আমাদের একটা বিশাল বাড়ি ছিল। বিশাল মানে আক্ষরিক অর্থেই সুবিশাল।
সেই বাড়িতে দুইটা পুকুর ছিল। একটা খোলা মাঠ ছিল। আর ছিল বিশাল বিশাল সব গাছ। সেগুলো অনেকপ্রাচীন। আমার দাদার লাগানো নয়। উনি যাদের কাছ থেকে বাড়িটা কিনেছিলেন তাদের লাগানো।
সামনের পুকুরের পাড়েই ছিল বিশাল একটা আমগাছ। চারদিন থেকে তার ডালগুলো সব মাটিতে নেমে এসেছিল বয়সের ভারে। আমার বয়স যখন দশ বছর তখন থেকেই এই গাছের সাথে আমার বন্ধুত্ব।
আমি তখনও কোন গাছে উঠতে পারি না।
কিন্তু এই আমগাছটিতে উঠতে আমার কোন অসুবিধা হতো না। অসংখ্য ডালপালা পরস্পর মিলেমিশে এমন অবস্থা হয়েছিল যে হাত দিয়ে ডাল ধরে ধরে সাকোর মত করে সেই গাছের মগডাল পর্যন্ত উঠে যাওয়া যেত। আমার দস্যি বোন একদিন শিখিয়ে দিয়েছিল। তারপর থেকে আমি নিজে একাই উঠতে পারতাম।
সেই ছোট বেলা থেকেই তার পরে অনেক গুলো উদাস দুপুর আমার কেটেছে সেই গাছের মগডালে। সকাল গড়িয়ে গেলে একটা বই নিয়ে সেখানে উঠে যেতাম। একদম চূড়ায় মোটা একটা ডাল ছিল। উপর থেকে দুইটা ডাল এসে তাকে দুপাশ দিয়ে ঘিরে রেখেছিল। হাত ছেড়ে দিব্যি নিরাপদে বসে থাকা যেত। সারাটা দুপুর আমি সেখানে বসে বই পড়তাম।
নিচে পুকুরের শীতল জলে মাছেরা বুদবুদ তোলে। দুরন্ত ছেলেমেয়েরা এন্তার করে সাতার কাটে। পানি ঘোলা করে। আমি তখন পড়ি। পাতার ফাক দিয়ে আমি সবাইকে আধো আধো ঝাপসা দেখি। কিন্তু আমায় কেউ দেখে না। সে এক মজার লুকোচুরি খেলা। দুপুর বেলা খুব বাতাস বয়। আমপাতায় সে বাতাস ঝিরি ঝিরি শব্দ তোলে। প্রথমে আস্তে আস্তে শুরু হয়। ক্রমাগত সে শব্দ বাড়তে থাকে। মাথার উপরে, সামনে পেছনে, ডানে বামে সব দিকে শুধু পাতার ঝিরি ঝিরি শব্দ। ক্রমাগত বাড়ে কমে, আবার কখনো একটানা অনেকক্ষণ ধরে একই রকম ভাবে চলতে থাকে। সে এক নেশা লাগানো শব্দ। ঘোর লাগানো মায়া। অদ্ভুত এক মায়াজ্বাল। সে জিনিস ভাষা রুপ দিতে পারবে না। কোন কল্পনা ধরতে পারবে না। তা বোঝার জন্যে সেই সময় সেই দুপুর আর সেই আমগাছের মগডালে পা ছড়িয়ে বসার উপলক্ষ্যটা লাগবে।
মাঝে মাঝে আমি পড়তে পড়তে খুব ঘোরের মাঝে চলে যেতাম। আশেপাশের খেয়াল থাকতো না। নিচ থেকে ডাকলেও শুনতাম না। যতক্ষন না আমার বোন গাছে উঠে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ঘোর না ভাঙ্গাতো। তো এমন একদিন দুপুরে হঠাৎ কাল বৈশাখি শুরু হলো। কাল বৈশাখি হঠাৎ করেই আসে। বেশিক্ষণ পূর্ভাবাস দেয় না। ওদিকে আমি তন্ময় হয়ে বইয়ের মাঝে ডুবে আছি। বাতাসের কারনে আমপাতায় ঝিরি ঝিরি শব্দ অনেক বেড়ে গেছে। তাতে আমার ঘোরও ক্রমাগত বাড়ছে।
একটা সময় আমি যে ডালটায় বসে ছিলাম সেটা আচমকা এক দমকা বাতাসে ভেঙ্গে নিচের পুকুরের পানিতে পড়ে গেল। ডালের সাথে সাথে আমিও বই সহ পানিতে। ততদিনে আমি সাতার শিখে গেছি। সাতার কেটে আমি পুকুর থেকে উঠে আসলাম। কিন্তু বইটা হারালাম। হাত থেকে পড়ে সেটা পানিতে ডুবে গিয়েছিল।
সেটি ছিল একটি বিখ্যাত বই “পথের পাঁচালী”। আমার এক আপু তখন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো। বইটা তাদের উপন্যাস হিসেবে পাঠ্য ছিল। আমি তার কাছ থেকে পড়তে ধার এনেছলাম।
এরকম অনেক অনেক মজার স্মৃতি আমার আছে বই নিয়ে।
সরব-পরিবারের পক্ষ থেকে একটা ই-বুক প্রকাশ করার উদ্যেগ নেয়া হয়েছে। শুধুমাত্র বই নিয়ে বইচই চলবে সেখানে। লেখার বিষয়বস্তু শুধুই বই। সেখানে থাকতে পারবে-
১. বই পড়তে গিয়ে মজার কোন ঘটনা।
২. প্রিয় বই নিয়ে আলোচনা (বুক রিভিউ)
৩. প্রিয় লেখক নিয়ে আলোচনা (রাইটার রিভিউ)
৪. প্রিয় কোন চরিত্র নিয়ে আলোচনা (ক্যারেক্টার রিভিউ)
৫. প্রথম পড়া বই নিয়ে অনুভুতি
-সহ বই নিয়ে যত কিছু সম্ভব।
লেখা দিতে হবে- [email protected] এই এড্রেসে
অবশ্যই ১০ নভেম্বর, ২০১২ এর মধ্যে।
সরব থেকে এর আগে দুইটা ইবুক প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথম ছিল বইটা বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী লেখক হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে। সেটা হুমায়ুন আহমেদ জীবিত অবস্থায় নিজে দেখে যান।
ডাউনলোড লিংক- http://shorob.com/?p=2218
আর দ্বিতীয় ইবুকটি ছিল গণিত বিষয়ে। এটা হচ্ছে গণিত নিয়ে প্রকাশিত দেশের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র ইবুক। যেখানে বাংলাদেশ ম্যাথ অলিম্পিয়াডের সাথে জড়িত অনেকেই লেখা দিয়েছিলেন।
ডাউনলোড লিঙ্ক-http://shorob.com/?p=5519
অতএব দেরি না করে লিখতে বসে যান। আর পাঠিয়ে দিন ১০ ই নভেম্বরের আগে।
দারুণ উদ্যোগ!!
খুব ইচ্ছে লেখার…… 🙂
লিখে ফেলুন। লিখাটাই বড় কথা।
আপনার লেখার অপেক্ষায় আছি…………
লিখবো ইনশাআল্লাহ্। 😀
দারুণ লাগলো আপনার স্মৃতিটা। অ্যাডভেঞ্চার আর কাকে বলে! গাছে উঠে বই পড়বো কি, ভাবিই নাই কখনও এই কাজ করার কথা। 😯
যে কোন গাছে উঠে তো আর বই পড়া যায় না। ঐ গাছটাই ওরকম ছিল। অনেক বড়, মোটা মোটা ডাল আর একটার সাথে আরেকটা মিশে জালের মত। ফলে পড়ে যাবার ভয় ছিলো না।
বইয়ের জন্য ভালোবাসা! :beshikhushi:
ফিনিক্সের লেখার জন্যে অনেক আশা।
দিব দিব! লেখা দিব!
সরবে লিখি বেশি দিন হয় নাই। কিন্তু যখন থেকে লেখা শুরু করেছি তখন থেকেই খুব প্রিয় একজন লেখক নিয়ে একটা লেখা আর তাঁর খুব বিখ্যাত একটা উপন্যাস নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে। কবে যে লিখব…… ইনশাল্লাহ এই উদ্যোগ এর জন্য হয়ত লেখা হবে 🙂
Goon initiative. Love for books…