অল্প কথায় পতাকার গল্প

শুধুমাত্র একটি পতাকার গল্প বলার জন্য এই লেখাটার শুরু না। বরং অনেকগুলো পতাকার গল্প পালাক্রমে বলার জন্যই এই লেখাটার যাত্রা। হতেও পারে, এটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর মত অপরিণত একটি লেখা। দেখা যাক কী হয়… সময়েই সব বলে দেবে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় পতাকার গল্পই চলবে এখানে। পতাকা মানে শুধু এক টুকরো আয়তাকার কাপড় নয় – এর পিছনে থাকে নানারকম জাতীয় ইতিহাস, সংকৃতি আর ভৌগোলিক গল্প! সে এক দারুণ গল্পরাজ্য – পুরোটা বলে কখনই শেষ করা যাবে না।

ওহ ভুলতে গেছি – পতাকা নিয়ে জ্ঞানের যে শাখা আছে তাকে বলে, ভেক্সিলোলোজি।

১।   বাংলাদেশ

“সবুজের বুকে লাল সূর্যটা ঝলমল উচ্ছল প্রাণের বন্যা,

আমার সোনার দেশ রূপালি নদীর দেশ সাগর সোহাগে অনন্যা”

 

সাবিনা ইয়াসমিনের কী অদ্ভুত সুন্দর গান! পতাকার পুরো গল্পটাই যেন দুই চরণে বলে দেয়া যায়!

 

আমাদের প্রাণের পতাকায় সবুজের মাঝেই আছে টকটকে লাল একটি সূর্য। তবে ব্যাপারটা হলো, সূর্যটা ঠিক মাঝখানে নেই। পতাকাটিকে লম্বালম্বিভাবে ২০ ভাগ করলে বাম থেকে ৯ নম্বর ভাগেই পড়বে লাল সূর্যটার কেন্দ্র। তবে আড়াআড়ি ঠিক মাঝেই আছে এটি। শুরুতে লাল সূর্যের মাঝে ছিলো সোনালি রং -এর বাংলাদেশের একটি মানচিত্র- যা পরে ১৯৭২ সালে বাদ দেয়া হয়। প্রিয় এই পতাকার ডিজাইনার হলেন শিবনারায়ন দাশ। (কামরুল হাসান নন)।

 

পতাকার মাঝের সবুজ দিয়ে দু’টি বিষয় বোঝায় – অবারিত প্রাকৃতিক সবুজ ভূমি আর তারুণ্য। আর লাল দিয়ে বোঝা নতুন সূর্য- যা হলো সোনালি ভবিষ্যতের প্রতীক। আবার লাল সূর্য শহীদদের রক্তের স্মৃতিও বহন করে। একটি মজার ব্যাপার হলো যে, অনেকেই মনে করেন যে, বাংলাদেশের পতাকার সবুজ রং হলো ইসলাম ধর্মের প্রতীক। আসলে তা মোটেও নয়! এমনকি এই ভুল সিআইএ –ও করে রেখেছে, তাদের ওয়েবসাইটে!

২।  জাপান

বাংলাদেশের পতাকার মত নকশা আর কোন দেশের পতাকার? জাপান। সাদা জমিনের উপর লাল টকটকে সূর্য। মজার ব্যাপার হলো, জাইকা (JICA) –এর অনেক পরামর্শক এ দেশে এসেই কিন্তু এই প্রসঙ্গ তুলে ভাব জমানোর চেষ্টা করেন আমাদের সাথে!

জাপানি পতাকার কিন্তু সুন্দর একটা নাম আছে, হিনোমারু- সূর্যবৃত্ত। এই পতাকা কবে থেকে চালু হয়েছে সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই, তবে জাপান সরকার/সাম্রাজ্য ১৮৭০ সালে এই পতাকা সরকারীভাবে গ্রহণ করে। যদিও ইতিহাসে সপ্তম শতাব্দী থেকে এই পতাকার হদিস পাওয়া যায়।

ঐতিহাসিকভাবেই, জাপানকে সূর্যোদয়ের দেশ বলা হয়- তাই আলোকিত আকাশে সূর্য উঠাকেই এরা ধরে নিয়ে বসেছে পতাকার মধ্যে। এছাড়া একসময়ের প্রবল প্রতাপশালী জাপানি সাম্রাজ্যের শৌর্যবীর্যের প্রতীকও এই লাল সূর্য!

 

৩। পালাউ

পালাউ নামে পৃথিবীতে একটি দেশ আছে- তা হয়তো বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই জানে না। তাহলে কেন এই দেশেই একবারে নেমে এলাম! কারণ, এই দেশের পতাকার মাঝেও একটা বৃত্ত আছে! আকাশী পটভূমিতে সোনালি বৃত্ত কিন্তু খালি চোখে দারুণ উজ্জ্বল দেখায়।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই দ্বীপপুঞ্জ একসময় যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে ছিলো যা পরে জাতিসংঘের সরাসরি তত্ত্বাবধানে চলে যায়। ১৯৮১ সালে বর্তমান পতাকার নকশা গ্রহণ করার আগ পর্যন্ত ঐ দেশের সবখানে জাতিসংঘের পতাকার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাও উড়তো!

 

এই পতাকার মাঝের আকাশী রং দিয়ে বোঝায় সাগরের নীল রং কিংবা স্বাধীনতার রং। বাংলাদেশ বা জাপানের মত করে নয়- মাঝের সোনালি বৃত্ত হলো ভরা পূর্ণিমায় চাঁদের রূপ! পালাও-এর সংস্কৃতিতে বলে,  ভরা পূর্ণিমা হলো মানব অনুভূতি ও কর্মক্ষমতা প্রকাশের সবচেয়ে ভালো সময়! (চন্দ্রাহত হুমায়ূন আহমেদ কী তা জানতেন?) এছাড়াও সোনালি বৃত্ত হলো ভালোবাসা, শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক। আর হ্যাঁ, বাংলাদেশের পতাকার মতই বৃত্তটা ঠিক মাঝখানে নয়, দণ্ডের দিকে বেশ খানেকটা সরানো।

 

আজ তবে এই পর্যন্তই। লেখা কেমন লাগলো জানিনা। তবে এই অধমের এসব ‘অহেতুক’ পাঠ চলবেই!  😐

জনৈক সম্পর্কে

সে যে কেউ একজন!
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে ইতিহাস-এ এবং ট্যাগ হয়েছে স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

23 Responses to অল্প কথায় পতাকার গল্প

  1. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    সত্যিই এইভাবে পতাকার গল্প কখনো পড়ি নি তো!
    দারুণ লাগল গল্প পড়ে।
    অধমের অহেতুক পাঠের অপেক্ষায় থাকব কিন্তু।

    আরেকটা কথা, পালাউ নামটার মাঝে কেমন একটা ‘পালিয়ে যাব যাব’ ভাব আছে। 😀
    অবশ্য ভোজনরসিকরা ‘পোলাও’ এর সাথে নামটা গুলিয়ে ফেলতে পারেন! 😛

    মন্তব্য ছাড়াই রেটিং দেখে কিঞ্চিৎ কষ্ট পেলাম।
    যে ব্যক্তিরা রেটিং দিয়েছেন তারা পোস্টটা পড়েছেন আশা করি।
    তাহলে মন্তব্য না দিয়ে শুধু রেটিং দিয়েই পালিয়ে গেলেন? 🙁

  2. chronose বলেছেনঃ

    অনেক তথ্যবহুল…
    ভালো লাগলো… 🙂

  3. নিলয় বলেছেনঃ

    ভালো লেগেছে- নতুন অনেক কিছু জানলাম 🙂

  4. সামিরা বলেছেনঃ

    আমার কাছে দারুণ লাগলো লেখাটা। পড়ে CIAর ওয়েবসাইটেও চলে গেলাম চেক করতে। ওরা মনে হয় সরব পড়ে নিয়মিত, এই লেখা দেখে ঠিক করে ফেলেছে ভুল! 😀

    ‘ভেক্সিকোলজি’ নামটা কেমন অদ্ভুত! শুনলে মনে হয় ‘ভেক্স’ করছে। :thinking:

  5. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    ভেক্সিলোলোজি শব্দটা প্রথম শুনলাম।

    পতাকার উদ্ভব কীভাবে? এটা একটা চমৎকার বিষয় হতে পারে! আমি যতদূর জানি সামরিক একটা বিষয় ছিল!

    চন্দ্রাহত হুমায়ূন আহমেদ কী তা জানতেন?

    না জানার কথা না! এই ব্যাটা ভালো পড়ত! যদিও সব চিন্তাভাবনা যুক্তিযুক্ত ছিল না! তবে কোন বইতে উল্লেখ করছেন বলে মনে হয় নাই

  6. রাইয়্যান বলেছেনঃ

    দারুণ পোস্ট! আরও জানতে চাই!

    [আসলে নিজে নিজে জেনে নেয়াও সম্ভব, গুগলে সার্চ দিয়ে। কিন্তু অলস লাগে! বরং কেউ এই কষ্টটা করে একসাথে লিখে ফেললে রেডিমেড পড়ে নেয়া যায়!! 😉 😀 ] অনেক ধন্যবাদ!

  7. অনাবিল বলেছেনঃ

    অনেক কিছু নতুন শিখলাম…… 🙂
    আরও পড়তে চাই………… 🙂

  8. সিফাত বলেছেনঃ

    ভালো লেখা পড়ে অনেক কিছু জানা গেল… আশাকরি পরবর্তি পর্বগুলোও লেখা হবে…

  9. শারমিন বলেছেনঃ

    নতুন অনেক কিছুই জানতে পারলাম
    ভালো লেগেছে
    আরও পড়তে চাই 😀

  10. হাসিব জামান বলেছেনঃ

    অনেক কিছু জানতে পারলাম
    ভাল লেগেছে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।