ডায়েরীপাতা…

আজ ভোরে বারান্দায় গিয়ে দেখি চারিদিক কুয়াশায় মোড়া। এই ভোরেই কাঠবিড়ালী একটা লাইটপোস্টের উপর দিয়ে পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইনের উপর ছুটাছুটি করছে। একটু একটু করে ভোর হয় আর ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করে। কুয়াশা কেটে গেলো বেশ দ্রুত, নীল আকাশে সাদা মেঘের উপর সূর্য যে কত রকম রঙ অপূর্বভাবে ছড়িয়ে দেয়, অনেক ভালো লাগা আর সৃষ্টিকর্তার উপর কৃতজ্ঞতায় মনটা ভরে যায়।
যারা ভোর হতে দেখেনি, জীবনে অনেক কিছু মিস করে তারা। কতটা মূল্যবান কিছু, তা তারা নিজেরাও জানে না। পরক্ষণেই ভাবি—আরেহ আমি নিজেই তো অনেক সময়-ই ঘুমিয়ে থাকি এই সময়টাতে।

ঠিক করলাম, রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাবো, যত কাজ-ই থাকুক না কেন। আর ভোরে ঘুমাবো না আর, সকাল হওয়া দেখে কাজ করবো, তাতে প্রোডাক্টিভিটি বাড়বে।

২…
টাকা জিনিসটা ধরতে আমার সবসময়ই কেমন যেন লাগে, ভালো লাগে না। আব্বু সবসময় আমাকে বেছে চকচকে নোট গুলো দিতেন। সেগুলো ধরতে বেশি খারাপ লাগে না। আগে আব্বু প্রতিদিন ইউনিতে যাবার সময় জিজ্ঞেস করতেন- টাকা আছে তো আব্বু??
এখন আর আব্বুর কাছ থেকে সবসময় টাকা নিতে হয় না, তাই আমার পার্সে এখন আর চকচকে নোট থাকে না সবসময়। আজ সাবধানে পুরাতন একটা নোট দিয়ে রিকশা ভাড়া দিতে গিয়ে হঠাৎ খেয়াল হলো-আব্বু ইদানিং প্রতিদিন আর জিজ্ঞেস করেন না- টাকা আছে তো আব্বু??

কেমন যেন বড় হয়ে যাওয়াটা………

৩…
যত দ্রুত ভাবি, তত দ্রুত লিখতে পারি না। অনেক সময় আলসেমি বা ব্যস্ততায় লেখা হয় না। হাঁটতে হাঁটতে মাথার ভেতর যেসব কথামালা সেজে ওঠে সেগুলো ঠিক তখুনি তো আর লিখে ফেলা যায় না। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, ইদানিং বেশি, যে আমাদের মাথার মেমরী সেল গুলো যদি সরাসরি ইউএসবি পোর্টে কানেক্ট করে ভেবে যাওয়া কথামালা গুলো লিখিত আকারে ঢুকিয়ে নেয়া যেত, বেশ হতো!

ইউনি থেকে ফিরে সন্ধ্যায় আব্বু-আম্মুর সাথে গল্প করতে করতে এই কথা জানাতেই আব্বু ভ্রু কুঁচকে বললেন- যত্তোসব উদ্ভট চিন্তা শুধু!!

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি তো এগিয়ে চলছে, ভাবতে কী দোষ!!

৪…
কনভকেশন স্যুভেনির আর স্টুডেন্ট ম্যাগাজিনের জন্য দুটো লিখা দিতে হবে। এমনিতে সবসময় হাজার হাজার ভাবনা টোকা দেয় মাথায়, কিন্তু কাজের সময় ভেবে পাই না কি লিখবো……

৫…
বহুদিন পর আজ আমার প্রাইমারী স্কুলের একজন ম্যাডামের সাথে দেখা। রিকশায় উঠতে যাচ্ছিলাম, আমি রাস্তা পার হয়ে ম্যাডামের কাছে গেলাম। আমার চেয়ে যেন ম্যাডাম বেশি খুশি আমাকে দেখে, জড়িয়ে ধরলেন আমাকে। ম্যাডামের চোখ-মুখ দিয়ে একদম ভেতর হাসি ছড়িয়ে পড়লো যেন। তাঁর সাথে একজন সহকর্মী ছিলেন, তাঁর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন-ও টু তে যখন এসেছিল আমি ভাবতাম এতো ছোট্ট একটা বাচ্চা কিভাবে টুতে পড়বে!

শৈশব এক মুহুর্তেই ভেসে আসে সাম্নে…কত স্মৃতি……
আমি প্লে-নার্সারী-কেজি এসব কিছু না পড়ে ক্লাস ওয়ান ও বাদ দিয়ে সরাসরি ক্লাস টু তে ভর্তি হয়েছিলাম। মনে আছে এখনো টিচাররা ভর্তির সময় বেশ চিন্তিত-ই ছিলেন আমাকে নিয়ে ছোট থাকতেই প্রেশারটা নিতে পারবো কিনা।

পড়াশোনার কি অবস্থা ইত্যাদি খোঁজ নিলেন। যতক্ষন কথা বললাম, ম্যাডাম আমাকে জড়িয়ে ধরেই রাখলেন…… কুশল বিনিময় শেষে ফেরার সময় বার বার বলতে থাকলেন—সাবধানে রাস্তা পার হও, দেখে যাও, খেয়াল করে……

কিছু মানুষের আন্তরিক সহৃদয়তা, সুন্দর ভালোবাসামাখা ব্যবহার একদম ভেতরটা ছুঁয়ে যায়……একটু মন খারাপ ছিলো, খেয়াল করলাম মন একদম ভালো হয়ে গেছে। চোখের কোণ একটু ভিজে এলো……

জীবনে এই ছোট ছোট জিনিস গুলো অনেক অনেক বেশি মূল্যবান মনে হয়……

অনাবিল সম্পর্কে

পুরাণকাব্য আর ইচ্ছে খাতা। স্বপ্ন দেখা আর স্বপ্নে বাঁচা। স্বপ্নগুলোকে গুটিগুটি করে আঁকা। একদিন দোয়েল পাখি...............
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ, হাবিজাবি-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , , , , , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

24 Responses to ডায়েরীপাতা…

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    পাঁচমিশালী পোস্ট ভালো লাগছে 😀

  2. শারমিন বলেছেনঃ

    অনেক ভালো লেগেছে 😀
    বিশেষ করে ২ আর ৫ :love: :love:

  3. সামিরা বলেছেনঃ

    লেখাটা ভাল লাগলো আপু। 😀 আরেকটু নিয়মিত লিখেন, আমার মত আর কি! (এক মাসেরও বেশি হয়ে গেল লিখি না) 😛

    আপনার সাথে আমার আরেকটা মিল পেলুম। 😀 আমিও টু-তে ৬ মাস পড়ছি আর তারপর থ্রি-তে, এর আগে কিছু পড়ি নাই। পুরাই অশিক্ষিত অবস্থা! 😛

    হ্যাঁ আর আমারও ভাবনাগুলি বেশি দ্রুত আর সুন্দরও হয় লেখার চাইতে। আসলেই যদি ওরকম কিছু থাকতো!

  4. মাধবীলতা বলেছেনঃ

    মন ছুঁয়ে যাওয়া লেখা আপু! অনেক চিন্তায় আমিও মিল পেলাম!

    চকচকে নোট পাওয়ার ব্যাপারটা যেমন…আমাদের তিন ভাই-বোনকে ডেকে বাবার চকচকে নোট দেয়ার দিনগুলো মনে পড়ে গেল…

    আর যখন স্কুলের টিচারদের সাথে দেখা হয়, আসলেই একদম এইভাবেই জড়িয়ে ধরে থাকেন। আমার বেলায় এমন হয়েছিল একবার, এক টিচারকে খুব ভয় করতাম আমরা। আরে উনি দেখি এমন করে জড়িয়ে আদর শুরু করলেন! বিস্ময়ে আর ভালো লাগায় কিম্ভূতকিমাকার এক অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছিল। স্কুল লাইফটা ক’দিন ধরেই খুব মনে পড়ছে। এতদূর চলে এলাম কখন কোন ফাঁকে, বুঝতেই পারি না। মনে হয় আজও স্কুলে গেলে সেই আগের মতই পিটি করব, টিফিন টাইমে নিষিদ্ধ আচার খাবো। আহা সেই দিনগুলো!
    আমার ছোটভাইও একেবারে ক্লাস টু তে ভর্তি হইসিল! আর আমি ক্লাস ওয়ানে। :happy:

    দরকারের সময় লেখা মাথায় না আসা আমারও হতেই হবে। দুঃখের চিমটি! 🙁 ইউ এস বির চিন্তাটা খারাপ না!

    • অনাবিল বলেছেনঃ

      বাহ! ! অনেকগুলো চিমটি হবে দেখছি… :happy:

      স্কুল দিনগুলো কেন যেন ইদানীং অনেক বেশি মনে পড়ছে, আর ধুলো পড়া আচার বিক্রি করতেন একজন, সেটা নিয়ে কত কাহিনী, আম্মু কখনো টাকা দিতো না যে কিনে খাবো… আমাদের কত কৌশল…সেই দিঙ্গুলো…ভাবলেই অন্যরকম লাগে………

      • মাধবীলতা বলেছেনঃ

        আসলেই, ঐ আচারের স্বাদটা আর কোন আচারেই পাই না! :happy:

        • অনাবিল বলেছেনঃ

          আমি দুই/তিন বার খেয়েছিলাম, আম্মুর বারণ না শুনে খাচ্ছি দেখে খুব গিলটি ফিলিংস হতো, আবার খেতেও ইচ্ছে হতো খুব!! 😛 😛
          আর, স্বাদ ও সেইরকম লাগতো!! :p
          এখন অনেক মজা লাগে ভাবলে…

  5. মুবিন বলেছেনঃ

    ভালো লাগলো খুব। আপনার লেখার ধরন অন্য সবার থেকে আলাদা। তাই পড়তে ভালো লাগে।

  6. নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেনঃ

    খুব সুন্দর লেখা। পাঁচমিশালি এই ডায়েরির পাতা পড়তে খুব ভালো লাগলো। সত্যি কথা কি, খুব আজব হলেও সত্য, পড়তে পড়তে আমার সমরেশের কথা মনে হলো কেন জানি, তিন/চার পড়ার সময় একটা ফিলিংস হয়েছিলো আমার — সেটা আমি উত্তরাধিকার বা সাতকাহন পড়ার সময় পেতাম। আমার চরিত্ররা যখন পথ দিয়ে হেঁটে যেত আর চিন্তা করত।

    মানুষের চিন্তাগুলো অনেক কুৎসিত হয়, আবার অনেক সুন্দর হয়। ইউএসবি দিয়ে চিন্তাগুলো লিখে ফেলতে পারলে হয়ত অনেক বাজে ব্যাপারও হতে পারত। কেননা, সব সুন্দরের আশেপাশেই কিছু কদাকার ব্যাপার রয়ে যায়। হিহিহি।

    সুন্দর লেখা, ছিমছাম। পছন্দ করার মতন। আপনার লেখাগুলো আমার বরারবই ভালো লাগে। স্নিগ্ধ টাইপের। পারলে নিয়মিত লিখুন। আপনারও ভালো, লেখার জড়তা কেটে উঠবে। আমাদের জন্য ভালো — ভালো ভালো লেখা পাব।

    • অনাবিল বলেছেনঃ

      আপনার কমেন্ট টা পড়তেও অনেক ভালো লাগলো…… উৎসাহ পাচ্ছি, আশাকরি নিয়মিত লিখবো……অনেক ধন্যবাদ।

      চিন্তাগুলো ট্রান্সফারের সময় এই ব্যাপারটা খেয়াল করিনি….কিন্তু …সমস্যা নেই তো, পাব্লিশ করার সময় ভালো গুলো করলেই হবে…… 😀 😀

  7. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    টিচারদের তো এখন তোমাকে নিয়ে চিন্তাই করার কথা না আপু!
    বলছ না সেইটা কথা বলার সময়? 😛
    সেই ছোট্ট মেয়েটা আজ এত এত ভালো ছাত্রী! ক্লাস টু এর সেই ভার তার কাঁধ দুটোকে আরও শক্ত করে তুলেছে ধীরে ধীরে। 😀

    টু এর সেই ছোট্ট মেয়েটা, বড় হয়ে যাওয়া এই লেখিকা মেয়েটাকে আমি বড় ভালোবাসি। :beshikhushi:

    নিয়মিত লিখো আপু।
    তোমাকে মিস করি, আগেও তো বলেছি। জানো নিশ্চ্য়ই। 🙂

    • অনাবিল বলেছেনঃ

      মন্তব্য পড়ে লাল হয়ে গেলুম 😛 😛

      তবে টিচাররা এখনো চিন্তা করেন, আমাদের ডিন স্যারের একটা কমন ডায়ালগ– তোমারে নিয়ে যে আমি কী করবোওওও………
      😛 😛 :happy: :happy:

      :love:

    • অনাবিল বলেছেনঃ

      এটা যে একটা ইমো, সেটা প্রথমে বুঝতেই পারি নি।

      এডিটরের নিচেই ইমোগুলোর লিস্ট থাকে, সেখানে ক্লিক করলেই ইমো চলে আসে… 🙂

  8. Pumpa বলেছেনঃ

    বরাবরের মতনই অনেক সাধারণ, তারপরেও অসাধারণ একটি লেখা। আপনার লেখা সবসময়ই অনেক ভালো হয়, একটু নিয়মিত লিখবেন প্লিজ 🙂
    ৫ নাম্বারটা সব থেকে ভালো হয়েছে, আর ৩ নাম্বারটা পড়ে মনে হলো… আপনি কেন যেন রোবট হয়ে যাচ্ছেন… 😛

    • অনাবিল বলেছেনঃ

      ইন্সপিরেশন পাই না লেখার……কী-বোর্ডে হাত রাখতে অনেক আলসেমি হয়, অথচ প্রতিদিন-ই ভাবি লিখবো……
      আর, এই গতিময় জীবনে রোবট না হয়ে থাকাটা-ই বড্ড কঠিন আর কষ্টের………

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।