[পাওলো কোয়েলহোর Convention for those wounded in love থেকে অনূদিত]
প্রস্তাবনা:
ক) যেহেতু “প্রেম ও যুদ্ধক্ষেত্রে সবই ন্যায্য” কথাটা পুরোপুরি সত্য;
খ) যুদ্ধক্ষেত্রে আহত মানুষদের জন্য ১৮৬৪র ২২ আগস্ট ‘জেনেভা সংবিধান’কে অনুমোদন দেয়া হলেও, যেহেতু এখনও পর্যন্ত ভালবেসে কষ্ট পাওয়া মানুষদের জন্য কোন সংবিধান প্রণীত হয় নি (যদিও এই ক্ষেত্রে আহতদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি);
অতএব এই মর্মে বিধান জারি করা হল:
ধারা ১ – যে কোন লিঙ্গের যে কোন প্রেমিকই জানেন, ভালবাসা এক অর্থে আশীর্বাদ হলেও একই সাথে আবার ভীষণ বিপদজনকও, অপ্রত্যাশিত সব মোড় নিতে পারে যে কোন সময় আর বড় ধরনের ক্ষতি করারও সামর্থ্য রাখে। আর তাই, কেউ কাউকে ভালবাসার কথা ভাবলে তাদেরকে মনে রাখতে হবে – তারা তাদের শরীর আর মনকে নানান রকম আঘাতের সামনে উন্মুক্ত করে দিচ্ছেন, আর এজন্য সঙ্গীকে কখনও তারা দোষারোপও করতে পারবেন না, যেহেতু ঝুঁকিটা দুজনের জন্যই সমান।
ধারা ২ – প্রেমদেবতার ধনুক থেকে ছোঁড়া তীর কারও গায়ে লাগলে, সাথে সাথেই তীরন্দাজকে তাদের অনুরোধ করতে হবে যেন সে একই তীর বিপরীত দিকেও ছোঁড়ে – যেন তাদেরকে “অফেরতযোগ্য ভালবাসা” নামের আঘাতটা সইতে না হয়। দেবতা যদি এমন কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায়, তবে সংবিধান এই মর্মে ঘোষণা করছে যে, আহত ব্যক্তি তীরটাকে নিজের হৃদয় থেকে ছাড়িয়ে আঁস্তাকুড়ে ফেলে দেবে। এটা নিশ্চিত করতে তারা অন্য পক্ষকে টেলিফোন করা, ইন্টারেনেটে মেসেজ পাঠানো, ফিরিয়ে দেয়া হবে জেনেও ফুল পাঠানো – অর্থাৎ মন যোগানোর যে কোন উপায় থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবে; কারণ অল্প সময়ের জন্য ভাল ফল বয়ে আনলেও এগুলো কিছুদিন পরই ভুল প্রমাণিত হবে। সংবিধান মতে, আহত ব্যক্তিকে একা না থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আশেপাশের মানুষদের সঙ্গ নিতে হবে এবং “এই মানুষটিকে আমার যত সংগ্রাম করেই হোক পাওয়া উচিত”- নিজের এমন সব মোহগ্রস্ত চিন্তাভাবনা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে।
ধারা ৩ – আঘাত যদি তৃতীয় কোন পক্ষের কাছ থেকে আসে, অর্থাৎ ভালবাসার মানুষটি যদি এমন কারও প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়ে যার কথা আগের অনুচ্ছেদগুলোতে বলা হয় নি, তবে প্রতিশোধ নেয়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এসব ক্ষেত্রে প্রাক্তন সঙ্গীর অশ্রদ্ধা হবে না এমন যে কোন কিছু করাই অনুমোদিত, যেমন – শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত চোখের জল ফেলা, দেয়াল কিংবা বালিশে কিলঘুষি দেয়া, বন্ধুদের সঙ্গে আলাপে প্রাক্তন সঙ্গীকে অপমান করা, তার যে রুচি বলতে কিছু নেই এমন নালিশ জানানো ইত্যাদি। সংবিধান আদেশ জারি করছে, অনুচ্ছেদ ২এ উল্লিখিত নিয়ম এখানেও প্রযোজ্য: একা না থেকে চারপাশের মানুষদের সঙ্গ নেয়া, তবে অন্যপক্ষের নিয়মিত যাতায়াত আছে এমন সব জায়গায় না যাওয়া।
ধারা ৪ – অন্যপক্ষের দেয়া হালকা আঘাত যেমন ছোটখাটো প্রতারণা, অল্প সময়ের জন্য রাগ/ক্রোধ প্রকাশ, কিছুদিনের জন্য সম্পর্কে আগ্রহের কমতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ‘ক্ষমা’ নামের ঔষধের উদার এবং তাৎক্ষণিক প্রয়োগ করতে হবে। এই ঔষধ প্রয়োগের পর কেউ কোনদিনও নিজের এই (ক্ষমা করার) সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবতে পারবে না, বরং এই উপলক্ষ্যটা পুরোপুরি ভুলে যেতে হবে আর পরবর্তীতে কোন তর্ক-কথা কাটাকাটি কিংবা ঘৃণার মূহুর্তে মৌখিক অস্ত্র হিসেবে একে ব্যবহার করা যাবে না।
ধারা ৫ – “সম্পর্কের ভাঙন” নামের নির্দিষ্ট যত আঘাত, সেগুলোর জন্য একমাত্র কার্যকর ঔষধের নাম হল – সময়। ভবিষ্যদ্বক্তা (যারা সবসময়েই বলে যে হারানো প্রেমিক ফিরে আসবে), প্রেমের বই (যেগুলোর উপসংহার সবসময়েই সুখের হয়), টেলিভিশনের ধারাবাহিক নাটক কিংবা এ ধরনের কিছু থেকে সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা পুরোপুরি নিরর্থক। ড্রাগ, ট্র্যাঙ্কুইলাইজার, সাধুসন্তের কাছে প্রার্থনা ইত্যাদি থেকে নিজেকে যথাসম্ভব দূরে রেখে তীব্র কষ্ট সইতে হবে।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত:
অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করে যারা আহত হয়, ভালবেসে কষ্ট পাওয়া মানুষেরা তাদের মত নয় – কারণ এরা অত্যাচারের শিকারও নয় আবার অত্যাচারীও নয়। তারা এমন কিছু বেছে নিয়েছে যা জীবনেরই অংশ, আর তাই এই সিদ্ধান্তের ব্যথা আর আনন্দ দুটোই তাদেরকে মেনে নিতে হবে।
আর যারা কোনদিনও ভালবেসে কষ্ট পায় নি, তারা কখনও এ কথাও বলতে পারবে না: “আমি জীবনকে যাপন করেছি”; কারণ আসলে তারা তা করে নি।
ভালো লাগলো অনুবাদটি… 🙂
পড়ার জন্য ধন্যবাদ! বহুদিন পর পোস্ট করলাম কিছু।
শিরোনাম দেখেই তো পছন্দ হয়ে গেলো লেখাটা ! খুবি প্রিয় গান। লিংকটাও দিয়ে দিলাম।
আমি তার ছলনায় ভুলবো না – সাবরিনা
আমি তার ছলনায় ভুলবো না – সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
আমি তার ছলনায় ভুলবো না – কনক চাপা
আর অনুবাদ ? সেটা তো তুমি সব সময়ই ভালো লিখো 🙂 এটাও ভালো হয়েছে অনেক, ঝরঝরে পুরাই ! শেষের “আর যারা কোনদিনও ভালবেসে কষ্ট পায় নি, তারা কখনও এ কথাও বলতে পারবে না: “আমি জীবনকে যাপন করেছি”; কারণ আসলে তারা তা করে নি।” – লাইনটা খুব অন্যরকম লাগলো !
লিঙ্কুর জন্য থ্যাঙ্কু ভাইয়া! আমারও খুব প্রিয়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের না অরিজিনালটা? মানুষ এত সুন্দর করে কীভাবে যে গায়!
অনুবাদ তাড়াহুড়ায় করছি, অনেকদিন লেখা দেওয়া হয় না তো! কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগতেছিল।
তোমার অনুবাদ তো সবসময়ই সুন্দর হয় আর :love:
শিরোনামটা নামটার সাথে সাথে সংবিধানটাও বেশ ভালো লেগেছে
আর দেখেছ আমি কত বড় কমেন্ট করি 😛 😛
হ্যাঁ তিন শব্দ থেকে তিন লাইনে উন্নীত হয়েছো। 😛
8) 😛
😳 * শিরোনামটার হবে
হুম। অনেক কিছু শিখলাম! ! :love:
ভালো লাগল পড়ে। :happy:
মুখস্থ নয় অন্তস্থ করো। 😛
ক্লান্ত ভীষণ, অনেক অনুবাদ পড়ে অনেক কিছু লিখবো ভেবেছিলাম।
এখন আর কথা গোছাতে পারছি না। অনুবাদ ভালো লাগলো।
পড়ুয়া মেয়েটিকে শুভকামনা ও ভালোবাসা। 🙂
আপু আপনার অনেক কিছুর অপেক্ষায় থাকলাম সাগ্রহে। 🙂
আপনার জন্য আরও বেশি শুভকামনা আর ভালোবাসা আপু! 😀
অনুচ্ছেদ একটু ভারি শোনায়!
শেষ প্যারা বেশি ভালো লাগছে.
মূল আইডিয়াটাই বেশি ভালো লাগছে। ছবি একদম শেষে দেয়া কি ঠিক হলো?!
সংবিধানে ভারি শব্দ থাকে দেখেই তো দিলাম। আর থাকে ‘ধারা’।
অন্য কী দেয়া যায়?
ছবি আগে দিতে হবে? আচ্ছা।
চমৎকার লাগলো আপু , অনেক শুভ কামনা !! 🙂
তোমার জন্যও আপু। 😀
কথাগুলো ইতিবাচক। তবে বাস্তবে আসলেই কতটুকু ফলানো সম্ভব সবগুলো প্রস্তাবনা সেটাই ভাবনার বিষয়। বাস্তব অনেক কঠিন।
তা তো বটেই। এখানে কী করা উচিত সেটা বলা হইছে, উচিত কাজ করা তো কঠিন সবসময়েই। 🙂 মানুষ বড়জোর চেষ্টা করতে পারে।
সেটাই। আশা করি অনেকেই উপকার পাবে এই লেখা থেকে। 🙂
ওরে সংবিধান!
ভালোবাসারও সংবিধান হয় এইটা প্রথম জানলাম! 😛
অবশ্য কোয়েলহো তো, অসম্ভব কিছু না! 😛
🙂 😀
আপু অনেক ভাল লাগেছে। বিশেষ করে শেষ প্যারা :love:
:love: :love:
ইস এতো দিন পর এতো ভাল লেখাটা পড়লাম!!! আফসোস হচ্ছে……
শেয়ার করে আসি… 😛
ধন্যবাদ আপা! 😀 শেয়ার করার জন্য।