‘মানবাধিকার’ শব্দটি আজকাল আমার কাছে ভীষণ হাস্যকর মনে হয়। কারণ ‘মানুষের অধিকার’ তাদেরই থাকবে যাদেরকে সত্যিকারের ‘মানুষ’ বলে মনে হবে। এই ব্যস্ত সময়ে হয়ত আমরা নিজেদেরকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখতে ভুলে গেছি। এই ভুলে যাবার সময়ে তাই এখন আমরা ‘মানুষ’ চিনতে ভুল করি!
আমি জানি, ‘মানবাধিকার’ শব্দটিকে আমি উচ্চপদস্থদের সামনে অর্থবহ করে তুলতে পারব না। আমার দুর্বল ভাষাজ্ঞানে সেটা সম্ভবও নয়। তাই আজ আমার ছোট্ট চেষ্টা থাকবে অন্য এক জগতে বাস করা মানুষের গল্প বলার- ভাষায় নয়, ছবিতে। সেই জগতের মানুষগুলো মানবাধিকার রক্ষাকারী কোন সংস্থার সামনেই যে আসতে পারে না! আজ তাই শুধু তাদেরই গল্প।
ছবি যখন কথা বলে-
এই ছবিটি আজকের। আজ যখন আপনি নিশ্চিতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, খাচ্ছেন কিংবা ঘুমাচ্ছেন, তখন এই শিশুটি তার বাবা কিংবা মায়ের বুকের সাথে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে ইসরায়েলি সৈন্যদের গুলিতে।
তের বছর বয়সের আহমেদ ওজিলের ভক্ত ছিল। ওজিলের জার্সি গায়ে দিয়ে নভেম্বরের ১৩ তারিখে ফুটবল খেলছিল সে। ভবিষ্যতে বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন সেদিনই শেষ হয়ে যায় তার।
নভেম্বরের ১৪ তারিখের ছবি। গাজার আকাশ ধোঁয়া আর আগুনের লাল রঙে ঢাকা। এমন ছবি কখনো মিডিয়ার সামনে আসবে না।
এই ছোট্ট মেয়েটির পরিবার নিজেদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছে ইউনাইটেড নেশন পরিচালিত এক স্কুলে। মেয়েটি জানে না, সে আর কখনো নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে কিনা।
তেইশ বছর বয়সের এই যুবকের মত আর কত মা তাদের সন্তানের লাশ সামনে নিয়ে কাঁদবে, বলতে পারেন?
যখন চোখের সামনে আপনার রাত্রি যাপনের ঠাঁইটুকুও ধ্বংস হয়ে যায়, তখন আপনার অনুভূতি ঠিক কেমন হতে পারে? নভেম্বরের ১৭ তারিখের ছবি।
এই নিষ্পাপ শিশুটিকে দেখে কি বিশ্বাস করবেন যে সে আর এই পৃথিবীতে নেই?
আর কত রক্ত লেগে থাকবে পথে-প্রান্তরে, শিশুদের খেলার ছোট্ট বলটাতে? নভেম্বরের ১৪ তারিখে তোলা ছবি।
ইসলামি ন্যাশনাল ব্যাংক এখন শুধুই ধ্বংসস্তুপ। তিল তিল করে জমানো সাধারণ মানুষের স্বপ্নগুলো আর নেই।
আজ আপনি নির্ভয়ে শ্বাস নিয়েছেন কিন্তু ওরা? ওদের তো শ্বাস-প্রশ্বাস সবটাই রুদ্ধ হয়ে গেছে আজ।
স্বপ্নমৃত্যু আর হতাশার সময়।
এই কান্নার শেষ হবে কবে?
ব্রাউজিং করতে করতে আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। বিশ্বাস করুন, এখানে দেয়া ছবিগুলো অনেক ভয়ঙ্কর কিন্তু বিভৎস নয়। এর থেকেও বিভংস কিছু ছবি চোখের সামনে চলে এসেছিল আমার। আমি দুই সেকেন্ডের বেশি তাকিয়ে থাকতে পারি নি। এতটা নৃশংসতা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এই নৃশংসতার নামই কি তবে ‘মানবাধিকার’?
ছবি সংগ্রহ:
১. ফিলিস্তিনি ব্লগ- অকুপায়েড প্যালেস্টাইন
২. নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজ
৩. সিএনএন
মানুষের পোড়া ছবিটা দিও না ফিনিক্স। অনুরোধ রাখলাম।
যাদের মনুষ্যত্ব পুড়ে গেছে তাদের এই ছবি দেখে কিছুই হবে না। আর ছবিটা মানবিক দিক বিবেচনা করে না দেয়া উচিত হবে বলে মনে করছি। এধরনের ছবি অনেক সময় মানসিক আঘাতের কারণ হয়। জানি কষ্ট হবে, তবু আমাদের ভবিষ্যৎ যেন এসে না দেখে আমরা যে সময়ে বেঁচে ছিলাম তখন পৃথিবীর মানুষ এত বর্বর আর পাশবিক ছিল।
আরেকটা কথা- ছবি গুলোর উৎস জানাও।
ভবিষ্যত প্রজন্ম এমন পৃথিবী যেন কখনো না দেখে ভাইয়া, কখনো না।
আপনার কথা রাখলাম।
ধন্যবাদ।
মুক্তির গান গাওয়া পাখিরা জেগে থাকুক। পৃথিবীর সব খানে। সব যুদ্ধ শিশুর জন্য প্রার্থনা।
আজ ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন দেখছিলাম। নেতানিয়াহু বললেন- কোন বেসামরিক ব্যক্তির পেছনে লুকানো কঠোর মানবতা বিরোধী অপরাধ। আর আমরা আমাদের দেশের মানুষের নিরাপত্তার জন্য যা করা দরকার সব করবো।
যে শিশুর ছবি দিয়েছো সে চলে গেলো। কিন্তু যে শিশুটি সারা জীবনের ক্ষত নিয়ে বেঁচে থাকবে তাকে কি জবাব দেবে? ইরাক যুদ্ধ শিশু আলী বোমায় আহত হয়ে হাসপাতালে জ্ঞান ফেরার পর জিজ্ঞেস করেছিলো ‘আমরা হাত খুঁজে পাচ্ছিনা, হাত কোথায়?’ সে হাত দুটো তখন সারা জীবনের জন্য তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। (মাইকেল মুর, Dude! Where’s My Country, Page- 74, )
হাল ছেড়ো না বন্ধু। একদিন সূর্য উঠবেই। মানবতার জয় হবেই হবে। জিজ্ঞেস করোনা আর কত বাকি সূর্য উঠার, জিজ্ঞেস করে দেখো আমরা ঘুম ভেঙে ওঠা সূর্যের ডাকে পথ চলি কিনা।
ভাইয়া, আপনার কমেন্টটা যে কী ভালো লাগল আমি বোঝাতে পারব না। একইসাথে কষ্টের আর আশার অনুভূতি।
সূর্যের ডাকে পথ চলতে পারার প্রার্থনায়, প্রেরণায়, প্রচেষ্টায় রইলাম।
কেন এইসব ছবি দাও?
এইসব দেখলে সবার আগে নিজেকেই অপরাধী মনে হয়, কোন দরকার আছে সেটার? কোথায় একটু আয়েশ করে নিজেকে নিয়ে ভাববো, তা না…!
সব অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
কিছু মানুষের ভেতরটাকে একটা মৃদু ধাক্কা দেবার জন্যই পোস্টটা দেয়া।
কিন্তু নিজের কাছেই এতটা খারাপ লাগবে, বুঝতে পারি নি।
বুঝতে পারলে হয়ত দিতাম না।
বাস্তবধর্মী চিন্তা বাস্তববাদী মানুষের থাকবে। কিন্তু তাই বলে আবেগ থাকবে না, তা কিন্তু নয়। গত কয়দিন ধরে গাজার মানুষদের উপর ইসরাইলী সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের জন্য তাই ফেসবুক জুড়ে দেখি আবেগী সংলাপ।
কেউ দুষছে মুসলিম দেশপ্রধানদের। কেউ বলছে পুরো বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে। অধিকাংশই ভদ্র অভদ্র ভাষায় নিন্দা জানাচ্ছে ইসরাইলীদের প্রতি। কেউ আবার আগ বাড়িয়ে বলছে ইহুদীদের দোষ।
এর মধ্যে সমাধানের চিন্তাও করছেন কেউ কেউ। সেই সমাধানের ব্যাপ্তিটা ব্যপক। স্রেফ ইসরাইলী পণ্য বর্জন থেকে শুরু করে, জগৎজুড়ে মুসলিম খেলাফত প্রতিষ্ঠার ডাক আছে এতে।জোর দিয়ে প্রকাশ আছে, স্রষ্টার কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি, ধর্মগ্রন্থ আর ধর্মীয় আচারে আরো মনোনিবেশ করে আধ্যাত্মিক উন্নতির কথা।
কিন্তু, এ সব কিছুই নিছক আবেগের আস্ফালন ছাড়া কিছুই নয় বলে প্রমাণ করা যায়। আজকের ইসরাইল কিন্তু, আগে থেকেই এমন ছিল না। বরং, শত বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে উঠেছে তারা। ইউরোপিয়ান অত্যাচারীদের হাত থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে নিয়ে, এখন তারা জ্ঞান বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ শাখায় সর্বাধিক প্রযুক্তিধারী হবার প্রতিযোগীতায় রত। শুধু প্রযুক্তি নয়, রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণে তাদের বর্তমান প্রভাব বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত।
আমরা আবেগে অনেক কিছুই করতে পারি। কিন্তু, ধর্মীয়ভাবে মুসলিম হওয়ার দায়িত্ববোধ থেকে জ্ঞানচর্চা আর উন্নয়নের জন্য নিজেদের মিশন নির্দিষ্ট করতে আমরা অক্ষম। কয়টা তরুণ, গাজা হত্যাযজ্ঞের ফলে নিজের মিশনকে জ্ঞানার্জনের দিকে নিয়ে গেছে? কয়জন কিশোর, যুবা, বলেছে, আজ থেকে আমি পড়াশোনায় দুই ঘন্টা করে বেশী সময় দেবো? কতজন, মুসলমান বলেছে, ত্রিশ বা পঞ্চাশ বছরের মাঝে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় আর গবেষণা প্রতিষ্ঠানে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবো?
আবেগ মিইয়ে যাবে। রক্তের দাগ থেকে যাবে। থেকে যাবে ইসরাইলের আয়রন ডোম, এয়ার ফোর্স, নিউক্লিয়ার বোমা। থেকে যাবে তাদের মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক প্রভাব আর রাজনৈতিক লবিং।
আ্মাদেরকেই এই অন্ধকার ঘরে আলো আনতে হবে। জ্ঞানের আলো।
(copied from Saifuddin Saber)
ভাইয়ার এই কথাটা কালকে যখন দেখেছি ততক্ষণে পোস্ট দেয়া হয়ে গেছে। পোস্ট দেয়ার আগে দেখলে হয়ত এই পোস্টটা এরকম হত না আপু।
মাঝে মাঝে আসলে কারণ ছাড়াই আবেগী হয়ে যাই।
মানবতার জায়গায় ধর্মকে দোষ দেয়ার ব্যাপারটা দেখলে আঘাত পাই।
চরমপন্থীদের বোধগুলো দেখলেও খারাপ লাগে।
পোস্টটা দেয়ার পর থেকেই আসলে এক ধরণের অপরাধবোধ কাজ করছে ভেতরে ভেতরে।
আগে কখনো এমনটা হয় নি!
আমার কি পোস্টটা রিমুভ করে ফেলা উচিত আপু?
না না। কেন? ছবিগুলো না দেখলে আমিও বোধহয় এতটা অস্থির হতাম না। আবেগ তো খারাপ না। আমি কমেন্ট টা দিলাম তোমার পোস্ট এর ফলো আপ হিসেবে। স্বাভাবিক ভাবেই এসব দেখে যে কারও অসহায় লাগবে। তখন তার সাধ্যের মধ্যে কী করতে পারে তা বোঝানোর জন্য।
সরব এর মন্তব্যে ক্যান ভোট করার ব্যবস্থা নাই! এই প্রথম আফসোস হচ্ছে।
ফিনিক্স ধন্যবাদ পোস্ট এর জন্য।
আবেগ কে ব্যবহার করে অনেক ভালো কাজ করা যায়। করা উচিৎ
সেটাই ভাইয়া।
মন্তব্যে ভোটিং এর ব্যবস্থা থাকলে আসলেই ভালো হত!
বোকা মানুষের দ্বিতীয় মন্তব্যটাও খুব ভালো লেগেছে আমার। যারা বেঁচে আছে, আমাদের তো তাদের জন্যই কাজ করতে হবে। কথাটা বেশিরভাগ সময়েই ভুলে যাই আমরা।
আপু, পোস্ট দিতে গিয়ে আমার যে কী দশা তা আর কী বলব। ছবিগুলো দেখার পর থেকে আমি ভালো নেই।
এখানে মন্তব্যের রিপ্লাই দিতে হবে ভেবেও কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছিল। ছবিগুলোর দিকে আবার চোখ পড়ুক, এটা চাইছিলাম না। তাই ব্রাউজারের ইমেইজ অপশন বন্ধ করে রিপ্লাই দিচ্ছি এখন।
ভাইয়ার মন্তব্যটা অনেক অনুপ্রেরণামূলক ছিল আমার জন্য। এখানে আবার মনে করিয়ে দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু।
গতকাল রাতে বাসায় আসলাম। জানো আজ কত দিন পর নেটে বসছি আর শুরু করলাম তোমার লেখা দিয়ে আর তুমি এই দিলা!
সরি রে।
বোকা মানুষ আর নুসরাত আপুর মন্তব্যগুলো পড়, আশা করি ভালো লাগবে তোর। আমার মত পঁচা মানুষেরা বোধহয় শুধু কষ্ট দিতে পারে কিন্তু ভাইয়া, আপুদের মত দুর্দান্ত কিছু মানুষ আছে বলেই সবাই এত অন্ধকারেও আশার আলো দেখতে পায়। আমার ধারণা, তুইও পারবি সেটা। অন্ধকারের মাঝেও আলো খুঁজে নিতে। 🙂
ছবিগুলো দেখে খুব খারাপ লাগল আপু।
🙁