রিফাত খুব খুব উচ্ছ্বসিত! আজ তার কারণে একটি মেয়ে হতাশা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আনন্দে ওর চোখে পানি চলে এসেছে। অস্থির হয়ে আছে কখন সবসময়ের বন্ধু, ভীষণ নির্ভরতার ছোট ভাই ইমন কে বলবে।
– জানিস, আজ কী হয়েছে?
– কী?
– অনিতা না … (উৎসাহের চোটে তড়বড়িয়ে পুরোটা একবারে বলে ফেলল) বলে খুশি খুশি মুখে তাকিয়ে রইল, ইমনের মুখেও খুশি দেখলে ওকে জড়িয়ে ধরবে।
– এইসব ফালতু কাজে সময় নষ্ট না করে ফাইনালের জন্য পড় তো গিয়ে! যা!
দুপ করে নিভে গেল রিফাত, এক সেকেন্ড ও লাগল না। বুকটা কেমন চাপ চাপ করছে, চোখ জ্বালা করছে। সত্যি ওটা ফালতু কাজ ছিল? সত্যিই? অনিতা রীতিমত আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ঘর থেকে বেরিয়ে যাবে বলে পণ করেছিল। সেই মেয়েটা মন খুশি করে জীবনে ফিরে এসেছে, পুরো কাজটার জন্য রিফাতের আড়াই ঘন্টা সময়ও ব্যয় হয়নি। ইমন একটা মুভি খুঁজতেই ত তিন ঘন্টা নষ্ট করে! এটা ওর কাছে ফালতু লাগলো?
ইমন রিফাতের ছোট ভাই হলেও ছেলেটা খুব পড়ুয়া। অনেক কিছু জানে, তাই ওর সাথে পরামর্শ না করে রিফাত কিছু করে না। অনেক নির্ভর ও করে তার সিদ্ধান্তের উপর। ইমন পুরো ব্যাপারটাকে এরকম উড়িয়ে দিল দেখে রিফাত রীতিমত ধন্দে পড়ে গেল। সত্যি? সত্যি সত্যি ফালতু কাজ?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে পড়ায় মন দিল। পরীক্ষাটা সত্যিই খুব কাছে চলে এসেছে। পড়তে হবে।
দুই মাস পর নিউমার্কেটে বইয়ের দোকানে অনিতার সাথে দেখা। সেদিনের পর আর ওর সাথে দেখা হয়নি রিফাতের। অনিতা ওকে দেখেই খুশিতে জড়িয়ে ধরল।
– রিফাআআআআত!
– কী রে! কেমন আছিস তুই?
– ভালোওওওওও! তুই কেমন? কী করিস? এইখানে কী?
– ঐ একটা মাস্টার্সের বই কিনতে এসেছিলাম। (ইমনের বকা খাওয়ার পর থেকে সে পুরো ঘটনাটার জন্য লজ্জাই পায়, কী হাস্যকর কাজই না করেছে! অনিতাকে কত বড় বড় কথা বলেছে! ভালোবাসার কথা বলেছে, পৃথিবী নিয়ে স্বপ্ন দেখার কথা বলেছে.. ছি ছি কী বড় বড় কথা! তাই অনিতাকে দেখে আবার লজ্জা লাগলো)
– দোস্ত আমি সরি ঐ দিনের পর আর তোর সাথে যোগাযোগ করিনি। আমি যে তোকে কী বলে ধন্যবাদ দেব.. কীভাবে বোঝাব তুই আমার জন্য কী করেছিস.. সত্যি জানিস, তুই বলার পর থেকে জীবনকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে শিখেছি, আকাশ, পৃথিবী, পৃথিবীর মানুষ – সব সুন্দর লাগে দোস্ত! সঅব! তুই আমাকে বাঁচতে শিখিয়েছিস দোস্ত!
– সত্যি? (রিফাত বিস্ময়, খুশি, সবকিছু মিলিয়ে কী বলবে বুঝতে পারছেনা)
– সত্যি মানে? তোর সাথের সেই তিন ঘন্টা আমি সারাজীবন মনে রাখব দোস্ত! তোর জন্য আমার প্রাণভর্তি দুয়া!! তুই আমাকে বাঁচিয়েছিস দোস্ত! জানিস এখন আমি কতকিছু করি? কত্তো কিছু? এই দ্যাখ, বাচ্চাদের বই কিনছি, পথশিশুদের একটা স্কুলে ছুটির দিনে পড়াই। তুই ঠিকই বলেছিলি রে! নিজের জীবনের সমস্যাগুলো কত তুচ্ছ হয়ে যায় পৃথিবীর সামনে দাঁড়ালে!
রিফাতের মুখের রং এতদ্রুত পাল্টাতে থাকে – এতগুলো চিন্তা পরপর চলে যেতে থাকে – ও কী বলবে কিছুই বুঝতে পারেনা। ইমন তার একটা মাত্র কথা দিয়ে তার ভেতরটা পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। অনিতা যে বাক্যটা বলল, সেটা ভেবেই কতবার নিজের মধ্যে মরমে মরে গিয়েছিল! ইমন এত সুন্দর মনের একটা ছেলে, সব সিদ্ধান্তেই সে এত নিপুণ – এত বড় ভুল করল? দুটো মাস ধরে রিফাত কেবল নিজেকে বুঝিয়েছে, যার যার সমস্যা তার তার। এত আগ বাড়িয়ে ইয়ে করার দরকার নেই। ফালতু ব্যাপারে মাতামাতি না করে পড়াশুনা ভালো করে করলে বরং কাজে দেয়। আর আজ দেখে অনিতা শুধু নিজের জীবন না, আরো কতগুলো ছেলেমেয়ের জীবন বদলে দিচ্ছে শুধু ঐটুকু কথার উপর ভর করে!
ঘরে ফিরতেই ইমনের সাথে দেখা। ইমন আজকে বেশ খুশি খুশি। জানিস আপ্পি! আজকে আরেকটা ছেলের পরীক্ষার ফর্ম ফিল আপের টাকা জোগাড় করেছি। এই নিয়ে বারোটা হল!
রিফাত বুকে জড়িয়ে ধরে ইমনকে। ভালো করেছিস ভাই! খুব ভালো করেছিস। তোর মত সোনার ছেলে ক’টা হয়?
রিফাত জানে ইমন বদলাবে না, আবারো ওর ভালো কাজে একই ভাবে তিরস্কার করবে। কিন্তু রিফাত চিরকাল ছোট ভাইটিকে সাপোর্ট দিয়ে যাবে। কারণ নিজের জীবনের অভিযোগগুলো তুচ্ছ হয়ে যায় পৃথিবীর সামনে দাঁড়ালে।
আপু রিফাত কি ছেলে না মেয়ে? :thinking:
আর ইমন নিজে ভালো কাজ করছে, কিন্তু রিফাতের ভালো কাজে উৎসাহ না দিয়ে তিরস্কার করল, একটু কেমন হয়ে গেল না? আসলে কনফিউজড, পুরো থিমটা ধরতে পারলাম না। 😳
:love:
:love: :love:
মেয়ে। বড় বোন।
ইমনের দৃষ্টির প্রসারতা নেই। ভালো কাজ বলতে সে কয়েকটা ধরাবাঁধা কাজ বোঝে, এর বাইরে না।
নিজে ভালো কাজ করলেও কাছের মানুষদের উৎসাহ দেয়না – এমন দেখনি তুমি? এটা ত কমন কাহিনী! তারা ভাবে আমি পড়াশুনার বাইরে বাড়তি কাজ সামলাতে পারব, ও পারবে না। ওর পড়াশুনা করা দরকার। ভালো কাজের সাথে আত্মার সম্পর্ক, আত্মবিশ্বাসের সম্পর্ক – এটা সে নিজে তত ভালো করে অনুধাবণ করে না হয়ত।
হুম বুঝতে পারছি! দেখেছি এমন, ঠিক এরকম না হলেও এই টাইপ। তবে একজন মানুষ বিশেষ করে যদি কাছের মানুষ হয়, তার ভুলগুলো শুধরে দেয়ার চেষ্টা তো থাকা উচিত আমার মনে হয়। যেমন এই অংশটা “রিফাত জানে ইমন বদলাবে না, আবারো ওর ভালো কাজে একই ভাবে তিরস্কার করবে। কিন্তু রিফাত চিরকাল ছোট ভাইটিকে সাপোর্ট দিয়ে যাবে। ” ইমন বদলাবে না এইরকম ধরে নিয়ে একটা ভুল কাজকে/স্বভাবকে কেন মেনে নিতেই হবে? একটু একটু করে সহানুভূতি দিয়ে তো বদলানোর চেষ্টা করা যায়। ভালো কাজে সে সবসময়ই সবাইকে এভাবে তিরস্কার করবে, বড়বোন হিসেবে আমার ছোটভাইয়ের এই খারাপ দিকটা বদলানোতে আমার কি ভূমিকা রাখা উচিত না?
উচিৎ আপি, স্বীকার করি। শেষ অংশটুকু বলা এই আশায়, যাতে কাছের মানুষের সাপোর্ট না পেলেও যেন রিফাতেরা নিজেদের কাজ করে যায়, এবং ইমনদের অভিমান বশতঃ ছোট না করে। চিন্তা কর, রিফাত যদি ইমনের মত মুখ বাঁকিয়ে চলে যেত (শোধ নিতে), ইমনও হয়ত মনে মনে আগ্রহটা হারিয়ে ফেলত। ভালো কাজে পারস্পরিক উৎসাহ ভীষণ দরকার, ভীষণ।
সহমত! অবশ্যই প্রতিশোধপরায়ণ হলে চলবে না! একটু জাস্ট নিজের দ্বন্দ্বটা ক্ল্যারিফাই করলাম। 🙂
:love:
(এই ইমোটা আপনাকে দিতে গিয়ে ভুলে মাধবীলতাকে দিয়ে ফেলেছি এর আগে।) 😛
হ্যা, আমি একটু সদমা খাইসিলাম, সমালোচককে গোলাপ দেয়ায় :brokenheart:
খিক খিক… :love:
আপু, গল্পটা দারুণ ইতিবাচক ছিল তবে আমি আরেকটু আশা করেছিলাম। কারণ আমার কাছে মনে হচ্ছিল যে গল্প শেষ হয় নি। 😛
রিফাত তার ভাইয়ের ভালো কাজে উৎসাহ দেবার পর নিজের অভিজ্ঞতাটাও শেয়ার করল। তার সেদিনের সেই কাজের জন্য যে আজ অনিতা এত ভালো ভালো কাজে উৎসাহ পাচ্ছে সেটা জেনে সে নিজেও অনেক আনন্দ পাচ্ছে, এটা ইমনকে জানাল। তারপর শেষ মেসেজটা হল এরকম-
ভালো কাজ আসলে ‘চেইন অব রিঅ্যাকশন’এর মত। একজনের একটা ভালো কথা বা কাজ আরেকজনের হয়ে অন্য অনেকগুলো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে যায়। যাদের মাঝে ছড়ায় তাদের মনের ভেতরের ছাঁচটাও হয় ভালো কাজ করা আর ছড়ানোর জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। তাই ইমনের আজকের ভালো কাজও হয়ত ৫-১০ বছর পরে আরো অনেক মানুষের মাঝে ছড়িয়ে যাবে যেমনটা রিফাতের ক্ষেত্রে হয়েছে।
আমার মনে হয়, শেষটা এমন হলে ইমন রাতারাতি বদলে না গেলেও রিফাতের কথাটা তাকে দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য করত। সে অন্যের ভালো কাজকে প্রশংসা না করুক, তিরষ্কার অন্তত করত না। 🙂
অবশ্য গল্পের চরিত্র সবসময়ই লেখকের ইচ্ছা বা কল্পনানুযায়ী তৈরি হবার স্বাধীনতা রাখে। আমি পাঠক হিসেবে নিজের মনের মত করেই শেষটুকু ভেবে নিলাম। 😐
তবে গল্পের শেষ ভাবতে পারার মত ক্ষমতাটা কিন্তু তোমার গল্পের কাহিনীর জন্যই সম্ভব হয়েছে। সেইজন্য তোমাকে মন থেকে একটা লাল গোলাপ দিলাম। :love:
তাই ত! এটা তো ভাবিনি! তাহলে ত রিফাত ঠিকই অভিমান ধরে রেখেছে, সেজন্যই আগ বাড়িয়ে বলতে যায়নি। ঠিকই বলেছ আপু, শেষটা তোমারটার মতন হলেই সবচেয়ে ভালো।