আজকাল না খুব সন্দেহ প্রবণ হয়ে গেছি। সন্দেহ প্রবণ না বলে হয়তো বোকাও বলা যায়।
দাঁড়াও, তোমাকে ক’টা ঘটনা বলি।
এক জায়গায় বেড়াতে গেছি। দূর সম্পর্কের আত্মীয়রা সব সময়ই অপরিচিতের মতো ঠেকে। আত্নীয়ের ছেলের সাথে পরিচিত হলাম। একটা পরিচিত প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ালেখা করছে। সাথে সাথেই তার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম, কতটা গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়ায় এই ছেলে। নিশ্চয়ই অনেক অনেক আলট্রা স্মার্ট মেয়েদের সাথে খুব খাতির আছে।
অদেখা প্রাইভেট ভার্সিটি সম্পর্কে না বুঝে কত কিছুই না বুঝে ফেললাম।
বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি। বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে অসহায় লাগছে। পাশে একটা লোক এসে দাঁড়ালো। গালে হালকা দাঁড়ি, কাঁধে ব্যাগ। ব্যাগের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই হঠাৎ মনে হলো, লোকটা ভয়ংকর কেউ নয় তো! ব্যাগের ভেতর থেকে ধুম করে কিছু বেরিয়ে এসে জীবনের শেষপথ দেখিয়ে দেবে না তো?
গালের হালকা ফিনফিনে দাঁড়িগুলো দেখে অনিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেললাম চোখ।
ভার্সিটির বাসে করে প্রতিদিন ক্লাস করতে যাই। বসে, দাঁড়িয়ে, ঝুলতে ঝুলতে যাওয়ার সময় ভাবনার পসরা সাজিয়ে বসি। আশেপাশের মানুষগুলোর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে যাই। কাঁটছেড়া করি চেহারা, অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাঝ দিয়ে দেখার মতো করে সূক্ষ্মভাবে বোঝার চেষ্টা করি চরিত্র। ভারি চশমা পরা ছেলেটা কে বিশাল আঁতেল ভেবে মুখ টিপে হাসি। বুকের বোতাম খোলা ছেলেটা কে রাজনৈতিক নেতা ভেবে গুটি পায়ে একটু সরে দাঁড়াই।
প্রতিদিন সাধারণ মানুষগুলোকে এমন ছাঁচে ফেলার চেষ্টা কেন করি বলতে পারো? সবাই তো নিজের মনের মতো করে থাকতে পারে- এ সত্যটা বুঝতে আমার মনের আপত্তিটা কোথায়!
নিজেকে কি মনে হয় জানো?
বন্ধ ঘরে বসে থাকা একজন মানুষ। যে পৃথিবীটা দেখছে একটা চৌকো জানালার ছোট্ট ফোকরের রঙিন কাঁচের মধ্যে দিয়ে। সবকিছুকে সাধারণ করে ফেলার, সবকিছুকেই দেখামাত্র ছাঁচে ফেলার নির্মম চেষ্টা করে যাওয়া একজন মানুষ।
কিন্তু, অদ্ভুত ব্যপার কি জানো? দাঁড়াও, তোমার সাথে আগে একটা খেলা খেলি।
ক’টা মানুষের কথা বলি তোমায়। তুমি শুনে বলো তাদের কথা শুনে তোমার কী মনে হয়……
১. লোকটার আধমাথা টাক। তোবড়ানো গালে কাঁচা-পাকা দাঁড়ি। চোখে পুরনো আমলের গোল গোল কাঁচের চশমা।
২. কলেজ থেকে পাশ করতে পারে নি। এলোমেলো চুল মাথায়, চোখ বড় চশমা, পুলিশের কাছে ধরা খেয়ে হাসিমুখে তাকিয়ে আছে।
৩. গম্ভীর মুখ, ধবধবে সাদা চুল, পোশাক সব সময় একই রকম, কাজের পদ হারিয়েছেন বিভিন্ন অভিযোগে।
৪. বৃদ্ধ একজন মানুষ, অদ্ভুত পোশাক-আশাক , লাঠি হাতে চলেন।
কী মনে হচ্ছে এদের কথা শুনে? কোন দোকানী, অপরাধী, রাজনীতিবিদ বা শেষ দিনের আশায় বসে থাকা বৃদ্ধের চেহারা ভাসছে নিশ্চয়ই চোখের সামনে?
একবার ভেবে দেখো তো, স্টিভ জবস, বিল গেটস, মুহাম্মদ ইউনুস আর মহাত্মা গান্ধীর সাথে মেলানো যায় কি না।
বলেছিলাম না, তোমায় একটা অদ্ভুত কথা বলবো। দেখেছো, আমরা কেমন ছকে বাধা দাবার ঘুটি হয়ে গেছি। আমি, তুমি, আমরা সবাই। চেনা ভাবনা, চেনা শব্দের সাথে মিলতে হবে সব কিছুর- এই চিন্তা আটকে গেছে আমাদের মাথায়। সবাইকে ছকে পড়তে হবে, সবাইকে আমাদের ভাবনার মতো হতে হবে-এই শেকলে আটকা পড়ে গেছি।
কবে মুক্তি হবে সবকিছুকে ছাঁচে ফেলার অভ্যাস থেকে? কবে জানালা দিয়ে চেনা পৃথিবী না দেখে সবকিছুকে আলাদা করে দেখতে পারবো আমরা?
“আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?
তোমার ছেলে উঠলে গো মা রাত পোহাবে তবে!”
সবকিছুকে সাধারণ করে ফেলার রোগ থেকে মুক্তির প্রভাত কবে আসবে?
ভাল লাগলো ভাইয়া। আমি অবশ্য বিশাল তত্ত্বকথা পড়বো ভেবে পোস্টে ঢুকেছি, এসে দেখি পিচ্চি পোস্ট!
প্রথমদিকে যেই সিনারিওগুলি দিয়েছেন সেগুলি কি পয়েন্ট/প্যারা আলাদা করে দেওয়া যায়? দেখতে ভাল লাগবে মনে হয়।
আমিও জেনারালাইজ করি, আমরা বেশিরভাগ মানুষই করি হয়তো। সেটার প্রকাশ কিংবা আমাদের আচার-আচরণে তার প্রভাব পড়তে শুরু করলেই জিনিসটা ক্ষতিকর হয়ে ওঠে বোধহয়।
তত্ত্বকথা লিখলে সেটা চোখে দেখি, মাথায় ঢোকে, কিন্তু, হৃদয় ছুঁতে পারে বলে মনে হয় না। তাই, এভাবে লেখার চেষ্টা……
জেনারালাইজিং সবাই করি। কিন্তু, ব্যাপারটা যখন এমন হয়ে যায়, এর বাইরে আমরা কিছু ভাবতে পারি না, তখনই সমস্যাটা হয়।
দৌড়ের উপর আছি, তাই বেশি কিছু বলতে পারছি না……শুধু বলি— খুব সত্যি আর কাজের কথা বলেছেন…(Y)
ধন্যবাদ! 🙂
আরও বড় হওয়া দরকার ছিল রে ভাই! গুরুত্বপূর্ণ টপিক।
চেষ্টা করবো আরও একটা লেখা দিতে এই টপিকেবিষয়ে……। ধন্যবাদ…… 🙂
*বিষয়ে*
উদাহরণগুলো চমৎকার হয়েছে!
কিন্তু আমি আরো বড় আর আরো ইনফরমেটিভ হবে আশা করছিলাম!
আরো পড়তে চাই, জানতে চাই এই বিষয়ে।
ইনফরমেটিভ একটা পার্ট পরে দিবো আশা করছি……।
ধন্যবাদ 🙂
কোনো এক ক্লাসে প্রমথ চৌধুরীর একটা প্রবন্ধ পড়ে বুঝেছিলাম , পেটের ক্ষুধার মত মনের ক্ষুধার জন্যও চাই খাদ্য .তোর্ লেখাটা পরে পেট ভরার মত মন ভরছে।
দুঃখিত প্রথমবার আমার নামটা ভুল লিখেছিলাম
কোনো এক ক্লাসে প্রমথ চৌধুরীর একটা প্রবন্ধ পড়ে বুঝেছিলাম , পেটের ক্ষুধার মত মনের ক্ষুধার জন্যও চাই খাদ্য .তোর্ লেখাটা পরে পেট ভরার মত মন ভরছে।…..