আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় রহস্য (ত্রুপ সার্কেল) পর্ব-১

একবার ভাবুন  মাইলের পর মাইলজুড়ে ফসলের ক্ষেত। রাতে ঘুমাতে গেলেন সাধারণভাবে। পরদিন সকালে দাঁত ব্রাশ করতে করতে ওয়াচ টাওয়ারে গেলেন ফসলের ক্ষেতটা একনজর দেখার জন্য। তাকাতেই আপনার চক্ষু চড়কগাছ। ওমা এ কি! মাইলের পর মাইল আপনার শস্যক্ষেতে কিসব বিচিত্র নকশা চোখে পড়ছে! নকশা করার জায়গাটা ব্যতিরেকে ফসলের বাকি অংশটুকু ঠিকই আছে। শস্যক্ষেতের এই বিচিত্র নকশার নামই ক্রপ সার্কেল। ক্রপ সার্কেল। বাংলায় শস্যবৃত্ত। অর্থাৎ শস্যের ওপর আঁকা নকশা বা চিত্র। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও বাস্তবের জিনিসটি তার চেয়েও বেশি অদ্ভুতুড়ে। আর এই জিনিসটি আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় রহস্য। :dhisya:

 

হুট করে ভাবলে বিষয়টি গাঁজাখোরি মনে হতে পারে। মনে হতে পারে এ আবার কিভাবে সম্ভব। অবশ্যই সম্ভব। যদি শস্যক্ষেত হয় বিস্তীর্ণ বা বিশাল এলাকাজুড়ে আর এই নকশা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বিরল কোনো জ্ঞান, তাহলে অসম্ভব কেন হবে? অধিকাংশের ধারণা, এই সুবিশাল একেকটি ক্রপসার্কেল তৈরিতে এলিয়েন বা ভিনগ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণীদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। নইলে এরকম জটিল ধরনের নিপুণ জ্যামিতিক চিত্র মানুষ কি করে আঁকবে? কিছু কিছু ক্রপ সার্কেলের রিপ্লেকা তৈরির চেষ্টা করেছিল অনেকেই। কিন্তু মূল ক্রপ সার্কেলের কাছাকাছিও পৌঁছাতে পারেনি সেগুলো। এর পেছনে মূল কারণ হলো আসল ক্রপ সার্কেলগুলোতে যে গাণিতিক জ্ঞান ও জ্যামিতিক প্যাটার্নের প্রয়োগ ঘটানো হয়েছে, এর কাছাকাছিও পৌঁছাতে পারেনি মানুষের তৈরি ক্রপ সার্কেলগুলো। এ ধরনের ক্রপসার্কেল তৈরি করতে হলে একজন মানুষকে গণিত এবং জ্যামিতি সম্পর্কে খুব ভালো জ্ঞান রাখতে হবে। শুধু তাই নয়, সেই জ্ঞানের পরিচয় রেখে বিস্তীর্ণ শস্যক্ষেতে ফুটিয়ে তুলতে হবে তার চিন্তার বাস্তব প্রতিবিম্ব। যা প্রায় অসম্ভব। ১৯৭০ সালের দিকে প্রথমবারের মতো এ ধরনের আবিষ্কারের কথা শোনা যায়। চারদিকে ব্যাপক হৈচৈ ওঠে। কেউ কেউ আবার এটিকে স্রেফ একটি পাবলিসিটি স্টান্ট বলে উড়িয়ে দিতে চাইল। তবে কৌতূহলী বিজ্ঞানীরা থেমে যাননি। তারা রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। থেমে থাকেনি ক্রপ সার্কেল আবিষ্কারও। এর পর থেকে প্রায় প্রতি বছরই নতুন নতুন ক্রপ সার্কেল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। আর এর প্রতিটিই আগের চেয়ে বেশি জটিল, নিখুঁত এবং নান্দনিক। এ পর্যন্ত পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি ক্রপ সার্কেল আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে আবার কোনোটিতে বিচিত্র ভিনগ্রহের প্রাণীর মুখচ্ছবি আঁকাও পাওয়া গেছে। তবে কি এসব ভিনগ্রহের প্রাণীদেরই কাজ? নইলে কারা, কেন তৈরি করছে এগুলো। এর রহস্যটাই বা কি? :crying:

ক্রপ সার্কেলের ইতিহাস খুব বেশি পুরনো নয়। মাত্র বছর চল্লিশের আগের ঘটনা। ১৯৭০ সালের দিকে প্রথম এ ধরনের নকশা নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু ফসল মাড়িয়ে নিয়ে এই নকশা তৈরি করা হয়। তবে সমস্যা হলো এইসব শস্য চক্রের শিল্পীদের সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। জানা যায়নি কী উদ্দেশ্যে কোন প্রতিভাবানরা এমন নকশা এঁকেছেন। প্রথম দিকে ফসলের মাঝে কাটা এই নকশাগুলো সোজা সরল জ্যামিতির প্যাটার্ন এ হতো। যেমন সাধারণ বৃত্ত, চৌকানা বাঙ্ এসবের মতো। তবে দিন যতো গড়াতে থাকলো, শস্যচক্রগুলো ততোই জটিল হতে থাকলো। অনেকের মতে ক্রপ সার্কেল হয়তো আরো আগে থেকেই ছিল কিন্তু ঐভাবে নজরে আসেনি। তখনকার সময়ের ক্রপ সার্কেলকে বলা হতো ‘মোয়িং ডেভিল’ বা ফসল কাটুনে শয়তান। ১৬৭৮ সালের ঘটনা,  সেই সময়কার বিলেতের একটি বুলেটিনে বিশেষ একটি কার্টুন ছাপা হলো। কার্টুনটিতে ফসলের মাঠে এরকম নকশা করা দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়। যেটির মূল উদ্দেশ্য ছিল কেউ ফসল ধ্বংস করছে এমনটি প্রমাণ করা। আলোচিত সেই কার্টুনটির শিরোনাম ছিল ফসল ফসল কাটুনি শয়তান। বুলেটিনে দাবি করা হয় বার্লি বা যবের দিগন্তজোড়া ক্ষেতের ভেতর কে যেন বিশালাকৃতির বৃত্তাকার গর্ত তৈরি করছে। ঠিক গর্ত নয় বরং খুব নিখুঁত ও সাবধানতার সঙ্গে যব গাছের আগাগুলো কাটা হয়েছে। আর এই কাজটি এমনভাবে করা হয়েছে যা কোনো মানুষের কাজ বলে মনে হয় না একদমই। বুলেটিনে এক কৃষক দাবি করেছেন এটি কোনো শয়তানের কাজ। ফসল কাটুনে অশুভ শয়তান। গভীর রাতে এই অশুভ শয়তান এসে যব গাছের আগা কেটে নিয়ে গেছে। পৃথিবীজুড়ে এরকম হাজারো উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে যার সঙ্গে আজকের আধুনিক ক্রপ সার্কেলের মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। আশ্চর্যের বিষয় আজ যেমন আমরা ক্রপ সার্কেলের রহস্য নিরূপণ করতে ব্যর্থ হচ্ছি, ঠিক তেমনি হাজার বছর ধরে ক্রপ সার্কেলকে এরকম অলৌকিক কোনো বিষয় হিসেবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো বাদ দিলে ১৯৭০ সালের দিকে বিশ্বমিডিয়ায় প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসে ক্রপ সার্কেল। একাধিকবার দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠে মাইলের পর মাইল এলাকাজুড়ে বিচিত্র সব নকশা দেখা যায়। বিশেষ করে ভুট্টা, গম বা বার্লি গাছ মাড়িয়ে বা গুটিয়ে এ ধরনের নকশা তৈরি করা হতো। প্রথমদিকে বিজ্ঞানী ও অনেক সচেতন মানুষজন দাবি করেন এই নকশাগুলো আসলে মানুষেরই তৈরি। অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে তৈরি করা হয় এগুলো। কিন্তু রহস্যের জন্ম হলো তখনই যখন এইসব ফসলের ক্ষেতের সঙ্গে জড়িত প্রায় সব কৃষক দাবি করলো এগুলো কোনোভাবেই মানুষের তৈরি নয়। মানুষের পক্ষে এরকম নকশা তৈরি কোনোমতেই সম্ভব নয়। তারচেয়েও বড় বিষয় মাত্র এক রাতে এতো বড় নিখুঁত নকশা তৈরি করা মানুষের পক্ষে আসলেই কঠিন।

 

 

বাকিটা পরের পর্বে শেষ করবো। :penguindance:

নীড় সম্পর্কে

আমি একজন স্বপ্নবাদী।তাই সব স্বপ্ন বাদ। অন্যের স্বপ্নের কথা বলি। আমার স্বপ্ন,চারপাশের মানুষের স্বপ্ন... ....কখনো কখনো অনেকের স্বপ্ন নিজের বলে চালিয়ে দেই।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বিবিধ, সায়েন্স ফিকশান-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

21 Responses to আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় রহস্য (ত্রুপ সার্কেল) পর্ব-১

  1. রাইয়্যান বলেছেনঃ

    গুগলে ক্রপ সার্কেলের ছবি সার্চ করে আকাশ থেকে পড়লাম। হেব্বি সৌন্দইর্য্য!

  2. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    ফসল ফসল কাটুনি শয়তান।

    এক জায়গায় একটু ভুল আছে মনে হয়।

    দারুণ শুরু হয়েছে।
    :welcome:

    প্রায় অসম্ভব বলছেন এটা কি ২০১২ এর জন্যও প্রযোজ্য?

    • নীড় বলেছেনঃ

      প্রথম লেখাতো তাই কিছু অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়ে গেছে। আশা করি পরর্বতী থেকে লক্ষ্য রাখবো। আর ২০১২ সালের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন মত আছে। কেউ বলছেন এটা সম্ভব, আবার কেউ বলছেন এটা হল মানুষকে বোকা বানানোর ফন্দি। :p

  3. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    কবে দেবেন পরের পর্ব? অপেক্ষায় রইলাম……
    খুবই ভালো লাগছে পড়তে!

    :welcome:

  4. সামিরা বলেছেনঃ

    দারুণ তো! রাইয়্যানের লিঙ্ক ধরে গিয়ে দেখলাম, কী সুন্দর!

    পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি। রহস্য উদ্‌ঘাটিত হওয়ার অপেক্ষাতেও। 😀

  5. অনাবিল বলেছেনঃ

    পরের পর্বের অপেক্ষায়…… 🙂
    রহস্যের সমাপ্তির অপেক্ষায়……… 🙂

  6. অনাবিল বলেছেনঃ

    বলতে ভুলে গেলাম…… :welcome:

    লেখালেখি চলুক……… 🙂

  7. স্রোতস্বিনী বলেছেনঃ

    অনেক আগে ফ্লাইং সসার নিয়ে একটা লেখা পড়ার সময় এই বিষয়টা পেয়ে ছিলাম।কিন্তু ছবিগুলো দেখে আক্কেল গুড়ুম হবার মতো অবস্থা। 😯
    আল্লাহই সব ভালো জানেন।
    পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম… 🙂

  8. মাধবীলতা বলেছেনঃ

    এক নিঃশ্বাসে পড়লাম রে ভাই ! পরের পর্বের অপেক্ষায়…
    ছবি দেইখা পুরাই টাস্কিত হইলাম।
    :welcome:

  9. সুবর্ণরেখা বলেছেনঃ

    হায় হায় ! আজকে থেকে ঘুমের মাঝে আবার মনে হয় এলিয়েনদেরকে স্বপ্নে দেখা শুরু করবো !!

  10. নূহা চৌধুরী বলেছেনঃ

    চরম তো !! 😀

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।