মার্গারেট,
তুমি আমাকে চিনবে না, জানবেও না আমি কে। তোমার কথা অসংখ্যবার শুনেছি মানুষটার মুখে, ছবির দেশে কবিতার দেশে পড়বার সময় কতবার কতরূপে তুমি এসে ধরা দিয়েছিলে। খুব চাইতাম, আমার যদি এমন একজন মার্গারেট-এর সাথে পরিচতয় থাকতো, কেউ একজন, যার সাথে অসংখ্য দূরত্বের মাঝখানে থেকেও ভাগ করে নেয়া যেতো এক জীবনের অনেক কিছু। মনে আছে, যেদিন তুমি দাঁড়িয়ে ছিলে মানুষটাকে বিদায় দিতে আর প্লেনটা ছুটছিলো রানওয়ে ধরে? মাটি ছেড়ে আকাশ ছোঁবার ঠিক আগ মুহুর্তেই হঠাৎ করে বুঝতে পেরেছিলো সে, তাকে নেমে যেতে হবে সেই প্লেনটা থেকে, শুধু তোমার জন্য, আকুল হয়ে উঠে দাঁড়াতে গিয়েছিলো সে, কিন্তু ততক্ষণে প্লেন আকাশপথে ডানা মেলেছে, বহু কষ্টে গলার কাছে উঠে আসা কান্নার দলাটা শুধু কিন্তু ও একা আটকায়নি মার্গারেট, আটকেছিলাম আমিও, কতো গল্পে কেন জানি ঘুরে ফিরে মনে করেছি এই কথাটা বুঝি তোমাকেই লিখা, নীরার কথা বহুবার পড়েও মনে হয়েছে, নীরা বুঝি তোমারই আরেকটি নাম……
কিন্তু আমি কী করে বলি তোমাকে বলো, কী করে কথাটি বলি, কী করে এমন ভয়ানক বুক উপচে পড়া কান্না আটকে তোমাকে বলি, চৌধুরীদের গেটের বাইরে ভিখিরির মতো দাঁড়িয়ে ভিতরের রাস উৎসব দেখা সেই ছেলেটি, ২৫ বছর এক বোষ্টমীর জন্য প্রতীক্ষায় থাকা ছেলেটি, বাসস্টপেজে তিন মিনিটের এক দৃষ্টি বিনিময়ের জন্য উদ্বেল হয়ে থাকা ছেলেটি নেই, জানো? বিশ্বাস হয় না, আজ যখন শুনলাম, হঠাৎ করে মনে হলো কেউ যেন ঠাট্টা করছে, বড্ড বেশী ঠাট্টা, এমন কী হবার কথা? সেই পূর্ব পশ্চিম, প্রথম আলো থেকে শুরু করে যেই মানুষটা আমাকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছিলো, আমি কেউ না, আর মনের মানুষের মতো অদ্ভুত ভালোলাগার সেই উপন্যাসগুলো ঘিরে যাকে চিনে আমার বেড়ে উঠা, এই একটু একটু করে আজকের আমি হয়ে উঠা, সেই মানুষটা নেই? সেই মানুষটার কলম আর আমার জন্য কিছু লিখবে না? কখনোই না?
প্রথমবার কেউ কথা রাখে নি শুনবার পরে বাঁধভাঙ্গা জল ছিলো দু’চোখে, ছোটবেলা থেকেই খুব বেশি “দুঃখবিলাসী” এই আমি কেন জানি ভীষণ রকমের আপন করে নিয়েছিলাম এই মানুষটাকে, কতোবার আনমনে বিড়বিড় করেছি, “দেখিস, একদিন আমরাও……” দেখা তো হলো না কিছু মার্গারেট, এখনো যে অনেক কিছুই বাকি রয়ে গেলো, সেই নীল জ্যোৎস্নার সফেদ বালিয়াড়ি ভেঙ্গে হেঁটে যাওয়া একটা একলা মানুষের গল্প আমাকে কে শোনাবে এখন? তাকের বইগুলোর মধ্যে ডুবে থাকা আমিকে নতুন করে স্বপ্ন দেখাবার আরেকটা মানুষ যে কমে গেলো……
কাঁদছো মার্গারেট? আমার লিখাগুলোও ঝাপসা হয়ে আসছে, দেখতে পাচ্ছি না অনেক কিছুই, আবোল তাবোল এই লিখাগুলোর মাঝে শুধু এইটুকু খুঁজে নিও, আজ তুমি একলা নও, তোমার মতো, এই আমরাও কাঁদছি, একটা স্বপ্নদ্রষ্টার মৃত্যুতে, এক স্বপ্নদ্রষ্টার স্বপ্নালু কলমের বিরতিতে……আমরাও কাঁদছি…আমরাও……
“বিষণ্ণতাকে লণ্ডভণ্ড করে ছিঁড়ে উঠে আসতেও হাতে জড়িয়ে যায় সুতো
সুপুরিবাগানের মিহি হাওয়াকে মনে হয় দীর্ঘশ্বাস
কোদালকে কোদাল, ইস্কাপনকে ইস্কাপন এবং
অন্যায়কে অন্যায় বলে চিনে নিতে অনেক কুয়াশা
টুকিটাকি কাজ সারতে অনেক বেলা হয়ে যায়
আমার দেরি হয়ে যায়, আমার দেরি হয়ে যায়
আমার দেরি হয়ে যায়!”
– দেরি (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)
:crying:
আমি এক দুর্ভাগা, মুগ্ধ হওয়ার মত তাঁর কোন লেখা পড়া হয় নি। ভাল লেখাগুলির কথা শুধু মানুষের মুখেই শুনলাম।
লেখাটা পড়তে পড়তে ভাবছিলাম এর চাইতে আর কতটা ভালভাবে লেখা যেত কথাগুলো! কিছুই মাথায় আসলো না। লেখা কেমন হয়েছে তাই আর বললাম না।
ছবির দেশে কবিতার দেশে বইটা এত্তো ভালো লেগেছিলো!!
নতুন করে ফরাসী দেশের প্রেমে পড়েছিলাম………
🙁
লেখা পড়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারলাম না।
আজ সকালেও ভেবেছি চোখের জল বুঝিবা বাষ্প হয়ে উড়ে গেছে অন্য কোথাও, হয়ত মার্গারেটের দেশে। কিন্তু আজ, এই এখন, মার্গারেট কাঁদছে, আর আমি একা কেমন করে বাষ্পীভূত হয়ে বসে থাকি?
লেখা ছুঁয়ে গেছে অন্তর, চোখের দৃষ্টিতে বাধ দিয়ে ভেতরটাকে ক্ষয় করে যাচ্ছে অবিরত।
মার্গারেট আজ কাঁদছে, মার্গারেট শুধুই কাঁদবে এখন থেকে।
তবু বড্ড দেরি হয়ে গেল।
কেউ কথা রাখল না।
মন আরও ভারাক্রান্ত হয়ে গেলো……
মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল :crying:
ভীষণ মন খারাপ হচ্ছে, ভীষণ!