স্থিতিস্থাপক অর্থনীতি নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় ছন্দ থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ দুর্যোগের দেশ, নদী-নালা বিধৌত পৃথিবীর বৃহত্তম এই ব-দ্বীপে সাইক্লোন-টর্নেডো এবং স্থলে থাকা ডিফল্টের জন্য ছোট-খাট ভূমিকম্প প্রায়ই হচ্ছে। বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান সাগরে থাকা ডিফল্টের ভূকম্পনের রেশ ধরে আমাদের উপকূলীয় এলাকায় ছোট-বড় সুনামি এখন নিয়মিত ঘটনা। দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে বিধ্বস্ত অবকাঠামো পুনর্গঠনের ব্যবস্থাতো নিতেই হয় সরকারকে, কিন্তু জনগনের (বিশেষ করে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করা শ্রেনীর) সার্বিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগাম অর্থনৈতিক পরিকল্পনা থাকা দরকার যাতে করে দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে দরিদ্র জনগনের একটা কাজের জায়গা তৈরী হয়, আয়-রোজগারের একটা ব্যবস্থা হয়। একটা দুর্যোগের পর দুর্যোগে আক্রান্ত এলাকার অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে, স্বচ্ছল লোকজনের অর্থনৈতিক টানাপোড়ন তৈরী হয়, মানুষকে কাজ দেয়া যায় এমন ক্ষেত্রগুলো সংকুচিত হয়। এর সবচেয়ে বড় প্রভাবটা পড়ে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করা জনগনের উপর, তারা উপায় না দেখে ঢাকায় চলে আসে, আশ্রয় নেয় ফুটপাথে কিংবা রেললাইনের পাশে। এই অনাকাংখিত অভিবাসন ছন্দময় অর্থনীতির পথে একটি বাধা এবং নগর পরিকল্পনার অন্যতম অন্তরায়।
দুর্যোগ এবং অন্য যে কোন অনাকাংখিত সময়ে দরিদ্র জনগনের আর্থিক অবস্থা স্থিতিস্থাপক রাখার জন্য DFID (Department for International Development) এর বেশ কিছু প্রজেক্ট ছিল। এর একটা এমন, খরার সময় গরু এবং ছাগল যখন দুধ দেয়ার মত অবস্থায় থাকেনা তখন উটকে বিকল্প ধরে অর্থায়ন করা হয়েছে। উট পানি ছাড়াও লম্বা সময় সারভাইভ করতে পারে এবং উটের দুধ খরার সময় পুষ্টির অন্যতম উত্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যে দরিদ্র শ্রেণী উট লালন-পালন করবে খরার সময়ে তাদের আয়-রোজগারও এই প্রকল্প থেকে নিশ্চিত করা হয়। কেনিয়াতে এই প্রকল্পটি বেশ সাফল্য পেয়েছিল, অভাবী জনশ্রেনীর সাড়াও ছিল বেশ।
এবার বাংলাদেশে DFID এর নেয়া একটি প্রকল্পের দিকে তাকাই। বর্ষাকালে নদী-নালা বিধৌত এবং ভাটি অঞ্চলে যখন মানুষের কর্মপরিধি সংকুচিত হয়ে যায়, তখন দরিদ্র মহিলাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দিতে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। উক্ত প্রকল্পে দরিদ্র মহিলাদের হাঁস লালন-পালনে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়: কিভাবে হাঁসকে খাবার দিতে হবে, হাঁসের থাকার জায়গা কিভাবে তৈরী করে দিতে হবে, রোগ-বালাই কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং এর সাথে আর্থিক অনুদানও দেয়া হয়। বেশ কার্যকরী ছিল প্রকল্পটি, বর্ষাকালে কাজ হারিয়ে ঘরে বসে থাকা দরিদ্র মহিলারা ডিম বিক্রি এভাবে কিছু আয় করার সুযোগ পায় এবং এরই সাথে নিজ পরিবারের পুষ্টির চাহিদাও মিটে।
উপরের দুটো উদাহরণ রুটিনমাফিক তথা ঋতু পরিবর্তনজনিত সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলার সাথে সম্পর্কিত। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের এখন দরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় এবং দুর্যোগ পরবর্তী অর্থনীতি সচল রাখার অপশন খুঁজে পাবার অভিপ্রায়ে গবেষণা, চিন্তাভাবনা। প্রতিকূল এবং দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশে কিভাবে নতুন নতুন প্রকল্প পরিপূরক হিসেবে এসে যে কোন রকম দুর্যোগ থেকে সৃষ্ট ঘাটতি পুষিয়ে দিবে-এ বিষয়ে বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন আছে। বেশ কিছু ব্যাপার আমাদের আগে থেকেই নিশ্চিত করে রাখা প্রয়োজন প্রস্তুতি হিসেবে যেমন দুর্যোগ থেকে সৃষ্ট ঝুঁকি হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়া, সামাজিক নিরাপত্তা, অবকাঠামোর ভঙ্গুর অবস্থায় কাজের ক্ষেত্র তৈরী এবং দুর্যোগ পরবর্তী মানবিক সাড়া। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার শিক্ষা শুধুমাত্র প্রফেশনালদের না দিয়ে মাঠ পর্যায়ে জনসাধারণকেও দেয়া যেতে পারে। তরুণ-তরুণীরা এতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। এই প্লাটফর্মে অনেক বিজ্ঞান, প্রকৌশল, চিকিত্সা এবং সামাজিক বিজ্ঞান, অর্থনীতির ছাত্র-ছাত্রী সরব আছেন; আশা করবো, আপনাদের অনেকেই এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাববেন এবং আপন উদ্ভাবনী ক্ষমতায় গবেষণা করে অভিনব এবং কার্যকরী সমাধান বের করতে পারবেন।
আমি নিজেও এই বিষয়ে সরবে লেখা চালিয়ে যেতে চাই, সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
দারুণ ভাইয়া। চালিয়ে যান প্লিজ 😀
আমি অর্থনীতি নিয়া কিছু বলার প্ল্যানিং এ আছি :p
২২ তারিখ পর্যন্ত একটু ব্যস্ত থাকব। তাপ্পর সিরিয়াসলি আলুচনা।
(btw আমি বাপ্পি,০৫ :P)
আমি জানি, তুমি বাপ্পী 🙂
অর্থনীতি আমার পছন্দের বিষয়, অর্থনীতি নিয়ে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হবার চেষ্টা করছি, দেখা যাক!