ঈদের পূর্ব-রাত্রি। স্বাভাবিকভাবেই বাসায় কাজ কর্মের কোনো অভাব নেই। আমার বড় বোন চিন্তায় অস্থির-সব কিছু কীভাবে সামলাব, কীভাবে শেষ করব… আমি তাঁকে অভয় দিলাম-তোমার চিন্তার কোনো কারণ নাই, আমি আছি না……
সে খুব আশ্বস্ত হয়ে আমার দিকে তাকাল, বেচারি অভিনয়টাও ভালো করে জানে না, সে যে আমাকে আশ্বস্ত করার জন্য আশ্বস্ত হবার ভান করছে সেটা বুঝা যাচ্ছে। কারণ তাঁর আসল চিন্তাটা যে “আমি আছি না”-ওই কারণে,সেটা আমার চেয়ে ভালো আর কে জানে……
যাই হোক- যথারীতি বাসায় শুরু হলো রুটি বানানো পর্ব এবং আমার উপলব্ধি ও আবিষ্কারের দ্বার উন্মোচন হলো। আম্মু অনেকক্ষণ নির্বিঘ্নে রুটি বানিয়েছে, আমার হঠাৎ উপলব্ধি হলো যে আম্মু বেশ অনেকক্ষণ শান্তিতে কাজ করেছে, এবার আম্মুকে কিছুক্ষণ জ্বালানোই যায়। সুযোগ খুঁজতে থাকলাম কখন আম্মু একটু এদিক ওদিক যাবে আর আমি বেলন-পিঁড়ি অবসর পাবো। সুযোগ আসা মাত্রই তা কাজে লাগালাম এবং যা যা উপলব্ধি ও আবিষ্কার করলাম-
উপলব্ধি ১:
রুটি গোল করা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ। কে যে এই গোল আকৃতিটা আবিষ্কার করেছে, তাঁকে পাইলে আমি সার্কাসের রিঙে ঝুলায় রিং আকৃতি বানায় বুঝায় দিতাম গোল আকৃতি কাহাকে বলে।
উপলব্ধি ২:
এটা ঠিক উপলব্ধি না। প্রাথমিক অবস্থায় গোল একটা জিনিস কীভাবে পরবর্তীতে চারকোণা হয়ে যায় আমি তাই বুঝলাম না।
রুটির এই অত্যাচার আমি আর সহ্য করতে না পেরে বুঝলাম আমার এখনই কিছু একটা করা দরকার। তাই তাৎক্ষণিক আমার বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে রুটি গোল করার পদ্ধতি আবিষ্কার করলাম।
আবিষ্কার ১:
পিচ্চি-চ্যাপ্টা-গোল রুটির বলটার উপর বেলন চালাবার সময় একটু হিসাব রাখতে হবে। একভাবে রুটির উপর যতবার বেলন চালাব, রুটিটিকে সমকোণে ঘুরিয়ে তার উপর ঠিক ততবার বেলন চালাব। তাতে একটি মানসম্মত ফলাফল পাওয়া যেতে পারে। (বুঝাতে পারলাম কি?! মনে হয় না। :thinking: )
আমার ১ নম্বর আবিষ্কার দিয়ে আসলে খুব একটা ফলপ্রসূ ফলাফল পেলাম না। কারণ রুটির কোনো দিক পাতলা হয়, কোনো দিক ভারি হয়, তাই আমার ২ নম্বর আবিষ্কার এর আগমন।
আবিষ্কার ২:
এবারের হিসাবটা মোটামুটি জটিল। বেলনের দুই প্রান্তে যদি সমবল প্রয়োগ করা হয় এবং লব্ধি বল বেলনের কেন্দ্রে কাজ করে অর্থাৎ বেলনের ঠিক মাঝে রুটিটি রেখে বেলন চালানো হয় তাহলে ও সম্ভবত ফলপ্রসূ ফলাফল পাওয়া যাবে।আমি এটা এখন ও প্রয়োগ করতে পারি নাই তাই নিশ্চিত সিদ্ধান্ত দিতে পারছি না। :thinking:
তবে আম্মুর রুটি গুলা কোনো এক অজ্ঞাত কারণে অসম্ভব গোল হয় 😯 যা কম্পাস দিয়েও করা সম্ভব কিনা জানি না। সম্ভবত আম্মু মেকানিক্সে খুব ভালো। (ছিঃ এই মা’র মেয়ে হয়ে মেকানিক্স পারি না) :crying:
আম্মুর আবার রুটি বানানোর সময় রুটি আপনা-আপনিই ঘুরতে থাকে। আম্মু অবশ্য আমাকে শিখাইতে চাইসিলো কীভাবে এটা হয়, আমি ভাব ধরে বলসি-থাক লাগবে না, আমি পারি কিন্তু ইচ্ছা করে হাত দিয়ে ঘুরাই।8)
আবিষ্কার ৩:
এটা আবিষ্কার ও সিদ্ধান্ত উভয়ই। অবশ্যই ঘটবে এমন ঘটনা। সেটি হলো-সর্বাধিক গোল হবে যে রুটিটা সেটা বেলন থেকে তোলার সময় ছিঁড়ে যাবে।
এ গেলো বানানোর পর্ব। এখানেই শেষ না। রুটি নাকি আবার সেঁকার সময় ফুলতে হবে। আমি আবার আবিষ্কারের নেশায় ও আপুর দীর্ঘক্ষণ শান্তিতে কাজ করার পরিসমাপ্তি ঘটানোর জন্য রান্নাঘরে প্রবেশ করলাম। আপুর কাছ থেকে অনেক হিসাব নিকাশ শিখলাম। মানে শেখায় নাই, আমি পণ্ডিত পাশে দাঁড়ায় থেকে মুখস্থ করে নিলাম কত সেকেন্ড পর একবার উল্টাব, তার কত সেকেন্ড পর আবার উল্টাব, কখন ঘুরাব ইত্যাদি। এখানেও ফলাফল আগের মতই।
কোন এক অজ্ঞাত কারণে তাঁর রুটিগুলো ফোলে আমারগুলো ফোলে না। এবং যেটা ফুলতে নেয় সেটা ফুটা হয়ে যায়। :dhisya:
তবে কিঞ্চিৎ আশার কথা- ৪টার মধ্যে একটা আমি ফোলাতে সক্ষম হয়েছি।
এই হচ্ছে মোটামুটি আমার অবস্থা। আবিষ্কার গুলো নিতান্তই আমার নাজেহাল অবস্থার বহিঃপ্রকাশ। কেউ আমার এসব আবিষ্কার বিশ্বাস করে প্রয়োগ করতে যেয়ে প্রতারিত হলে তার জন্য কতৃপক্ষ কোনোভাবেই দায়ী থাকবে না।
বিঃ দ্রঃ এটি কিন্তু একটি সিরিয়াস পোস্ট, কেউ রসিকতা হিসেবে নিবেন না :nono:
অনেক প্যাচাল পাড়লাম। ঈদের গোশত-মাংস খাওয়া বাদ দিয়ে আমার বকাবকানি ধৈর্য ধরে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাদের জন্য রইল ঈদের শুভেচ্ছা-
:beshikhushi: ঈদ মোবারক :beshikhushi:
🙄 🙄 🙄
আপনার রুটি তাও অনেক ভালো হয়েছে দেখতে। আমি অন্য একজনের রুটি বানানো দেখেছিলাম, সেটা অস্ট্রেলিয়ার ম্যাপকেও হার মানিয়েছে। তাই আপনার রুটির আকৃতি নিয়ে খুশি থাকা উচিত। 😛
তবে কেউ পারুক আর না-ই পারুক, রুটি কাটা-কম্পাসের মত পারফেক্টভাবে গোল করার একটা খুব খুব সহজ উপায় আমি জানি। একটা ওয়ানের বাচ্চাও এই উপায়ে রুটি পুরো গোল করতে পারবে। 😛
রুই ফোলানোর উপায়ও সহজ, তবে এটা কিঞ্চিৎ অভিজ্ঞতার বিষয়। ঠিক সেভাবে বোঝাতে পারব বলে মনে হচ্ছে না। :thinking:
আমি আবারও টাইপো করলাম! :wallbash:
*রুটি
দয়া করে আর সবার মত বোলো না- রুটি বানিয়ে উপরে গোল বাটি রেখে ছুরি দিয়ে কেটে নিতে……
ছুরি দিয়ে কাটা লাগে নাকি আবার? 😛
হাহা!!! পোস্টটা আগেই পড়ছিলাম, ঈদের দৌড়াদৌড়িতে কমেন্ট করা হচ্ছিলো না
সেটা বুঝতে পারসি 🙂
হাহাহা…মজারু পোস্ট…… :happy: :happy:
আচ্ছা, গোল বাটি দিয়ে কেটে নিলে সমস্যাটা কি, গোল হলেই তো হলো, তাই না?? 😛
আর আমার কথা হচ্ছে, এত্তো ঝামেলা করে গোল করার চেষ্টা করার ও বা কি দরকার, খেতে পারলেই তো হলো…..টেস্ট ঠিক থাকলেই হয়…. 😛
আম্মু পরীক্ষা শেষে বললো-এই ছুটিতে রুটি ভাজাটা শিখে নাও…
আমি কয়েকটা আধাপোড়া করে ভাজলাম, আম্মু আমাকে সরিয়ে দিয়ে বাকি গুলো আর ভাজতে দিলো না। বললো-যে গুলো ভাজসো, এখন খাও! 😛
আমি বল্লাম-এত্তো কষ্ট করে তোমাদের জন্য ভাজসি, আর তোমরা সেটা খাবা না, তাই কি হয়!!
আমি তারপর খেলাম আম্মুর ভাজাগুলো!! 😀 😀
আব্বু কিন্তু আমার ভাজা রুটি খেয়ে মহা খুশি…… 🙂 😀
আব্বুরা সবসময় এমনই হয় আপু।
আমার আব্বু জীবনেও আমার রান্না খারাপ বলবে না আমার সামনে বা আমার কাছে। 😛
কিন্তু আম্মু হল ভীষণ খুঁতখুঁতে।
যতবার এখন পর্যন্ত রান্না করতে গেছি আম্মুর বকা খাই নাই এমনটা মনেই পড়ে না। 😛
আব্বুর জন্য চা বানানো পৃথিবীর সবচেয়ে সোজা কাজ কারণ আব্বুর ভাষ্য অনুযায়ী সে চা সবসময় ভালোই হয়……
হেহেহ! আমি একবার চিনির শরবত টাইপ চা বানায়ে নিয়ে গেলাম আব্বাজানের কাছে! উনি যেখানে চিনিই নেন না চায়ে, সেইখানে বলল খুবই ভালো হয়েছে যা, অনেক মিষ্টি হয়েছে আমি যেমন খাই তার তুলনায়, এক দুইদিন মিষ্টি খাওয়া ব্যাপার নাহ!! জগতের সব বাবারাই কি এমন? নাকি শুধু বাংলাদেশের বাবারা? 😯
ছোটবেলায় রুটি পোড়ার আগে টিনের গ্লাসের মুখ দিয়ে কেটে “মিনি রুটি” বানিয়ে খেতাম 😀
আমিও করতাম। আমি আর আমার বোন মিলে। 😀 সবার ছোটবেলার কাহিনীগুলোই না একরকম হয়…… 😀
=)) আমি জীবনেও করি নাই এই কাজ!
আমি রুটি গোল করতে পারি না, কিন্তু, রুটি ভালোই ভাজতে পারি। 8)
ঈদ মুবারক 🙂
আচ্ছা আমি ভুল জানি নাকি সবাই ভুল বলতেসে??!! :thinking:
রুটি ভাজে না, রুটি সেঁকে। পরোটা ভাজে…… মানে আমি এরকমই জানতাম আরকি… 😳 😐
😳
আমিও জানতাম না এটা। তার মানে ভাজাভুজির ক্রাইটেরিয়া মনে হয় সাথে তেল থাকা, তাই না? 😛 রুটিতে তেল দেয় না বলে (আম্মু অবশ্য অল্প দেয়!) এইটা সেঁকে। হুম হুম বুঝলুম! 😀 😀
আমিও রুটি গোল করতে পারি না 😳
তবে আমিও স্বপ্ন বিলাস ভাইয়ার মত রুটি ভালোই ভাজতে পারি 8) 😛
মন্ত্যবের উত্তরও তাহলে আছে স্বপ্ন বিলাস ভাইয়ার মন্তব্যের উত্তরে… 😛
ভাজার সময় আম্মুকে দেখি একটা কাপড় দিয়ে চেপে চেপে ভাজে…এইজন্য মনে হয় বেশি ফুলে… :thinking:
হম আম্মুও করে। আমি ও কাপড় দিয়ে করে দেখসি, কোনো কিছুতে কোনো কাজ হয় না 🙁
আমি রুটি বানানো শিখেছি আম্মুর থেকে। খুব মন দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম আম্মু কিভাবে গোল করে। তুমিও একটু খেয়াল করবে।
* রুটি প্রথমে যখন হাত দিয়ে ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে গোল করা হয় সেটাই সব থেকে দরকার। যত সুন্দর ভাবে সেটা গোল হবে রুটিও ততোই গোল আর সুন্দর হবে।
* তারপর প্রথমেই অনেক গুলো আটার গুঁড়ো ছিটিয়ে নিতে হবে দুই পাশে, বেলন চালানোর সময় খুব আসতে আসতে রুটি টাকে এক দিকে ঠেলে যেতে দিতে হয়।
* যখনই দেখা যাবে আটার গুঁড়ো শেষ হয়ে গেছে সাথে সাথে আরো আটা ছিটিয়ে দিতে হবে দুই পাশে।
আর গুঁড়ো না থাকলেই রুটি ছিড়ে যায় বা নিচে লেগে যায়।
আমার টিপস গুলো বুঝাতে পারলাম কিনা জানি না। তবে বুঝে থাকলে চেষ্টা করে দেখতে পারো কাজে লাগে কিনা 🙂
বুঝতে তো খুব ভালো করে পেরেছি 🙂 আপনার নিয়মগুলো হচ্ছে রুটি বানানোর আসল নিয়ম (যেগুলো আমিও জানি, আম্মু বহুবার শিখাইসে, কিন্তু আমি প্রয়োগ করতে পারি না :()
কিন্তু আমি তো পোস্টটা রম্য রচনা হিসেবে করেছি, তাই আবোল-তাবোল নিয়ম 🙂
সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে- রুটি প্রথমে হাত দিয়ে ঘুড়িয়ে যে গোল করা হয়, যার উপর রুটি গোল আর সুন্দর হওয়া নির্ভর করে সেটা আমি খুব ভালো করে করতে পারি কিন্তু রুটি বানাতে পারি না :'( এবং শেষে আর কিছু না পেরে ওই কাজ করেই আম্মুকে সাহায্য করেছি 🙂
সুখপাঠ্য রচনা
রুটি ভাজিতে ওস্তাদ! আই মিন সেঁকিতে…তয় গোল্লা করতে গেলে গ্লাসের মুখ বা গোল বাটিই ভরসা! :happy:
ছোটকালে বাংলাদেশের ম্যাপ টাইপ রুটি বানিয়ে খেতে খুব মজা পেতাম। এখন খালি হাতে বানাতে গেলেও মনে একই অবস্থা হবে! 😳