নাফিস নামের একটি ছেলে তার অজ্ঞতা এবং মূর্খতার জন্য নিজের জীবন করেছে বিপন্ন, নিজ পরিবারকে করেছে অসহায় এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ইমেজে লেপে দিয়েছে লজ্জার কালি ।এর চেয়েও আরেকটা বড় ইস্যু আমার চোখে পড়েছে সেটা হল যুক্তরাষ্ট্রে অদূর ভবিষতে উচ্চশিক্ষা গ্রহনে যেতে ইচ্ছুকদের ভিসা জটিলতা; টেস্ট প্রেপ যেমন জিআরই, টোফেল প্রভৃতি নিয়ে সিরিয়াস না হয়ে ভিসা পাব কি পাব না এটা নিয়ে চিন্তিত হয়ে যাওয়া অনেকটাই অবান্তর । ৯/১১ এর পর ৩/৪ বছর বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি ছাত্র যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাবার ভিসা পায়নি এমন একটা গুজব আছে বাজারে, কিন্তু বাস্তবতা হল ওই সময়টাতেও ফুলফান্ড নিয়ে ভিসা পায়নি এমন ছাত্র বা ছাত্রী হাতে গোনার মত। তখন পুরো ব্যাপারটা ছিল সাইকোলজিকাল, ভিসা পাব না ধরে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসার প্রস্তুতি নিতেই আগ্রহী ছিলনা অনেকেই, একটা হাইবারনেশনের মত ব্যাপার ছিল যেটা আত্মবিশ্বাস দমিয়ে রাখতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। আগেরবারের ভুলের পুনরাবৃত্তি যাতে নাহয় সেটা এই লেখার মুখ্য উদ্দেশ্য, আরেকটা উদ্দেশ্য হল যদি ভিসা প্রাপ্তিতে জটিলতা তৈরী হয়েই যায় তখন করণীয় কি? আমাদের উদ্দেশ্য যদি উচ্চশিক্ষা বা গবেষনা হয় তাহলে প্ল্যান বি, প্ল্যান সি মাথায় রাখা উচিত-অন্তত হতাশা থেকে নিজেকে দূরে রাখা উচিত, হতাশা স্বপ্নপূরনের প্রধান অন্তরায়।আর আমরা কে না জানি স্বপ্নপূরনের জন্য স্বপ্ন দেখাটা আবশ্যক এবং স্বপ্নদর্শন অপেক্ষা সঠিক পরিকল্পনা এবং পরিকল্পনা মোতাবেক ওয়ার্ক আউট করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই হতাশ না হয়ে আপনার জিআরই এবং টোফেল প্রেপ চালিয়ে নিন এবং এর সাথে সমান্তরালে চলুক বিকল্প খোঁজে বের করা।
এই মুহুর্তে সম্ভাব্য বাস্তবতা হতে পারে ভিসাপ্রাপ্তিতে লম্বা সিকিউরিটি চেক, ফলাফল সময়মত আগের তুলনায় কমসংখ্যক ভিসাপ্রদান। এখন আমরা যারা উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী তারা যুক্তরাষ্ট্র যেতে পারি বা না পারি, পড়াশোনা বা গবেষনাকে তো আর থামিয়ে রাখা যাবেনা; এই পরিস্থিতিতে উঠতি গবেষকদের গন্তব্য হতে পারে অন্য কোন দেশ বা মহাদেশ। যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার দ্রৌপদী ইউনিভার্সিটিগুলোর কথা নাহয় এই পোস্টে বাদই দিলাম কারন এই দেশগুলোর ইউনিভার্সিটিতে এমনিতেই অনেকেই পড়তে যায়। এর বাইরে আমরা ভাবতে পারি মধ্য ইউরোপ, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর কথা, মাথায় রাখতে পারি ডাচব্লক এবং ফ্রান্স, ইতালির কথা। উচ্চশিক্ষার জিওগ্রাফিক গন্তব্য ঠিক করতে গেলে আমরা ভুলবনা থাইল্যান্ডের এআইটি, সিঙ্গাপুরের নাস বা ন্যানইয়াং ইউনিভার্সিটির কথা, দক্ষিন কোরিয়ার কাইস্ট, তাইওয়ানের ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটি, চীনের জিয়াওটং ইউনিভার্সিটি, হংকং এর ইউনিভার্সিটি অব হংকং এর কথা। এসব ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স/এমএস করার পর নাহয় পছন্দের যুক্তরাষ্ট্রেই পাড়ি জমালাম পিএইচডির জন্য বা পিএইচডি করে যুক্তরাষ্ট্র গেলাম চাকুরী নিয়ে বা পোস্ট-ডক করতে; উদ্দেশ্য যদি উচ্চশিক্ষা হয়, তাহলে থেমে থাকার সুযোগ নেই, স্বপ্ন কখনই আমাদের থেমে থাকতে উত্সাহিত করেনা।
শয়ে শয়ে ইউনিভার্সিটি আছে পৃথিবীতে যাদের ডিসিপ্লিন বেজড রিসার্চ যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভাল হয়। যুক্তরাষ্ট্রের টায়ার টু, থ্রি বা টায়ার ওয়ান এর নিচের দিকে থাকা একটা ইউনিতে ( বা টায়ার ওয়ানের উপরের দিকেই নাহয় ভিসার জন্য আসতে পারলেন না, এতে জাত গেল-জাত গেল বলে রব তুলে লাভ কি?) না এসে ETH Zurich, Ecole Polytechnic-France, KTH, TU Delft, Karlsruhe IT, NUS-Singapore, KAIST-Korea, Jiaotong University (Shanghai, Beijing), National Taiwan University, KU Leuven, TU Eindhoven, Linkoping, University of Geneva, University College Dublin, Utrecht, NTNU, Uppsala, TU Berlin, University of Tokyo, Cancer Research Institute-Germany, Universitat Mannheim, Trinity College-Dublin, TU Denmark, Goteborg University, University of Ulm, TU Darmstadt, TU Munich, Leiden University, Freiburg University, Pisa University, Charles University, LMU-Munich, Koln, Wien-Bergen-Oslo-Bologna-Stuttgart-Helsinki University প্রভৃতি ইউনিতে গেলে আপনার গবেষনা বা উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য অনেক বেশি সফলকাম হবে এবং উচ্চশিক্ষা শেষে বর্ধিত পরিবার নিয়ে 😀 অধিকতর রিসার্চ করতে বা ফ্যাকাল্টি পজিশন নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রে আসতে পারবেন এবং সেই ফিরে আসাটা টায়ার ওয়ানে থাকা উপরের দিকের ইউনিতেই সম্ভব এবং এটা হরহামেশাই হচ্ছে।
Erasmus Mundus ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর একটি এলিট স্কলারশিপ প্রোগ্রাম, খুব ভাল বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেয় তারা। বাংলাদেশের এবং উপমহাদেশের মেধাবী ছাত্রছাত্রী সবাই উত্তর আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়াপন্থী তাই এই স্কলারশিপ প্রোগ্রামে আফ্রিকান এবং ল্যাটিন আমেরিকানরা সফলতা পাচ্ছে। Erasmus Mundus এর ওয়েব লিংক নিচে দিয়ে দিলাম, পছন্দের অনেক অনেক মাস্টার্স/ডক্টরাল কোর্স আছে এতে-
ধরলাম আপনি কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়ার জন্য ফান্ডিং পেয়েছেন, কিন্তু ভিসার জটিলতায় যেতে পারেননি। এতে হতাশ হবেন কেন, পড়তে চলে যান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর বা হংকং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অথবা সুইস ফেডারেল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে-উল্লেক্ষ্য এই তিনটি ইউনিভার্সিটির গবেষনার মান কর্নেলের চেয়ে কোন অংশেই কম না, উপরন্তু কম্পিটার বিজ্ঞানে এই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্ল্ড রেন্ক কর্নেলেরও আগে! পুরকৌশলে TU-Delft, ETH-Zurich, Tsinghua University এবং NUS যে কর্নেল বা ইউটি-অস্টিনের চেয়ে রিসার্চ এবং বিশ্বক্রমে এগিয়ে এটা আমরা কজনই বা জানি! ঠিক তেমনি রসায়নে ETH-Zurich এবং NUS কর্নেল এবং কলম্বিয়ার চেয়ে এগিয়ে। অন্য সকল বিষয়ের জন্যই এই স্ট্রাটেজি অনুসরণ করে প্ল্যান বি বা প্ল্যান সি ঠিক করে রাখা যেতে পারে। উচ্চশিক্ষার শুরুটা ভূগোলকের যে কোন অবস্থান থেকেই শুরু করা যায়, পড়াশোনা শেষে আপনি সেটল করতে পারবেন যে কোন দেশে এমনকি পেশাগত সুযোগ থাকলে এবং মন চাইলে প্রিয় বাংলাদেশে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রফেসরদেরকে যেমন ইমেইল করে এপ্রোচ করতে হয়, ইউরোপ বা এশিয়াতেও একই রকমভাবে এপ্রোচ করা যেতে পারে, দেয়া যেতে পারে রিসার্চ প্রোপসাল। আপনার পছন্দের পিএইচডি প্রোগ্রাম খোঁজে নিতে পারেন এই ওয়েবসাইট থেকে http://www.findaphd.com/
উইক এন্ডে ন্যু ক্যাম্পে বার্সেলোনার খেলা দেখবেন এবং ডিস্ট্রিবিউটেড কম্পিউটিং এ গবেষনা করবেন পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি অব বার্সেলোনাতে-এমেজিং, ইজন্ট ইট! ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরে পরিবেশ প্রকৌশল নিয়ে গবেষনা করবেন, মন চাইল উইক এন্ডে চলে আসবেন ঢাকায়-ইন্টারেস্টিং !
সবাই যার যার স্বপ্নপূরনে এগিয়ে চলুন, উচ্চশিক্ষার পথে, গবেষনার পথে আপনার যাত্রা হোক মসৃন। আপনার জ্ঞান কাজে লাগুক বাংলাদেশের, গোটা পৃথিবীর, কাজ করুন মানবকল্যানে, জয় হোক মানবতার।
(কেমন জানি রাজনৈতিক বক্তব্যের মত হয়ে গেল, এরপরও তাড়াহুড়ো করে লিখে ফেলা, উদ্ভূদ পরিস্থিতিতে অন্তত একজনও যদি হতাশা থেকে মুক্তি পায় তাহলেই এই লেখার সার্থকতা।)
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। দরকারি পোস্ট বলেই মনে করি।
অবশ্য কাল শুনলাম একজন নাকি ৩ দিনেই ভিসা পেয়ে গেছে! তাই অতি দুশ্চিন্তারও দরকার নাই
আসলেও তাই, এত ছোটখাট (!) ব্যাপার নিয়ে বড় স্কেলে ভিসা প্রদানে সমস্যা হবার কথা না, Random সিকিউরিটি চেকের বেশি আর কোন স্টেপ নেয়ার কোন সম্ভাবনা দেখিনা।
অনেক তথ্যবহুল দরকারি একটা পোস্টের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া। আশা রাখছি ভিসার ব্যাপারে অতটা জটিলতা হবে না। আর হয়ে গেলেও বা কী! আপনার এই পোস্ট তো আছেই অনুপ্রেরণা দিতে… 😀
অনেক অনেক ধন্যবাদ এমন একটা পোস্টের জন্য…। দারুণভাবে সহমত পোষঅণ করছি।
আমাদের কেন জানি একটা আমেরিকা প্রীতি আছে…… আমেরিকার বাইরের অনেক অনেক ইউনি যে গবেষণায় অনেক এগিয়ে, এই কথাটা ভুলেই থাকে বেশিরভাগ……
ন্যু ক্যাম্পে বার্সার খেলা দেখার কথা ভেবে দারূণ অনুভূতি হলো…… :happy:
এম.এস. বা পিএইচডি যুক্তরাষ্ট্রেই করতে হবে এমন ধ্যান-ধারনা থেকে বের হতে পারলে অনেক বেশি এমাউন্টের ফান্ডিং নিয়ে অন্য কোথাও অধিকতর ভাল রিসার্চ এনভাইরনমেন্টে পড়াশোনা-গবেষনা সম্ভব।
বাই দ্যা ওয়ে ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারে পড়লেও আয়েশ করে ফুটবল এমনকি ক্রিকেটও দেখা যাবে। 😀
ধন্যবাদ এরকম একটি লেখার জন্য। অনেকেই হা-হুতাশ করে মারা যাচ্ছে।
আমেরিকাই যে পড়াশুনার একমাত্র জায়গা, এরকম নাও হতে পারে… অনেক জায়গা আছে পড়ার… মন দিয়ে দেখতে হবে শুধু 🙂
“আপনার জ্ঞান কাজে লাগুক বাংলাদেশের, গোটা পৃথিবীর, কাজ করুন মানবকল্যানে, জয় হোক মানবতার।”
ভিসার ব্যপারে কোন জটিলতা না হলেও মনে হয় এই পোস্টের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে নজর দেয়া উচিত। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই যেতে হবে, এমন মনোভাব থেকে সরে এসে আরও ভালো সুযোগ পেতে পারে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা।
চমৎকার পোস্ট!
খুব খুব ভাল লাগলো লেখাটা। অনেকেরই কাজে লাগার কথা, আশা করি তাদের চোখে পড়বে। নিজেও জানলাম অনেক কিছু। 😀
নিয়মিত লিখবেন আশা করছি। :welcome:
ধন্যবাদ, নিয়মিত লেখার ইচ্ছে আছে।
ভালো লাগল লেখাটা। জরুরি কথাবার্তা।
সেই ঘটনার পর কতজনের কত হা-হুতাশ দেখতে পেলাম।
আমারও মনে হয়েছে, রাস্তা তো বন্ধ হয়ে যায় নি। তাহলে আগে থেকেই এতটা হতাশ হবার কী-ই বা দরকার?
এখন থেকে কেউ আমার সামনে হতাশাব্যাঞ্জক কথা বললে তাকে এই পোস্টের লিঙ্ক দিয়ে দেব! :happy:
বলতে তো ভুলেই গেলাম!
:welcome: ভাইয়া! 😀
ধন্যবাদ 🙂