ক্রিকেটপাগল বাঙালি, আমাদের স্বপ্ন আর কতিপয় ‘গ্লোরি হান্টার’

ক্রিকেটের জন্য এমন ভালোবাসা আর কোন্ জাতি কবে দেখিয়েছে?
আমরা খেলার আগের দিন টিকেটের জন্য দশ ঘন্টা লাইনে দাঁড়াতেও দ্বিধা করি না, দুইশ টাকার টিকিট হাজার টাকায় ব্ল্যাকে কিনতেও বাঁধে না আমাদের, আতিথেয়তাতেও অনন্য; অবশ্যি এই বাঁধভাঙা আবেগের কারণেই বিপক্ষ টিম বাসে ঢিল ছোঁড়া, ‘ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিকের’ বাসায় হামলা, টিকেট কাউন্টার ধূলিসাৎ করার মতন ব্যপারগুলোও থাকে মুদ্রার ওপিঠে!

আমরা ক্রিকেট পাগল জাতি বলেই হয়ত মাঝে মাঝে খেলোয়াড়দের চেয়েও বড় ক্রিকেটবোদ্ধা হয়ে যাই। এইটা প্রায়ই মাথায় থাকে না, ওই বাইশ গজ পিচের আশেপাশে চরম মুহূর্তে কী ভীষণ চাপ কাজ করে! ঐ সময় দুই-একটা ভুল সিদ্ধান্ত আসা খুব স্বাভাবিক, যদিও সেটা হয়ত আনন্দ-স্বপ্ন শেষ করে দিতে পারে নিমিষেই! আমরা ক্রিকেটকে ভালোবাসি বলেই শফিউল-রুবেলকে তুলোধুনো করি, ভুলে যাই- শফিউল না থাকলে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারানো স্বপ্নই থাকতো… এই রুবেল না থাকলে আজও হয়ত আমরা স্বপ্ন দেখে যেতাম নিউজিল্যান্ডকে বাংলাওয়াশ করার! হয়ত ‘বাংলাওয়াশ‘ শব্দটাই আজও অভিধানেই তোলা থাকতো! দুই-এক ম্যাচ খারাপ যেতেই পারে… আমরা আশা হারালে তো সব শেষ!

একটা আর্টিকেলে মন্তব্য পড়লাম একটা- “মুশফিককে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অধিনায়ক থেকে সরাতে হবে। সে কঠিন সিচুয়েশনে মারাত্মক ভুল করে, যেমন বোলিং পরিবর্তনেও মারাত্মক আনাড়ি। আজ (বাংলাদেশ-ওয়েস্টইন্ডিজ তৃতীয় ওয়ানডেতে) শেষ দিকে স্পিনে মারাত্মক টার্ন আসছিল, অথচ সে নিয়ে আসলো সবসময়ের খরুচে ফাস্ট বোলারকে, যেখানে গাজী, নাঈম এর ৬ ওভার বাকি ছিল। এশিয়া কাপের ফাইনালে ও সে শেষ ওভারটি শাহাদাতকে দিয়ে বোলিং করিয়ে ১৯ রান দিয়েছিল, যেখানে আমরা হেরেছিলাম মাত্র ২ রানের জন্য (পাকিস্তানের ৪৯ ওভার শেষে রান ছিল ৮ উইকেটে ২১৭, কিন্তু ৫০ ওভার শেষে রান হল চ্যালেঞ্জিং ২৩৬); অথচ শাহাদাতকে না করিয়ে নাজমুলকে দিয়ে ও করাতে পারত, কারণ নাজমুল ওই দিন ভাল করছিল; শেষ ওভারটির আগে নাজমুল ও শাহাদাতের বোলিং ফিগার ছিলঃ নাজমুল ৮- ১- ৩৬-১; শাহাদাত ৮-০-৪৪-০; শাহাদাত এর শেষ ওভারটির পর বোলিং ফিগার হলঃ ৯-০-৬৩-০”

কথা হয়ত সত্যি- মুশফিকের হয়ত ক্যাপ্টেন্সিতে ভুল ছিল শেষদিকে, চাপটা নিতে পারেনি সে। নাসিরকে বোলিংই দ্যায়নি, মাশরাফির পাঁচ-পাঁচটা ওভার বাকি থাকতেও বল তুলে দিয়েছিল রুবেল আর আনকোরা মমিনুলের হাতে। মমিনুল হয়ত হতাশ করে নি- কিন্তু ভেবে দেখুন, ওই সময় ওই বোলারটা রুবেল না হয়ে অন্য যে কেউ হতে পারতো! স্যামুয়েলস নিজেই তো বলে দিয়েছে, “সেঞ্চুরি হয়ে গেছে, তখন বলে বলে রান চাই। ও প্রান্ত থেকে তখন যে-ই বোলিংয়ে আসত, আমি মারতাম। রুবেলের দুর্ভাগ্য, ওই প্রান্ত থেকে সে-ই এসেছে!”

রুবেলকে নিয়ে আমাদের বাজে অভিজ্ঞতা বেশি বলেই হয়ত আমরা মেনে নিতে পারছি না ব্যপারটা। কিন্তু ঐ বোলারটা মাশরাফি হলে কী বলতেন? শেষ দশ ওভারে মাশরাফির রেকর্ডও কিন্তু খুব বেশি সুখকর নয়! মুশফিকের এতো দোষ- মুশফিক না থাকলে কি পারতেন, তীরে এসে তরী প্রায় ডুবিয়ে ফেলা বাংলাদেশের ভারতকে হারিয়ে এশিয়া কাপে রানার্সআপ হওয়ার গল্প করতে? তারচে’ বরং সময় দিন ওদেরকে আরেকটু, শিখে যাবে! কতই বা বয়স হলো ওদের? ক্রিকেটবিশ্বে ম্যাচিউরিটি-ই তো আসে তিরিশের পরে!

ছবিটা খুলনা শহরের- বাংলাদেশ-ওয়েস্টইন্ডিজ দ্বিতীয় ওয়ানডের আগের দিন ভোরবেলা তুলেছিলাম। এতো বছর পরে ক্রিকেটকে নিজেদের মাঝে ফিরে পেয়ে খুলনাবাসী বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেনি গোটা শহরকে ঝলমলে আলোয় ঢেলে সাজাতে! ২০১১-র ক্রিকেট বিশ্বকাপের আগেও একই চিত্র দেখা গেছে পুরো ঢাকা শহরে! আমরা বাঙালিরা আসলেই ক্রিকেটপাগল- এই পাগলাটে আবেগও আসলে বিরাট গর্বেরই! আর ক’জন পারে সেটা??

নিলয় সম্পর্কে

"আমি জানি আমি আমার চারপাশের এই অসংখ্য মানুষ থেকে অনেক ভালো জীবন পেতে পারতাম, কিন্তু সে জীবনে আমার কোন আকর্ষণ নেই। আমি দেখেছি সেই জীবন প্রকৃতপক্ষে অর্থহীন- প্রতিটি মানুষের জীবন এতো সুনির্দিষ্ট, এতো গতানুগতিক যে সেটি একটি সাজানো নাটকের মতো। আমি সেই সাজানো রঙ্গমঞ্চের অভিনেতা হতে চাইনি।" [http://www.facebook.com/niloy.02]
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চিন্তাভাবনা-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

4 Responses to ক্রিকেটপাগল বাঙালি, আমাদের স্বপ্ন আর কতিপয় ‘গ্লোরি হান্টার’

  1. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    এই পাগলামি আবেগটাই তো আমাদের গর্ব!

    তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাগলামির সীমানা নিজেদের বোঝাটা জরুরী।

  2. সামিরা বলেছেনঃ

    ক্রিকেট দেখি না একদমই। খবরও রাখি না তেমন। 😳

    লেখাটা ভাল হয়েছে ভাইয়া। ছবিটা খুব সুন্দর! 🙂

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।