আজকে একটা কথা না বললেই নয়, আসলেই উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ! যে বয়সে একটা ছাত্রের নিত্যনতুন প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাওয়ার কথা, দিনে একটা সময় মাঠে দৌড়িয়ে কাটানোর কথা সেই বয়সে তাকে এমন একটা পরীক্ষা দিতে বসতে হচ্ছে যার জন্য তাকে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে, যার জন্য তার বাবা-মা তাকে সকাল সন্ধ্যা পড়ার টেবিলে বসিয়ে বইয়ের গৎবাঁধা বিষয়গুলো গেলাচ্ছে। হ্যাঁ আমি পিএসসি’র সেই ছেলে মেয়েগুলোর কথাই বলছি ! আচ্ছা এটা কি ওদের সময় ওদের কে সার্টিফিকেট এর মাধ্যমে যাচাই করা ! ওদের মেধাকে একটা গ্রেড দিয়ে দেওয়া ? এতে আসলে কি আদৌ লাভ হচ্ছে ! বরং ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে, একই জিনিস বারবার পড়িয়ে মাথার ভেতর এটে দেওয়া হচ্ছে আর যেই ছোট্ট মাথাটা এই ভার সইতে পারছে না তাকে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে একটা নিম্ন মানের গ্রেড। যেন শুরুর আগেই শেষ !
আচ্ছা ধরুন পাশাপাশি দুইটি পরিবার। এক পরিবারের ছেলে খুব ভালো, সারাদিন টিচার, স্কুল, কোচিং করে পিএসসি তে একটা বিশাল আকারে ৫ নিয়ে এসেছে কিন্তু পাশের বাসার ছেলেটা তা পারেনি , দূর্ভাগ্যক্রমে বাংলা পরীক্ষাটা খুব ভালো না হওয়ায় একটুর জন্য ৫ টা মিস হয়ে গিয়েছে ! যত যাই বলে বোঝান না কেন এই ছেলেটার ছোট্ট মাথায় কিন্তু একটা প্রেশার পড়ে, হয়ত সে এটা নিতে নাও পারতে পারে। তার উপর বাবা-মা’র প্রেস্টিজ !! আমার নিজের চোখে দেখা কলিগ-কলিগে বাচ্চাদের নিয়ে যুদ্ধ যে কার বাচ্চা ফার্স্ট হবে ! তাও তখন ভালো ছিল যে ৮০ পেত আর যে ৭৮ পেত তার মাঝে ২ নম্বরের একটা পার্থক্য থাকত আর তাতে তারা পরেরবার ভালো করারও একটা সুযোগ পেত। প্রতিবছর রোল নাম্বার চেঞ্জ করার একটা প্রতিযোগিতাও থাকত কিন্তু এখন তো কপালে সেটে দেওয়া হবে তুমি “এ গ্রেডের” আগামী তিন বছর তুমি “এ-গ্রেড স্টুডেন্ট !”
এ কেমন শিক্ষা ? আচ্ছা আমরা কি শুধু সার্টিফিকেট অর্জনের জন্যই পড়ছি ? আর শিক্ষা মানে কি শুধুই বই এর কয়েকটা ব্যাপার মুখস্ত করে বমি করে আসা ? আর যখন একটা ছেলে ৮০ পাওয়ার জন্য পড়াশোনা করে সে আর যাই করুক সত্যিকার অর্থে কিছু শিখতে পারে না বলে আমার বিশ্বাস ! এই ছোট বেলা থেকেই আমরা এই বাচ্চাগুলোর শেখার রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে তাদের গ্রেডের পেছনে ছোটাচ্ছি ! ভালোই !
ব্যাপার না, আজ থেকে ২০ বছর পর দেশে কোটি কোটি পাঁচ পাওয়া যাবে কিন্তু এদের শিক্ষিত বলা যাবে কিনা সন্দেহ !
বিঃদ্র- এইটা লিখতে লিখতে দেখলাম দুইজন জেএসসিতে খারাপ করায় আত্মহত্যা করেছে ! এর দায় ভার কে নেবে ! আগে হলে এই বাচ্চাটা যদি ক্লাসে ফেল করত তাহলে তাকে সেই ক্লাসে রেখে দেওয়া যেত যাতে সে পরের বার ভালো করে ফিরে আসতে পারে কিন্তু এখন এত মানুষের সামনে তাকে একটা সার্টিফিকেট ঝুলিয়ে দিয়ে ফেইল করা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলে সে সেই সুযোগ পাওয়া তো দূরের কথা আত্মবিশ্বাসটাই হারিয়ে ফেলে। খুব কষ্ট লাগে যখন দেখি দেশের সবচেয়ে যেই খাতটাকে নিয়ে মানুষের চিন্তা করা বেশি দরকার, কেয়ার করা বেশি দরকার সেই খাতটায় কিছু অযোগ্য মানুষ বসে সব কিছু নষ্ট করে দিচ্ছে।
টাইটেলের প্রশ্নটা আমারও প্রশ্ন। আত্মহত্যার ঘটনা শুনে রীতিমত স্তম্ভিত হয়ে গেছিলাম।
এসএসসির জিপিএ সিস্টেমের ফলাফল তো আমরা সাম্প্রতিককালে দেখলাম। জিপিএ ফাইভরা ভর্তি পরীক্ষায় পাশ ই করতে পারছে না।
এভাবেই কি পঙ্গু করা হবে না শিশুদের?
তবে গ্রাম পর্যায়ে একটা দিক থেকে এই বিষয় কি ইতিবাচক হতে পারে?
আমি নিশ্চিত না। তবে সম্ভাবনা আছে। একটা সার্টিফিকেটের আশায় গ্রামের বাবা মা’রা শিশুদের স্কুলে পাঠাবে?
ভাইয়া মেনে নিলাম গ্রাম পর্যায়ে ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর পেছনে একটা মূলা হতে পারে এই সার্টিফিকেট। তার মানে কি সেই একই ব্যাপার দাঁড়ালো না যে এই ব্যবস্থা আমাদের কিভাবে ভালো সার্টিফিকেট অর্জন করতে হয় সেটা শেখাচ্ছে ?
পড়াশোনায় মোটিভেটেড করার জন্য বা গ্রামের স্কুলের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে আনার জন্য এই উদ্যোগ ঠিক কার্যকর কি না তা নিয়ে আমি সন্দিহান।
সার্টিফিকেট কেন্দ্রিক চিন্তা আমার ধারণা মোটামুটি সব জায়গায় আছে। এটা সরাতে ৫০+ বছর লাগার কথা! :p
সালমান খান এর নতুন বইতে কিছু বিকল্প সাজেস্ট করছে
একটু একটু করে আগানো যায়
গরিব হলে তুমি আসলে সার্টিফিকেট ই দেখবা – কী করে একটা জব পাওয়া যায়!
সহমত। এখন এসব নাটক ছাড়া কিছুই না।