স্কুলের নতুন কারিকুলাম এবং অন্ধকার ভবিষ্যৎ

মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেও আমার ভাবনার জগতের ত্রিসীমানার মধ্যেই ছিল না যে এমন ‘সিরিয়াস’ কিছু নিয়ে লিখতে বসতে বাধ্য হব!!

 

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যে এতদিন ঠিক কোন জায়গায় *দাঁড়িয়ে ছিল* তা নতুন করে বলার কিছু নেই। আর তার উন্নতি(?) সাধনের লক্ষ্যে নীতিনির্ধারকগণ বিভিন্ন সময় কতরকম যুগান্তকারী(!) পদক্ষেপই না নিয়েছেন! জিপিএর ভিত্তিতে মেডিক্যাল ভর্তির সিদ্ধান্ত, পিএসসি-জেএসসি নামক পরীক্ষার আবিষ্কার, সব পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে গ্রেডিং পদ্ধতির ব্যবহার… আরও কত্ত কী!!

কিন্তু এবারের পদক্ষেপটি পিছনের সবকিছুকে ছাড়িয়ে সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে! *দাঁড়িয়ে থাকা* শিক্ষাব্যবস্থাকে রীতিমত *উড্ডয়ন(?)* করানোর লক্ষ্যে এবার স্কুলের কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তকগুলোতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে!! পরিবর্তনের এই খবর বহুত পুরাতন, সবাই বোধহয় জানেন।

 

কিন্তু তা করতে গিয়ে তাঁরা আসলে কী করে বসেছেন? কেমন সে পরিবর্তন?

 

আসুন, শুধু একটা উদাহরণ দেখি।

 

সেক্ষেত্রে নিচের পর্যবেক্ষণটি বেশ মনোযোগ সহকারে পড়ে বুঝতে হবে, স্পেশালি যারা বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন বা এখনও আছেন।

 

প্রথমে ২০১২ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত প্রচলিত ৭ম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের দিকে তাকাই। সেখানে সর্বমোট ২৫টি অধ্যায়ের মধ্যে রসায়নের সাথে সম্পর্কিত ছিল ৬টি, যা নিম্নরুপঃ

 

  1. চতুর্থ অধ্যায়ঃ অক্সিজেন
  2. পঞ্চম অধ্যায়ঃ হাইড্রোজেন
  3. ষষ্ঠ অধ্যায়ঃ কার্বন ডাইঅক্সাইড
  4. সপ্তম অধ্যায়ঃ দ্রবণ
  5. ঊনবিংশ অধ্যায়ঃ ল্যাবরেটরির সাধারণ প্রণালি
  6. বিংশ অধ্যায়ঃ পরিত্যক্ত কাঁচামাল থেকে প্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রস্তুতকরণ

 

একইভাবে ঐ ২০১২ শিক্ষাবর্ষেরই ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়েও একটু নজর বুলানো যাক। সেখানে ছিল সর্বমোট ২৬টি অধ্যায়, আর তার মধ্যে রসায়ন সম্পর্কিত অধ্যায় ছিল প্রথম ৬টি

 

  1. পদার্থের গঠন :  অণু, পরমাণু
  2. প্রতীক, সংকেত ও যোজনী
  3. রাসায়নিক বিক্রিয়া ও রাসায়নিক সমীকরণ
  4. অম্ল, ক্ষারক ও লবণ
  5. পানির খরতা
  6. ল্যাবরেটরির সাধারণ প্রণালি

 

বিস্তারিত ব্যাখ্যা বোধহয় দরকার নেই, একটু খেয়াল করার চেষ্টা করলে হয়ত সবারই মনে পড়ে যাবে, কোন ক্লাসে কোন অধ্যায় থেকে আমরা কোন টপিকের উপর কতটুকু ধারণা পেয়েছিলাম। তারপরও সামান্য উল্লেখ করি, ৮ম শ্রেণিতেই প্রথমবারের মত সবাই ‘প্রতীক, সংকেত ও যোজনী’ সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছিলাম আর তারপর বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া ও সমীকরণ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেয়েছিলাম।

 

এবার… আসুন দেখি নতুন শিক্ষাবর্ষ ২০১৩ এর ৮ম শ্রেণির নতুন বই কী বলে। সেখানে অধ্যায় সংখ্যা মোটে ১৪!! যার মধ্যে রসায়নের অধ্যায় সবেমাত্র ৩টি!

 

  1. ষষ্ঠ অধ্যায়ঃ পরমাণুর গঠন
  2. অষ্টম অধ্যায়ঃ রাসায়নিক বিক্রিয়া
  3. দশম অধ্যায়ঃ অম্ল, ক্ষারক ও লবণ

 

কী মনে হচ্ছে? মনে হচ্ছে বইটার অধ্যায় কমিয়ে বোধহয় অনেক সহজ করে দেয়া হয়েছে, তাই না? কিন্তু সমস্যা হল কাহিনী মোটেই তা নয়। এর মধ্যে একটা ‘বিরাআআআট’ গণ্ডগোল তৈরি করে ফেলা হয়েছে! আগের বছরের বইয়ের সাথে নতুন বছরের বইগুলো একটু তুলনা করলেই সবাই বুঝবেন। আমি এখানে কিছু অংশ তুলে ধরছি।

 

৮ম শ্রেণির নতুন বইয়ের যে অধ্যায়গুলোর কথা বললাম, তার মধ্যে পুরাতন বইয়ের ‘পদার্থের গঠন :  অণু, পরমাণু’ এর পরিবর্তে ‘পরমাণুর গঠন’ অধ্যায় দেয়া হয়েছে, যেখানে অণু-পরমাণু সংক্রান্ত ধারণা দেয়ার আগেই সরাসরি পারমাণবিক সংখ্যা, ভর সংখ্যা, আইসোটোপ এবং এমনকি ইলেকট্রন বিন্যাস সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে!! আরও অদ্ভুত ব্যাপার হল, নতুন এই বইতে প্রতীক, সংকেত, যোজনী, যৌগমূলক ইত্যাদি সম্পর্কে একবিন্দু আলোচনা না করেই সরাসরি ‘রাসায়নিক বিক্রিয়া’র আলোচনা শুরু করে দেয়া হয়েছে, যেখানে বিক্রিয়ার বিভিন্ন ধরণ তো আছেই, তার সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তাপশক্তির রূপান্তর নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে রীতিমত সাইট্রিক এসিড, এসিটিক এসিড, ক্যালসিয়াম এসিটেটের মত জৈব যৌগগুলোর সংকেতও আছে!!

 

পাঠক, লক্ষ্য করুন, নতুন এই বইটি এবছর যাদের পড়তে হবে, তারা কিন্তু গত বছর ৭ম শ্রেণিতে সেই পুরনো বই পড়ে এসেছে। তাহলে যেখানে তাদেরকে বিভিন্ন মৌলের প্রতীকই এখনও শেখানো হয় নি, সেখানে কিভাবে এসব শেখানো হবে? ‘ক’, ‘খ’ শেখানোর আগে কি ‘বাক্য’ শেখানো যায়? আর যদি বেসিক জ্ঞান দেয়ার আগেই মুখস্ত করিয়ে সব গেলানো হয়, আর গণহারে জেএসসি তে এ+ বিতরণ করা হয়, তাহলে তো ফলাফল হবে ভয়ঙ্কর! এরা তো কোনদিন রসায়নের রস আস্বাদন করতে পারবে না!

 

আর আমি তো একটা ক্লাসের একটা বইয়ের শুধু একটা ছোট্ট অংশ নিয়ে কথা বললাম, যার সমস্যা আমি ধরতে পেরেছি। কিন্তু সবগুলো ক্লাসের সবগুলো বিষয়ের বই যে সেই একইভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে!! বাংলা, গণিত, সমাজ থেকে শুরু করে সব!! এই কোটি কোটি শিক্ষার্থী যে সামনে কী ধরণের ভয়ঙ্কর অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে তা কি আপনারা ধরতে পেরেছেন? *দাঁড়িয়ে থাকা* ব্যবস্থাটার যে এবার পুরো *মেরুদণ্ড ভেঙে* দেয়া হয়েছে তা কি বুঝতে পারছেন? আমি আসলে এখানে ঠিক গুছিয়ে সব বলতে পারছি না, বইগুলো একটু দেখলেই বুঝতে পারবেন। আমি যতটুকু বুঝেছি, তাতে কিন্তু চোখে রীতিমত অন্ধকার দেখছি।

 

কোটি কোটি শিক্ষার্থী কি তাহলে এভাবেই এগিয়ে যাবে? এভাবেই সব চলতে থাকবে? এও কি সম্ভব?

 

এর সমাধান কী? আমি একজন নগণ্য মানুষ, মাথায় কিছুই ঢুকছে না। শুধু এতটুকু বুঝতে পারছি যে এবার আর ব্লগে ঝড় তোলা, সমালোচনা আর তর্কবিতর্ক করার সময় নেই। যা করার তা করে ফেলতে হবে। কিন্তু সেটা কী? প্লিজ সবাই একটু বলুন কী করা যায়। এই ছেলেমেয়েগুলোকে কিভাবে অন্ধকার ভবিষ্যতের হাত থেকে বাঁচান যায়। প্লিজ, প্লিইইজ। 

 

 

শাহরিয়ার সম্পর্কে

সারাদিন নানান ধরণের চিন্তাভাবনা মাথায় কিলবিল করতে থাকে। তার কিছু অংশ ডায়েরির পাতার পরিবর্তে এখানে স্থান দেয়ার প্রয়াসে...
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চিন্তাভাবনা, বিবিধ, সচেতনতা-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

16 Responses to স্কুলের নতুন কারিকুলাম এবং অন্ধকার ভবিষ্যৎ

  1. নিশম বলেছেনঃ

    ক্লাস সেভেনের বইটা ঠিক আছে, কিন্তু ক্লাস এইটের বইটা হওয়া উচিত ছিলো এবারের ক্লাস সেভেনের ছেলে-মেয়েরা যখ্ন আগামী বছর ক্লাস এইটে উঠবে তাদের জন্য। ঝামেলা তো একটা হবেই, বিশাল ঝামেলা !

    • শাহরিয়ার বলেছেনঃ

      এটাই আসল কথা, পরিবর্তনটা অবশ্যই ধাপে ধাপে হওয়া উচিৎ ছিল।

      “ঝামেলা তো একটা হবেই, বিশাল ঝামেলা !” – এই বোধটা থেকেই এই লেখাটা লিখলাম। কিন্তু ফলাফল কী?

  2. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    চমৎকার লেখার জন্য ধন্যবাদ।

    কী করা যায় – এই প্রশ্নের জন্য বেশি ধন্যবাদ।

    মেডিকেল এ আন্দোলন এর সময়েই দেখা গেছে নীতি নির্ধারকরা থরোলি ভাবেন না।
    এক পাশের, এক পয়েন্টের কথা ভাবেন।

    এবারে আসি কী করা যেতে পারে? বাইরে বইতে কোন ভুল থাকলে errata নামে আলাদাভাবে ভুলগুলো কোন এক সাইটে/ কিংবা আলাদা ভাবে ধরিয়ে দেয়া হয়।
    আমরা যেটা করতে পারি অন্তত অনলাইনে সতর্ক করতে পারি। ৭ম ৮ম এর অনেক ছেলেপেলেই এখন ফেইসবুক ইউজ করে… আর যারা টিউশনি করে তাদেরকে অনুরোধ করতে পারি। কোচিং সেন্টার গুলোকে জানাতে পারি।

    চলুন তবে কাজ শুরু করে দেই?

    (লেখার ফরম্যাটিং এ একটু জোর দিতে অনুরোধ করি)

    • শাহরিয়ার বলেছেনঃ

      ভাইয়া, আপনি যে উপায়ের কথা বলেছেন সেটা অবশ্যই খুব সুন্দর একটা সমাধান হতে পারে। কিন্তু… খেয়াল করেছেন কি, পুরো দেশের সবার কথা যদি বিবেচনা করি তাহলে “৭ম ৮ম এর অনেক ছেলেপেলেই এখন ফেইসবুক ইউজ করে” কথাটা যেমন সত্য, ঠিক তার বিপরীতে অসংখ্য ছেলেপেলে আছে যারা এখনও ভার্চুয়াল জগতের সাথে পরিচিত নয়!

      তবে হ্যাঁ… আমরা আমাদের হাতে যতটুকু আছে তা দিয়ে শুরুটা করতে পারি।

      (আর… এমনিতেই খুবই কাঁচা লেখক, আদৌ এখনও ‘লেখক’ হয়ে উঠতে পারি নি, তার মধ্যে বইগুলো দেখার পর খুব তাড়াহুড়ো করে কম সময়ের মধ্যে লিখেছি। ভবিষ্যতে ইন-শা-আল্লাহ সুন্দর করে লিখার চেষ্টা করব।)

  3. অনাবিল বলেছেনঃ

    সব ক্লাসের বই নিয়েই এবার অনেক কথা শুনতে পাচ্ছি এবার……
    কী করা যেতে পারে??
    যেহেতু এ বছর বই পৌঁছে গেছে শিক্ষার্থীদের কাছে, সুতরাং শিক্ষকরা যদি সচেতন হয়ে ছাত্রদের প্রয়োজনীয় অংশ গুলো সেখান , তাহলে কিছুটা উপকার আশাকরি হবে।

    অবশ্য এটা কোন যথার্থ সমাধান নয়…… 🙁

    • শাহরিয়ার বলেছেনঃ

      আমার মনে হয়েছে, ‘সর্বনাশ’ হবার জন্য এই একটি বছরই যথেষ্ট!! পরের বছর থেকে হয়ত অনেক কিছুই ঠিক হবে, কিন্তু এই বছরের বেসিক কনসেপ্টগুলোতে অনেকেই ভয়ানক দুর্বল থেকে যাবে। 🙁

  4. সাঈদ আনোয়ার অনুজ বলেছেনঃ

    কথাগুলো খুব ঠিক। কিন্তু এও ঠিক, এই বইগুলো আগের বইগুলোর চেয়ে অনেক বেশি স্ট্যান্ডার্ড।
    যে সমস্যাটার সৃষ্টি হয়েছে, তার কারণ আসলে একসাথে সবগুলো বই চেঞ্জ করে দেয়া। দরকার ছিল, ধাপে ধাপে বইগুলোকে পরিবর্তন করে আনা। কিন্তু তা করা হয় নি। আগের বইগুলো নিয়ে আমি মোটামুটি একটা রিভিউ করেছিলাম – () কিন্তু, এবারেও বইগুলোকে সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত করা যায় নি, ভুল-ভ্রান্তি/অসংলগ্নতা রয়েই গেছে কিছু।
    শুধু ব্লগে বা অনলাইনে নয়, আমাদের পত্র-পত্রিকাতেও এই জিনিষগুলো তুলে ধরা দরকার।
    সাপ্লিমেন্ট আকারে কিছু জিনিষ স্টিক হিসেবে তুলে দেয়া যেতে পারে। কিন্তু অনেক বেশি বড় ব্যাপার আর কঠিন।
    আমার মাথাতেও কিছু আসছে না। 🙁 🙁
    শুধু বুঝতে পারছি, কিছু একটা করতেই হবে…

    • শাহরিয়ার বলেছেনঃ

      আপনার প্রতিটি কথার সাথে একমত।

      আমি এই লেখাটি গত ৩ তারিখে ফেসবুক নোট আকারে পোস্ট দিয়েছিলাম। পরে “এই বইগুলো আগের বইগুলোর চেয়ে অনেক বেশি স্ট্যান্ডার্ড।” – এই কথার ভিত্তিতে অনেকেই আমার বিরোধিতা করছিল। এই কথাটি আমিও মানতে বাধ্য হয়েছি, কিন্তু মূল সমস্যা যেটা সেটা আপনি ধরতে পেরেছেন। “যে সমস্যাটার সৃষ্টি হয়েছে, তার কারণ আসলে একসাথে সবগুলো বই চেঞ্জ করে দেয়া। দরকার ছিল, ধাপে ধাপে বইগুলোকে পরিবর্তন করে আনা। কিন্তু তা করা হয় নি। ”

      আর আমাদের একটা বড় ধরণের সমস্যা কি জানেন? এইযে ‘স্টুপিড’ মিডিয়াগুলো কত ‘আজাইরা’ জিনিস নিয়ে পড়ে থাকে!! অথচ ১০ দিন হল বইগুলো ছেলেমেয়েরা হাতে পাওয়া শুরু করেছে; কই কোন প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া তো বইগুলো ইভালুয়েশন করে কোন রিপোর্ট করার প্রয়োজন মনে করল না!! 🙁 🙁

      • সাঈদ আনোয়ার অনুজ বলেছেনঃ

        ভাই, পাব্লিক এই ‘আজাইরা’ জিনিষই ভক্ষণ করে, ভাল জিনিষ পেটে সইলেও পিঠে সয় না। 🙁
        আর আগের কমেন্টে একটা লিঙ্ক ছিল ব্র্যাকেটে, কেন জানি আসে নি। কেন জানি আমার লিঙ্ক আসছে না। 🙁

  5. প্রতীক বলেছেনঃ

    পলিসিমেকারদের ধইরা দাবরানি দেয়া লাগবে।।

  6. গাঙচিল বলেছেনঃ

    ২০১২ সালের এবং ২০১৩ সালের পরিবর্তীত ক্লাস সেভেন আর এইটের বিজ্ঞান বইগুলো দেখলাম। বলা যায়, ৯০% চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে।

    সবগুলো অধ্যায় বিস্তারিত দেখা সম্ভব হয় নি। কিন্তু কিছু কিছু অধ্যায় খেয়াল করলাম। যেমন বর্তমান সপ্তম শ্রেণিতে ‘কোষীয় গঠন’ নামে একটা চ্যাপ্টার ইনক্লুড করা হয়েছে। যেখানে কোষের বিভিন্ন অঙ্গানুর (সাইটোপ্লাজম, মাইটোকন্ড্রিয়া, নিউক্লিয়াস, ক্রোমোসোম ইত্যাদির) বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ২০১২ সাল পর্যন্ত এইসব আলোচনা ছিল না। অথচ এবারের অষ্টম শ্রেণিতে ‘কোষ বিভাজন’ চ্যাপ্টারে মাইটোসিস(বিস্তারিত), মিয়োসিস, এমনকি মেন্ডেল, ডি.এন.এ, আর.এন.এ এসব নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।(আমরা DNA, RNA, মেন্ডেল এসব ইন্টারে উঠে পড়েছিলাম প্রথম)
    যারা আগে কখনও নিউক্লিয়াস বা ক্রোমোসোম চিনেই আসে নি, তাদের জন্য হঠাত করে “মিয়োসিসে ক্রোমোসোম একবার বিভাজিত হয়” বা DNA, RNA নিয়ে আলোচনা একটু কঠিন মনে হতেই পারে।

    আর, অষ্টম শ্রেণির ‘রাসায়নিক বিক্রিয়া’ চ্যাপ্টারের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার মনে হয়েছে। প্রতীক, সংকেত সম্পর্কে খানিকটা ধারণা না থাকলে ‘বিক্রিয়ার প্রকারভেদ’, ‘তাপশক্তির রূপান্তর’- এসব পড়তে একটু অসুবিধাই হবে মনে হয়। কারণ এগুলো আমরা অষ্টম শ্রেণিতে বিস্তারিত পড়ে এসেছিলাম যা পরবর্তিতে খুবই হেল্প করেছিল।

    এটা ঠিক যে আগের বইয়ের চেয়ে বর্তমান বইগুলো আমার অনেক বেশি তথ্যবহুল এবং কার্যকরী মনে হয়েছে। আগের বছরের সপ্তম শ্রেণির বইয়ে অনেক অপ্রয়োজনীয় চ্যাপ্টার ছিল। (অন্তত, আমার তাই মনে হয়েছে)। সেই তুলনায় এবারের বইগুলো বেশ আপডেইটেড। বাহুল্য বর্জিত, তথ্য সমৃদ্ধ।

    অবশ্য, এত পরিবর্তন দেখলে একটা কথাই মনে হয়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাটা খুবই আনস্টেবল। আমরা এত কষ্ট করে যেসব পড়ে আসলাম তার অনেক কিছুই এখন সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত না। তারমানে কি সেসব আসলে মোটেই দরকারি ছিল না?
    ইচ্ছেমত সব এক্সপেরিমেন্ট চালানো হচ্ছে। আর এসব এক্সপেরিমেন্টের গিনিপিগ হয় স্টুডেন্টরাই। 🙁

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।