তোমার সাথে আমার বেসিকে মেলে না। – মাথাটা নিচু করে একটা ম্যাটাডোর কলম টেবিলের উপরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অনেক কষ্টে বলল শফিক।
কিসে মেলে না? – মেয়েটার চোখে উৎসুক প্রশ্ন।
বেসিক। মানে বুঝতে পারো নাই?
মেয়েটি জবাব দেয় না। সে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে শফিকের দিকে।
শফিক এবার মুখ তুলে মেয়েটির চোখের দিকে তাকায়। ঐশ্বরিয়া কিংবা রানী মুখার্জীর মত বিড়াল চক্ষু। এই চোখের কথা মা তাকে আগেই বলেছে। শফিকের অবশ্য খারাপ লাগা দূরে থাক, উল্টো খুব করে ঐ চোখের প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করছে। কিছুক্ষণের জন্য সে নিজেকে হারিয়ে ফেলে।
আমি বুঝতে পারিনি।
ও হ্যাঁ। আমি আসলে বলতে চেয়েছি, আমি সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের ছেলে। পড়াশুনায় একটা বয়স পর্যন্ত খুব সিরিয়াস ছিলাম। এখন অবশ্য ছেড়ে দিয়েছি।
হুম, আম্মু বলেছে, আপনি ইঞ্জিনিয়ার। অনেক বড় একটা জব করেন।
না সেটা না, আমি আসলে বলছিলাম, আমি প্রচুর গান শুনি। গান ছাড়া আমার চলে না। মাঝে মধ্যে টুকটাক গাইতেও ইচ্ছে করে, গলা ছেড়ে চিৎকার করি।
কথাবার্তার এই পর্যায়ে আয়েশা হেসে দেয়।
শফিক আরো বিহবল হয়ে পড়ে, সে ভাবে মেয়েটার দাঁতগুলো আশ্চর্য সুন্দর! তার তখন ছোট চাচার বলা কথা মনে পড়ে, ‘সুন্দর হাসির সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে দাঁতে, দাঁত সুন্দর হলেই হাসি সুন্দর হবে, অন্যথায় নয়।’
আর কি কি করেন?
ওহ যা বলছিলাম। আমি প্রচুর মুভি দেখি, বাংলা-হিন্দী-ইংরেজি সব। তামিল
মুভি ও দেখি।
তাই?
হুম। তুমি টিভি-সিনেমা দেখ?
আমাদের বাসায় ডিশের লাইন নাই। মামার বাসায় মাঝে মধ্যে দেখেছি। আসলে ছোট বেলা থেকে না দেখে দেখে অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন আর খারাপ লাগে না।
তোমার অবসর কিভাবে কাটে?
আমি প্রতিদিন কোরান শরীফ পড়ি, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। বাসার কাজে আম্মুকে সাহায্য করি। ভার্সিটি খোলা থাকলে আর খুব বেশী সময় পাই না। আর আমি একটু অলস প্রকৃতির তো, তাই সুযোগ পেলেই ঘুমাই।
আয়েশার কথা শুনে শফিক চূড়ান্ত হতাশ হয়। অবশ্য হতাশ হবার খুব বেশী কারন নাই, এমনটাই সে ভেবেছিল। তবু সে আরো কিছু জিজ্ঞেস করবে ঠিক করে।
তুমি গল্পের বই পড়ো না?
হ্যাঁ পড়ি। আমাদের বাসায় অনেক ধর্মীয় বই আছে, সেগুলো অনেকবার পড়েছি। গল্পের বই আমার বান্ধবীদের কাছ থেকে এনে পড়ি। হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবাল, শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ এগুলো পড়েছি। তিন গোয়েন্দা আর সেবার আরো অনেক বই পড়েছি।
ম্লান হয়ে যাওয়া শফিকের চোখ উজ্জ্বল হয় প্রথমবারের মত। তোমার প্রিয় বই কি?
শার্লক হোমস। আমি অনেকবার পড়েছি। আপনার প্রিয় বই কি?
সঞ্চয়িতা, কবিতার বই।
ওহ কবিতা তেমন ভাল লাগে না, বুঝি ই না আসলে। কিছু কবিতায়
আজেবাজে কথা লেখা থাকে।
শফিক আবার আহত হয়। সে টুকটাক গদ্য লেখার চেষ্টা করে, পদ্য শ্রদ্ধা করে। নিন্দুকেরা অহেতুক তাকে কবি বলে পঁচানি দেয়।
তুমি ঘুরতে পছন্দ কর? কোথায় কোথায় ঘুরেছ?
আমার ঘুরতে খুবই ভাল লাগে। ঘোরাঘুরির ব্যাপারে আব্বুর কোন নিষেধ নাই। আব্বু-আম্মুর সাথে কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, সিলেট, কুয়াকাটা গিয়েছি। ঈদের ছুটিতে দাদাবাড়ি যেতে অনেক আনন্দ হয়, কাজিনদের সাথে ব্যাপক মজা করি।
দারুন। আমার ইচ্ছা কি জান পৃথিবীর সুন্দরতম সব জায়গা ঘুরব। বছরে একটা করে লম্বা ট্যুর দিব।
আচ্ছা এগুলো জিজ্ঞেস করছেন কেন? এগুলোই কি বেসিক?
শফিক ছোট্ট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। আর প্যাঁচায়া লাভ নাই। অল্প কথায় খুলে বলা মঙ্গলজনক।
হু, এসব নিয়েই আমার জীবন। তুমি ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছ একটা শৃঙ্খলের মধ্যে, নামাজ-রোযা কর নিয়মিত, কঠিন পর্দা মেনে চলাফেরা কর। এখন তুমি যদি ও ইডেনে পড়তেছ, আগে ছিলে মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্রী। আর আমি ধর্ম বিষয়ে বিরাট ফাঁকিবাজ। শুধু জুমার নামাজ পড়ি, রোযা রাখতে কষ্ট লাগে।
কোমল হাসি হাসি আয়েশার চেহারায় হঠাত করে কাঠিন্য চলে আসে। রাগান্বিত মুখে লালচে আভা।
আপনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন না? এমন ছেলেকে আমি কখনোই বিয়ে করব না। আমি যাকে বিয়ে করব তাকে অবশ্যই নামাজ পড়তে হবে, অন্য কিছুতে ছাড় দেয়া যায়, নামাজে না।
শফিক কিঞ্চিত ভয় পেয়ে চুপসে যায়। জবাব দেয় না।
আর আপনি কেন আজকে দেখা করতে আসলেন? আমি সুন্দরী কিনা দেখার জন্য আসছেন? আপনি তো জানতেন আমি কোথায় পড়াশুনা করেছি। আমার ফ্যামিলি প্রচন্ড ধার্মিক আর আপনার মত ইঞ্জিনিয়ারের সাথে আমাদের স্ট্যাটাসে মিলবে না। সব জেনে শুনে কেন আসছেন?
শফিক আবার ম্যাটাডোর কলম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক কষ্টে সে সেই চোখজোড়ার মুখোমুখি হয়। আজকে না আসলে নিশ্চয়ই এই সুযোগ জীবনে আসত না।
আয়েশা আমি সত্যি করে বলি, আমি আসতে চাই নাই। বাবা কথা দিয়ে ফেলেছিল আমরা আসব। মা এক আত্মীয়ের বাসায় তোমাকে দেখে পছন্দ করেছিল, এর আগে সে কখনো আমার বিয়ের কথা ভাবে নাই। হ্যাঁ আমি জানতাম তোমার ফ্যামিলির ব্যাপারে, ইডেনে পড় সেটা জানি, আগে কোথায় পড়তে এই চিন্তা আমার মাথায় অনেক অনেক পরে আসছে। তখন আমি ঠিক করেছি সামনা সামনি কথা বলে ঠিক করব। আমি দুইজনের লাইফস্টাইল অনেস্টলি আলোচনা করতে চেয়েছি। কতটুকু কম্প্রোমাইজ করা যায় সেটা বুঝতে এসেছি।
আমি আপনার কথা বিশ্বাস করলাম। কিন্তু একটা ব্যাপার বুঝতেসি না। আপনি এত বিব্রত বোধ করতেসেন কেন? সরাসরি বলে দিলেই পারেন, তোমার সাথে আমার ম্যাচ হবে না, বিয়ে সম্ভব না।
শফিক এবার আরো বিব্রতবোধ করে। কি জবাব দেবে সে জানে না। এমন হওয়ার কোন কারন নাই।
কারন কারন আমার তোমাকে ভাল লেগেছে। তোমার সাথে কথা বলতে ভাল লাগছে। এখানে প্রকৃতির কোন রহস্য আছে মনে হয়। আমি স্ট্রেইট বলতে চেয়েছিলাম, তোমাকে বিয়ে করতে পারব না। সেটা বলতে ইচ্ছে করছে না।
আয়েশার লালচে মুখ আরো রক্তিম হয়ে ওঠে। সে আচমকা উঠে দাঁড়ায়।
আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না।
কেন?
আমাদের বেসিকে মিলবে না।
আয়েশা দৃঢ় ভাবে হেঁটে দরজার ওপাশে চলে যায়।
পরের কয়েকটা দিন শফিকের ঘোরের মধ্যে কাটে। খাবারে রুচি নাই, গানে প্রাণ নাই, কাজে জোস নাই। কোন এক জোড়া চোখের মাঝে কিছু একটা হারিয়ে এসেছে। এলোমেলো এই অবস্থা দীর্ঘায়িত করলে বড়সড় ক্ষতির সম্ভাবনা। শফিক সিদ্ধান্ত নেয় এর সমাধান করার।
অনেক দিন ধরে তার কাছে আয়েশার মোবাইল নম্বর ছিল। দেখা হবার আগে বা পরে কখনো ফোন দেয় নাই। আয়াতুল কুরসী পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে শফিক একদিন রাতে আয়েশাকে ফোন দেয়।
দুইবার ফোন রিং করলেও কেউ ধরে না। আধা ঘন্টা বাদে মরিয়া শফিক আবার চেষ্টা করে।
হ্যালো।
আমি শফিক বলছিলাম।
কোন শফিক?
ইয়ে মানে আমি শফিকুর রহমান। তুমি কি আয়েশা। আমি তোমাদের বাসায় এসেছিলাম।
ও বুঝতে পারছি। আপনি? ক্যানো ফোন করেছেন?
আমার তোমার সাথে কিছু কথা ছিল…
ইনিয়ে বিনিয়ে অবশেষে আয়েশাকে রাজী করানো গেল দেখা করার জন্য। বৃহস্পতিবার দুপুর একটায়, লোকেশন কাঁটাবনের শর্মাহাউস।
এবার বলেন, কেন আসতে বলেছেন?
শফিক কথা বলে না, সে মুগ্ধ নয়নে বোরখা দেখে। আরব দেশীয় এই পোশাকের সৌন্দর্য সারাজীবনে সে খেয়াল করেনি। আয়েশার পোশাকটা সম্পূর্ন কাজ করা, অদ্ভুত সুন্দর।
তোমার বোরখাটা খুব সুন্দর।
জ্বী সেটা আমি জানি। আমার বড় মামা সৌদি আরব থেকে আমার জন্য পাঠিয়েছেন।
তোমাদের আর কে কে সৌদি থাকেন?
আমাদের পুরো ফ্যামিলি হুজুর। আপনি সব জেনে শুনে কেন দেখা করতে বললেন আজকে আবার? আমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে হয়েছে তাইনা?
নাহ, আমি তোমার সাথে কথা বলতে চেয়েছি কে কতটুকু ছাড় দিতে পারব
সেটা আলোচনার জন্য।
আয়েশা শফিকের করুন মুখ দেখে অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে মুখ যথাসম্ভব কঠোর করে বলে,
দেখেন, আমার আব্বু-আম্মু আপনার ফ্যামিলিকে পছন্দ করেন, তাছাড়া আপনি শুনেছি ভাল ছেলে। তাই আমার আপত্তি ছিল না। কিন্তু নামাজের ব্যাপারে কোন ছাড় দিতে পারব না। আপনার গান-বাদ্য-বাজনা, মুভি, কবিতা, ঘোরাঘুরি কোন কিছুতে আমার না নাই, শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে।
শফিক কিছুক্ষণ চুপ থাকে, সুন্দরী মেয়েদের সামনে কিছুতে ব্রেইন কাজ করে না। তবু বিকল মস্তিষ্কের কণাগুলোকে অনেক কষ্টে একীভূত করে সে বলে, তোমাকে বিয়ে করার জন্য যদি আমি সবকিছু মেনে নেই, পরে আমার মত চলি তাহলে কি ভাল হবে! কাউকে কোনকিছু জোর করা কি ঠিক বলো?
না ঠিক না। তখন আমি আপনাকে সাইজ করব।
দেখ, আমি কোন মেয়ের সাথে প্রেম পীরিতি কিছু করি নাই, ১০০% নিষ্পাপ একটা ছেলে, ঘুষ খাই না, নেশা করি না, গাজা-সিগারেট কোনকিছু জীবনে টাচ করি নাই, আমি কি খুব খারাপ? আমাকে তোমার জোরাজুরি করা উচিত না। তোমার লাইফ স্টাইলে আমার কোন আপত্তি নাই, আমাদের নিজেদের বেসিক ঠিক থাকবে, তার পরে আমরা এক হব।
এই পর্যায়ে আয়েশা হাসি থামিয়ে রাখতে পারে না। সে মুখে হাত দিয়ে হাসতে থাকে।
মিষ্টি হাসি দেখে শফিক ভরসা পায়।
একটা বেসিক প্রশ্ন করব?
আয়েশা গম্ভীর হয়ে বলে, আবার কি বেসিক বাকী আছে?
তুমি কি জান মুক্তিযুদ্ধ কি? তুমি রাজাকারদের কি চোখে দেখ?
আয়েশার মুখ কালো হয়ে যায়। সে খুব মন খারাপ করে। সে চুপ করে থাকে।
শফিক বুঝতে পারে এই বেসিকে ও গন্ডগোল। নাহ এখানে কিছুতেই সে ছাড় দিতে পারবে না।
আয়েশা আস্তে আস্তে বলে, তুমি কি মনে কর ধর্ম কর্ম করলেই সে রাজাকার? আমি মাদ্রাসায় পড়তে পারি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানি, মুক্তিযুদ্ধের বই পড়েছি। যারা এই দেশের নিরীহ মানুষগুলিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, লাখ লাখ মা বোনের সম্ভ্রমহানি করেছে, ধর্মের নামে যারা ব্যবসা করে তারা মুসলমান জাতির কলংক। আমি তাদেরকে মনে প্রাণে ঘৃনা করি, সারাজীবন করব।
শফিক এবার জানে পানি পায়, যাক তার ভবিষ্যত প্রজন্ম আশংকা মুক্ত। আর কোন বাঁধা নাই।
—————————————————-হাসিব জামান
অতিশয় সুপাঠ্য!
রম্য নাকি এটা? ট্যাগ দেখার পর বুঝলাম।
নিয়মিত আশা করছি। 🙂
আমি নিজেও কনফিউসড ‘রম্য’ ট্যাগ দেয়া যায় কিনা নিয়ে।
এটা গল্প কোন সন্দেহ নাই, সিরিয়াস বিষয় আছে, সেটাকে একটু হাল্কা মেজাজে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি।
ধন্যবাদ সামিরা। 😀
শেষটা বেশি ভালো লাগছে!
এক ধরনের নোংরা বিষয় ছড়ানো হচ্ছে যে ধার্মিক মাত্রই রাজাকার টাইপ! রাজাকারগুলাও সেইটার সুযোগ নিতেছে।
যেই ৯৯% মানুষ নিজেরে ধার্মিক মনে করে (গ্যালাপ পোল) সেই দেশে বেশিরভাগ ধার্মিকই রাজাকার বিরোধী, আমাদের নির্বাচনের ফলাফলই তা প্রমাণ করে।
লেখা ভালু পাইছি! হুমায়ূন আপনার মধ্যে থাকবেই…থাকুক। এই রকম সুস্বাদু লেখা আরও আসুক
বাপ্পী ধন্যবাদ! মেসেজটা সবার কাছে পৌছে যাওয়া উচিত।
আ্মরা হলাম গিয়ে হুমায়ূন প্রজন্মের মানুষ। :beerdrink:
অনেক দিন পর কোন লেখা পড়ে কেমন যেন শান্তি শান্তি লাগছে…লেখককে অভিবাদন :clappinghands:
সরব এ প্রথমবারের মত কোন কমেন্ট করছি…তাই কিছুটা বিব্রত :voypaisi:
হাই ফারিনা, অনেক অনেক ধন্যবাদ! 😀
বিব্রত হবার একদম কিছু নাই 🙂 ।
শেষটা সুন্দর
ভালো লেগেছে 🙂
শারমিন ধন্যবাদ! 😀
ও বাপ! ফাটাই ফেলসেন তো! গল্পের হুমায়ুন ভাব টা বেশি জোস! আরো চাই।আরো অনেক। 🙂 :dhisya:
ধন্যবাদ :happy:
শেষের মেসেজটা পেয়ে ষোলকলা পূর্ণ হল মনে হচ্ছে !! আপনার গল্প লেখার হাত অনেক ভালো, একটুও বোরিং লাগে নি, তরতরিয়ে এগিয়ে গেলাম। আরও লিখবেন আশা করি। 🙂
ধন্যবাদ!
লেখা মাথায় আসলে ইনশাল্লাহ আবার লিখব। 😀
জাস্ট অসাম!! এরকম গল্পইতো চাই হাজারে বিজারে। থামলে খারাপ লাগেতো!! :love:
অনেক ধন্যবাদ তোয়াহা :happy:
এই প্রথম কেউ ধার্মিকদের ‘রাজাকার’ ট্যাগের বিরূদ্ধে কিছু লিখল। লেখাটা অন্য যে কোন ব্লগে দিয়ে দেখবেন প্লীজ?
সামহোয়ারিনে দিয়েছিলাম, সেখানে গল্পটা অনেকেই বুঝতে পারেন নাই। কেউ কেউ বিরক্ত হয়েছে, তবে কেউ গালি দেয় নাই। 😀
কেবল মুসলিম বলে নিজেকে পরিচয় দিতে যাদের লজ্জাবোধ হয় তাদেরকে প্রায়ই দেখি I AM A MUSLIM AND I AM NOT A TERRORIST ইত্যাদি ব্যানার সম্বলিত ছবি পোস্ট করতে। আসলেই তো … সপ্তাহে একবার জামে মসজিদের মাটিতে মাথা ঠুকে যারা কোন রকমে নিজের “মুসলমান” পরিচয়টা ধরে রাখতে ব্যস্ত তাদেরকে টেররিস্ট বলাটা অন্যায় বই কি? এইসব RAND- মুসলিমেরা তো ঐ সব মৌলবাদী-ধর্মান্ধ না যারা আফগানিস্তান, ইরাক, চেচনিয়া, বসনিয়া, মিয়ানমার আর ফিলিস্তিনের মুসলিমদের ওপর চালানো হত্যাকান্ড, ধর্ষন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিজ হাতে কিছু করতে না পারলেও নির্যাতিতের পক্ষে লড়াইরত যোদ্ধাদেরকে শুধু মুজাহিদ বলে জানে আর ঘৃণা পোষণ করে ঐসব অত্যাচারী জালিমদের প্রতি।
তবে ইদানিং আরেকটা শ্রেণী্র আভির্ভাব খেয়াল করছি যারা বাহ্যত প্রাণপণে চেষ্টা করে যাচ্ছে ঘুণে ধরা সমাজের চোখে ইসলামের হারানো গৌরবকে ফিরিয়ে আনতে। কেউ যদি ভেবে থাকেন যে এরা কুরআনের অনুসরণের মাধ্যমে, রাসুলের (সাঃ) সুন্নাহ পালনের আপ্রাণ চেষ্টার মাধ্যমে সেটা করছেন তবে খুব বড় ধরনের ভুল করছেন। এদের আনাগোনা কেবলই “মন্দের ভাল ফিকহ”-এর শাখায় প্রশাখায়। ওদের হেকমতি ফিকহ পালন করলে রাসুলের (সাঃ) সুন্নাহ দাড়ি বর্জন করা যায়, পাবলিকের সম্পদ ভাংচুর করা যায়। ওদের একটাই দাবী যেকোন উপায়ে ইসলাম আনতে হবে, হোক না সেটা কুফর বা শিরকের হাত ধরে।
“হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবাল, শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, শার্লক হোমস, তিন গোয়েন্দা আর সেবার আরো অনেক বই,” পড়ে নিজের ওপর থেকে কাঠমোল্লা ট্যাগটা উঠিয়ে নিতেই পারেন, কিন্তু প্রচুর গান শোনা, হিন্দি-তামিল নির্বিশেষে ম্যুভিপ্রীতির প্রতি আপনার অসম্ভব রকমের সহনশীলতার বিষয়টা এভাবে প্রকাশ না করলেও পারতেন। সব সময়ই খেয়াল করি “ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না” – আপনাদের মুখে রাজাকার বিষয়ে কিছু শুনতে ঘৃণা করে সহজভাবে বলতে গেলে।
ফুল ফ্যামিলি হুজুর হওয়া সত্ত্বেও মাঝরাতে শফিকুর রহমানের ফোনকলে পটে গিয়ে কাটাবনের শর্মা হাউজে চলে গেলেন একা একা-সেটা বেশ খারাপ কথা। কিন্তু এখানে ইসলামের জন্য, মুসলিমদের জন্য গর্বের কিছু নেই বরং হিজাব পড়া অবস্থায় আপনার এই নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা যদি কিছু বয়ে এনে থাকে তবে সেটা হচ্ছে জনসাধারনের মন-মগজে “ঘোমটার ভেতর খেমটার নাচন” বা “দাড়ির ভেতরে শয়তানী” ইত্যাদি কটুক্তিগুলোর সত্যতা খুব ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা। এই সোজা হিসেবটা আপনার ক্ষুরধার মগজে ধরলো না হে প্রতিদিন কোরান শরীফ পড়ুয়া, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়কারী মুসলিম বোন!
বেসিকে গন্ডগোল দূর করুন যথাদ্রুত সম্ভব। আপনি হয়ত জানেনই না,
আর তারা যখন ঈমানদারদের সাথে মিশে, তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আবার যখন তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করে, তখন বলে, আমরা তোমাদের সাথে রয়েছি। [সুরা বাকারাহ ১৪]
বস্তুতঃ যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে, তাদেরকে আপনি দেখবেন, দৌড়ে গিয়ে তাদেরই মধ্যে প্রবেশ করে। তারা বলেঃ আমরা আশঙ্কা করি, পাছে না আমরা কোন দুর্ঘটনায় পতিত হই। অতএব, সেদিন দুরে নয়, যেদিন আল্লাহ তা’আলা বিজয় প্রকাশ করবেন অথবা নিজের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশ দেবেন-ফলে তারা স্বীয় গোপন মনোভাবের জন্যে অনুতপ্ত হবে। মুসলমানরা বলবেঃ এরাই কি সেসব লোক, যারা আল্লাহর নামে প্রতিজ্ঞা করত যে, আমরা তোমাদের সাথে আছি? তাদের কৃতকর্মসমূহ বিফল হয়ে গেছে, ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে। [সুরা মায়িদাহ ৫২-৫৩]
যারা মুসলমানদের বর্জন করে কাফেরদেরকে নিজেদের বন্ধু বানিয়ে নেয় এবং তাদেরই কাছে সম্মান প্রত্যাশা করে, অথচ যাবতীয় সম্মান শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য। [সুরা নিসা ১৩৯]
আমার মুভি, গান, সাহিত্যের প্রতি ভাললাগা অবশ্যই প্রকাশ না করার কোন কারণ নাই। ‘রাজাকার’ শব্দটা শুনলেই আমার ঘৃণা হয়, ফিলিস্তিনের নির্যাতনের জন্য যদি কারো সত্যি খারাপ লাগে নিজের দেশের মা-বোনের উপর নির্যাতনের জন্য তার হাজার গুণ বেশী খারাপ লাগা উচিত।
এখানে কোন মুসলিম বোন – মুসলিম ভাইয়ের সত্য কাহিনী তুলে ধরা হয়নি। এটা সম্পূ্র্ণই আমার নিজস্ব চিন্তধারার একটা গল্প মাত্র। আপনার কাছে একটা প্রশ্ন, মুসলিম মেয়েরা কি চোখ বন্ধ করে বিয়ে করবে অথবা কি প্রসেসে বিয়ে করবে? তার কি ফ্যামিলি থেকে ঠিক করা ছেলের সাথে কথা বলার অধিকার ও নাই?
আপনার পরিশ্রমী বিস্তারিত মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ! 😀
কথা বলার অধিকার আছে, তবে এভাবে মাঝরাতে পটে গিয়ে কাটাবনের শর্মা হাউজে একান্ত আলাপ নয়! অবশ্যই একজন মাহরম থাকতে হবে।
আল্লাহর নবী (সাঃ) বলেন, “কোন পুরুষ যেন কোন নারীর সাথে একান্তে গোপনে অবস্থান না করে। কারণ, শয়তান উভয়ের কুটনী হয়”।
(তিরমিযি, মিশকাতুল মসাবীহ ৩১৮৮)
লেখকের ব্যক্তিগত জীবনের কাহিনী এই লেখায় ফুটে উঠে নাই তো। 😛
করিম দোস্ত তুই ভাল করেই জানিস, আমার কল্পনা শক্তি বেশ ভাল 8)
ভালো লাগলো তো পড়ে!!! :beerdrink:
ধন্যবাদ ঈয়াশা। 😀
সায়েম দাওয়াত না দিলেও যেকোন একদিন চা খেতে চলে আসব। :beerdrink:
:happy:
এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম । অনেক ভাল লাগল।
ভাইয়া, আপনি এত সুন্দর করে লেখেন কিভাবে বলেন তো? বেশ আয়েস করে তারিয়ে তারিয়ে লেখাটা পড়ছিলাম, কিন্তু শেষটা একটু তাড়াহুড়া হয়ে গেলো না? হাত ধরে, কাঁপা গলায়, গদগদ স্বরে দু-চারটা প্রেমের ডায়ালগ কিন্তু
খুব সহজেই ঢুকিয়ে দিতে পারতেন ভাইয়া। তবে সত্যি বলতে কি, শেষ লাইনে এসে হুট করে আপনার ভবিষ্যত প্রজন্ম পয়দা করার খায়েসটা দেখে সবচেয়ে বেশি মজা পেয়েছি।
লেখায় ১০০ প্লাস, ১০০ লাইক আর ১০০ তারা।
:brokenheart:
-রুপকথা
রাফফান তোমার কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ 😛
দারুণ লেগেছে!
ছেলেটার মেন্টালিটি (সৌভাগ্য নাকি, দুর্ভাগ্য বলবো? 😀 ) একদম আমার মতন!
স্বভাবটাও!
😀
সুখপাঠ্য গল্প- শেষটাও চমৎকার 🙂
অনেক ভাল লেগেছে ভাইয়া !
খুবি ভালো লাগা একটি লেখা !