গতকালের ভূমিকম্প একটু হলেও সবাইকে মনে মনে কাঁপিয়ে দিয়ে গেছে। ভূমিকম্পের সময় বাসায় একা ছিলাম। সব কিছু জানা থাকা সত্ত্বেও প্ল্যানগুলো ঠিকমত ফলাতে পারিনাই!! এই দুঃখবোধ থেকেই পোস্টটা দিলাম।
বাংলাদেশের ভূমিকম্পে দেখা গেছে অনেক মানুষ ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আহত, কেউ কেউ তাড়াহুড়া করে বের হয়ে আসতে গিয়ে আহত। আসুন, জেনে নেই ভুকম্পের আগে, চলাকালীন ও পরের করনীয় কাজগুলি।
ভূমিকম্পের আগে করনীয়ঃ
- বাড়ির ভেতরে এবং বাইরে নিরাপদ স্থানগুলো চিহ্নিত করা জরুরী। যাতে ভূমিকম্পের সময় ভাবতে না হয় কোথায় আশ্রয় নেবেন। বাসায় যারা ছোট তাদেরকে ভাল করে বুঝিয়ে দিন ।
- ভঙ্গুর জিনিস সবসময় বন্ধ শেলফে রাখা উচিত।
- ভারি মালপত্র শেলফের নিচের দিকে রাখা ভালো।
- লিক হওয়া গ্যাস লাইন, বৈদ্যুতিক লাইন মেরামত করে নিন এবং নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
- মাঝে মাঝে মহড়া দিন যাতে সবাই আয়ত্ত করতে পারে।
- নিজের বাসায় সচেতন করুন, সাথে আপনার কমিউনিটিকেও।
ভূমিকম্পের সময় ঘরের ভেতরে থাকলে করনীয়ঃ
- ভূমিকম্প শুরু হওয়ার সাথে সাথে মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে বসে পড়ুন, শক্ত-মজবুত কোন আসবাবের নিচে ঢুকে যেতে পারেন এবং সেটিকে হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরুন যাতে সরে না যায়। মনে রাখবেন, আমাদের দেহের মধ্যে মাথা হল সবচেয়ে নমনীয় অঙ্গ, আসবাবের আশ্রয় না পেলে হাত দিয়ে রক্ষা করুন। (নিচের ছবিটি দেখুন)
- আসবাবপত্র না পেলে ঘরের ভেতরের দিকের দেয়ালের নিচে বসে আশ্রয় নিতে পারেন। বাইরের দিকের দেয়াল বিপজ্জনক।
- জানালার কাঁচ, আয়না,আলমারি, দেয়ালে ঝুলানো বস্তু থেকে দূরে থাকুন।
- বহুতল ভবনের উপরের দিকে অবস্থান করলে ঘরের ভেতরে থাকাই ভাল। কারণ, নিরাপদ স্থানে পৌঁছানোর পূর্বেই ভূমিকম্পের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। ভূকম্পন থেমে গেলে বের হয়ে আসুন।
- নিচে নামতে চাইলে কোনোভাবেই লিফট ব্যবহার করবেন না। সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে নামুন। নামার সময় মোবাইল ফোন আর ঘরের চাবিটা সম্ভব হলে হাতে নিয়ে নেবেন।
- বিছানায় শোওয়া অবস্থায় থাকলে বেশি দূরে না গিয়ে বিছানার নিচেই আশ্রয় নিন।
ঘরের বাইরে থাকলে করনীয়ঃ
- খোলা জায়গা খুঁজে আশ্রয় নিন।
- লাইট পোস্ট, বিল্ডিং,গাছ অথবা বৈদ্যুতিক পোলের নিচে দাঁড়াবেন না।
- রাস্তায় ছোটাছুটি করবেন না। মাথার উপর কাঁচের টুকরা, ল্যাম্পপোস্ট অথবা বৈদ্যুতিক তাঁর ছিঁড়ে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
চলমান গাড়িতে থাকলে করনীয়ঃ
- গাড়ি থামিয়ে খোলা জায়গায় পার্ক করে ভেতরেই আশ্রয় নিন।
- কখনই ব্রিজ, ফ্লাইওভারে থামবেন না।
- ভূমিকম্প না থামা পর্যন্ত গাড়ির ভেতরেই অপেক্ষা করুন।
ভূমিকম্পের পরে করনীয়ঃ
- ভূমিকম্প শেষ হলেও আরও একটি-দুটি মৃদু কম্পনের জন্য প্রস্তুত থাকুন। এই আফটার শকের কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। এবারের আফটার শক এক ঘণ্টার মধ্যেই দু’বার হয়ে যায়। কখনও এক মাসের মধ্যেও হতে পারে।
- যথাসম্ভব শান্ত থাকুন। কম্পন থেমে গেলেও জিনিসপত্র পড়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, তারপর বের হন।
- নিজে আহত কিনা পরীক্ষা করুন, অপরকে সাহায্য করুন।
- বাড়িঘরের ক্ষতি পরবেক্ষণ করুন। নিরাপদ না হলে সবাইকে নিয়ে বের হয়ে যান।
- গ্যাসের সামান্যতম গন্ধ পেলে জানালা খুলে বের হয়ে যান এবং দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করুন।
- কোথাও বৈদ্যুতিক স্পার্ক চোখে পড়লে মেইন ফিউজ বন্ধ করে দিন।
- ক্ষতিগ্রস্ত বিল্ডিং থেকে দূরে থাকুন।
ধ্বংসস্তুপে আটকে পড়লে করনীয়ঃ
- আগুন জ্বালাবেন না। বাড়িটিতে গ্যাসের লাইন লিক থাকলে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
- হাত অথবা রুমাল দিয়ে নাক মুখ ঢেকে নিন।
- ধীরে নড়াচড়া করুন এবং উদ্ধারের অপেক্ষায় থাকুন।
- উদ্ধার কাজের সময় নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে পাইপ অথবা দেয়ালে আস্তে আস্তে টোকা দিয়ে শব্দ করতে পারেন, চিৎকার না করাটাই শ্রেয়, এতে প্রচুর পরিমাণে ধূলা নিঃশ্বাসের সাথে ঢুকে যেতে পারে।
উপরের “করনীয়” গুলো আমরা সবাই ই মোটামুটি জানি। কিন্তু নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি- প্রয়োজনে কাজে লাগাতে পারিনা। ভূকম্পন শুরু হলে আতঙ্কিত না হওয়াটা ভূমিকম্প মোকাবেলার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। জাপানের উদাহরণটা টেনে আনতেই হয়। ওদের স্কুলে স্কুলে ভূমিকম্প সম্পর্কে বাচ্চাদের শেখানো হয়, বাসায়ও তাই। আমার বিশ্বাস এবারের পর আপনারা নিজেরাও সচেতন হবেন এবং সাথে আপনাদের বাচ্চারাও।
*উপরের তথ্যগুলো FEMA এবং Ateneo de Davao University এর ওয়েবসাইটের সাহায্য নিয়ে লেখা।সাথে নিজের অভিজ্ঞতাও যোগ করে দেয়া।
দুর্দান্ত!
কাল প্রথম যেটা করলাম সেটা হলো ভয় পেলাম 🙁
৩০ সেকেন্ড হবে অন্তত কাঁপছিলাম!
খুব গুছিয়ে আসল কথাগুলো লিখেছিস।
অনেক অনেক ধন্যবাদ
এই সচেতন স্বরই তো আমাদের দরকার।
ধন্যবাদ বোহেমিয়ান 😀
হুম… ভয় আমিও বেশ পেয়েছিলাম।এবং সেইটাই ভুল ছিল।
“এই সচেতন স্বরই তো আমাদের দরকার” :clappinghands: সচেতনতায় সরব হবে আমাদের সরব! 😀
ভূমিকম্প হলেই মাথার ভিতর শর্ট সার্কিট হয়ে যায়। কোন কিছুই মনে থাকে না 🙁
আশা করি এগুলো কখনো কাজে লাগাতে হবে না। :nono:
আর যদি ভূমিকম্পের মধ্যে পরেই যাই,তাহলে অবশ্যই এই কথাগুলো মনে রাখার চেষ্টা করবো 🙂
“আর যদি ভূমিকম্পের মধ্যে পরেই যাই,তাহলে অবশ্যই এই কথাগুলো মনে রাখার চেষ্টা করবো”
তাহলেই এই পোস্টটা সার্থক হবে। 😀
ভূমিকম্প হলে বর্তমানে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেওয়া ছাড়া আর কিছুই যে মাথায় থাকে না। 😆
সচেতন হওয়ার চেষ্টা করব।
:rollinglaugh:
:rollinglaugh:
সচেতন নাগরিক চাই!
সচেতন নাগরিক চাই!
দারুণ পোস্ট 🙂
😀
সচেতনামূলক পোস্টটা ভালো লাগলো অনেক,
সচেতন হবার চেষ্টা করব …. 🙂
“সচেতন হবার চেষ্টা করব ” :clappinghands:
ধন্যবাদ ধন্যবাদ 🙂
খুবই দরকারি পোস্ট, ভালোলাগল 🙂
ধন্যবাদ নীলিন! 😀
অনেক ভাল লিখা। সচেতন করার জন্য অনেক ধন্যবাদ কৃষ্ণচূড়া । 🙂
আরো একটা পয়েন্ট যোগ করা যায়। সম্ভব হলে হাতের কাছে বাঁশি (ছোট, বাচ্চাদেরগুলো) রাখা। তাহলে উদ্ধার কাজের সময় সহজেই দৃষ্টি আকর্শন করা যায়।
বাহ! ভালো বুদ্ধি :clappinghands:
কত বার পড়ি ভূমিকম্পে করণীয় নিয়ে, অথচ সেদিন কিছুই মাথায় আসে নি। 🙁
এরপর থেকে আসবে আশা করি।
খুব দরকারি পোস্ট।
ফিনিক্সের আইডিয়াটা ভাল্লাগছে। 😀
“এরপর থেকে আসবে আশা করি।” :clappinghands:
আমি নিজেও তা আশা করি,যেন এইবার ভূমিকম্পকে :dhisya: করতে পারি।
ভুমিকম্প শুরু হলে সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়, ভুলে-ই যাই কী করতে হবে…।
সচেতন করার জন্য অনেক ধন্যবাদ……..
পড়ার জন্যও ধন্যবাদ অনাবিল।
সচেতন হন- এটাই তো চাই 😀