যেখানে কেউ নিস্পাপ নয়

একটি মুভি কতটুকু দু:খের হওয়া উচিত ? এ প্রশ্নটা কয়েকজন মুভি বোদ্ধাদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম । তাদের বিভিন্ন জনের উত্তর বিভিন্ন ছিল । একজনের উত্তর আমার খুব পছন্দ হয়েছিল । তার উত্তর ছিল “জীবনে আপনি যতটুকু দু:খ দেখেছেন ,ঠিক ততটুকু” । উত্তরটা খুব দায়সারা কিন্তু যৌক্তিক । তবে সমস্যাটা হল এক একজন জীবনে এক একরকম ভাবে দু:খ দেখেছে । কিছু কিছু মানুষের জীবনের দু:খ যদি হিসেব করা হয় তাহলে অপর কিছু মানুষের দু:খ দু:খের কাতারেই পড়েনা ।

অপরাধের বেলায়ও একই ব্যাখ্যা চলে । কিছু কিছু অপরাধ সর্বগ্রাসী । জীবনের সবটুকুই নিয়ে যায় । জীবনের নির্জাসটুকু নিয়ে খোলসটুকু রেখে যায় । আবার মাঝে মাঝে যখন রেখে যাওয়া খোলসটুকুতে কিছুটা প্রাণ ফিরে আসে ঠিক তখনি আবার ঝড়ের বেগে ধেয়ে আসে জীবনের কিছু ঝাপসা অধ্যায় । যে অধ্যায়গুলোর কোন সূচনা নেই , কোন গতি প্রকৃতি নেই । কিন্তু উপসংহার নিশ্চিত । সমাজ যাকে একবার একটা উপাধি দিয়ে দেয় তা অমোচনীয় কালির মত লেগে থাকে মানুষের কপালে । সে যতই তার কৃত কর্ম ভুলার চেষ্টা করে , সমাজ তাকে মনে করিয়ে দেয় “হয়তবা তুমি কোন ২য় সুযোগ পাবেনা” । শুধু ফুটবল খেলায় হাফ টাইমের পরে খেলার সুযোগ দেয় । জীবন বা আপনার প্রণয়িনী কাউকে সে সুযোগটা দেয়না । জীবনের একটুকু ঘোলা অধ্যায় নষ্ট করে দেয় ক্ষণজন্মা কিছু মুহূর্তের ।

বয় এ(Boy A (2007)) মুভি দেখার পড়ে এই উপলব্ধি গুলো কেন জানিনা বার বার উঁকি দিচ্ছিল । এন্ড্রু গারফিল্ড(Andrew Garfield) এর প্রথম যে মুভিটা দেখে তার অভিনয়ের ফেন হয়েছিলাম তা কিন্তু স্পাইডার ম্যান না ,তা হল নেভার লেট মি গো(Never Let Me Go) । একটি ট্রেজিক কাহিনী । কিন্তু তারও আগে একটি মুভি তাকে এনে দিয়েছিল খ্যাতি । তা হল বয় এ ।

এই মুভিটির সম্পর্কে বলতে গিয়ে উপরের এত সূচনা দিতে হল । কেন জানিনা এই মুভিটি দেখার পড়ে আমার মনে হয়েছে সমাজ শুধু কিছু কিট পতঙ্গ তৈরি করেনা তাদের অভয় অরণ্য বানানোর সব রকম উপায় উপকরণ দিয়ে দেয় । একটি মানুষ যখন কোন অপরাধ করে সমাজের সব মানুষ তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করে । এই শাস্তির কোন সময়কাল নেই , কোন ধরন নেই । বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে সমাজ তাকে শাস্তি দেয় । যত বার সে অনুশোচনা করে ভুলার চেষ্টা করে ততবার সমাজ আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় তার ঝাপসা অতীতকে ।

বয় এ মুভিটি এক যুবককে নিয়ে কাহিনী । যে অপ্রাপ্ত বয়সে এক ভয়ংকর অপরাধ করে । তার অন্যরকম শৈশব তাকে তার এক বন্ধুর সাথে পরিচিত হতে বাধ্য করে । শৈশবের সেই কচি কাদামাটির মন যতটুকু ভার সহ্য করতে পারার কথা তাদের পরিবার তার চেয়ে একটু বেশিই তাদের উপর দেয় । ফলশ্রুতিতে এক প্রশ্নবিদ্ধ শৈশবের জন্ম হয় ।

মুভিটির পুরো কাজের জন্য একজনই বাহবা পাবে তা হল তার ডিরেক্টর । মুভিটি দেখার পড়ে মনে হবে এই ‍মুভিটি যখন তিনি বানাচ্ছিলেন তখন সাহিত্য এবং মন্তাজ(montage) একাকার হয়ে যায় । এক একটি ট্রান্জিশন দেখলে মনে হবে এই লোক মুভি ডিরেক্টর না , সে এক সাহিত্যিক । তার এই সাহিত্য পূর্ণাংগ রূপ পায় যখন মূল চরিত্রে এন্ড্রু গারফিল্ড অভিনয় করে । তার অভিনয় দেখে একজন সমালোচক বলেছেন “ Seeing his acting makes me feel love for the devil .” তার অব্যক্ত ভঙ্গি একজন উপন্যাসিকের অনেক পৃষ্ঠা বাঁচিয়ে দিবে ।

এই মুভির সমাপ্তিটা কেন জানি মানা যায়না । প্রত্যেকটি জীবনের প্রাপ্তি এবং প্রায়শ্চিত্ত হিসেব করলে মনে হবে দুটি সমান নয় । কিন্তু এই মুভির সমাপ্তিতে একটি কথা বার বার মনে করিয়ে দেয় তা হল এই সমাজের কিছু নিষ্পাপ প্রাণ সবসময় আত্মাহুতি দেয় ।কিন্তু অতীত ইতিহাসের দিকে তাকালে আমাদের মনে হবে “ আসলেই কি এই পৃথিবীতে কেউ নিষ্পাপ ? ”

সুখী মানুষ সম্পর্কে

সুনীল আকাশ শ্যামল কানন, বিষাদ জোছনা কুসুম কোমল , সকলি আমার মত তারা, কেবলি হাসে কেবলি গায়, হাসিয়া খেলিয়া মরিতে চায়, না জানে বেদন না জানে রোদন, না জানে সাধের যাতনা যতন, .................................রবি ভাই
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

7 Responses to যেখানে কেউ নিস্পাপ নয়

  1. সামিরা বলেছেনঃ

    লেখা পড়ে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে মুভিটা। স্পয়লার ছাড়াই চমৎকারভাবে লেখা রিভিউ, আগ্রহ জাগানোর জন্য যেমনটা দরকার। 🙂

  2. নিলয় বলেছেনঃ

    চমৎকার রিভিউ- একটুও স্পয়লার নেই 🙂
    খুব ভালো লেগেছে- এমনিতে হয়ত দেখতাম না মুভিটা, এখন ইচ্ছে করছে

    নিয়মিত লিখবেন- রিভিউ ছাড়াও নিজের লেখা 🙂

  3. জনৈক বলেছেনঃ

    দুঃখের মুভি আর দেখতে ইচ্ছে করেনা… জীবন এমনিতেই দুঃখময়… তার উপর সময় ও পয়সা খরচ করে দুঃখ কেনাটা আজকাল আর ভাল্লাগেনা… তবে, লেখালেখির জন্য ধন্যবাদ।

    • সুখী মানুষ বলেছেনঃ

      ”আপনি যদি কোন বিষন্ন গান শোনেন তাহলে আপনি একটি “নকল” বিষন্ন অবস্থায় পতিত হবেন যা আপনার শরীরে প্রোলেক্টিন তৈরি করবে । এই প্রোলেক্টিন হল মানব শরীরের তৈরি করা এক রূপক আলিংগন ।”
      -From the article “Why sad movies make you happy” by Denise Folay

  4. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    এমনিতেই মুভি পাগল, তার উপর দিলেন ঢোলের বাড়ি!
    স্পয়লার ছাড়া রিভিউ দারুণ লাগে আমার।
    তবে আশা করি শেষের আত্মাহুতিটা স্পয়লারের অংশ ছিল না। 😛

    ডাউনলোড লিঙ্কুটা দিলে কৃতার্থ থাকতাম।
    টরেন্ট দিলেই চলবে। 😀

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।