সীমার মাঝে অসীমে হারিয়ে যাওয়া যায়?! যায় তো……
রোদ আর কুয়াশা মিলেমিশে হিমেল হাওয়া জড়ানো মিষ্টি একটি সকাল।
ঠিক যেন শিউলি আর কাঠগোলাপের সৌরভ মিলেমিশে একাকার হওয়ার মত। শিউলি ফুলের চাদরে মোড়া লাল-সাদা সকাল যখন আসে, ফুলের সৌরভ কোথায় যেন হারিয়ে নিয়ে যায়। এই পৃথিবীর মাটিতে দাড়িয়ে থেকেও অন্তর-আত্মা চলে যায় অনেক দূরে।
শিউলি ফুলের মন মাতাল করা সৌরভ মনকে সিক্ত করে দিয়ে যায়। শীতের সকালে ফুলের সৌরভ গালে স্পর্শ বুলিয়ে সূর্যকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। একটি দু’টি সূর্য রশ্মি গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে চুঁইয়ে পড়ে। গাছের ছায়ায় ছায়ায় পথ ধরে চলে যাওয়া যায় অনেক দূর।
ভোর-সকালে শীতের বাধা উপেক্ষা করে কুয়াশার চাদর কেটে এগিয়ে যাওয়া ফুলের ঘ্রাণের পিছু পিছু। হঠাৎ পাওয়া গুপ্তধনের মতোই হঠাৎ করে পেয়ে যাওয়া একরাশ শিউলি ফুল। জগৎ- সংসার কিছুই আর তখন মনে থাকে না। সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু ওই লাল-সাদা চাদরের পানে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকা,এ যেন পৃথিবীর এখানেই শুরু, এখানেই শেষ, আদি-অন্ত বিস্তৃত কেবল শিউলি ফুলের মাঠ। দু’হাত ভরে শিউলি ফুল নিয়ে তাঁর স্পর্শ গালে বুলানো,বুক ভরে ফুলের সৌরভ নেয়া-এ যেন অন্য কোনো জগতে হারিয়ে যাওয়া।
খুব প্রিয় মানুষের মুখটা এভাবেই মনে পড়ে যায়, ইচ্ছে করে মুঠো ভর্তি শিউলি ফুলের স্পর্শ দিয়ে তার ঘুমটা ভাঙিয়ে দিয়ে আসি, আর তার অবাক নয়নে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকাটা প্রাণ ভরে উপভোগ করি। “তোমায় আমি কত শিউলি ফুল এনে দিলে তুমি আমায় খুব কাছে টানবে? যতটা কাছে টানলে শিউলি ফুলের সুবাস আর আমার নিঃশ্বাস আলাদা করা যাবে না? তোমায় আর কত কাঠগোলাপ জড়িয়ে ধরলে তুমি আমায় নিয়ে সমুদ্রের পাড়ে বসে অর্ধ-চন্দ্র আর তারার কথোপকথন শুনবে?”
কখনো যদি মন কাঁদে, শুভ্র-স্নিগ্ধ সকালের সৌরভ যেন কানে কানে এসে বলে-কেঁদো না, দেখ প্রকৃতি কতো সুন্দর, তোমার জন্য আমি আছি, একবার শুধু আমার উপর ভরসা করে চোখ মেলে দেখ। ওই দেখ-কাঠগোলাপগুলো তোমার প্রতীক্ষায় তাকিয়ে আছে। শুধু একবার তাদের কাছে যাও। দেখ ফুল কুড়ানোর কী আনন্দ। কথা দিলাম-কাঠগোলাপের সৌরভ তোমায় মন খারাপ করে থাকতে দিবে না। চোখের কোণে জমতে থাকা পানিকে ফুলের পাপড়ির মতো হাসিতে রূপ দিবে।
ওই যে গাছের চূড়ায় একথোকা কাঠগোলাপ- তারই মাঝে কোনো একটি কাঠগোলাপ বহু সংকোচে তার লজ্জা ভেঙে লাজুক দৃষ্টিতে আনমনে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে, কখন তুমি তার অপেক্ষায় গাছের নিচে যাবে। একবার শুধু ওই গাছের নিচে যেয়ে দাড়াও, সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে অনুভব কর- একটি কাঠগোলাপ গাছ থেকে ঝরে পড়বে, তার প্রতীক্ষায় দাড়িয়ে থাকার মাঝে কি সুখ!
একবার শুধু চোখ মেলে দেখ-
পবিত্রতা, স্নিগ্ধতা, শুভ্রতার নিশ্চুপ রূপঃ
সবুজ ঘাসের ফাঁকে ফাঁকে কমলা সাদা শিউলি ফুল। কাকে ছেড়ে কাকে দেখব?! শুভ্র সাদার উপর যখন এক বিন্দু শিশির টুপ করে পড়বে-তাকে দেখার জন্য সময়ের বিপরীতে অনন্ত কাল দাড়িয়ে থাকা যাবে।
অন্তরের সুতোয় টান দেয়া কাঠগোলাপ:

বহুল প্রতীক্ষিত ও কষ্টে অর্জিত কাঠগোলাপ,শিউলি ফুলের সাথে সখ্য পাতানো কাঠগোলাপ। আর সাথে একচিলতে রঙ্গন।
ভালো থাকিস কাঠগোলাপ, অনন্ত কাল বেঁচে থাকিস-আমার মত প্রকৃতি পাগলদের আরও পাগল করার জন্য, আমাদের আবেদনকে ছুঁয়ে যাবার জন্য……
থাকবে তো তুমি এমনই?
পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা চাদরঃ
ভয়ংকর সুন্দর কি একেই বলে? প্রকৃতির এতো রূপ-এতো সৌন্দর্য সহ্য করার ক্ষমতা কি আছে?
তোমার তুলনা তুমিঃ
কে বেশি সুন্দর?
একবার আমাকে দেখে যাওঃ

পৃথিবীতে কোনো কলুষতা কি আছে? কোনো পাপ কি কোনো দিন পৃথিবীর বুকে হতে পারে? মমতাময়ী স্নিগ্ধতা কী থামিয়ে দিবে না? সকল কালো বিরূদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য কি সাদা খুব কম? অন্যায়কে প্রতিরোধ করার জন্য নরমের মাঝে কি কঠোরতা নেই?
কোনো পাপ করার আগে একবার শুধু এই দৃশ্যটা মনে কর-
তোমার বাড়ি যাবঃ
প্রিয় কাঠগোলাপ, আমাকে তোমার সঙ্গী করবে? বাকিটা জীবন তোমার দিকে তাকিয়ে থেকে আর তোমার ঘ্রাণ নিয়ে কাটিয়ে দিব।
লক্ষ্মীটি,আর কত আদর নেবেঃ
বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ
OAB এর সামনে তিনটা কাঠগোলাপ গাছ, হল এর রাস্তায় পাঁচটা কাঠগোলাপ গাছ, স্টাফ কোয়াটার এর শেষ প্রান্তে সদ্য আবিষ্কৃত শিউলি ফুলের গাছ-যা না থাকলে হয়ত জীবনের, প্রকৃতির,পৃথিবীর অনেক সৌন্দর্য আমার অজানা থেকে যেত।
ধন্যবাদান্তেঃ
কিছু বিশেষ বন্ধুদের যারা না থাকলে ফুল কুড়ানোর সুখ আমার অজানা থেকে যেত। বন্ধুত্বের অনেক দিন অদেখা থেকে যেত- কারো জন্য কুড়ানো ফুল তাকে না দিয়ে তারই সামনে ঘুরে বেড়ানো অথবা তারই সামনে তাকে না দিয়ে অন্য কাওকে দেয়া…… মানুষকে এতো ভাবেও জ্বালানো যায়? 😛
দারুণ লেখা, আরও দারুণ সব ছবি।
হলে থাকার ব্লেসিং-গুলির মধ্যে এটা একটা। আরেকটা হচ্ছে রাত ৩টায় ঘাসের ওপর শুয়ে থাকতে পারে।
আপনি প্রেমে পড়েছেন নাকি বাই দ্য ওয়ে? 😛 পড়তে পড়তে মনে হল আর কি! :babymonkey:
*শুয়ে থাকতে পারা
হলে থাকার প্রথম উপকারিতাটা বুঝলাম না, মানে ফুল কুড়ানোর জন্য হলে থাকতে হবে কেন?ক্লাস করতে বাসা থেকে ক্যাম্পাসে আসলে কুড়ানো যায় নে? আমি তো ক্লাস টাইমেই কুড়াই, আলাদা করে ফুল কুড়াতে ক্যাম্পাসে যাই না। হলে একবার ঢুকলে আর বের হওয়া নাই। তবে এখন হলে থেকে সকালে শিউলি কুড়াতে যাই, কিন্তু সেটাও তো বাসা থেকে এসে করা সম্ভব।বাস তো সাড়ে সাত টায় চলে আসে।
আচ্ছা ক্লাস শুরু হলে একদিন আপনাকে নিয়ে যাব। 🙂
ওহ্ আমি তো ভাবলাম হলে কুড়াও, ভোরবেলা। 🙂
আমার অনেক বুদ্ধি তো! 😛
আপুউউউউউউউউউউউ আমি জানতাম এরকম কেউ বলবে… সবাই এতো খারাপ, পচি…… :crying: :crying: :crying:
ছোট কিন্তু বড় ……………………
বাহ্ আপনার সময় হলে পড়ার! 8)
আহ্, আমার বড় পছন্দের দু’টা ফুল।
আপনার লেখার মধ্যে কেমন একটা মায়াময় ভাব আছে। প্রকৃতি যেন আলতো করে হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরছিলো লেখাটা পড়ার সময়। 🙂
ধন্যবাদ।
প্রকৃতি এতো বেশি মোহ সৃষ্টি করে আমার মাঝে, সব সময় প্রকৃতির মায়া যেন আমাকে জড়িয়ে থাকে। 🙂
মন্তব্য টাও খুব সুন্দর, পড়ার সময় প্রকৃতির মত স্নিগ্ধ স্নিগ্ধ ভাব…
ছবিগুলো এত্তো সুন্দর— শুভ্রতা, উজ্জলতা, স্নিগ্ধতা, পবিত্রতা মাখা………
বারবার দেখছি শুধু……………মুগ্ধতা নিয়ে……
শিউলি আর কাঠগোলাপের ভালোবাসা কাছে থাকুক সবসময়……
প্রতিটা ছবি,যে দৃষ্টি তেই দেখছিনা কেন মনে হচ্ছে নেশাগ্রসত হয়ে যাচিছ,মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা সৃষ্টির সেরা জীব হয়েও প্রকৃতি থেকে কত কি শিখতে পারি,এত সুনদর এই ফুল,তারা নিজেরাও জানেনা এ কথা,পরে আছে মাটিতে আর সবুজ ঘাসেরা যেন কি পেল!মিশে একাকার,কেউ ফুঁটে কত উচুতে কেউ মাটিতে তারপরেও কোন অভিযোগ নেই,যে যাকে পাচছে ঠাঁই দিচ্ছে, ফুল এত সুনদর তারপরেও মাটিতে ঝরে পরা নিয়ে তার কোন দুঃখ নেই,আমরা মানুষেরা কখনো অবস্থার নিমনগামি হলে ভাবি “এই বুঝি ডুবে গেলাম”সবসময় উপরে আরো উপরে উঠতে চাই।