয়ম ছিল এইটা।
আমার প্রশ্ন হলো, এ ধরনের প্রকল্প যারা হাতে নেন, তাদেরকে তখন কি কোন সমালোচনা করা হয় নি?
শুধু কিয়োটো প্রটোকল না, কোপেনহেগেন এ্যকর্ড সহ যত গুলো পরিবেশ সুংরক্ষণের জন্য চুক্তি ইত্যাদি হয়েছে, ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যায় সবগুলোই আল্টিমেইটলি ভালোর আড়ালে এমন কিছু কাজকে বৈধতা দিচ্ছে যা আমাদের কিছু কিছু দিকে বিশাল ক্ষতি করছে। এবং দুঃখজনক ব্যাপার হলো এই ক্ষতিকর কাজগুলো বৈধ! সো লংটার্ম শেষে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই কারণ আপনি, মানে আপনার দেশ প্রটোকলে র্যাটিফাই করেছে!!!
সমালোচনা হয়নি ঠিক তা না, তবে কিছু আর্টিকেলের সমালোচনা হয়তো যথেষ্ট ছিলো না……আবার সত্যি করে বললে আমাদের ম্যাস লেভেলে সচেতনতা অনেক কম। আমরা তুলনামুলক কম গুরুত্বপুর্ণ জিনিস নিয়ে মাতামাতি বেশি করি, অথচ প্রয়োজনীয় জিনিসে দৃষ্টি দেই কম…
আর কিছু বাধাও আছে সত্যি। যেমন আপনি ধরুন পরিবারে কনিষ্ঠ সদস্য। বাকি সবাই যেহেতু সমুদ্রে বেড়াতে যেতে চাই, পাহাড় পছন্দ করলেও তাদের মতটাই মেনে নিতে হচ্ছে আপনাকে। অন্যদিকে বাবা বলছেন, সোনা, সমুদ্রে চল, তোমাকে চকলেট কিনে দেব অনেক। চকলেট এর জন্য আপনার ভালোবাসাও অনেক।
সমস্যা গুলো বিভিন্ন আঙ্গিক এর।
আবার সমালোচনা ও নিরপেক্ষ নয় সবসময়, আপ্নার বাবা যখন মন্ত্রী, তখন তাঁর কাজের পক্ষে অনেক যুক্তি খঁজে পাবেন আপনি, যেটা অন্য কেউ পাবে না।
🙁
এতো কিছুর পরেও আমার জানা মতে উন্নত দেশগুলো কিয়োটো প্রোটোকল এখনও মেনে নেয় নি। 😳
আর, বেশি টাকা নেয়াটা জরিমানা হিসেবে। যেন, জরিমানা দিতে দিতে বিরক্ত হয়ে পরিবেশ দূষণমুক্ত কোন পদ্ধতি তারা আবিষ্কার করে-সেটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য।
দেরিতে মন্তব্যটা দেখলাম।
উন্নত কিছু দেশ, যেমন আমেরিকা কিয়োটো প্রটোকল র্যাটিফাই করেনি, কারণ তারা তাদের দূষণের মাত্রা কমাতে রাজি না নয়!!
কিসের বেশি টাকা/জরিমানার কথা বললেন ঠিক বুঝিনি।
আর কিয়োটো প্রটোকলের অনেক ভাল দিক আছে, আগের মন্তব্যেই বলেছি! কথা হলো তারা নিরপেক্ষ কিছু না, এবং পুরো ট্রান্সপারেন্ট না
প্রটোকলগুলোতে বলা আছে, কোন দেশ যদি নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি পরিমাণ দূষণ ছড়ায়, তখন বড় অঙ্কের জরিমানা দিতে হবে। সেটার কথাই বলছিলাম।
মার্কেট ক্যাপিটালের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডিংটা , প্রোডাক্ট কোয়ালিটির চেয়ে অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। খুব ভুল বলা হবে কি না জানি না। এজন্য দায়ী মূলত, এগ্রেসিভ মার্কেট পলিসি।
একটা কথা শুনেছিলাম কিছুদিন আগে, গ্রামীণফোন কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ময়দানের ঈদের নামায স্পন্সর করবে। অবাক হয়েছিলাম। কিন্তু, দিনে দিনে নানান ধর্মীয় ও জাতীয় ইস্যুতে যেভাবে বিভিন্ন কোম্পানির সৌজন্যের আধিক্য দেখলাম তাতে এক কথায় মর্মাহত।
এটা একটা গ্লোবাল ট্রেন্ড হয়ে গ্যাছে। কারো মনে ব্যাথা দেবার উদ্দেশ্যে বলছি না। এসব চিন্তাভাবনা মূলত আসে, তথাকথিত বি.বি.এ. শিক্ষিত মানুষজনের মাথা থেকে। এ কারণেই, দেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলালিংকের নেটওয়ার্কের অবস্থা ত্রাহী ত্রাহী হলেও, বিজ্ঞাপনে প্রচুর অর্থ ব্যয়ে তাদের কোন না নেই। অন্যদিকে, এয়ারটেলের শুনেছি কোন প্রকৌশলী ভিত্তিই নেই। পুরোপুরি তৃতীয়-পক্ষীয় কিছু ভেন্ডর কোম্পানি দিয়ে চলে যাচ্ছে তারা। অথচ, চটকদার বিজ্ঞাপনের অভাব নেই কোথাও।
এই যে বিজ্ঞাপন শিল্পের যথেচ্ছ ব্যবহার, তা থেকেই মূলত আসে একেবারে আবেগী রকমের খাতে টাকায় বেচাকেনার সংস্কৃতি।
মায়র ভালবাসা টাকা দিয়ে কেনা যায় না। তেমনি কেনা যায় না, ধর্মীয় বিশ্বাসকেও। আর দেশপ্রেমের বিষয় নিয়ে এখনো হয়তো তেমন চোখে লাগার মত বিশ্রী চেষ্টা করা হয় নি। ভবিষ্যতে যে হবে না, কে বলতে পারে?
নিয়ন্ত্রণ করার মত কোন মতামত কি আসবে?
এই দেশে তো টাকার অপব্যবহারের সেক্টরের অভাব নেই।দুর্নীতির রাজা দেশ বলে কথা! বিদেশেও যে এরকম অবস্থা এতটা জানা ছিল না! অন্তত রাইনো মারা আর পরিবেশের ক্ষতির কেইস দুইটা জেনে খুবই কষ্ট পেলাম।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে চিন্তা করতে গেলে প্রথমে আমার মাথায় শিক্ষা থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই টাকা ঢালা দুর্নীতির কথাটাই মাথায় আসে। আরেকটা ক্ষেত্র শিক্ষিত শ্রেণির সুশীল সমাজেও টাকার বা প্রতিপত্তির লোভে অনেকেই উপার্জনের মাধ্যমটা (উদাহরণস্বরূপ সিগারেট বা মদের কোম্পানি, ডেস্টিনি ইত্যাদি)কতটুকু নৈতিক তা ভেবে দেখার চেষ্টা করে না।
জন হান্টারের শিকার কাহিনী নিয়ে লেখা বই গুলো একটু পড়ে দেখবেন প্লিজ, বিশাল আয়োজন করে উচ্চবিত্তরা আফ্রিকায় শিকারে যেত, অনেক দুর্লভ প্রানী শিকার করতো। এখন তারাই আবার বন্যপ্রানী সংরক্ষণের জন্য কথা বলছে। এমনকি এখনো অনেক সাফারি হয়, যেগুলোর খবর আমরা জানি না বা রাখি না…
এমনকি আমাদের দেশে আমাদের দাদা-নানারা যখন চরে বালহাঁস শিকার করতে যায়, কিংবা আমরাও যাই, সেটাকে আমরা কিন্তু আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে দেখি। ভালো দৃষ্টিতেই দেখি।
আবার কথা বলতে এসে বিপরীত টা বলি বা পরিবেশ সচেতনতায় আমাদের অনেক কিছু করতে হবে, এইসব কথায় সাপোর্ট দেই……
আমাদের ডুয়াল স্ট্যান্ডার্ড…… 🙁
দুনিয়ার সবই দেখি ডুয়াল স্ট্যান্ডার্ড হয়ে যাচ্ছে 🙁
উপরে জ্ঞান চোর আর অনাবিল এর আলোচনা ভালো লাগছে।
কয়েকটা কথা, এই বই এর মূল বিষয় কিন্তু মুক্ত বাজার আমাদের নৈতিক সীমা পরিলংঘন করছে কিনা সেই বিষয়ে।
ভাই যতই বলেন দিনশেষে আপনি আর আমি খেঁটে খাওয়া কামলা, আমরা যতই চিন্তা করি যার সাথে শুধু টাকার লেনদেন তার সাথে টাকা লেনদেন করার সাথে আরো একটা সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে তা আসলে না, আসলে এটা মাত্র একটা চিন্তা মাত্র সাধারণ মানুষদের ক্ষেত্রে তবে পিতা মাতার সাথে সম্পর্ক এসবের উর্ধে , এছাড়া অর্থই সব
শেষ দুটি বিষয় হতে হয় আর বেশী দেরী নেই! ভাইয়া তো বইয়ের রিভিউ দিলেন নাকি সামনে গাজর ঝুলালেন! এখন বইটা পড়ার জন্য মাথায় চিন্তা ঢুকে গেছে।
ড. ইউনুস কোন এক ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, ক্যাপিটালিজম মিসইন্টরপ্রিটেড। মুনাফার সর্বোচ্চায়ন (প্রফিট ম্যাক্সিমাইজেশান) থিওরির যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ করতে তিনি এরকম মন্তব্য করেছিলেন। এখানে আমার কিছু বিচ্ছিন্ন (র্যান্ডম) চিন্তা আছে, যেগুলোর মাঝে কিছু একটা কমন গ্রাউন্ড থাকতেও পারে।
১. পরিবার ব্যবস্থার পর ব্যবসা হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান (আইডিয়া বলা যেতে পারে) , মানব সভ্যতার ইতিহাসে। যত দিন যাচ্ছে, পরিবার ধারণাটি তার শক্তিমত্তা হারাচ্ছে। এরসাথে সমান তালে শক্তিশালী হচ্ছে ব্যবসায়।
২. অধিকার ও কর্তব্য হাতে হাত ধরে চলে। ব্যবসায় দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। একই সাথে সে সমাজের কাছ থেকে বর্ধিতহারে দাবী করছে বিভিন্ন রিসোর্স। ফিজিক্যাল রিসোর্স (জ্বালানী, কাচাঁমাল) ও নন-ফিজিক্যাল রিসোর্স (মানুষের মাইন্ডশেয়ার/মনযোগ, বুদ্ধিমত্তা, জীবনীশক্তি)। ব্যবসায় কি বর্ধিতহারে তার দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হয়েছে? এর উত্তরে দুই ধরনের উত্তর আসবে। ব্যবসায়ী মহল পিআর বন্যা বইয়ে দেবেন, আর ক্রেতা মহল উষ্মা প্রকাশ করবেন। এই দ্বিমুখী অবস্থানের সত্যাসত্য নির্ণয়ে না গিয়েও বলা যায় অধিকার ও কর্তবের গাড়ি হাতে হাত ধরে চলছে না। কিন্তু কেন?
৩. যেকোন বিষয়ের নিয়ন্ত্রনে দুইধাপের নিয়ন্ত্রনের এক ধরণের চল মানব সমাজে আছে। হত্যাকে যেমন আইন দ্বারা শাস্তিযোগ্য করা হয়েছে, সাথে সাথে একে মানবিকতা, নৈতিকতা এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে নিরুৎসাহিত/তিরষ্কৃত করা হয়েছে। ব্যবসায় যে আমাদের নৈতিক জগতে চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে, এর নিয়ন্ত্রনে আমাদের কোন পদক্ষেপ কি আছে?
বেশ কিছু দেশে বিজ্ঞাপনের টার্গেট কারা হবেন, কাদের করা যাবে না তা নিয়ে নগন্য স্কেলে কিছু আইনী বিধান আছে। কিন্তু ব্যবসায়ের মত এমন সর্বপ্লাবী আইডিয়াকে এত নগন্য কোন কিছু দিয়ে বেধে রাখার চিন্তাও ফলপ্রসু না। এমনকি নানাধরনের বেস্ট প্র্যাকটিস নীতিমালা (আয়রনি হলো, এসব নীতি দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরাই, ভুতদের সর্ষে চাষ আর কি!) ও হচ্ছে। তাতে কি অবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে?
৪. উমর চাপরা নামের এক অর্থনীতি অধ্যাপকের একটা বই পড়েছিলাম ইসলামী অর্থনীতি বিষয়ে (আপনি ইসলামী অর্থনীতি’র ছাত্র হোন আর না হোন, মানুষের মৌলিক মানবাধিকারের আরো বিস্তারিত ধারণার সাথে পরিচিত হতে এই বই অবশ্য পাঠ্য বলে অধম মনে করেন, বইটার নাম ইসলাম এন্ড দ্যা ইকনমিক চ্যালেঞ্জেস)। তিনি তার বইতে ’মোরাল ফিল্টারিং’ নামের একধরনের ধারণার কথা বলেছেন, যেখানে ব্যবসায়ী ও ক্রেতা দুপক্ষেরই অংশগ্রহণ জরুরী। দুপক্ষই যদি তাদের কাজগুলোকে তাদের মোরাল ফিল্টারের মধ্যদিয়ে পাস করেন, তবে মন্দ উপাদানের প্রাদুর্ভাব কমবে বলে তিনি মনে করেন।
ক্রেতা কিনতে গিয়ে অপচয় করবেন না, কারণ তার নৈতিক ছাঁকনি তাকে তাতে নিরুৎসাহিত করবে, আবার বিক্রেতা তার পন্যের প্রসারে ক্রেতাকে অপ্রয়োজনীয় জিনিসটি কিনতে উসকে দেবেন না।
এই তো…
যাই হোক, দারুণ রিভিউ’র জন্য লেখককে সাধুবাদ।
ভুতকে সর্ষে চাষে অনুমতি দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চাইলে আগে নিশ্চিত করতে হবে, ভুত তার নৈতিক ছাঁকনির প্রতি লয়াল। আবার লয়ালটি বেশি লংগার লাস্টিং হয়, যদি সেই আইডিয়া প্রেসকৃপশন আকারে আসে, হায়ার কোন অথরিটি থেকে এবং এরসাথে পুরষ্কার-মারষ্কারের ভাল যোগাযোগ থাকে।
বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে একটু দেখার চেষ্টা করি:
১. যে কোন জায়গায় আবাসন প্রকল্প বা সরকারী কোন স্থাপনা নির্মানের উদ্দেশ্যে সেখানের সাধারণ কৃষকদের ন্যুনতম একটা টাকা দিয়ে উঠিয়ে দেখা হচ্ছে। তারা তো কৃষিকাজ ছাড়া আর কিছু জানে না, করবে কী?
২. বিভিন্ন দিবস পালনের একটা ক্রেজ তৈরী হয়েছে মানুষের মধ্যে। ভালোবাসা, তা বাবা-মা বা প্রেমিকা যার জন্যেই হোক না কেন, কার্ড আর গিফট তো সেটার মূল্য বোঝাতে পারে না।
৩. দেশের প্রতি আমাদের আবেগ ব্যবহার করা হচ্ছে বিজ্ঞাপনগুলোতে। পণ্য কতোটা ভালো সেটার চেয়ে কোনরকমে গছিয়ে দেয়াটা অনেক বেশি জরুরী হয়ে যাচ্ছে।
অনুভূতি নিয়ে ব্যবসা শুরু হলে এর পরিনতি খুব একটা ভালো হবার কথা না।
পোস্টটা আগেই পড়েছিলাম।
সময়ের অভাবে কমেন্ট করতে দেরি হয়ে গেল। 🙁
রমজানের ইফতারের আজান পর্যন্ত বিজ্ঞাপনদাতার নামে হয়4 ‘মোবারক সল্ট’ মাগরিবের আজান। অনেককেই দেখেছি রেগে উঠতে এই রকম করায়। আমাদের জাতীয় সংগীত প্রচার করার সময় যদি কেউ এই রকম বলে আমাদের কেমন লাগবে? কিংবা ধরুন জাতীয় পতাকার গায়ে লিখল সৌজন্যে গ্রামীণ ফোন!>> এই লাইনগুলো পড়ে রীতিমত ধাক্কা খেলাম একটা!
উপরের আলোচনাগুলো খুব ভালো হয়েছে।
নতুন আর কী যোগ করব তাই ভাবছি! :thinking:
উত্তরণের উপায়টা তো আমাদেরই বের করতে হবে, তাই না?