সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকারের লুকোচুরি

সাগর-রুনি নিয়ে আবারও লেখার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও লিখতে হলো। আপডেট জানা থাকলে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন প্লিজ।

সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর তাঁদের একমাত্র শিশুপুত্র মেঘের দায়িত্ব নিয়েছিলেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর রিপোর্টে এটি প্রকাশিত হলেও তারপর থেকে আজ অবধি মেঘের কোন খবর জানা যায় নি। মেঘ কি স্বাভাবিকভাবেই খাচ্ছে-দাচ্ছে-ঘুমোচ্ছে-স্কুলে যাচ্ছে?

তৎকালীন মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ৪৮ ঘণ্টা শেষ হয় নি, হবেও না- এটা সাধারণের সবার জানা। তারপরেও কেন বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ১০ অক্টোবরের মধ্যে সাগর-রুনি হত্যারহস্য উদঘাটনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন? (প্রথম আলো রিপোর্ট ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২)

প্রতিশ্রুতির সেই সময় পার হয়ে যাবার পরেও আবার তিনি ঘোষণা দিলেন তদন্ত শেষ হবার কথা বলে। (প্রথম আলো রিপোর্ট ২৬ অক্টোবর ও ৩ নভেম্বর, ২০১২ দ্রষ্টব্য)

২৩ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের গণ-অনশনের কর্মসূচি পালনের পর আর কোন তথ্যসমৃদ্ধ সাম্প্রতিক রিপোর্ট দেশের শীর্ষ পত্রিকা হিসেবে খ্যাত প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয় নি!?

এই বছরের ১২ জুন ও ১৭ জুলাই হত্যাকারী শনাক্ত করতে দুই দুইবার ডিএনএ নমুনা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয় এবং র‍্যাবের পক্ষ থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাবার কথা বলা হয়। (প্রথম আলো রিপোর্ট ২৪ অগাস্ট, ২০১২)

অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের মাঝের দিকেই এই হত্যারহস্যের সমাধান হবার কথা ছিল! কিন্তু দুঃখের বিষয়, যুক্তরাষ্ট্র তো বাড়ির কাছের মামাবাড়ি নয় যে আবদার করলেই যখন যা চাই তখন তা-ই পাওয়া যাবে। অথচ মামার বাড়ি ছিল এবং সেটা ঢাকাতেই ছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজে এনএফডিপিএল’এ ডিএনএ প্রোফাইলিং এর জন্য আধুনিক মানের যন্ত্রপাতিই ছিল, যার মাধ্যমে মাত্র সপ্তাহ দুয়েকের ভেতর (ব্লাড, স্যালাইভা এবং কাপড়ে লেগে থাকা টিস্যু স্পেসিমেন) পুরো প্রোফাইল পাওয়া সম্ভব ছিল। অনান্য উপাদান থেকে প্রোফাইলিং এর ক্ষেত্রে সময়টা কেবল আরেকটু বেশি লাগত, যেমন হাঁড় বা দাঁত থেকে প্রোফাইলিং এ সময় লাগে প্রায় ১-২ মাস। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুরো প্রোফাইলিং প্রক্রিয়ায় প্রতিজনে মাত্র হাজার পাঁচেক টাকা ব্যয় হত এজন্য। অথচ সুদূর আমেরিকাতে কার টানে যেন এর দশগুণ বেশি অর্থ ব্যয় করতে সমর্থ হলেন বাংলাদেশ সরকার!

প্রথম আলোর সেপ্টেম্বর ৪, ২০১২তে প্রকাশিত রিপোর্টে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক এম সোহায়েল বলেন, ‘বাংলাদেশের ডিএনএ পরীক্ষা প্রতিবেদন ও যুক্তরাষ্ট্রের ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনের গুণগত মান এক নয়। র‌্যাব এই মামলায় সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে চায়। এ বিষয়ে হাইকোর্টের সুনির্দিষ্ট আদেশও রয়েছে। এখন এটা নিয়ে কেউ বিতর্কের চেষ্টা করলে তা তদন্তে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত।’

অথচ এই এনএফডিপিএল ল্যাব ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার মামলার বিপরীতে সফলভাবে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যার ভেতরে পিলখানায় সাবেক বিডিআর সদর দপ্তরে হত্যাকাণ্ডে নিহত সেনাসদস্যদের এবং সম্প্রতি তাজরিন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কর্মীদের লাশ শনাক্তকরণের মত দেশব্যাপী আলোচিত ঘটনাগুলো রয়েছে।

যে ল্যাবে ভুরিভুরি মামলার নিষ্পত্তি হয়, যেই ল্যাব দেশের পুলিশ ও র‍্যাব মহলে এখন একটি আস্থার নাম সেই ল্যাবে এই আলোচিত হত্যাকাণ্ড সমাধানের ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, তাও র‍্যাবের মাধ্যমে!

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের কলকাঠি কারা নাড়ছে? সরকার, শীর্ষ সংবাদমাধ্যম সবাই নিশ্চুপ কেন? যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিএনএ রিপোর্ট দেশে পৌঁছাতে আরও কত মাস-বছর-যুগ সময় লাগবে? আবার কবর খুঁড়েই কি বের করতে হবে সাগর-রুনির লাশ? আরো কত ঘটনা ঘটে গেলে সাগর-রুনির ঘটনা চাপা পড়বে?

সাগর-রুনি-মেঘকে নিয়ে এত প্রশ্ন- *কেন? কবে? কখন?* এর উত্তর পাব আমরা?

(আমাকে একটা ছেলে ‘বুড়ি’ বলে ডাকত, অনেক অনেক দিন পর তাকে খুব মনে পড়ছে। কারণ অনেক দিন পর কবিতার মত একটা কিছু লিখতে পেরেছি আমি। পটকা, তুই যেখানেই থাকিস, ভালো থাকিস। এই লেখাটা তোর জন্য।)

মেঘ চেয়েছিল বৃষ্টি হতে

মেঘ চেয়েছিল বলে
কাঠালিচাঁপার খোঁজে গিয়েছিলাম
মরা তিতাস পেরিয়ে আরও খানিকটা দূরে,
বেশ দূরে, দূরে গিয়ে দেখি
কাঠালিচাঁপারা ফোটে নি,
খাঁ খাঁ গাছের নিচে কেবল
ভাগাড়ের শকুন ওত পেতে আছে।
দুটো কবরের মাটি ওপড়ানো; তাতে রক্তমাখা
লাশ, তার শতচ্ছিন্ন
কাপড়ের ভাজে ভাজে
কী যেন খুঁজছে ওরা-
ভাগাড়ের শকুনগুলো।
লাশজোড়া ওল্টাতেই নিউজ ফ্ল্যাশের মত
চোখ ধাঁধিয়ে গেল আমার-

মেঘ চেয়েছিল লাল-নীল রঙে
মায়ের ছবি আঁকতে।
নীল রঙটা ওর কাছেই ছিল,
তাই লালের খোঁজে
পাশের ঘরে যেতেই দেখে
মায়ের শরীর থেকে অজস্র লাল
চুঁইয়ে পড়ছে; বাবার হাত-পা বাঁধা,
তার শরীরের লাল মিশে গেছে মায়ের সাথে।
কিন্তু এত এত লাল ভুলে গিয়ে
সুপারম্যানের খোঁজে দৌড়েছিল মেঘ;
এঘর-ওঘর, নর্দমা-নালায়,
অন্ধকারের অভিশাপে, রক্তের আলেয়াতে-
খোঁজ খোঁজ খোঁজ!
সুপারম্যান আসে নি,
এসেছিল সেই রক্তচোষা শকুনগুলো, দল বেঁধে
হোলি খেলবে বলে।

মেঘ চেয়েছিল বৃষ্টি হতে;
বৃষ্টি হলে লাশজোড়ায় লেগে থাকা রক্তের দাগ
ও ধুয়ে দিতে পারত,
ভাগাড়ের শকুনগুলোর হোলি খেলা
বন্ধ করতে পারত, কিন্তু,
বৃষ্টি হয়ে ঝরবে ভেবেও
কাঠালিচাঁপার সাক্ষ্য আর পেল না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আদেশেই ৪৮ ঘণ্টার ভেতর
আর কোন কাঠালিচাঁপা ফোটে নি,
ওদের ফুটতে দেয়া হয় নি,
কোনদিন হবে না।

মেঘ চেয়েছিল বৃষ্টি হতে,
বৃষ্টি হওয়া আর হলো না ওর।
কবর দুটোর মাটি ওপড়ানো ,
লাশের গায়ে রক্তের দাগ শুকিয়ে গেছে।
ভাগাড়ের শকুনগুলো কাপড়ের ভাজে ভাজে
এখনো হাতড়ে বেড়াচ্ছে হোলি খেলার রঙ।

ফিনিক্স সম্পর্কে

"প্রিয় পতাকার লাগি // জটায়ুর মত রক্ত ঝরাতে // আমিও প্রহর জাগি..." https://www.facebook.com/phoenix.chhanda
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চিন্তাভাবনা-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

5 Responses to সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকারের লুকোচুরি

  1. সাঈদ আনোয়ার অনুজ বলেছেনঃ

    DNA রিপোর্ট এসেছে। কিন্তু বলা হচ্ছে, এই DNA রিপোর্ট নাকি কারো সাথেই মিলছে না।
    →DNA রিপোর্ট কারো সাথেই মিলছে না- কথাটা কি ঠিক??
    সন্দেহভাজন হিসাবে যাদের নমুনা পাঠানো হয়েছে তাদের সাথে সংগৃহীত DNA মিলছে না। প্রশ্ন হল, নমুনা কাদের পাঠানো হয়েছে আর কিসের ভিত্তিতে তারা সন্দেহভাজন?
    আরে মাহফুজ সাহেব তো আগেই বলেছিলেন, DNA বলতে কিছু নাই!

    আমাদের না ‘ভীষণ শক্তিশালী’ একটা মিডিয়া আছে!! এখন কোথায় তারা?? তাদের কিছু জিজ্ঞাসা করা হলে জবাব – “কোনো ক্লু পাই না।” ক্লু তারা ঠিকই পায় বা পেয়েছে। কিন্তু ‘উপরের মহল’ এর চাপে তারা লেজ গুটিয়ে থলের ভেতর ঢুকে বসে আছে, পাছে নিজেদেরও নদী পার হতে হয়!!

    সব Homo sapiens ই ‘মানব সম্প্রদায়’র অন্তর্গত, কিন্তু মানব সম্প্রদায়ের সবাই ‘মানুষ’ নয়। মানুষের মনের ভিতরে একটা আদালত থাকে, সেই আদালতের রায় পৃথিবীর আর কেউ শুনতে পায় না, কোথাও কোনো ভূমিকা রাখে কি না তাও আমি জানি না। তবে সেই আদালত থেকে যদি ধিক্কারের ক্ষুদ্র একটা দীর্ঘশ্বাসও জন্ম নেয়, একসময় তা সাম্রাজ্য পুড়িয়ে দিতেও সক্ষম।
    আমি সূর্যাস্তের শেষ প্রহরের অপেক্ষায় আছি, অপেক্ষায় রইলাম…

    No one killed Sagor-Rooney!!

  2. পাহাড়ি কন্যা বলেছেনঃ

    ফিনিক্স আপনি সবসময়ই বেশ ভালো লিখেন। প্রশ্নগুলো আমার মাথাতেও ঘুরাফেরা করছে। তবে সহজ একটা উত্তর হচ্ছে ‘সময়ক্ষেপণ’। ঘটনাটি ধামাচাপা দেবার বহু চেষ্টা চলেছে, চলছে। এই দুইজন মানুষের প্রতি কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। দুই-তিন মাস পরপর কেবল একটা লোকদেখানো আন্দোলন-সমাবেশ। ব্যস, সবাই চুপ যেন কারো কিছু বলার নেই।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।