বাংলাদেশ টেলিভিশনে যখন হুমায়ুন আহমেদের লেখা ‘এই সব দিনরাত্রি’ দেখানো হচ্ছিল আমি তখন ক্লাস ফোরে পড়তাম। আমরা ইউনিভার্সিটি কোয়াটার্সে থাকতাম। একটা ভরপুর সময় জুড়ে আছে নাটকটা। এমনিতেও আমাদের বাড়ি ভর্তি থাকতো আত্মীয় স্বজন। নাটকের রাতগুলোতে পাশের বাসার চাচীরাও চলে আসতেন। বসার ঘরে বড়রা সোফায়, ছোটরা কার্পেটে।
নাটকটা রচিত হয়েছে একটা একান্নবর্তী মধ্যবিত্ত পরিবারকে ঘিরে। মধ্যবিত্তদের নিয়ে আগেও নাটক হয়েছে অনেক, তবুও কেন যেন আলাদা। অতকিছু বুঝতাম না, তারপরও ছাদের ঘরের ম্যাজিশিয়ান আনিস ভাই যখন শাহানাকে ম্যাজিক দেখাতে দেখাতে রুমালের ভেতর থেকে বের করে আনতেন আস্ত একটা গোলাপ ফুল, আমি তাজ্জব হয়ে যেতাম। আবুল খায়ের বহুদিন পর্যন্ত আমাদের কাছে ছিলেন ‘সুখী নীলগঞ্জ’। বোহেমিয়ান আর একটু পাগলা মতন ছোটভাই রফিকের প্রেমেই পড়ে গিয়েছিলাম প্রায়। কিছু কিছু দৃশ্য এখনো স্পষ্ট – সারাদিনের সমস্ত কাজ শেষে খাবার টেবিলে একা বসে ছোট ছোট চুমুকে চা খাচ্ছেন ডলি জহুর; হোমিওপ্যাথি বিষয়ে প্রবল স্পর্শকাতর বাবা ঝগড়া করছেন আবুল খায়েরের সাথে, তাই দেখে বড়রা হেসে অস্থির; অথবা একটা টেবিলের কোন প্রানপণে আঁকড়ে ধরতে ধরতে বুলবুল আহমেদ বলছেন ‘বড় কষ্ট’, আড় চোখে দেখতাম আম্মা কাঁদছে।
দৃশ্যগুলি এখন ভাবলে কেমন অপার্থিব মনে হয়, সাধারণের পাশ ঘেঁষে যেতে যেতেও অসাধারণ হয়ে উঠেছিল…খুব পরিচিত তবুও ধরাছোঁয়ার বাইরে। মনে আছে টুনির মৃত্যু কিরকম বিহ্বল করে দিয়েছিল সবাইকে। তার পরদিন আমাদের বাংলা ক্লাসে কোন পড়া হয় নাই। আমরা সারা ক্লাস বাংলা আপার সাথে ‘এই সব দিনরাত্রি’ নিয়ে কথা বলে বলে মনখারাপ করেছিলাম।পাড়ার মেয়েরা প্রায়ই হুমায়ুন আহমেদের বইয়ের কথা বলাবলি করতো। কিশোরী মেয়েদের মনের কথা নাকি এই লেখক হুবহু বলে দিতে পারেন। সে সময় সেবা প্রকাশনীর কিশোর থ্রিলার আর কিশোর ক্লাসিক ছাড়া কিছুই পড়ি নাই। হুমায়ুন আহমেদ আমাকে রীতিমতোন উৎসুক করে তুল্লেন।
দারুণ একটা ঘটনা ঘটলো একবার। আমাদের বাসার সিঁড়িঘরে চক দিয়ে গোল করে ঘর কেটে আমি, আমার দুই বোন আর আমার পাশের বাসার বান্ধবী শায়লা এক্কা দোক্কা খেলতাম। একদিন ওইরকম খেলার সময়, শায়লা আর আমি সিঁড়িতে বসে ছিলাম। হুমায়ুন আহমেদ দুই পাশে শীলা আর নোভার হাত ধরে উঠে আসলেন। ওরা আমাদের সিঁড়ি পার হয়ে যাওয়ার পর শায়লা বল্লো ‘আরে উনি তো মনে হয় হুমায়ুন আহমেদ।’ শুনলাম উপরের সিঁড়িতে শীলা বা নোভা বাবাকে আমাদের অবাক হবার কথাটাই শোনাচ্ছে খুব খুশি নিয়ে। সিঁড়িতে ওদের পায়ের শব্দের সাথে সাথে ছোট্ট মেয়েদুটির গর্বিত কন্ঠস্বর, হুমায়ুন আহমেদ এর আনন্দিত হাসির আলোড়ন মনে আছে এখনো।
ভালো সাহিত্য কাকে বলে? প্রশ্নটা প্রাথমিক হলেও এ বিষয়ে আমার ধারণা খুব আবছা। হুমায়ুন আহমেদ জনপ্রিয় লেখক ছিলেন। জনপ্রিয়তার সাথে সাহিত্যমানের কোন রেষারেষি আছে বলে আমার মনে হয় না। তাঁর প্রথম দিকের লেখাগুলিতে মধ্যবিত্তের জীবন যাপন অনেক খানি স্থান করে নিয়েছে। তাই বলে তিনি শুধু মধ্যবিত্তের লেখক নন।
অনেক সামাজিক মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেখি তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ থেকেই। রাবেয়ার মৃত্যুদৃশ্য মনে পড়ছে। পারিবারিক সম্মান বাঁচানোর জন্য ঘরেই গর্ভপাত করানো হয় তার। ঘরময় নষ্ট রক্তের গন্ধে দম আটকে আসছে, তার মধ্যে নিস্তেজ রাবেয়া বলে উঠছে ‘আমার বুকটা খালি খালি লাগছে কেন?’ কিছুক্ষণ পর শীতকালের ঝকঝকে আলোময় একটা দিনে তাদের পলাতক কুকুর পলার কথা বলতে বলতে চুপচাপ মারা গেল রাবেয়া। ঠিক তখনই খোকার মনে পড়েছিল তার বড় খালার সন্তান সম্ভবা মেয়ের কথা। তিনি প্রসন্ন গর্বিত ভঙ্গিতে হেঁটে বেড়াতে বেড়াতে অনাগত সন্তানের নাম ঠিক করছিলেন। শুধুমাত্র একটা সামাজিক সনদের কারণে একই পরিস্থিতি কখনো গর্বের কখনো অপমানের। পাশাপাশি এই দুটি বর্ণনার মাধ্যমে কি লেখক একটা প্রচ্ছন্ন প্রশ্নও রাখেননি পাঠকের কাছে?
খোকা আর তার বাবা মায়ের ঘরের মাঝখানে একটা বাঁশের বেড়ার ব্যবধান। খোকা ইনসমনিয়াক। গভীর রাতে তার ঘরে ভেসে আসে বাবা-মায়ের আদরের শব্দ। সেই শব্দে একই সাথে খোকার অস্বস্তি, উত্তেজনা ও পাপ বোধের কথা বলা হয়েছে খুব স্বাভাবিক ও নিরুত্তাপ ভঙ্গিতে। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত একটা বইয়ে, এই রকম বর্ণনা নিঃসন্দেহে সাহসী।
হুমায়ুন আহমেদের যে উপন্যাসটা প্রথমে পড়েছিলাম, তার নাম ‘শংখনীল কারাগার’। আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। এর আগে ‘এইসব দিনরাত্রি’ র মাধ্যমে তিনি পরিচিত নাম হয়ে উঠছিলেন আমার কাছে। প্রথম বাক্যটাই নিয়ে গেল আরেক দুনিয়ায় –
“বাস থেকে নেমেই হকচকিয়ে গেলাম। বৃষ্টিতে ভেসে গেছে সব। রাস্তায় পানির ধারাস্রোত। লোকজন চলাচল করছে না, লাইটপোস্টের বাতি নিভে আছে।”
ছোটছোট বাক্যগুলি বয়ে আনলো বৃষ্টি মেশানো মফস্বলের রাত। নটার মধ্যেই চায়ের দোকান বন্ধ।বৃষ্টির কারণেই পারিপার্শ্বিক রহস্যে ঘেরা। দশ বছরের মন্টু অপেক্ষা করছে বড় ভাইয়ের জন্য। এতক্ষনে মায়ের ভয়ে বাড়ি যেতে পারছিল না, তাকে নাকি বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার সময় মা বলেছেন ভিক্ষা করে খেতে। মন্টু আর খোকার জগতে ঢুকে গেলাম আমিও। ওদের সাথেই প্রায় জনমানবশূণ্য অন্ধকার রাস্তায় হেঁটে ঘরে ফিরলাম। সেই প্রথমবারের পড়ায় বইটা তেমন করে না বুঝলেও খোকা, রাবেয়া, মন্টু, রুনু, ঝুনু, নিনুর পৃথিবীটা খুব নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছিল আমাকে। কি রহস্যময়ী আর দুঃখী মনে হয়েছিল ওদের মাকে! ছাপোষা বোকাসোকা বাবার জন্য মন খারাপ হয়েছিল, সেই সাথে আবিদ হোসেনের একাকীত্বও কিছুটা অনুভব করেছিলাম হয়তো।
এখানেও মধ্যবিত্ত পরিবারের বয়ান হলেও খোকার মা শিরিনের চরিত্র নিয়ে এসেছিল অন্য আঙ্গিক। এই পরিবারে তিনি ছিলেন বেমানান। তার বিত্তশালী অতীতের ছিঁটেফোঁটা খোকা ও তার ভাইবোন টের পেত মামা ও খালাকে দেখে – যাঁদের মনে হতো অন্য জগতের মানুষ। শিরিন ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন আবিদ হোসেনকে। কয়েক বছর পরে সে বিয়ে ভেঙে গেছে, ততদিনে জন্ম হয়েছে রাবেয়ার। খোকার বাবা তাঁর দ্বিতীয় স্বামী, এক সময় আশ্রিত ছিলেন শিরিনদের বাড়িতে। এতগুলি সন্তানের পরেও কখনো সহজ হতে পারেন নি স্ত্রীর কাছে, তাঁদের মধ্যে থেকে গেছে শ্রেণীবৈষম্য।
মেলবোর্নে এক বিকালের ট্রেনে বাসায় ফিরতে ফিরতে পড়ছিলাম ‘নির্বাসন’। মফস্বল শহরের একান্নবর্তী পরিবারের একটা মেয়ে ‘জরী’, তার বিয়ের দিনের গল্প। মায়া আর বিষন্নতা কুয়াশার মতন জড়িয়ে আছে গল্পটাকে – সেই ভোরবেলায় বড়চাচার বাজানো বিসমিল্লাহ খাঁ’র মিঞা কি টৌরীর মতনই । একটা দিনের স্বল্প পরিসরে কি নিখুঁত ধরা দেন শান্ত, সম্ভ্রান্ত, কোমল প্রাণ বড় চাচা, জরীকে ঘিরে প্রজাপতির মতন বান্ধবীরা, জরীর মা, ব্যতিব্যস্ত বাবা, একটু বোকাসোকা কিন্তু ভীষণ সুন্দরী বড় বোন পরী, বুদ্ধিমান এবং হৃদয়বান দুলাভাই হোসেন সাহেব, মুক্তিযুদ্ধে মেরুদন্ডে গুলি লেগে পঙ্গু হয়ে যাওয়া আনিস – এক সময় যার সাথে জরীর বিয়ের কথা ছিল আর এই আসরে বেমানান, অনাহুত আনিসের মা।
একেকটা সম্পর্কের হয়ে ওঠা, ফুরিয়ে যাওয়া অথবা তার নামহীন রেশটুকু করুণ সুন্দরভাবে এসেছে এখানে। আনিসের বাবার মৃত্যুর পর আনিসের মা আবার বিয়ে করেছেন। তাঁর ছেলে আনিস বড় হয়েছে চাচাদের সংসারে। অনেকদিন পর তিনি এসেছেন ছেলেকে দেখতে। ছেলে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাবে এই কারণেই খবর দেয়া হয়েছিল তাঁকে। কাকতালীয় ভাবে তিনি এসে পৌঁছালেন জরীর বিয়ের দিন, যখন সারা বাড়ী জুড়ে হৈ চৈ। তিনি একসময় এই বাড়ির দৈনন্দিনতার অংশ ছিলেন, আজ তাঁকে দেখেই সবার অস্বস্তি। বাড়িটার সবকিছু তাঁর পরিচিত, তিনি একা একা ঘুরে ঘুরে দেখছেন কোথায় কি কতটুকু বদলাল, অনভ্যাসে তলিয়ে যাওয়া ‘আতর-বৌ’ নামটা উঠে এল স্মৃতিতে। সামাজিক সম্পর্কের সুতা কি অবলীলায় ছিড়ে যায়, সব কি শেষ হয় তারপরেও?
হুমায়ুন আহমেদের গল্পে প্রকৃতির পুণরাবৃত্তির বিষয়টা ফিরে এসেছে নানাভাবে। যেমন নির্বাসনে আছে পরীর মেয়ে পান্না পানিতে ডুবে যাচ্ছিল, তাঁকে তুলে আনার পরও জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদছে পরী। তখন বড়চাচার মনে পড়লো পরীও একবার ডুবে যাচ্ছিল একইভাবে । ‘কৃষ্ণপক্ষ’ শুরু হয়েছে অরু আর মুহিবের বিয়ের দিনে। মুহিব একটা কটকটে হলুদ রঙের সিল্কের পাঞ্জাবী পড়ে এসেছিল। অরু চেয়েছিল সেই রাতেই পাঞ্জাবীটা পুড়িয়ে ফেলতে। আর শেষ হয়েছে অরুর মেয়ের বিয়েতে জামাইয়ের হলুদ পাঞ্জাবী পোড়ানোর ঘটনায়। ‘শঙ্খনীল কারাগার’ এ এক বৃষ্টির রাতে একদিন শিরিন যে হাসির গল্প বলেছিলেন সবাইকে, তাঁর মৃত্যুর পর ঠিক সেরকম আরেক বৃষ্টির রাতে একই গল্প একই রকম ভঙ্গিতে শোনায় রুনু। শুরুতে যা থাকে আনন্দের, তা তীব্র বেদনা নিয়ে ফিরে ফিরে আসে। যেন একই মঞ্চে একই নাটক অভিনীত হচ্ছে বারবার, পাত্র-পাত্রী বদলাচ্ছে শুধু।
মিসির আলী আর হিমুর কথা উঠলেই শুনি লজিক আর অ্যান্টি-লজিক। এরকম অবশ্য হুমায়ুন আহমেদ নিজেও লিখেছিলেন তাঁর কিছু বইয়ের ফ্ল্যাপে। আমি এদের মধ্যে মিল খুঁজে পাই বেশি। এরা দু-জনই একা আবার দু-জনেই খুব নৈর্ব্যক্তিক, নিরাসক্ত হওয়ার চেষ্টা করতে করতে বারেবারেই মায়ায় জড়িয়ে পড়েন। যুক্তি এবং যুক্তিহীনতার পথে ঘুরে ঘুরে শেষ পর্যন্ত যে বিন্দুতে এসে মেলেন তা ব্যাখ্যাতীত এবং রহস্যময়।
শেষের দিকে হুমায়ুন আহমেদের অন্যান্য বইগুলির মতই মিসির আলী হারিয়ে ফেলছিলেন তাঁর বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা আর হিমু হারাচ্ছিল চমকে দেবার ক্ষমতা।দুই শব্দের মাঝের শূণ্যস্থানের সাথে সাথে কমে আসছিল পাঠকের বিচরণভূমি।এ বিষয়ে নিজেও বুঝতেন। সাজ্জাদ শরীফ আর ব্রাত্য রাইসুর নেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন –
“আমি যদি ঠিকঠাক মতো একটি হিমু লিখতে পারতাম, তাহলে চারটা-ছয়টা হিমু লিখতে হতো না। নিজের লেখা সম্পর্কে আরেকটা ব্যাপার আমাকে কষ্ট দেয়। সেটি হলো, একটা লেখা লেখার জন্য যে পরিমাণ প্রস্তুতি আমার থাকা দরকার, যে পরিমাণ পড়াশোনা নিয়ে আমার একটা লেখা লিখতে যাওয়া উচিত, ঐ জায়গাটা আমি অবহেলা করি। আমি মনে করি এটার দরকার নেই। হঠাৎ করে মনে হলো আর লেখা শুরু করলাম। কোনো রকম চিন্তাভাবনা নেই, কোনোরকম পরিকল্পনা নেই, কিচ্ছু নেই। ব্যস, লিখতে বসে গেলাম। যদি একটু পরিকল্পনা থাকতো, তাহলে অনেক ভালো হতো।”
একজন লেখক হয়তো সারাজীবনে একটাই গল্প বলেন। আমরা ঘটনাগুলি ভুলে যাই, অনুভুতিটুকু থেকে যায়। হুমায়ুন আহমেদের গল্পের মানুষেরা ছড়িয়ে আছে আশেপাশে। লাস্ট ট্রেন ছেড়ে গেলে চাঁদের আলোয় স্যান্ডেলের শব্দ তুলে হাঁটতে হাঁটতে যে ছেলেটা হঠাৎ আমার বারান্দার নীচে দাঁড়িয়ে পড়ে মুখ তুলে হেসেছিল, তাকে হিমুর মতন দেখতে। আমার আধপাগলা আধবুড়ো লেকচারার কেন গর্ডন ছিলেন অবিকল সুখী নীলগঞ্জ মামা। আমার বন্ধু সুনিতাকে মুনার মতন মনে হয় আর চলন্ত ট্রেনের জানালায় চশমা পড়া উদাস ছেলেটা ঠিক শুভ্রর মতন।
খুব নিরব একলা কোন দুপুরে কৈশোরের স্মৃতি হয়ে ফিরে আসবেন হুমায়ুন আহমেদ – যেদিন একলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খোকা, রাবেয়া, মন্টু, রুনুদের জন্য খুব মন খারাপ লাগছিল, আর সেই দুইটা লাইন ঘুরপাক খাচ্ছিল আমাকে ঘিরে –
‘দিতে পারো একশো ফানুস এনে?
আজন্ম সলজ্জ সাধ – একদিন আকাশে কিছু ফানুস উড়াই…’
কী অদ্ভূত, ক’দিন আগেই এই দুইটা লাইন মনে পড়ছিল, বেশ অসাধারণ একটা ফানুস উৎসবের ছবি দেখতে গিয়ে। খুব সুন্দর সাবলীল একটা হুমায়ুননামা লিখে ফেললেন তো আপু। 😀
আমার “এইসব দিনরাত্রি”র কথা মনে পড়ে না, মনে হয় বেশি পিচ্চি ছিলাম। আম্মুর মুখে অবশ্য এই নাটকের কথা অনেক শুনেছি। তবে মনে পড়ে “কোথাও কেউ নেই” মন্ত্রমুগ্ধের মত করে দেখেছিলাম। বাকের ভাইয়ের মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারি নি অন্য সবার মত। আমার শিশুমনটা কেমন যেন একটা হাহাকারে কেঁপে কেঁপে উঠছিল। রাতে ঘুমুতে যাবার সময়টা কেবলই মনে পড়ত বাকের ভাইয়ের মৃত মুখটা, শুধু মনে হত আল্লাহ কেন মানুষ এত খারাপ, এভাবে নির্দোষ একটা মানুষের প্রতি এত অবিচার করল? তাকে ফাঁসিটা দিয়েই ফেলল? কেন মানুষ ন্যায়বিচার করে না?
আসাদুজ্জামান নূরের পরবর্তী নাটক দেখার আগ পর্যন্ত মনে হত উনি বুঝি মরেই গেলেন বাকের ভাই হয়ে! পরের দিকে “আজ রবিবার” থেকে শুরু করে ঈদ নাটক বা হাসির সিরিজ নাটকগুলো তো মিসই করতাম না আমরা তিন ভাই বোন। হুমায়ুন আহমেদের নাটক মানেই ঈদ আজকে। :happy:
উপন্যাস রিভিউ যেগুলো বললেন সব ক’টাই একইভাবে হৃদয় ছুঁয়েছে। উনার এই উপন্যাসগুলোই আমার সবচাইতে ভালো লাগার। আর তারপরে মিসির আলি, হিমু কেন যেন খুব একটা এনজয় করি নি বাকিদের মতন।
আপু কম সময়ের ব্যবধানে আরেকজন মহা লেখককে নিয়ে লিখে ফেললেন, খুব ভালো লাগল। মনে হচ্ছে আমার উৎসাহ দেয়া সার্থক।হিহিহি। ভালো থাকবেন আপি। :love:
হ্যাঁ এইসব দিনরাত্রির সময় তো আমরাই বেশ পিচ্চি ছিলাম! আপনাদের জন্ম হইছিল কিনা কে জানে।
দেখেন তাইলে আপনার উৎসাহ কি রকম মারাত্মক! বিশাল বিশাল লেখা নামায়ে ফেলতেছি! :p
ধন্যবাদ ধন্যবাদ। আপনি বলেন কেন আপু, পিচ্চি মানুষ আমি। অনেকদিন পর পিচ্চি পিচ্চি ভাব নিতেসি 8)
অফটপিক: মন্তব্য মনে হয় ঠিক জায়গায় করেন নাই আপু। আমার মন্তব্যের রিপ্লাইয়ে দিলে মনে হয় নোটিফিকেশন পেতাম।
আরে আমি তো সুযোগ খুঁজছিলাম কখন তুমি বলতে বলবা!
এবার তোমার কমেন্টে রিপ্লাই দিলাম, দেখোতো নোটিফিকেশান পাও কিনা।
পেয়েছি আপু :happy:
হুমায়ূন আহমেদের অনেক লেখাই আমার এখনও পড়া বাকি, হুমায়ূন সম্পর্কে এত বড় লেখা তো দূরে থাক এত বড় লেখা পড়তে পারছি এটাই আমার জন্য অনেক কিছু। যতটুকুই পড়েছি আর বুঝেছি হুমায়ূনের বড় গুণটাই হচ্ছে তার “হুমায়ূনীয়” চিন্তাভাবনা। আর খুব সুন্দর করে একজন পাঠককে তিনি গল্পের ভেতর টেনে নিয়ে যেতে পারেন। একটা মোহ কাজ করে তার লেখাগুলোর মাঝে, মনে হয় যেন ঠিক আমার সামনে ঘটছে সব। কখনও আমিই সেই চরিত্র আবার কখনও বা আমার আশে পাশের কেউ। হিমু পড়ে বারবার হিমু হতে মন চায়, আবার মিসির আলীকে দেখে মনে হয় যেন তার মতই হওয়া ভালো, যুক্তিবাদী। মুহিব বা জহিরের মত ভীষণ রকমের ভালোবাসতেও ইচ্ছা করে। সবই এক হূমায়ূনের কাজ।
অনেকদিন পর মনে করিয়ে দিলেন। ভার্সিটি ছুটি চলছে, বুঝতে পারছিলাম না কী কী করা যায়! এখন মনে পরে গেল আমার আরও অনেক হুমায়ূন পড়া বাকি।
অসাধারণ একটা পোস্ট।
একটু টাইপো আছে *এত বড় লেখা লেখা হবে 🙁
অনেক ধন্যবাদ এত বড় লেখা পড়ার জন্য 🙂 ছুটি আনন্দে কাটুক আপনার। হ্যাপী রিডিং
পড়তে পড়তে হারিয়ে গেলাম কথামালায়………
একটু বিষন্ন হয়ে গেলাম বুঝি……
আমি কেন জানি বেশির ভাগ বই এর কাহিনী এলোমেলো করে ফেলেছি, এটার টা সেটায়…… কিন্তু বইগুলোর সাথে কেমন যেন মায়া আর স্মৃতি জড়িয়ে আছে, ছেলেবেলার জন্য ভালবাসাই বেশি মনে হয়, তাই সবসময়ই এই লাইন দুটো মাথায় টোকা দিয়ে যায়……
‘দিতে পারো একশো ফানুস এনে?
আজন্ম সলজ্জ সাধ – একদিন আকাশে কিছু ফানুস উড়াই…’
আমিও সেরকম। উপন্যাসের নাম, ঘটনা কিছুই প্রায় মনে থাকে না। থাকলেও এক গল্পের মাথা আরেক গল্পের লেজের সাথে মিশিয়ে ফেলি। অনুভুতিটা থেকেই যায় তারপর ও। অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য এবং সুন্দর মন্তব্যের জন্য। 🙂
হুমায়ূন বিশ্লেষণ খুব ভাললাগা নিয়ে পড়লাম। সমালোচনা ছাড়াই ভাল দিকগুলি কী সুন্দর তুলে এনেছেন আপু।
আমার অবস্থাও একই, বইয়ের নাম-ঘটনা সব গুলিয়ে একাকার! শুরুর দিকের অনেক লেখা ভাল লেগেছিল খুব, এটাই মনে আছে।
লেখাট পড়ে হুমায়ন আহমেদ এর জন্য দুই ফোট জল পড়ল আমার চোখ দিয়ে।আমি নিজে অবাক হয়ে গেলাম। মনকে প্রশ্ন করলাম কেন??
আর নতুন কেন লেখা পাব না 🙁 হুমায়ন আহমেদ এর
সব স্মৃতি হয়েই থাকবে।হুমায়ন আহমেদ এর ৯৯.৯% বই পড়া আমার।নতুন কোন বই পাব না তাই ভাল লাগা বইগুলো নিয়ে প্রায় পড়ি।কিছুদিন আগে পড়লাম ২য় বারের মত পড়লাম “কে কথা কয়” বইটা।
আপনার লেখাটা পড়ে নস্টালজি হয়ে গেলাম
হুমায়ূন আহমেদ এর মতো পাঠককে মুগ্ধ করে রাখার মতো লেখক বাংলা সাহিত্যে খুব বেশি আসে নি। তবে, তিনি তার অসাধারণ লেখা ও নাটক বানানোর ক্ষমতার কী বিপুল অপচয় করেছেন, তা খুব কষ্ট দেয়। যার বই পড়ার জন্য বইমেলায় অপেক্ষা করতাম, যার নাটক দেখার জন্য টিভির সামনে বসে থাকতাম-তিনি তার সেই ক্ষমতাকে বড্ড হেয় করেছেন শেষ বেলায়।
তবুও, হৃদয়ে রয়ে যাবেন আজীবন।
কত কত নাটকের কথা যে মনে নাই।
মনে রাখার মত স্মৃতিকোষ বোধহয় তখন মাথার ভেতরে ছিল না!
‘এইসব দিনরাত্রি’র কথা মনেই করতে পারলাম না, ‘কোথাও কেউ নেই’এর কিছু কিছু দৃশ্য ভাসা ভাসা মনে পড়ল। মোটামুটি ভালো মনে আছে ‘আজ রবিবার’এর কাহিনী! তখন মনে হয় ‘পিচ্চি বাবু’ থেকে ‘বড় বাবু’ হয়েছিলাম! 😛
এত জ্ঞানী মানুষের সানিধ্য পেয়েছেন আপু!
এইজন্যই আপনার লেখনী এতটা চমৎকার! :huzur: