অফিসের কাজে জামালপুর যেতে হল । দক্ষিন বংগের ছেলে হওয়ায় খুব উত্সাহ নিয়ে গেলাম জামালপুরে । খুব অবাক হলাম দেখে যে ঢাকা থেকে জামালপুরের কোন ডিরেক্ট বাস সার্ভিস নেই । একদম শেষ মুহুর্তে হওয়ায় ট্রেনের টিকেট মেনেজ করতে পারিনি । তারপর মহাখালি বাস স্ট্যান্ড গিয়ে টাংগাইল এর বাসে উঠলাম । তারা কোন জায়গায় না থামিয়ে আড়াই ঘন্টায় টাংগাইল পৌছে গেল । তারপর টাংগাইল থেকে কোন ডিরেক্ট গাড়ি পেলামনা । উঠলাম একলোকাল গাড়িতে । যারা আক্ষরিক অর্থে রাস্তার প্রত্যেকটি মানুষকে গাড়িতে তোলার জন্য চেষ্টা করছে । রাস্তায় যদি কোন মানুষ থেকে থাকে সে কোনদিকে যাবে তা চিন্তা না করে গাড়ি থামায় তার পর তাকে গাড়িতে তোলে । লোকজনের ভাব দেখে মনে হল এটা খুবই নর্মাল একটা জিনিস । একবার মনে হল বাস গ্রামের একটি বাড়ির পাশদিয়ে যাচ্ছে কয়েকজন মহিলা দাড়িয়ে আছে । বাস যথারীতি তাদের সামেনে গিয়ে দাড়াল । তারপর হেল্পার গিয়ে তাদের হাতের ব্যাগ গুলো টেনে বাসে তুলে ফেলল । তারপর দেখলাম বাস কিছুক্ষন দাড়িয়ে আছে । তখন আমি অধৈর্য্য হয়ে হেল্পারকে জিজ্ঞেস করলাম
” ভাই দাড়িয়ে আছেন কেন” সে বলল ” একজন মহিলা এখনো বাসায়, সে রেডি হচ্ছে “।
এভাবে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা পর আমি পৌছলাম জামালপুর শহরের বাসস্টেন্ড এ । সেখান থেকে বিসিক শিল্প নগরী খুব কাছে । তারপর গেলাম আমার নির্দিষ্ট গন্তব্যে । গিয়ে দেখলাম খুব ছোট একটা ওয়ার্কশপ । কিছু ভারি মেশিনপত্র আছে । কেউ ওয়েল্ডিং করছে কেউ ড্রিল করছে । কিছুক্ষন পর এই মাঝারী ইন্ডাস্ট্রির যে মালিক সে আসল । তার সাথে তার অফিসে ঢুকলাম । কিছুক্ষন কথা বার্তা হল । তারপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন আমি কিসের ইঞ্জিনিয়ার । আমি আমর ইঞ্জিনিয়ারীং শাখাটা বললাম । তারপর বললেন ভাই চলেন চা খেয়ে আসি ।
তারপর পাশে ছোট একটা দোকানে চা খেতে গেলাম । সেখানে কিছু ননপ্রফেশনাল কথা বার্তা হল । চা খাওয়ার ছলে উনি অনেক কথা বললেন । তার কিছু আমি আজ এখানে বলার চেষ্ট করব । উনি আমাকে অনেক কথা জিজ্ঞেস করতে লাগলেন । আমার বাড়ি কোথায় । কোথাথেকে পাশ করেছি । আমার বাড়ির লোকেশন শুনে উনি কিছুটো অবাক হলেন এবং বুঝলেন এই অঞ্চলের মানুষ সম্পর্কে আমার ধারনা কম । আমি শুধু কথার ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য বললাম “ ভাই আপনি কত দিন ধরে এই ব্যাবসার সাথে জড়িত?” । তিনি বললেন প্রায় আঠার বছর । ”এখন ব্যবসা কেমন?” আমার ২য় প্রশ্ন । তারপর উনি আমাকে কিছু কথা বললেন যা আমি ভুলতে পারছিনা । তিনি বললেন ..
”আপনিত বুয়েট থেকে পাশ করেছেন , তাইনা । আপনাদের কাছেত ইঞ্জিনিয়ারীং অনেক মজার । এসি রুমে বসে কাজ করেন । ঠিকনা ? আমি এই মেশিন গুলো বানাচ্ছি প্রায় সতের বছর ধরে । আমি কৃশি যন্ত্রপাতি বানাই । কিন্তু এখন বাংলাদেশের কৃশকের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ । আপনারা চিন্তাও করতে পারবেননা” উনার শেষ কমেন্টটা আমার একটু গায়ে লাগল । আমি বললাম
”কেন আমরা চিন্তা করতে পারবনা কেন ? আমরাওত বাংলাদেশে থাকি । আমরা চিন্তা করি এদেশকে কিভাবে এগিয়ে নেওয়া যাবে ।” উনি বললেন” ভাই কিছু মনে করবেননা । আপনারা কি চিন্তা করেন তা আমার জানা নায় । আমি আমার কিছু প্রেকটিকাল অভিজ্ঞতার কথার বলি । কৃশি যন্ত্রপাতি তৈরি করার করার কারনে কৃষকদের অবস্থা সম্পর্কে আমাকে ভালভাবে জানতে হয় । বাংলাদেশে বর্তমানে কৃষকের অবস্থা আপনাকে একটু বলি । আমার পরিচিত একজন তার জমিতে সাড়ে তের মন ধান পেয়েছে । সে মহা খুশি । তারপর তার সাথে বসে আমি একটু হিসাব করলাম । ” তাকে জিজ্ঞেস করলাম “ভাই তোমর কত খরচ হয়েছে ? আস আগে তা হিসেব করি । বর্তমান বাজারে ধানের দাম কত তা জান ? ”
সে আসলেই জানেনা । বর্তমানে ধানের দাম এতই কম । তার খরচের আশি শতাংশ টাকাও সে তুলতে পারবেনা । লাভত দুরে থাক । এই কৃষকগুলোকে যদি আপনি জিঞ্জেস করেন “ভাই কেমন আছেন ।” সে বলবে “ ভাই ভাল” তার চোখের দিকে তাকিয়ে আপনি বুঝবেন আপনি কতটুকু ভাল।”
আমি তখন অবাক হয়ে বললাম ”ভাই চালের দামত অনেক বেশি । সরকারত চাইলে কৃষকদের ন্যায্য মূল্য দিতে পারে । চালের ব্যাপারে যখন কোন আলোচনা হয় আমি সবসময় শুনি বিদেশথেকে আমদানি করার কথা”
তখন সে বলল “ ভাই আপনারা অনেক কথা শুনেন । আপনারা “দারিদ্রতা” শব্দটা শুনেছেন । যমুনা নদীটা পার হন আপনারা আসল দারিদ্রতা দেখতে পারবেন ।”
আমি বললাম “ ভাই ধানের যদি উত্পাদন খরচ এত বেশি হয় তাহলে অন্য কোন শষ্য তারা উত্পাদন করতে পারে তাইনা ?”
সে বলল “ভাই কৃষকরা আপনার মত জীবনের অর্ধেকটা সময় পড়ালেখা করে কাটায়নি । তারা তাদের জীবন ভর এই ধানই চাষ করেছে । সবচেয়ে বড় কথা হল ধান বিক্রি করতে না পারলে নিজেরা খাবে । খাদ্য নিরাপত্তা অনেক বড় একটা জিনিস । সবাই আগে নিজের খাওয়াটা নিশ্চিত করে । কৃষকরাও তা ই করতেছে ।”
“কৃষকদের অবস্থা আরও খারাপ হবে । কারন তারা আর রিস্ক নিতে সাহস পাচ্ছেনা । ভাই আপনারা ঢাকায় বড় হইসেন । আপনাদের কাছে উন্নতি মানে ঢাকায় আরেকটা বিশতলা বিল্ডিং হওয়া । কৃষক মরুক বাচুক তাতেত আপনাদের কিছু যায় আসেনা । কিছু মনে করবেননা ভাই । একটু বেশি কথা বলতেছি ।”
তার শেষ কথা শুনে আমি কোন প্রত্যুত্তর দিতে পারলামনা । আমরা একটা ডিগ্রি নিচ্ছি তা দেশের কতটুকু কাজে আসছে ? খুবই সহজ প্রশ্ন …
-” ভাই বিড়ি খাওয়ার কি অভ্যেস আছে ? আমার একটু বদভ্যাস আছে “ উনি জিজ্ঞাসা করলেন ।
-”না ভাই নাই , আপনি খান ,সমস্যা নাই”
জামালপুর থেকে ঢাকায় আসতে সময় লেগেছে প্রায় সাঙে ছয় ঘন্টা । আবার সেই লোকাল গাড়ি । আসার সময় ক্লান্তির দিকে আমার তেমন নজর ছিলনা । যতটানা চিনতা হচ্ছিল ঐ ভদ্র লোকের কথাগুলো নিয়ে ।আমরা যারা ঢাকায় আমাদের জীবন কাটাচ্ছি তারা কি কোন কৃত্তিম খোলস তৈরি করছি ?
তাহলে কেন আমার মনে হচ্ছে আমি দেশের সাথে প্রতারনা করছি ?
খবরে প্রায়ই সময় আমি দেখতাম ইন্ডিয়ায় কৃষকের আত্মহত্যা । আমি কারণটা নিয়ে চিন্তা করতাম ।
গাড়ি উত্তরা দিয়ে ঢাকায় ঢুকল । বিশাল এক বিলবোর্ড দেখলাম । এক মোটামুটি স্বল্প বসনা এক মেয়ে । আমি আমার মনের ব্যাথাটা কিছুক্ষনের জন্য ভুলেগেলাম । হয়তবা রুমে এসে একটা হলিউডের মুভি দেখলে মনের ব্যাথা পুরোটাই ভুলে যেতেপারব । কিন্তু কতক্ষন ?
উনি আমাকে অপমান করেননি । তারপরেও তার কথা গুলো কেন যানি আমার মনে তীরের মত বিধে আছে । একজন ফরাসি সাহিত্যকের কথা মনে পড়ছে । তিনি বলেছিলেন “the more you can hide ,the more you can be civilized.”
বিবর্তনের ধারায় আর যাই হোক আমি সভ্য । চরম সভ্য ।
লেখাটা পড়ার পর পাঁচ মিনিট চুপ করে বসে ছিলাম। আমি অবাক হয়ে ভাবছি, এত পড়ালেখা করে কি করলাম? দারিদ্র বলতে হয়তো অনেক কিছুই দেখেছি। কিন্তু, এতো চরম দারিদ্রতার মাঝে বাস করছে আমাদের বেশির ভাগ মানুষ?!!
“আপনারা “দারিদ্রতা” শব্দটা শুনেছেন । যমুনা নদীটা পার হন আপনারা আসল দারিদ্রতা দেখতে পারবেন ।”- সব মিলিয়ে এই কথাটা মাছের কাঁটার মতো বিবেকে বিঁধে থাকবে। আর শহরের উঁচু দালানের যত বিলাস দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিয়ে লেখকের করা চরম মাত্রার উপহাসটা লজ্জায় মাথা হেট করে দেবে।
পরিবর্তন নিয়ে আমাদের অনেক অনেক পরিকল্পনা, কিন্তু বিশ্বাস করি আর নাই করি, এই কৃষক মানুষগুলোকে তুলতে না পারলে, পাটের হাজার ডিএনএ সংশ্লেষণ করেও কোন লাভ নেই। লাভ নেই, হাজার বদলে দাও বদলে যাও স্লোগাণে। এই পড়াশুনার দুই পয়সা মূল্য নেই আর।
[দেশের ইনজিনিয়াররা একে একে প্রবাসী হয়ে যাচ্ছে। তাদের জন্য দেশে ফেরার আর্তি আছে লেখাটায়। লেখককে অনুরোধ, বানানের সংশোধনীগুলো সময় করে যাতে দিয়ে দেন। আরো লিখবেন। ]
😳
আমাকে মাফ করবেন, আমি আবেগ প্রকাশের ব্যাপারে দিনদিন আরো চাছাছোঁলা হয়ে যাচ্ছি। ইঞ্জিনিয়াররা প্রবাসী হোক, দরকার হলে সব বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ার প্রবাসী হোক, কিন্তু রুটের সাথে যোগাযোগটা যেন আরো শক্ত হয়। বিলবোর্ড দেখার জন্য ঢাকায় পড়ে থাকার চেয়ে বাইরে এসে কাজ করা উত্তম। লেখককে যে আইডিয়াটা দিয়েছি, চিন্তা করে দেখুন সেটা কাজে লাগানো যায় কি না। বা এর চেয়ে বেটার কী করা যেতে পারে।
গলার ভেতরটায় একটা দলা পাকিয়ে গেল কী যেন। ছোটকাল থেকে আমরা পড়ে এসেছি, সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা এই দেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এই বিদেশ বিভূইয়ে এসে দেখি, কৃষিকাজের কত কদর। অথচ মাত্র কয়টা মাস মাত্র চাষ করতে পারে এরা। বাকিটা বছর জমি পতিত হয়ে থাকে। এখানে এসে নিজের চোখে দেখে বুঝি, আত্মা দিয়ে অনুভব করতে পারি কেন কবিরা বলে গেছেন বারবার “ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি আমার দেশের মাটি”…এই দেশে জন্মে আমরা কেন এত অকৃতজ্ঞ পাষাণ? এই মাটিকে মুক্ত করতে কত রক্ত ঝরেছে, রক্ত পানি করা পরিশ্রমে কৃষকেরা এই মাটি থেকে শস্য বের করে আনছেন, যা গিলে ঐ বিলবোর্ডগুলো বানাচ্ছে কতগুলো অমানুষ। আর আমাদের প্রকৌশলীরা দুই-চারদিন দেশের জন্য দরদ দেখিয়ে বিদেশের মাটিতেই সেটল হয়ে যাচ্ছেন। আমাদের শিক্ষা, আমাদের জ্ঞান শুধু আমাদের জন্যই, বড় বেশি স্বার্থপর হয়ে গেছি আমরা।
মাধবীলতা, সময় পেলে একটু নেট ঘেঁটে দেখুন বছরের বাকি আট মাস ফলানো যায় এমন শাক সবজির লিস্ট পান কি না। শুনলাম করলা চাষ একজায়গায় খুব জনপ্রিয় হয়েছে। ‘মাটি ও মানুষ’ প্রোগ্রামটার ভিডিও অনলাইনে পাওয়া যায় কি না। ওখানে খুব ভালো ভালো আইডিয়া আসত। দেখুন প্রবাসী মানেই স্বার্থপর – এই বদলানোর জন্য কিছু করতে পারেন কি না।
আপু প্রবাসী মানেই স্বার্থপর এটা অবশ্যই ঠিক না! প্রবাসীদের রেমিটেন্স দিয়ে দেশের অর্থনীতির একটা বড় অংশ চলছে। যখন দেশে টাকা পাঠাই, কী ভয়ানক অদ্ভূত একটা ভালো লাগা কাজ করে বলে বোঝানো যাবে না। আমি আসলে তরুণ প্রজন্মের সিংহভাগের বিদেশে সেটল হওয়ার প্রবণতার বিরোধী। একটা সরব প্রজন্ম যদি দেশ থেকে চিরদিনের মত চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন কোন আশা আর থাকে না। তরুণরা ছাড়া আর কে কবে পেরেছে বিপ্লব আনতে? সে সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক যা-ই হোক না কেন।
সারা বছর শস্য ফলানোর অনেক প্রযুক্তিই আবিষ্কার হয়েছে। ঘেঁটে দেখব ইনশাআল্লাহ। তবে আপু আমাদের দেশের মাটিটা তো প্রাকৃতিকভাবেই আল্লাহ অনেক সমৃদ্ধ করে দিয়েছেন। তাই কষ্ট লাগে। কৃষিকাজের সাথে প্রকৌশলের সম্পর্ক আছে। কিন্তু ঠিক যেখানটায় সমস্যা সেখানে আমাদের কী করণীয় ভেবে দেখা দরকার। সারাজীবনই কৃষকেরা অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে, প্রতারিত হচ্ছে। নিজ নিজ এলাকায় ছোট সার্কেলে কৃষকদেরকে সাহায্য করা, মেশিন সংক্রান্ত খরচ কমানো কিংবা কম খরচের মেশিন বানানো এইগুলো কাজ শুরু করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হতে পারে। আমাদের দেশে এখনও লাঙ্গল ব্যবহার করেন কৃষকেরা, অনেকে দারিদ্রের কারণে তাও পারেন না, নিজের ছেলেপুলে দিয়ে লাঙ্গলের কাজ চালান। এইসব শুধু এক-দুইদিন পত্রিকার প্রথম পাতায় ছবি হয়েই থেকেছে, আমরা আফসোস করি তারপর ভুলে যাই। প্রতিবেলার ভাত মুখে দেবার আগে একবারও কি আমরা মনে করি এর পেছনে কত ঘাম, কত অন্যায়,কত কান্না জড়িয়ে আছে?
অনেক দীর্ঘ মন্তব্য করে ফেললাম। সরি আপু, খুব খারাপ লাগে আসলে।
এতদিনে ব্লগের লেখালেখি দেখে মনে শান্তি আসতেসে। জীবনের প্রয়োজনে লেখালেখি, চিন্তার ক্ষেত্র শুরু করার জন্য লেখালেখি। আরো লিখুন। কথোপকথনের স্টাইলটা খুব ইফেক্টিভ মানুষকে জীবনের সাথে রিলেট করার জন্য। লিখতে থাকুন।
লেখার বিষয় নিয়ে মন্তব্য : কৃষির অবস্থা খারাপ ঠিক আছে, একজন ইঞ্জিনিয়ার এ ব্যাপারে কী করতে পারে সেটা বুঝতে পারলামনা। একটা হতে পারে কুরবানি ঈদে যারা দেশে ফেশে যায় তারা ওখানকার লোকজনদের সাথে, স্থানীয় কৃষি অফিসারের সাথে কথা বলে মূল সমস্যা একটা দুইটা আইডেন্টিফাই করে ঢাকায় নিয়ে আসতে পারে। কৃষক ৮০% দাম পায়না এটাতে বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ারের কিছু করার নাই, তবে চাষের খরচ কমানোর জন্য যদি কিছু একটা করতে পারে তবে বেশ হয়। চিন্তা করে দেখেন, একটা ফোরাম করবেন কিনা, সবাই একেবারে রুট লেভেলের সমস্যা তুলে ধরবে, তারপর এর মধ্য থেকে কেউ কেউ টিচারদের সাথে কথা বলবে, তারপর যদি কিছু করা যায়। সেই ইঞ্জিনিয়ারের ফোন নাম্বার নিয়েছিলেন ত?
বুয়েটের সাথে কৃষি এই জাতীয় কোন আলোচনা আমার ছিলনা । ভদ্র লোক মুলত কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি করেন । এবং সে বাংলাদেশের কিছু অপ্রিয় সত্য কথা আমার সাথে শেয়ার করেছেন ।তার কিয়দংশ আমি এখানে লিখলাম , অপরাধবোধ থেকে । আমি এখানে কোন পরম সমাধান দেয়নি । হয়তবা দেয়া যাবেনা ।
আমার তো খুব মনে দাগ কেটেছে! ইচ্ছা করছে পরম না হোক, হালকা পাতলা একটা সমাধানও খোঁজা যায় কি না সবাই মিলে চেষ্টা করে। তা না হলে অপরাধবোধের সার্থকতা কোথায়, তাই না?
ইচ্ছা করছে পরম না হোক, হালকা পাতলা একটা সমাধানও খোঁজা যায় কি না সবাই মিলে চেষ্টা করে। তা না হলে অপরাধবোধের সার্থকতা কোথায়, তাই না?
সহমত!
প্রবাসীদের দেশে ফেরার আর্তির কথা বলেছি দেশের দুরাবস্থা থেকে। সবাই যদি দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে যায়, তাহলে, শেষে এই কৃষকদের আত্মহত্যা ছাড়া কিছু করার থাকবে না।
কিন্তু, কৃষকদের টেকনোলজী লাগবে এটা নয়। কৃষকদের সাথে যা চলছে তা হলো একটা কৃত্রিম মন্দা। নিচে কমেন্টে একটু ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলাম।
বাংলাদেশের ইনজিনিয়াররা অনেক কাজ করেন। অনেক বড় বড় কাজ। কিন্তু, খুব কমই বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি (বাংলাদেশের খুব কম পরিমাণই শিল্পনির্ভর। কেবল শহরগুলো হয়তো।) কৃষি এবং কৃষকদের ব্যাপারে জানতে পারি।
তাদের বর্তমান অবস্থা কি?
প্রতি মণ ধান চাষ করতে কৃষক (সে নিজের জমি হোক আর বর্গা জমি হোক) উৎপাদন খরচ করে প্রায় ৬৫০ টাকা। (এতে কিন্তু জমির দাম আর শ্রমিক মূল্য হিসাব করা হয় নাই। কেবল সার, বীজ, সেচের তেল, গরু ইত্যাদি মিলে)।
সরকার প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে একটা পরিমাণ ধান বাজার থেকে কিনে নেয়, সাধারণ বাজারের চেয়ে বেশী মূল্যে। সেই দামটা ধরা হয়, মণ প্রতি(বেশি মূল্য কিন্তু), ৭৫০ টাকার মত।
এত গেল একটা সামান্য অংশ।(বাকি যে ধান তার কথা বাদ ধরি)। এসব ধান যে সরকার কেনে, তা কিন্তু সরকার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে না। কারণ,
১. ফসল তুলে সরকারের জন্য অপেক্ষা করতে যে পরিমাণ গুদাম থাকা দরকার, তার খরচ কৃষকদের হাতে নাই। ফলে তারা করে কি, কিছু মধ্যসত্ত্বাভোগীর কাছে তাদের ধান বেঁচে দেয়।
২. সরকারও সরাসরি ঐসব মধ্যসত্ত্বভোগীদের পাশ কাটিয়ে কৃষকের কাছে আসে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা হয়, রাজনৈতিক দলের হোমরা চোমরা।
শেষ কালে গিয়ে কৃষকের কাছে ধানের দাম আসে, মণ প্রতি খুব বেশি হলে ৫৫০ টাকার মতো।
মণ প্রতি ১০০টাকা ক্ষতিতে আমাদের নবাবের বেটা কৃষকেরা আমাদের অন্ন জুগিয়ে যাচ্ছে।
এবার আসি আমাদের বাজারে, আমরা বাজার থেকে চাল কিনি ৪৫ টাকা করে। সেই চালের ধানের মূল্য কৃষকরা পায়, খুব বেশি হলে ১৫টাকা। মাঝখানে যে বিশাল পার্থক্য, সেটা কাদের পকেটে যায়, তা-ই প্রশ্ন।
মূল কথাটা হলো, গ্রামের কৃষক কি ট্র্যাক্টর দিয়ে চাষ করছে নাকি নিজের ছেলেদেরকে লাঙ্গলে যুতে দিচ্ছে তা বড় কথা নয়। টেকনোলজী আনলে তো ঐ খরচ আরো বাড়বে। বরং টেকনোলজীর চেয়ে আমাদের পলিনি (নীতিমালা) নিয়েই বেশি ভাবতে হবে।
কৃষকরা বাংলাদেশের প্রাণ। কিন্তু, সরকারের ধান মজুদের কোন নীতিমালা না থাকায় পুরোই মার খেয়ে যাচ্ছেন তারা। কিন্তু, ফাঁকতালে কিছু দুর্নীতিবাজ/সুযোগসন্ধানী আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে। শক্তিশালী আর কৃষকসেবী নীতিমালা দরকার আমাদের। টেকনোলজী নয়।
প্রকৌশলীদের ভূমিকার কথা আসায় প্রযুক্তির কথা এসেছে। আর প্রযুক্তিকে এভাবে উড়িয়ে দেয়াটা কি ঠিক? খরচ বাড়বে ঠিক আছে, কিন্তু সাথে সাথে তো চাষাবাদের প্রক্রিয়াতে উন্নতিও হবে। এখানেই ভূমিকা হতে পারে, কী করে কম খরচে এই কাজগুলো করা যায়।
তবে আপনি যা বললেন একমত, মধ্যস্থতাকারীদের জন্য কৃষকেরা মার খাচ্ছেন। এখন তারাও হচ্ছেন হোমড়াচোমড়া রুই কাতলা লোকজন। তো বিড়ালের গলায় ঘণ্টি বাঁধবে কে? 🙁
অনেক ধন্যবাদ এই রকম পোস্ট এর জন্য। সত্যি বলতে সরব এই জন্যই তৈরি হয়েছিলো এমন সব লোকের কথা বলবে, এমন সব ইস্যু নিয়ে কথা বলবে যেইগুলা বাকিরা করে না।
আচ্ছা আমরা কি প্রকৃত অবস্থা অন্তত তুলে আনতে পারি?
আর করার ব্যাপার তো আছেই।
আমার কাছে কতগুলো প্রশ্ন একটু বেশি সামনে চলে আসে অন্যগুলোর চেয়ে | ওই ভদ্রলোক কেন মনে করছেন যে প্রকৌশলীরা যদি কৃষকদের জন্য যুতসই প্রযুক্তি তৈরি করে দেয় তাহলে কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তন হবে ? আমি যতদূর জানি, এই দেশের কৃষকদের সোনালি একটা সময় ছিল আজ থেকে বহু বছর আগে, যখন প্রযুক্তি আরো পিছিয়ে ছিল | অর্থাত প্রযুক্তির সুবিধা ছাড়াই তারা সুখে দিন কাটাতে সক্ষম ছিল | বর্তমানে যেইসব কারণে তারা বঞ্চিত হচ্ছে তার একটা বড় অংশ এসেছে প্রযুক্তির অভিশাপ থেকে এবং এর সাথে যোগ হয়েছে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তহীনতা | সুতরাং কৃষকদের প্রযুক্তি দিয়ে উপকার করার চেয়ে বরং সেইসব দিকগুলোতে আরো বেশি ফোকাস করা উচিত | নাহলে, প্রযুক্তিগত উত্কর্ষতার ফলাফল কৃষক ভোগ করবে না | সবরকম সমস্যার সমাধান হিসাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চাওয়া আসলে পশ্চিমা পুজিবাদী মানসিকতা | এরফলে আমাদের কৃষিখাত প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে যাবে এবং পশ্চিমারা তাদের প্রযুক্তি বিক্রি করার নতুন বাজার খুঁজে পাবে | আজকে তুমি নতুন এক যন্ত্র তৈরি করে কৃষককে দেবে – পরেরদিন সেটা শেখানোর জন্য জনবল, অর্থবল দরকার হবে | একসময় হাপিয়ে উঠে বলবে, আসলে এই ব্যাটারা লেখাপড়া জানে না – এজন্যই সব সমস্যা | সুতরাং ওদের বাচ্চাদের ধরে এনে কিছু হরফ চেনাবে – যেন একসময় তারা তোমার-আমার প্রযুক্তিগুলো বুঝতে পারে | এত সবকিছু করার পেছনে আমাদের একটাই দুরভিসন্ধি – “আমাদের প্রযুক্তি ওদের খাওয়াতে হবে” !! অথচ সত্যিকার অর্থে প্রযুক্তির আবির্ভাবটাই ওদের সকল সমস্যার মূল |
আরো একটা জিনিস মনে রাখা দরকার, উন্নত প্রযুক্তির আবির্ভাব অনেকক্ষেত্রে মানুষের কাজটুকু যন্ত্রের হাতে ছেড়ে দেয় – সেক্ষেত্রে নতুন বেকারত্বের জন্ম নেয় | এছাড়া প্রতিটি প্রযুক্তি গ্রহণ করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমানের অর্থ ও শিক্ষার প্রয়োজন – যা আমাদের কৃষকদের মধ্যে এই মুহুর্তে নেই | সুতরাং আমরা যদি এই কৃষকদেরকে এভাবেই বাঁচাতে চাই, কৃষি-প্রযুক্তি মনে হয় না এর সঠিক সমাধান | আমি জানি আমার এই কথা অনেকখানি “স্রোতের বিপরীতে” শোনাবে | কিন্তু বাস্তব হল বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের কৃষিখাতে এই মুহুর্তে উচ্চপ্রযুক্তি প্রয়োগ করলে সেটা নতুন একটা শ্রেনী-বৈষম্য তৈরি ছাড়া ভালো কিছু আনতে পারবেনা | এজন্য আমার মতে, শুরুতেই বলটা প্রযুক্তির কোর্টে ঠেলে দিয়ে বিগত বছরগুলোতে দেশে যেসব নাটক চলেছে এইসব নিরীহ কৃষকদেরকে নিয়ে – সেখান থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে |
আমার মনে হয় ব্যপারটা এখানে শুধু ইঞ্জিনিয়ারদের আরও শ্রম দেয়া নয়, বরং, দেশের এই বিশাল সংখ্যার কৃষকদের প্রতি অন্যান্য সব মানুষের উদাসীনতা। সবাইকে ভাত খেতে হয়, কিন্তু, ভাতের ব্যবস্থা করার জন্য লড়ছেন যারা, তাদের কথা মনে রাখি না কেউ। তাদের উন্নয়নের কথা ভাবে না কেউ।
পড়ার পর বোকা বোকা লাগছে!
প্রত্যেকবার ধান বিক্রির মৌসুম আসলেই, আমি চিন্তা করতে থাকি ব্যপারটা নিয়ে। কৃষক ধান বিক্রি করে মণপ্রতি ৬০০-৬৫০ টাকায় যেখানে চালের কেজিপ্রতি দাম মোটামুটি ৪০টাকা। তিনমাস প্রচণ্ড পরিশ্রম করে, টাকা খরচ করে যে কৃষক লোকসান দিয়ে ধান বিক্রি করছে, সেখানে মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা এক বাজার থেকে কিনে নিয়ে আরেক বাজারে বিক্রি করেই বিশাল অঙ্কের টাকা লাভ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হলেও তার বাস্তবায়ন চোখে পড়ে না।
সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ করে বিক্রির ব্যবস্থা করলে বা মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করলে শুধু ব্যবসায়ীরা না, ক্ষিপ্ত হবে বৈশ্বিক মোড়লরাও।
তবুও, সরকারের উচিত কৃষক যেন সম্পূর্ণ খরচ তুলে কিছু লাভ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা, একই সাথে মধ্যস্বত্ত্বভোগীরাও যেন নিয়ন্ত্রিত ব্যবসা করে তা নিশ্চিত করা।
প্রকৌশলীরা কতটা কী করবেন সেটা নিয়ে আমার জ্ঞান কম। আমি নিজে এই সেক্টরের মানুষ নই। তবে সার্বিকভাবে আমার যা মনে হয় তাতে আমি সমাধানের দুটো উপায় দেখছি-
১. নীতিমালা নিয়ন্ত্রণ যেন ভোক্তার কেনা মূল্যের বিপরীতে সরাসরি কৃষক জনগোষ্ঠী লাভের অংশ পান
২. কৃষি যন্ত্রের চেয়েও জরুরি জিনিস হল হাই ইল্ড স্ট্রেস টলারেন্ট ভ্যরাইটি নিয়ে গবেষণা এবং একই জমিতে ধান চাষের পরেও অন্য কোন শস্য উৎপাদনের বৈজ্ঞানিক উপায় প্রয়োগ করা।
বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম পাটের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার করতে পারেন কিন্তু শুধু এইটুকুতেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। আধুনিক বিশ্ব এই সিকোয়েন্স থেকে উপাত্ত নিয়ে হাই ইল্ড ভ্যারাইটি নিয়ে গবেষণা করতে পারলে আমরা কেন বসে থাকব? আমাদের কৃষিতে প্রযুক্তির উন্নতির চেয়েও বেশি দরকার আমাদের নিজেদের মাটির ধরণ আর শস্যের ধরণ অনুযায়ী সারা বছর কৃষি ব্যবস্থায় উৎপাদনের বন্দোবস্তকে নিশ্চিত করা। তবে অবশ্যই আমার প্রথম সমাধান বাস্তবায়ন করা না গেলে এই দ্বিতীয় সমাধানের কোন মূল্যই থাকবে না।
দুটো সমাধান নিশ্চিত করা গেলে তবেই প্রযুক্তির বিষয়টা আমার মতে সমাধান হিসেবে আসতে পারে। তবে এক্ষেত্রে কৃষক সমাজকে যথেষ্ট প্রযুক্তিগত শিক্ষাদানের প্রয়োজন আছে, তা না হলে নতুন নতুন যন্ত্র আবিষ্কার করেও লাভের খাতায় হিসেবের অঙ্কটা মেলানো কঠিনই থেকে যাবে।
লেখকের চিন্তাধারার প্রকাশ ভালো লেগেছে, এরকম লেখা আরো আশা করছি। তবে এত চিন্তার স্রোতের মাঝেও ‘বাংলা ভাষা’ যেন অল্প পরিসরে হলেও লেখকের চিন্তা জগতে ঠাঁই করে নেয়, সেই কামনা থাকবে।
অবস্থা এতটাই বেগতিক যে, প্রান্তিক চাপ সহ্য ক্ষমতা নিয়ে গবেষণার আগে দরকার হয়ে পড়েছে চাপ সমতার গবেষণা। ব্যাপারগুলো তথ্য প্রযুক্তির মুষ্ঠির প্রভাব থেকে বের হয়ে একেবারে অর্থ সঞ্চালনের উঠানামায় ঠাঁই নিয়েছে। আগে বেঁচে থাকা, তারপর উন্নয়ন।
অবাক ব্যাপার, কৃষি নীতির মধ্যেও নেই এগুলো। তাই প্রযুক্তির ব্যাপারে চিন্তা, সে যে ধরনের গবেষণাই হোক না কেন, ঐ ক্ষেত্রে বাঙ্গালীকে স্মার্ট ফোন খাওয়ানোর মতো ব্যাপার। (একজন সুহৃদ বলেছিল. বাঙ্গালীর এন্ড্রয়েডেরই কোন কাজ নেই, আইফোন লুমিয়া নিয়ে টানাটানি)
কিন্তু, দুঃখ থেকে যাবে, এই ব্লগে লেখালেখি কি আসলে কোন পরিবর্তন আনতে পারবে, তা জানা হবে না। তবে, হয়তো যারা পারবেন বদলাতে, তাদের কারো একজনের চোখে পড়বে বানান ভুলে ভরা এই লেখা। (লেখক ভয় পাবেন না, এই পামরের অবস্থা আরো খারাপ ছিল)
বাংলা ভাষার প্রতি ভালবাসাটা একটু স্পষ্ট করা উচিৎ ছিল। সরবে, সবাই চেষ্টা করি বানানটা শুদ্ধ করে লিখতে। এক্ষেত্রে, লিংক দিয়ে দিলে সাফ কাজ হয়ে যায়। লজ্জা দেবার দরকার পড়ে না। সব সময় সেটা কাজ করবে এমন নিশ্চয়তা কোথা পাই? 😛
কৃষি প্রযুক্তি বিষয়ে লেখাপড়ার উৎসাহ একটা কৃষিপ্রধান দেশের ছেলেমেয়েরা পায় না। উপরন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দাবী দাওয়া সরকারী আশ্বাসের মুখ দেখে না। কেন বলতে পারেন? চাপ সমতার গবেষণা সফলতার মুখ দেখবে কাদের মাধ্যমে? কোন পর্যায়ে গিয়ে একটা সমাধানের রাস্তা বের হবে, সেটা কি চেইন অব কমান্ডের নীতি নির্ধারকর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়?
“কিন্তু, দুঃখ থেকে যাবে, এই ব্লগে লেখালেখি কি আসলে কোন পরিবর্তন আনতে পারবে, তা জানা হবে না। তবে, হয়তো যারা পারবেন বদলাতে, তাদের কারো একজনের চোখে পড়বে বানান ভুলে ভরা এই লেখা।”>> ব্যাপারটা বানান ভুল-শুদ্ধতার নয়। লজ্জা দেবার প্রয়াসও নয়। আমার মন্তব্যে এমন কোন লজ্জা দেবার ইঙ্গিতও ছিল না। যদি তারপরেও কারও মনে হয় যে লজ্জা দেবার প্রচেষ্টায় অন্তঃপ্রাণ হয়ে সূক্ষ্ম সুর তৈরির আবহবার্তা চালানোর ইঙ্গিত প্রকাশিত হয়ে পড়ছে তাহলে বলব মিথ্যে নন্দলালের কবিতা পড়ে দূরে সরে যাবার বিন্দুমাত্র প্রয়োজন নেই। লিঙ্ক তো হোম স্ক্রিনের বাম পাশে বড় বড় উইজেটে দেয়াই আছে, আলাদা করে উল্লেখ করা হয় নি এটা অবশ্যই নিজের দায় হিসেবে নিলাম। মার্জনার দায়ভার জ্ঞানচোর আর সুখী মানুষের হাতেই রইল। আশা করি, পুরুষ প্রজাতি এতটা নির্দয় নয়! 😛
“আশা করি, পুরুষ প্রজাতি এতটা নির্দয় নয়”
লেখক/লেখিকা এই বাক্য দ্বারা কি বুঝিয়েছেন তা বোধগম্য হচ্ছেনা । কোন নির্দিষ্ট প্রজাতি আমার স্বজাত নয় । “জ্ঞানচোর” আমাকে “পুরুষ” বলে ডিফেন্ড করেননি । দয়া করে আমার জন্য পুরো পুরুষ প্রজাতিকে আক্রমণ করবেননা । অনুরোধ রইল ।
কেউ যদি মজার কথাকেও সিরিয়াসলি নেয়, তাইলে আমার আসলেও কিছু বলার নাই। আমি ‘চোখ টিপুনি’র একটা মজার ইমো দেয়ার পরেও না বুঝলে আসলে ব্যর্থতা আমারই।
আরেকটা কথা, আমি কাউকে এখানে অফেন্ডেড করিই নাই যে কেউ সেটা ডিফেন্ড করতে আসবে।
তবুও, আমার মন্তব্য আপনার কাছে অফেন্ডেড মনে হবার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
“তবে এত চিন্তার স্রোতের মাঝেও ‘বাংলা ভাষা’ যেন অল্প পরিসরে হলেও লেখকের চিন্তা জগতে ঠাঁই করে নেয়, সেই কামনা থাকবে” এই লাইনের অনেক রকম অর্থ দাড়ায় । যেটা আমার জন্য মঙ্গল সেটা বেছে নিলাম ।
আমরা যারা কিছুটা লেখা লিখতে শিখেছি তারা কেন জানিনা প্রত্যেকটা শব্দকে টিপে টিপে তার নিগড় অর্থ বের করার চেষ্টা করি । তবে এতটুকু বলে আমি আমার এই স্বল্প সম্মানটুকুর প্রতিরক্ষার চেষ্টা করব তাহলো “ আমার চিন্তার স্রোতে ’বাংলা ভাষার’ কোন ঠাই নাই” কথাটা মিথ্যে নয় ।তবে সত্য হচ্ছে বাংলা ভাষা আমাকে যতটুকু আলিঙ্গন করেছে তার প্রস্থচ্ছেদ করলে বাংলা এবং আমার সংযোগ স্থলে কিছুটা ঝাপসা জায়গা পাওয়া যাবে । আমি চেষ্টা করব এই জায়গা গুলো আলোকময় করতে ।
আপনার সম্মান স্বল্প এমন ভয়াবহ মিথ্যে ধারণা অনুগ্রহ করে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। অন্তত সরবে এইরকম চিন্তাধারা অব্যাহত রাখলে নিজেকে ভীষণ ছোট বলে মনে হবে।
ব্যাপারটা এমন নয় যে সবাইকে ভাষাবিদ হতে হবে। শুধু আজকের সমাজের যোগ্য শিক্ষার্থী বা চিন্তাবিদরা বাংলা ভাষায় শুদ্ধভাবে লেখার ছোট্ট প্রয়াস চালাবেন, এমন আশা থেকেই বাক্যটা লেখা। এর পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। তাছাড়া আপনার চিন্তার জগতে ভাষার কোন ঠাঁই নেই- এমন অভিযোগ করা আমার মত সাধারণের পক্ষে রীতিমত দুসাধ্য!
আপনার আর বাংলা ভাষার মাঝের ঝাপসা জায়গা আলোকময় হোক, এটাই কাম্য। আর এজন্য যদি কোনভাবে সাহায্য করতে পারি তাহলে নিজেকে ধন্য মনে করব।
আপনার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল হোক।
একটি বই পড়ছিলাম The Second Sex by Simne de Beouvoir . ঠিক ঐ মুহূর্তে আপনার ‘পুরুষ’ জাতিকে নিয়ে কমেন্টটা তেলের মধ্যে ঘি ঢালার মত হয়েছে । তাই রুক্ষ ভাষা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে এসেছে ।
পরিহাসের জবাবে আমারও হয়তবা পরিহাস করা উচিত্ ছিল ।
দু:খিত ।
ব্লগে শব্দের ঝনঝনানি না, বাস্তব দেখতে অনেক বেশি ভাল লাগে। অসাধারণ লাগল। কিছু করতে পারব কিনা হয়ত জানি না, তবে ব্যাপারটা সত্যি উদ্বেগের।