DNA আঁকার বাঙালি বুদ্ধি

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ ইহা ইন্টেলেকচুয়াল পোস্ট নহে। আমি ভয়ালজিতে বড্ড কাঁচা, DNA সম্পর্কে জ্ঞান বাড়ানোর অভিপ্রায় থাকলে আপনি অতি নিকৃষ্ট একটি লিঙ্কে এসে গেছেন!

এখানে বরং উচ্চমাধ্যমিক বায়োলজির DNA ডাবল হেলিক্স কীভাবে দ্রুত আঁকা যায় তার একটা ছোট্ট আইডিয়া দেখাবো! আর যেহেতু টার্গেট পাঠক উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর, তাই বরং ‘তুমি’ করেই বলি।

 

আইডিয়ার সারকথাঃ

আমরা সিঁড়ি কাঠামোটি আঁকবো দুইটা পেনসিল একত্রে ব্যবহার করে। চালু পোলাপান শিউর বুঝে গেছে কী করতে যাচ্ছি!! 😀 আইডিয়া ক্রেডিট সবুজ ভাইয়ের।

 

এক মিনিটে কম্ম সাবাড়ঃ

ধর, হাতে একদম সময় নাই, একেবারে শেষ কয়েক মিনিটে DNA হেলিক্স আঁকা বাকি। তখন আর দিন-দুনিয়া কে পাত্তা দেয়, ধুমধাম কিছু একটা আঁকতে পারলেই শান্তি! দুইটা পেনসিল একসাথে ধর। খাতায় একটা ‘S’ আঁক। হয়ে গেল সিঁড়ির এক সাইডের রেলিং! অবশ্য S এর দুই প্রান্ত টান দিয়ে উপরে নিচে একটু লম্বাটে করে দিও! 😀

সতর্কতাঃ যত slowly আঁকবা তত ব্যাঁকাত্যাড়া হয়ে যাবে! ইংরেজিতে ‘S’ লিখছো মনে করে মারো এক টান! :dhisya:

 

সিঁড়ির আরেকটা সাইডের রেলিং বাকি। হেহে, এই S এর সামান্য উপরে আরেকটা S লিখে ফেলো, হয়ে গেল দ্বিতীয় রেলিং! 😀

দুইটা S লিখতে আমার লাগে ৩ সেকেন্ড সময়, ছোট ভাইয়ের ৫ সেকেন্ড 😛 এবার মাঝের কি কি সব হাবিজাবি নাইট্রোজেন বেইস আছে ঐগুলা দিয়া দাও। পুরো চিত্র আঁকতে ১ মিনিট! :beerdrink:

 

হাতে সময় থাকলেঃ

উপরের মত করে আঁকলে খুব দ্রুত আঁকা যায় ঠিকই, কিন্তু ঠিক ‘সৌন্দইর্য্য’ হয় না 🙁 হাতে যদি সময় থাকেই, তাহলে আরেকটু আয়োজন করে আঁকা যাক।

ষড়যন্ত্রঃ শুরুতে একটা বাক্স এঁকে নিব। সেটার ভিতরে পুরো সিঁড়িটা এঁটে দিব। তাহলে হেলিক্সের স্মার্টনেস কিঞ্চিত বাড়বে 😀 বাক্সের মাপ কী হবে? সবচেয়ে ভালো হবে সেটা নিজে বের করে নিলে! আমি একটা স্যাম্পল দিচ্ছি মাত্র।

চিত্রের মত বাক্স এঁকে নিয়ে প্রথমে ডটগুলো দিয়ে নাও [চিত্রে লাল রঙ দিয়ে দেখানো হয়েছে] দুটো পেনসিল একত্রে ধরে এই ডটগুলো ফলো করে ‘S’ লিখে ফেলো– ব্যস হয়ে গেল এক সাইডের রেলিং!

 

দ্বিতীয় সূত্রক আঁকতে প্রতিটি লাল ডটের ২.৫ সেমি উপরে আরেকটা করে ডট দাও [নিচের চিত্রে সবুজ ডট দিয়ে দেখানো হয়েছে] এবং সেগুলো ফলো করে আরেকটা S লিখে ফেলো!

আসল কাজ শেষ। এবার নকল কাজ।

 

সিঁড়ির ধাপ হিসেবে নাইট্রোজেন বেইসগুলো দিয়ে দাও। এক্ষেত্রে লক্ষণীয়ঃ

  • অ্যাডেনিন (A)-থাইমিন(T) সবসময় ডাবল বন্ড
  • সাইটোসিন (C)- গুয়ানিন (G) সবসময় ট্রিপল বন্ড
  • A আর T ভাইভাই। এরা নিজেরা নিজেরা যুক্ত থাকে। একইভাবে C-G ভাইভাই, ওরাও শুধু নিজেরাও যুক্ত থাকে। কখনও A-C বা T-G বন্ড হবে না, অর্থাৎ নিজের ভাই ছাড়া আর কাউকে ওরা দেখতেই পারে না!  :fire:

এই বেসগুলো রেলিং এ শ্যুগারের সাথে যুক্ত থাকে, তাই A-T বা C-G ইত্যাদি ধাপগুলের দুই প্রান্তে শ্যুগার হিসেবে S লিখে দাও। আর শ্যুগার S নিজেরা নিজেরা যুক্ত থাকে ফসফটের মাধ্যমে, তাই পাশাপাশি দুটি S এর মাঝে একটি করে P বসিয়ে দাও! 😀


টাট্টারাডা! 😀 😀 হয়ে গেল আমাদের DNA! :happybirthday:

 

ডাবল পেনসিলের চিত্রকর্ম

দুটো পেনসিল একত্রে ধরে কিন্তু দারুণ দারুণ সব ছবি আঁকা যায়! নিজেই খাতায় আঁকিবুকি করে দেখো!
:love:

রাইয়্যান সম্পর্কে

'এক্সট্রোভার্ট' শব্দটা আমার সঙ্গে বেশ মানিয়ে যায়-- পছন্দ করি নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে। একজন ভোজন বেরসিক; খেলাধুলায় Own Goal ও Wide Ball এক্সপার্ট। তড়িৎ প্রকৌশলের ছাত্র, স্বপ্ন দেখি জীবনটাকে অর্থবহভাবে কাজে লাগানোর।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে আঁকি বুকি, টিউটোরিয়াল, পাগলামি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, হাবিজাবি-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

35 Responses to DNA আঁকার বাঙালি বুদ্ধি

  1. নিলয় বলেছেনঃ

    সাংঘাতিক!
    চ্রম পুরাই!
    😀
    অনেক হেল্প হবে ছেলেপেলেদের- এই রকম লেখা লিখিশ মাঝেমধ্যেই 🙂

  2. অনাবিল বলেছেনঃ

    জীবনেও বায়োলজি পড়ি নাই…… তাই এইসব আকঁতে হয় নাই……… 🙂 ভাগ্যিস…… 😀
    সাইটোসিন-থাইমিন যে কি জিনিস কে জানে!! 😛 😛

    তবে কিছু না জেনেও ডিএন এ আঁকা শিখে গেলাম……

    দুই পেন্সিল/কলম দিয়ে আঁকাআঁকি করতে অনেক অনেক মজা……… 🙂

    • রাইয়্যান বলেছেনঃ

      বিলিভ ইট অর নট, এই সাইটোসিন-থাইমিন টাইপের বস্তু কী সিরিয়ালে বসে আছে সেটার উপর আমাদের অস্তিত্বের যা-ব-তী-য় বৈশিষ্ট্য নির্ভর করছে! :O

  3. নূসরাত রহমান বলেছেনঃ

    উহ! কেন এসব দুঃখের দিনগুলি মনে করিয়ে দিলেন! ডি এন এ দেখলে মেজাজ সপ্তমে চড়ে যায়।

  4. সামিরা বলেছেনঃ

    দারুণ তো! :happy: আমি বায়োলজি চিত্র ভাল আঁকতে পারতাম না দেখে (পারতাম না মানে চেষ্টাই করতাম না তেমন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এঁকে ফেলতাম) সারাজীবন কম নাম্বার পেয়েছি। 😛

    রাইয়্যান মনে হয় সরবের ইমোটিকনগুলির সবচেয়ে সফল ব্যবহারকারীদের একজন। 😛 😀

  5. জনৈক বলেছেনঃ

    দারুণ বুদ্ধি… আবার ইন্টারে ভর্তি হওয়া দর্কার দেখি! :dhisya:

  6. মাধবীলতা বলেছেনঃ

    অসাধারণ!! ইশ এই জিনিস নিয়ে যে ক্যাচালে পড়তাম! আমি মোটামুটি একটা প্রসেস বের করে ফেলেছিলাম বারবার এঁকে এঁকে। তবে এই আইডিয়াটা অনেক জোশ। 😀 আমার ভাই এইচ এস সি দিয়ে ফেলল এইবার, আরেকটু আগে দিতে পারলা না।

  7. জ্ঞানচোর বলেছেনঃ

    দারুণ নিয়মকানুন।

  8. শারমিন বলেছেনঃ

    দারুণ তো

  9. তিষা বলেছেনঃ

    আমি ঠিক এভাবেই আঁকতাম!!! :penguindance:
    পার্থক্য খালি, ২.৫ সে.মি. এর হিসাবটা আমার S লেখাটা কতটুক লম্বা-চওড়া সেটার সাথে পরিবর্তিত হত। :happy: :happy:

    এভাবে পোস্ট আকারে দেয়াতে খুবই পছন্দ হয়েছে ভাইয়া!! :love: :clappinghands:

  10. hyperactve বলেছেনঃ

    ^_^
    Nice
    And
    Bravo.

  11. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    এইরকম ফিচলা বুদ্ধি ছিল না আমার সময়ে।
    থাকলে কত্ত সহজ হইত! 🙁
    যদিও আঁকাআঁকিতে মোটামুটি বসই ছিলাম। 8)

    বায়োলজিতে আমার সবচেয়ে পছন্দের জিনিস ছিল, মাইটোকন্ড্রিয়া আঁকা।
    একটা মাইটোকন্ড্রিয়ার চিত্র আঁকতে আমার সর্বোচ্চ এক মিনিট লাগত, বেশি সুন্দর করতে গেলে দুই মিনিট আর বেশি সুন্দর প্লাস ভিতরের সব বস্তু আইডেন্টিফাই করে নাম লিখলে সব মিলিয়ে লাগত মাত্র তিন মিনিট। 😛

    একবার ক্লাস টেনে চিত্র আঁকার পরীক্ষা ছিল (ক্লাসের সময়টুকুতে) আমাদের। আপা এসে প্রথমেই বললেন, প্রথম আঁকতে হবে (দম বন্ধ করে বসে ছিলাম, আল্লাহ যেন মাইটোকন্ড্রিয়ার চিত্র আঁকতে বলে) মাইটোকন্ড্রিয়ার চিত্র! আপা বলা মাত্র আনন্দে মনে মনে দিলাম লাফ এবং ক্লাসের সবার আগে আঁকা শেষ করে আপার কাছে নিয়ে গেলাম। সবাই তখনো মাইটোকন্ড্রিয়ার অর্ধচন্ত্রাকৃতির খোলস আঁকতেই ব্যস্ত। এত তাড়াতাড়ি আপাকে বিরক্ত করলাম দেখে আমার দিকে তাকিয়ে খাতা দেখার পর বললেন, যাও এবার গলজি বস্তুর ছবি এঁকে নিয়ে আস। 😛

    তোর এই ফিচলা বুদ্ধি বাচ্চা পোলাপাইনদের কাজে দেবে খুব! :penguindance:

  12. নিশম বলেছেনঃ

    আহা !!! সেই প্রাচীন কালের রঙ্গীন সুখকর দিন গুলার কথা ইয়াদ আসিয়া পরিলো !!! ওহে সরব ইয়াদ, আপনি কোথা !!!

    আমিও ইরাম করেই আঁকতাম। অন্য বিষয় সারা বছর পরলেও বায়োলজি পড়া হতো কম, কিন্তু এই একটাতেই কখনও এ প্লাস মিস যায় নাই, একটাই কারণ – প্রচুর চিত্র আঁকাতাম। “কথা কম, কাজ বেশী”, বায়োলজিতে এ প্লাসের মূলমন্ত্র !!! এমনও হয়েছে, ডিএনএ রেপ্লিকেশন বর্ণনা করতে বলেছে, আমি ডিএনএ এঁকে, এরপর রেপ্লিকেশনের ছবি এঁকে দিয়ে আসছি !!! লেখা যতো কম লেখা যায় !!!

    অস্থির পোস্ট !!! একেবারে সরবীয় স্টার !!!!

    • রাইয়্যান বলেছেনঃ

      ধইন্যা!!

      উচ্চ মাধ্যমিক সিরিজের আরও পোস্ট আসবে ইনশাআল্লাহ। সব হয়তো ফিচলা বুদ্ধি না, সিরিয়াস পোস্টও দেয়ার ইচ্ছা আছে। সানরাইজের ক্লাসে যা পড়াইতাম তা এবার আমজনতার সম্পত্তি হবে :beerdrink:

      • ফিনিক্স বলেছেনঃ

        এইটা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত রাইয়্যান।
        আমজনতার জন্য মুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করলে তোকে আমি সত্যি স্যালুট দিব। :dhisya:

  13. গাঙচিল বলেছেনঃ

    ইশ! আর দুই-তিন বছর আগে এই বুদ্ধিটা পেলে কী ভালই না হত! কত্ত কষ্ট করে DNA আঁকতাম সেই সময়……… কেউ এইসব বুদ্ধি শেখায় নাই। 🙁 🙁

    তবে সেকেন্ড ইয়ারে বায়োকেমিস্ট্রির একটা কোর্স আছে; সেখানে ক্রোমোসোম, DNA-এগুলো আঁকতে হবে মনে হয়। ভালই হল। এইবার আর সমস্যা হবে না আশা করি।

    আইডিয়াবাজদের আইডিয়া উৎপাদী পোস্টকে স্যালুট! :huzur:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।