ছাত্রনং এ-প্লাসনং তপঃ

এস.এস.সি আর এইচ.এস.সি এই দু’টো নিয়ে ছিল মেইন মাথাব্যাথা। আর এরপর ভর্তি পরীক্ষা। যাইহোক, আগে “এ+” এই উপাধি পাওয়ার জন্য আমরা বিশেষ করে আমাদের শহুরে গার্ডিয়ানরা যে পরিমান “সাধনা” করে তা বলার মত না।  যেমন আমার মা আমার এস.এস.সি পরীক্ষার সময় মোহাম্মদপুর এর কোন এক হুজুর এর কাছ থেকে দুয়া পড়ে ফু দেয়া কলম এনে দিয়েছিল।! ওই হুজুর গ্যারান্টি দিছিল যে “পোলা আপনার এ+ পাইবই!”  :huzur:  শর্ত হল কলম যেন মাটিতে না পড়ে। তাইলেই এফেক্ট শ্যাষ! তো আমি কলম নিয়ে প্রথম পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে আম্মুকে বলছিলাম, “অব্বাক কান্ড। গিয়ে খাতায় শুধু কলমটা রাখছি। ওমা! দেখি কলম একা একাই লিখা শুরু করে দিল! আমি খালি বসে বসে খাতার পৃষ্ঠা উল্টায় দিছি! হে হে!”  😀   আম্মা তো ঝাড়িও মারল ইচ্ছামত! তাও এটা নিয়ে ভালই পচানি দিতাম। যখন আমাকে জিজ্ঞাসা করা হত পরীক্ষা কেমন দিলাম, আমি আমার পকেট থেকে কলম বের করে বলতাম “কিরে?? পরীক্ষা কেমন দিলি?” যেটাই হোক, মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম রেজাল্ট খারাপ হইলে যত দোষ এই কলম আর ওই হুজুরের!  তবে, সেরকম করা লাগে নাই। আল্লাহর রহমতে এ+ ঠিক ই পেয়েছিলাম।   😀

এটা শুধু আমার ব্যাপারে না। শহর এলাকায় অনেকের সাথেই হচ্ছে। যত ভাল ছাত্র হোক না কেন? যত ভাল শিখি না কেন? এ+ না পেলে মনে হয় যে ছেলে-মেয়েরা কালাজাহাঙ্গীর টাইপ এর দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হয়ে যায়। আজকাল অনেক মা-বাবা এটাই মনে করে এবং ছেলেমেয়েদের তা মনে করাতে বাধ্য করছে। হ্যাঁ, অবশ্যই বাবা-মা যে পরিমান কষ্ট করেন তার কোন তুলনা হয় না। আমাদের সাফল্যে তারাই সবথেকে বেশী খুশী হন। পাগলের মত আমাদের ভালোর জন্য সবকিছু করেন। তবুও, এত্ত সিরিয়াস গার্ডিয়ানরা, মাঝেমধ্যে হাসি-ই পেয়ে যায়। আমার ছাত্রজীবন মোটামোটি ভাল। এখন বেশ নামকরা ভার্সিটির ভাল একটা সাব্জেক্ট এ পড়াশুনা করছি। সেই সুবাদ এ আমার পরিচিত সবাই আমাকে অনেক ভাল একটা স্টুডেন্ট বলে চিনে (IRONY)।  এতে এখন আজব কিছু অভিজ্ঞতা হচ্ছে। যেমন মাঝে মাঝে কোন গার্ডিয়ান ফোন করে জিজ্ঞাসা করে “বাবা, আমার ছেলে কে অমুক অমুক সাব্জেক্ট এর জন্য কোন স্যার এর কাছে দিব?” আমি জিজ্ঞাসা করি, “কোন ক্লাস?” আজব ব্যাপার, উনি বলে “ক্লাস সিক্স!” আমি তো পুরাই থ। বলি “আন্টি এখন ই এত টিচার? প্রত্যেক বিষয়ে আলাদা? এটার কোন দরকার নাই। দরকার হলে বাসায় এমনি একজন টিউটর রেখে দেন!” আবার এখন মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে অনেকে “বাবা, তুমি কয় ঘন্টা করে পড়তা? অমুক ভার্সিটিতে চান্স পাইতে হইলে কতটুকু পড়া লাগে?” আবার অনেক এও জিজ্ঞাসা করে “পরীক্ষার সময় কি কি খাইতা?” :wallbash:  হায়রে। ছেলেপেলে এক একজন এক একভাবে পড়বে, তাদের এক এক জনের বোঝার ক্ষমতা, ধরন আলাদা।

শিখতে তো হবে। পরীক্ষা দিলেই কেউ মানুষ তো হতে পারবে না। কিন্তু আজ এই জিনিস প্রায় উঠে গেছে। যেমন বাবা-মায়েরা ছাত্র-ছাত্রীর এ+ ছাড়া কিছু বুঝে না, তেমন ইদানিং ছাত্র-ছাত্রীরাও কোনমতে সাজেশন-গাইড পড়ে শুধু এ+ আনার দিকে মনযোগী বেশী। অন্যদিকে সরকারও মনে হয় চাচ্ছে এ+ এর সংখ্যা দিন দিন বাড়ুক, সেই সাথে বাড়ুক এ+ পাওয়ার মত পরীক্ষার সংখ্যাও। কিন্তু এ+ এর সংখ্যা বাড়ায় কতটুকু মূল্যায়ন হচ্ছে আমাদের? তা না হলে অদ্ভুত লাগে যখন শুনলাম এবার এইচ.এস.সি তে এ+ পাওয়া ৫৫ ভাগ শিক্ষার্থী ঢাকা ভার্সিটি এর ভর্তি পরীক্ষায় পাশ মার্ক ই তুলতে পারে নাই।! ক ইউনিটে এই হার ৫১%, খ ইউনিটে ৭১%, গ ইউনিটে ৫৮% এবং ঘ ইউনিটে প্রায় ৯০%।  :voypaisi:

তাহলে এই এ+ যেটা আমদের প্রাথমিক টার্গেট থাকে তার দাম এতই সস্তা কেন হয়ে গেল? ভাই আসেন আমরা এ+ এর সংখ্যা না বাড়িয়ে পড়ালেখার মান বাড়ানোর দিকে মন দেই। দেশ আর জাতি উভয়ের-ই উপকার হবে।

যাইহোক, এতদিন না হয় এস.এস.সি আর এইচ.এস.সি নিয়েই এই এ+ পাওয়ার জন্য সবার মাতামাতি ছিল। এখন আবার শুরু হলো পি.এস.সি এবং জে.এস.সি! ছোট ভাইবোনদের এক-কথায় বুল-ডোজার এর নিচে এখন যেতে হবে এখন থেকেই! কারন ওইযে, এ+ পাওয়া লাগবে! আমার এক আত্মীয়ের ছেলে পি.এস.সি দিয়েছিল। পেয়েছে এ-! এইজন্য তার মা নাকি দুইদিন ঠিকমত খেতেই পারে নাই। এত্ত কষ্ট কই যে রাখবে! ! আর আশংকার ব্যাপার তখন হবে যখন এই P.S.C আর J.S.C এর রেজাল্ট দেখেও যদি কোথাও ভর্তির সিস্টেম চালু হয়ে যায়! যেমন কয়েকদিন আগেও রেজাল্ট এর উপর ভিত্তি করে মেডিকেল ভর্তির একটা প্র্যাক্টিক্যাল জোক সরকার করতে চেয়েছিল। সেই অনুসারে ঠিক-ই দেখা যেত এইচ.এস.সি, এস.এস.সি তে কুলাতে না পেরে পি.এস.সি এবং জে.এস.সি এর রেজাল্টে হাত বাড়িয়েছে। এস.এস.সি আর এইচ.এস.সি এ+ এর সংখ্যা যে হারে বেড়েছে আর দেশের যে অবস্থা, সেদিন মনে হয় না বেশী দূরে! এবং অবস্থা বেগতিক হলে বিয়ার পাত্র-পাত্রীর জন্যও এসব দেখা হতে পারে! কারন আফটার অল, বাবা-মায়েরা তো এ+ এর নাম শুনতেই অজ্ঞান! ! বুক ফুলায়ে সবাই বলতে চাবে “আমার জামাই পি.এস.সি, জে.এস.সি, এস.এস.সি, এইচ.এস.সি সবগুলায় এ+!”  :yahooo:   মজাই লাগবে! কারন এই বয়সে আমরা কেমন ছিলাম কি করতাম সেটা কি আমদের তেমন করে কিছু মনে আছে?  আর এখন যদি ওগুলা নিয়াই আমাকে বিচার করা হয় তাহলে তো কচুগাছের সাথে ফাঁসি দেয়া ছাড়া উপায় নাই।

তো এইসব সার্টিফিকেট দেয়ার মানে কি? শুধু এ+ এর সংখ্যা বাড়ানোই নয় কি? এই সময়ের বাচ্চারা কতটূকুই বা সচেতন হবে? এই পাবলিক পরীক্ষার প্রেসার এখনথেকেই কেন তারা বহন করবে?

এইভাবে বেহুদা পাবলিক পরীক্ষা আর সার্টিফিকেট বাড়াতে থাকলে কয়েকদিন পর PG.S.C (Play-Ground school certificate), K.S.C (kindergarten school certificate) এইসব ও শুরু করা যায়।

আর, আরো দরকার হলে B.T.C (Birth Time Certificate) চালু করা যায়! কি রকম? একটা বাচ্চা কত কম সময়ে মায়ের গর্ভাবস্থা পাড় করে দুনিয়ায় ল্যান্ড করবে সেটার উপর মার্কিং করা যায়, তার জন্মের সময়ের ওজন, এবং চেহারার রঙ কিরকম, চিৎকার এর পাওয়ার কত সেইসবের জন্যও গ্রেডশীট সহ সার্টিফিকেট দেয়া যায়। সেটিতেও এ+, এ, এ- গ্রেডিং থাকুক। তখন কারোর বাবা-মা হওয়ার খবর কানে আসলে সবাই একটা প্রশ্নই করবে আগে, “কোন গ্রেড? ? রেজাল্ট কি?” আর এর উত্তর আসবে এমনঃ “জ্বি ভাই, সব-ই ঠিক ছিল, শুধু গায়ের রঙে এ+ মিছ হয়ে গেছে!”   😐  মজার কথা হল, সেটিও কাজে লাগানো যায়। যেমন আজকাল নাকি বিভিন্ন স্কুল এ ক্লাস ওয়ানে ভর্তি পরীক্ষা না হয়ে লটারি হয়। এতে দেখা যায় কেউ কেউ বছরের পর বছর কোথাও চান্স পাচ্ছে না, আর কেউ সবজায়গায় চান্স পাচ্ছে। তো সেখানে এই B.T.C এর গ্রেডিং  কাজে লাগায় দেয়া যায়! কি বলেন?

যাইহোক, এবার একটু সিরিয়াস কথায় আসি। এই লেখা লেখার সময় একটা খবর শুনলাম। “জে.এস.সি তে এ+ না পাওয়ায় দুইজন ছাত্রের আত্মহত্যা!”  বাকশূন্য হওয়া ছাড়া কিছু বলার নাই। তাহলে এখন চিন্তা করি, ছাত্র-ছাত্রীরা জ্ঞানার্জন এর মত এত অসাধারন একটা জগতে ঢোকার আগেই কেন এতটাই ভেঙ্গে পড়ল যে তার জীবন-ই তার কাছে বৃথা হয়ে গেল? এর জবাব কে দিবে? কোনকিছু শিখা, জানা এর মত মজার একটা ব্যাপার এইটুকু বয়সে ছেলে-মেয়েদের হতাশার ব্যাপার হয়ে গেল? না, এই বয়সে এটা তাদের দোষ দেয়ার কোন মানে হয় না। বেশী কিছু বলব না, শুধু বলব; শিক্ষা নিয়ে ব্যাবসা বন্ধ করুন। আর বাবা-মাদের কে সম্মান দিয়েই বলছি, রেজাল্ট দিয়ে সমাজে মর্যাদা দেখানোর জন্য না, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করতে উৎসাহিত করুন তাদের নিজের মত করে, নিজের জন্য। তাদের মধ্যে এই বোধ যেন না আসে যে পড়ালেখা তার জন্য একটা বোঝা, অন্যদেরকে খুশী করার একটা অবশ্য পালনীয় কর্তব্য! না, তাদের পড়ালেখা যেন হয় তাদের নিজের জন্যই। নিজেরা যেন আনন্দের সাথে এই পড়ালেখাকে নিজেই আপন করে নেয়। এই বয়সে এইসব সস্তা রেজাল্ট এর জন্য কারো মর্যাদাহানি হয়ছে ভেবে কেউ যেন এইভাবে ঝড়ে পরা তো দূরে থাক, কোন নেতিবাচক মনোভাব যেন জ্ঞানার্জনের উপর না আসে। নাহলে শিক্ষিত হয়েও এই লজ্জা আমদের সবার-ই।

সবশেষে এটাই বলব, ছেলেমেয়েরা নিজের মত করে শিখুক, শিক্ষিত হোক, কিছু করে দেখানোর ক্ষমতা অর্জন করুক এটাই যেন হয় আমাদের মূল লক্ষ্য। আর যারা যারা জে.এস.সি তে এ+ পেল তাদের প্রতি অনেক শুভ কামনা। আশা করি এটা একটা ভাল প্রেরনা যোগাবে। আর যারা এ+ পায় নি, তাদের বলব, “জীবন এখনো তোমাদের শুরুই হয় নাই। বিনা দ্বিধায় সামনে এগিয়ে যাও ভালো কিছু করার মন-মানসিকতা নিয়ে।”

অচল পথিক সম্পর্কে

একটু ভাবুক টাইপ। আমার সম্পর্কে আমি কি লিখব তাই নিয়ে আমি দিনের পর দিন ভাবতে পারব বলে মনে হয়। কিছু না ভেবে যদি বলি, তাহলে আমি অসাধারন কিছু করে দেখানোর ভাবনা নিয়ে পড়ে থাকা নিতান্ত সাধারন একজন মানুষ। আশেপাশের মানুষজনদের দেখে যেমন আমার মনে হয় সবার মাঝেই কিছু না কিছু অসাধারনত্ব লুকিয়ে আছে, আমার মধ্যে তেমন কিছু থাকলেও সেটা যেন আমার আশেপাশে থাকা সবাই আমার আগে বুঝতে পারে, সেই চেষ্টাই করি।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে রম্য, সচেতনতা-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

16 Responses to ছাত্রনং এ-প্লাসনং তপঃ

  1. রাইয়্যান বলেছেনঃ

    “বাবা, আমার ছেলে কে অমুক অমুক সাব্জেক্ট এর জন্য কোন স্যার এর কাছে দিব?”
    “বাবা, তুমি কয় ঘন্টা করে পড়তা?”
    “অমুক ভার্সিটিতে চান্স পাইতে হইলে কতটুকু পড়া লাগে?”
    “পরীক্ষার সময় কি কি খাইতা?”

    কথা সত্য। কিন্তু গার্ডিয়ানের অতি সতর্কতাকে বাস্তব বলেই মেনে নিতে হবে। দেশে ‘ভালো’ সুযোগ অপ্রতুল, সুতরাং প্রতিযোগিতা বেশি, আর সেখানে টিকে থাকতে অনেকটা বাধ্য হয়েই এসব করতে হচ্ছে।

    আমার নানা জিপিও’র চিফ রিসার্চ অফিসার ছিলেন, সরকারের অতি উঁচু পর্যায়ে সম্মানের সাথে চাকুরী করেছেন, জীবনভর মানুষের সম্মান পেয়েছেন। এসব অর্জন করতে উনার প্রাইভেট কোচিং লাগে নাই, ওমেকা উদ্ভাস লাগে নাই। সুতরাং উনার অভিভাবককেও এসব নিয়ে ভাবতে হয় নাই।

    সেই উনিই এই যুগের ছাত্র হলে কোচিং না মাড়িয়ে টিকে থাকতে পারলে সেটা ‘উদাহরণ’ হত না, হতো ‘ব্যতিক্রম।’ আর ব্যাতিক্রম নিশ্চয়ই উদাহরণ নয়।

    আমি নিজেও এই স্টিম রোলারের মধ্য দিয়েই গিয়েছি, এখন নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে কোচিং বাণিজ্য নিয়ে জ্ঞানী জ্ঞানী কথা বলা আমার জন্য অতি সহজ। তাতে বাস্তবতা দূর হয় না।

    “ভাই আসেন আমরা এ+ এর সংখ্যা না বাড়িয়ে পড়ালেখার মান বাড়ানোর দিকে মন দেই।”

    তীব্রভাবে সহমত! তবে ঠিক কোন কোন জায়গায় কীভাবে মান বাড়ানো যেতে পারে সে প্রসঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা আমন্ত্রণ করছি!

    দায়িত্ব আমাদেরই।

    • রাইয়্যান বলেছেনঃ

      :welcome:

    • অচল পথিক বলেছেনঃ

      অনেক ধন্যবাদ আপনার মতামত এর জন্য। প্রথমেই বলে রাখি আমি এখানে কোনকিছু ওইভাবে বিশ্লেষনের উদ্দেশ্য মাথায় রেখে কথাগুলো বলি নাই। হ্যাঁ, আমি এটাই বলেছি আজ আমাদের অবস্থা এমন জায়গাতে, যে এইসব সিরিয়াসনেস দেখে হাসা ছাড়া উপায় থাকে না। বাস্তবতা পরিবর্তন করা সত্যি কঠিন। কিন্তু বাস্তবতা এখন হাস্যকর। আর আপনি ঠিকই বলেছেন, এই হাস্যকর হতেই আজ আমরা বাধ্য। কারন সুযোগ এর অভাব, আর প্রতিযোগিতার প্রাচুর্য।

      তবে হ্যাঁ, ক্লাস ফাইভ-সিক্স এর বাচ্চাদের নিয়ে আহামরি রকমের সিরিয়াস্নেস ওইসব বাচ্চাদের উপর বাজে একটা মনোভাব তৈরী করে। যেমন, আমার ভাগ্নে স্কুল-এ ভর্তি হওয়ার আগে ছোটবেলা থেকে “TWINKLE TWINKLE LITTLE STAR” কবিতা খুব আনন্দের সাথে বলত। কিন্তু স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর ওয়ান কিংবা টু তে ওদের সিলেবাস ওই ছড়াটাই ছিল। আর ইংরেজি স্যার এর কাছে কোচিং করত। বাসায় টিচার ছিল। আর সাথে তার মায়ের দেখাশুনা তো ছিলই। তো সবজায়গায় ওই ছড়া তাকে লিখতে বলা হয়। লিখলউ, কিন্তু একবার ঠিক্মত লিখতে পারলেও কয়েকবার কয়েকজায়গায় লিখতে গিয়ে অর কিছু বানান ভুল হয়ে যাচ্ছে। আর যতবার বানান ভুল হচ্ছে তার মা শাস্তি হিসেবে তাকে নতুন লিখতে বলছে। এতে দেখা গেল ও অই ছড়াটার উপরই বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল, এরপর থেকে ও সেইরকম মজা করে ওই কবিতা আর বলে শুনাইতে চায় নাই। আর বল্লেও তার মা বলে বসে “বলার সময় তো আগে আগে থাক! লেখার সময় তো চইদ্দ জায়গায় ভুল কর!” :dhisya: হাস্যকর একটা সুক্ষ্ণ ব্যাপার। তবে ওর জন্য কিন্ত আসলেও বড়।

      আমি এটা বলতে চাই, এত সিরিয়াসনেস যেন আমরা এইসব বাচ্চাদের উপর না দেখাই যে তারা এরকম অঘটন ঘটায়। পি.এস.সি, জে.এস.সি এর মত পাবলিক এক্সাম এর মুল্য আমরা কিভাবে দিচ্ছি এটা চিন্তার বিষয়। আমি যা বলতে চাই, অবশ্যই আগের জামানার উদাহরন আজকের জামানায় ব্যাতিক্রম। তবে আমার বিশ্বাস ভিত গড়ার সময় যদি ছেলেমেয়েরা পড়ালেখাকে ভয় না পেয়ে নিজেদের জন্য পড়তে শিখে, তাহলে এই প্রতিযোগিতামুলক দেশে এই সিরিয়াসনেস গার্ডিয়ানদের দেখাতে হবে না বাড়তি করে। ছেলে-মেয়েরা নিজেরাই সিরিয়াস হবে। 8) তারা আত্মহত্যা না করে নিজেই জেদ করে ভাল করার চেষ্টা করবে, পাশে থাকবে তাদের গার্ডিয়ান! !
      ( N.B: শুধু এ+ নিয়া আর ভাল জায়গায় পৌঁছেও যে নিতান্ত অকর্মা হওয়া যায়, তার যোগ্য উদাহরন মনে হয় আমি নিজে) :crying:

      আর পরিশেষে অবশ্যই আরো একবার আপনার সাথে সহমত যে, “শিক্ষার মান বাড়ান” এ দায়িত্ব আমদেরই নিতে হবে। আর গঠনমুলক আলোচনা এবং ঘটনমুলক পদক্ষেপ নিতে আমাদের-ই এগিয়ে আসতে হবে। আশা করি সবাই এ ব্যাপারে সচেতন হব। 😀

      [ভাই, প্রথম পোস্ট, একটু উৎসাহ দিলেউ পারেন! :love: ! লাইক “ভেরি গুড রাইটিং” ]

  2. গাঙচিল বলেছেনঃ

    এবার ঢাবিতে পাশের হারটা সত্যিই হতাশাজনক……

    লেখায় সাবলীলতা আছে… পড়ে ভাল লাগল।

    “বাবা-মাদের কে সম্মান দিয়েই বলছি, রেজাল্ট দিয়ে সমাজে মর্যাদা দেখানোর জন্য না, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করতে উৎসাহিত করুন তাদের নিজের মত করে, নিজের জন্য। তাদের মধ্যে এই বোধ যেন না আসে যে পড়ালেখা তার জন্য একটা বোঝা, অন্যদেরকে খুশী করার একটা অবশ্য পালনীয় কর্তব্য! না, তাদের পড়ালেখা যেন হয় তাদের নিজের জন্যই।”– একমত। এ+ না পেয়ে পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর সংবাদপত্রে আমরা আর পড়তে চাই না।

    আর, আপনার কলমের ঘটনাটা জেনে বেশ মজা পেলাম। :happy:

    আমরা অনেক আধুনিক এবং এ+ প্রত্যাশী হওয়ার পরও কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখনও কুসংস্কার ছাড়তে পারি নি… 🙂

  3. শারমিন বলেছেনঃ

    :welcome:

    আসলেই পড়ালেখার মান বাড়ানোটা বেশি দরকার

  4. আরণ্যক বলেছেনঃ

    :welcome: সরবে স্বাগতম!! হেহে মানুষজনরে স্বাগত জানাইতে ভালো লাগতেসে। :yahooo:

    আপনার পোস্টে আমার অভিজ্ঞতাউদ্ভূত সমর্থন। :huzur:

  5. মোস্তাফিজুর রহমান শুভ বলেছেনঃ

    “পরীক্ষার সময় কি কি খাইতা?” এই লাইনটা পড়ে অনেক্ষন হাসলাম 🙂

    ভাল লেগেছে লেখাটা 🙂

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।