এলোমেলো কথন…

ঝরা পাতার দিনগুলো আমার অসাধারণ লাগে। আমাদের দেশের শরত/ হেমন্ত মিলিয়ে শীতপ্রধান দেশগুলোর Fall season. এখানকার একেক ঋতুতে এত যে বাহারী রঙের সমাহার, এরকম বাংলাদেশে হয় না। পৃথিবীর একেকটা প্রান্ত কী নিপুণ মায়ায়, দক্ষতায় আর যত্নে সাজিয়ে রেখেছেন পরম করুণাময়! ভাবলেই আপ্লুত হয়ে যাই আনন্দে…

বাংলাদেশের হলদে সবুজ সরিষা খেতের সৌন্দর্য যেমন এখানে পাই না, তেমনি এখানকার অনন্য প্রকৃতিও দেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

সাতদিনের মধ্যে একই গাছের পাতাগুলো সবুজ থেকে লাল, কমলা, সোনালী হলুদ আর সবশেষে খয়েরী বর্ণ ধারণ করে ঝরে পড়ে। থরে থরে বিছিয়ে থাকা শুকনো পাতাগুলো উড়ে উড়ে যায়, পাখিগুলো শীত থেকে বাঁচতে চলে যায় আমাদের সোনার বাংলাদেশে। প্রকৃতির এইসব নানান আয়োজনের পর সগর্বে আসে শুভ্র চাদরে মোড়া বরফ। আর বরফ শেষে হাজারো রঙ নিয়ে আসা বসন্ত। বসন্ত বাংলাদেশেও আছে, কিন্তু এখানকার বসন্তের অন্যরকম এক আবেদন টের পাই। কী জানি হয়তোবা একঘেয়ে রুক্ষ সাদা প্রকৃতি দেখতে দেখতে এই অবস্থা হয়! এত রঙ, এত ফুল দেখে পুরোই আনন্দে নাচানাচি করতে মন চায়।

আজকাল সবাই বাংলাদেশের টিপটিপ নভেম্বর বৃষ্টি দেখে যে মাতামাতি করছে, আমি সেটা প্রায় অর্ধেক বছর দেখে দেখে মোটামুটি ত্যাক্ত বিরক্ত। শুধু একদিন আকাশ কালো করা ঝুম শিলাবৃষ্টি হয়েছিল, বৃষ্টির মধ্যে ভিজে ভিজে আইসক্রিম খেয়েছিলাম ঐদিন। মাথায় টপাটপ শিল পড়ছিল! এখন পর্যন্ত প্রবাস জীবনে এটা আমার সবচেয়ে সেরা দিন। তবু মনে হয় ছেলেবেলার মত করে আম কুড়ানো বৃষ্টির আকুলতা সব আনন্দই ছাপিয়ে যায়।

আপাতত এই ঝরা পাতার দিনগুলোকেই প্রাণভরে দেখি। ঝরে যাক সব মিথ্যা, অন্যায়-অনাচার, কালিমা। শুভ্র সুন্দর তুষারের মত পবিত্র হোক মানবাত্মা।

 

মাধবীলতা সম্পর্কে

"অনিমেষ অবাক হয়ে দেখল মাধবীলতাকে । মাধবীলতা কোন রাজনীতি করেনি কখনও, শুধু তাকে ভালবেসে আলোকস্তম্ভের মত একা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে । খরতপ্ত মধ্যাহ্নে যে এক গ্লাস শীতল জলের চেয়ে বেশি কিছু হতে চায় না । বাংলাদেশের এই মেয়ে যে কিনা শুধু ধূপের মত নিজেকে পোড়ায় আগামীকালকে সুন্দর করতে । দেশ গড়ার জন্যে বিপ্লবের নিষ্ফল হতাশায় ডুবে যেতে যেতে অনিমেষ আবিষ্কার করেছিল বিপ্লবের আরেক নাম মাধবীলতা ।" - সমরেশ মজুমদারের "কালবেলা" উপন্যাসের মুখবন্ধের অংশবিশেষ থেকে উদ্ধৃত এই কথাগুলো আমার খুব বেশি আপন । কোন এক অনিমেষের মাধবীলতা হতে পারাটা আসলেই বড় বেশি সৌভাগ্যের।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চিন্তাভাবনা-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

21 Responses to এলোমেলো কথন…

  1. মুবিন বলেছেনঃ

    যারা প্রাইভেট গাড়ি চড়ে বৃষ্টির দিন ঘুরে বেড়ায়। বিকেল বেলা ব্যলকনিতে বসে ধোঁয়া উঠা কফির কাফে চুমুক দিয়ে যারা তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বলে আহ নভেম্বর রেইন। তাদের দেখে আমার মেজাজ সপ্তমে উঠে যায়। কাদামাখা রাস্তায় আমার মতো যারা হেঁটে পথ চলে তারা কখনো নভেম্বর রেইন নিয়ে আদিখ্যেতা করার সুযোগ পায় না।
    দুঃখিত বেশি কথা বলে ফেললাম।
    লেখা ভালো লেগেছে।

    • মাধবীলতা বলেছেনঃ

      মোটেও বেশি কথা বলেন নি ভাইয়া। আসলেই আজকাল যে কী এক একটা ট্রেন্ড শুরু হয় ভারচুয়াল লাইফে! আগে কিন্তু এই শীতের আগের বৃষ্টি নিয়ে এরকম লাফালাফি করতে দেখি নি এত!

      ধন্যবাদ ভাইয়া পড়ার জন্য। আর ভালো লাগার জন্য। আপনার গল্পও কিন্তু অসাধারণ! অনেকদিন লিখেন না… 🙂

  2. জ্ঞানচোর বলেছেনঃ

    শীতের ঝরা পাতা আর বসন্তের সবুজ অঙ্কুরায়নের দৃষ্টান্ত বাংলাদেশেও আছে। কিন্তু, সাধারণ জীবনযাত্রার চাহিদা পূরণে আমরা গড়-মানুষেরা এত বেশী ব্যস্ত যে, গ্রামে গিয়ে পরিবর্তনটুকু চেখে দেবার ফুসরৎ মেলে না।

    আপনার সৌভাগ্য কি দুর্ভাগ্য জানি না, আপনি উন্নত দেশে আছেন। যেখানে মোটামুটি কম ঝঞ্জাটে শহরগুলোকে তারা গ্রাম বাংলার মতো সাজিয়ে রাখে।

    তবে, ঝড়ো হাওয়ায় বিহবল সত্ত্বেও, ঝরে পড়া আম কুড়নোর প্রেষণা সেখানে পাবেন কি না জানি না। অথবা, শৈশবের শরতের পাহাড়ে বুনো বেতের ঝোঁপ ঘুরে ঘুরে বেতফল খুঁজে বেড়ানো যে রোমাঞ্চকর অনুভূতি জাগায়, তার জুড়ি কোথায়?

    ছবির জন্য ধন্যবাদ। মনটা কেমন ফুরফুরে হয়ে গেল :)।

    • মাধবীলতা বলেছেনঃ

      হুম তা তো আছেই! তবে এত ব্যাপক না তা। যেমন শীতে পাতা ঝরে গণহারে সব গাছ বাংলাদেশে একদম ন্যাড়া হয়ে যায় নাহ। এখানে একটা গাছে একটা পাতা পাবেন না আপনি! আর বসন্তের রূপ বাংলাদেশেও কম না, একেবারে মাটির কাছাকাছি গিয়ে অবলোকন করেছি অনেকবারই। কিন্তু ঐ যে বললাম একঘেয়ে রুক্ষতার পর ভালো লাগাটা অনেক বেশি। বাংলাদেশের মত আরামের শীত তো না!

      সৌভাগ্য দুর্ভাগ্যের কথা বললে তা কমবেশি সবখানেই থাকে। ওটা নিয়ে ভেবে জীবন চলে না!

      ছেলেবেলার সেই দিনের মত দিন আর হয় না। ছেলেবেলার অনেকটা সময়ই গ্রামবাংলায় কাটিয়েছি। জানি তার বৈচিত্র্য, মায়া, আকুলতা কতখানি…

      মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। 🙂

  3. একুয়া রেজিয়া বলেছেনঃ

    জানো, একটা সময় ছিলো আমি বর্ষাকাল আর বসন্তকাল খুব পছন্দ করতাম…… এখন মনে হয় বছরের সব ঋতুই ভীষণ সুন্দর… একেক ঋতু একেক কারণে এখন স্পেশাল মনে হয়। ঝরা পাতার দিনগুলো তোমার সব দুঃখ আর বেদনা উড়িয়ে নিয়ে যাক আর শুধু আনন্দ থেকে যাক। 🙂

  4. অনাবিল বলেছেনঃ

    বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র ও অনেক সুন্দর, আমরা শহরে বসে তেমন টের পাই না……

    দেশের বাইরের রংবেরং টা অপূর্ব লাগে দেখতে… 🙂 এমন ছবি দেখলে আমার শুধু ইচ্ছে হয় হেঁটে যাই অনেক দূর আর ছূট লাগাই…… 🙂

    আর আমি বড্ড বৃষ্টি বিলাসী, কম -বেশি যেমন বৃষ্টি-ই হোক না কেন… 🙂 বৃষ্টিতে আইস্ক্রিম খাওয়ার অনেক মজার স্মৃতি আছে, আবার অনেক প্ল্যান ও আছে… 😀 😀

    • মাধবীলতা বলেছেনঃ

      আসলেই শহুরে জীবন কাটিয়ে প্রকৃতিকে চেনা দায়! আমাদের সময়কার ছেলেবেলার মতন করে আজকের কোন বাচ্চাই বেড়ে ওঠে না। খাঁচায় বদ্ধ ফার্মের মুরগি হয়েই বেড়ে উঠছে এই বাচ্চাগুলো। 🙁

      আমিও বৃষ্টিবিলাসী, তবে ঝুম বৃষ্টিবিলাসী। :happy: গায়ে কাটা দেয়া ঠাণ্ডা আনা টিপটিপানি বৃষ্টি বিরক্ত লাগে। :crying:

  5. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    তবে এখন কিন্তু অনেক কিছুই বদলে গেছে! মানে একেক সময়ে একেক ঘটনা ঘটছে। শীতের সময়ে বৃষ্টি দেখতে কার ভালো লাগে বলুন!

  6. নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেনঃ

    প্রকৃতি মানুষের মনের উপরে অনেক প্রভাব বিস্তার করে। এমনকি প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটানো এই সুন্দর শব্দগুলোও যেন মনকে ভালো করে দিলো। এরকম লেখা আরো চাই।

    সুন্দর লেখা। পাঁচতারা দাগিয়ে ভাললাগা প্রকাশ করলাম।

  7. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    গ্রাফে কিছু ভুল আছে। আরেকটু চেক করতে বলব লেখককে। মমতাজ আর রবিঠাকুর উচ্চবিত্তে হাই দেখানো আছে

  8. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    শুরুতেই ছবিটার দিকে চোখ আটকে গেল!
    অদ্ভুত সুন্দর! 😀

    পৃথিবীর একেক প্রান্তের প্রকৃতি আসলেই একেক রকম।
    তবু কেন যেন বিদেশ নিয়ে আমার ভেতরে এতটুকু উচ্ছলতা কাজ করে না।
    মনের মাঝে এখনো বিশাল আফসোস, দেশের আনাচে-কানাচে ঘোরা হল না যে এখনও! 🙁

    ঝরে যাক সব মিথ্যা, অন্যায়-অনাচার, কালিমা। >> প্রার্থনা করি আমিও।

    আরেকটু বড় পোস্ট হলে ভালো হত।
    পড়তে পড়তে মনে হল, আরেকটু পড়তে পারলে মন্দ হত না। 🙂

    • মাধবীলতা বলেছেনঃ

      ধন্যবাদ! বিদেশ নিয়ে উচ্ছলতা না ঠিক ব্যাপারটা, আমি প্রকৃতি ভালোবাসি। আল্লাহর সৃষ্ট পুরো পৃথিবীটাই সুন্দর লাগে। দেশের টান আলাদা, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। উপরের মন্তব্যগুলোতে তাই বলছিলাম…

      আমারও মনে হয়েছে পোস্ট বেশ পিচ্চি হয়ে গেছে, আসলে হুট করে মনে আসা কথাগুলো হুট করেই লিখে ফেললাম। অনেক ধন্যবাদ।

  9. গাঙচিল বলেছেনঃ

    জন্ম, শৈশব, কৈশর-পুরোটাই যান্ত্রিক একটা শহরে হওয়ায়, বাংলাদেশের আসল সৌন্দর্য অবলোকন করার সৌভাগ্য তেমন একটা হয় নি। তবু, এই শহরেও প্রকৃতির একটা বৈশিষ্ট্য আমার চোখে পড়ে(মানে নাকে আর কি…)। প্রতিটা ঋতুরই একটা আলাদা গন্ধ পাই আমি। বিশেষ করে বসন্তের সন্ধ্যার যে একটা গন্ধ আছে না, মাতাল করে ফেলে!
    ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায় আর সেটা কেমন যেন নেশার মত লাগে। (কী সব পাগলের মত প্রলাপ বকছি!)
    🙁 🙁

    ছবিটা কি উইন্টারে তোলা আপু? আপনার ওখানে শীতের মেঘলা আকাশটাও কিন্তু ভীষণ সুন্দর ! 🙂

    • মাধবীলতা বলেছেনঃ

      নাহ এইটা উইন্টারের আগে। Fall এ তোলা। কচুর সুন্দর ! শীতের মধ্যে কালে ভদ্রে এইরকম আকাশ পাই। যেইদিন পাই, ঐদিন তাই প্রকৃতি ম্যামের ছবি তুলে রাখি। 8)

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।