ঃ এই যে, একটু শোনো-
ঃ আমাকে বলছো কিছু?
ঃ হ্যাঁ, তোমাকেই। তুমি ছাড়া আর কে আছে?
ঃ বেশ তো, বলে ফেল। আমার আবার বড্ডো তাড়া!
ঃ তোমারই নাম বুঝি সুরঞ্জনা- জীবনবাবু ডেকেছিলেন যাকে?
ঃ জীবনবাবু! সে আবার কে? চিনি না তো তাকে!
সে যেই হোক, আমিই সুরঞ্জনা;
সুরঞ্জনা সান্যাল বলে লোকে আমাকেই চিনে, ডাকে।
ঃ আর তোমার সাথের সেই যুবক?
ঃ ও? ও আমার বন্ধু।
ঃ আর কিছু নয়? বন্ধুর চেয়ে বেশী কিছু?
ঃ বা রে! সে জেনে তোমার কি?
ঃ সুরঞ্জনা, অইখানে যেয়ো নাকো তুমি,
বোলো নাকো কথা অই যুবকের সাথে;
ঃ বারণ করছো? জানো ও কে?
ঃ না, না, এতো আমার কথা নয়!
জীবনবাবুই বলেছিলেন যে!
ঃ আবার জীবনবাবু! সে লোকটিই বা কে!
ঃ তুমি চিনবে না তাঁকে!
সে যে ভীষণ আড়ালের মানুষ, আড়ালে থাকে;
সে শুধু ভালোবাসতে জানে নিভৃতে-
কবিতায় শব্দের জাল বুনে।
ঃ ও, তাই বুঝি?
তাই হয়তো চিনি না তাকে।
ঃ তবে শোনো-
ফিরে এসো সুরঞ্জনা ;
নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে;
ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে;
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার;
ঃ হাহ! এও লিখেছেন নাকি জীবনবাবু আমাকেই নিয়ে?
ঃ হ্যাঁ, জীবনবাবুর কবিতার খাতা হতে।
ঃ আজ চলি। আমার যে বড্ডো দেরী হয়ে যাচ্ছে।
ঃ চলে যাবে? যাও তবে-
আমারও যে যাবার সময় হলো বলে।
ঃ কোথায় যাবে তুমি? কোথা হতেই বা এলে?
এদিকটাতে দেখিনি তো তোমায় আগে!
ঃ ওহ, এখনো বলিনি বুঝি?
আমি এসেছি একত্রিংশ শতকের নিরাবেগ আগামী হতে।
যেখানে আবেগ নেই, যেখানে প্রেম নেই;
যেখানে জীবন ক্যালকুলেশনে ঠাসা-
যেখানে কবি আর কবিতার দেখা মেলে
শুধু সিলিকন ডিস্ক আর
পরিত্যক্ত কলোসিয়ামের ধূলোপড়া আর্কাইভে।
ঃ যাহ্, এ কখনো হয় নাকি?
আগামীর মানুষ বর্তমানে আসবে কেমন করে?
ঃ ও দিকে তাকাও, সুরঞ্জনা।
ওই যে ঝোঁপের আড়ালে-
ওই আমার একত্রিংশ শতকের সময় চক্রযান।
ঃ সময় চক্রযান! তুমি তবে সত্যিই এলে-
তুমি এলে দূর ভবিষ্যত হতে!
ঃ হ্যাঁ, সুরঞ্জনা।
আমি এসেছি সময়ের বিপরীতে ছুটে-
কিছু প্রেম, কিছু আবেগের দেখা পেতে
এই পুরনো পৃথিবীর বুকে।
ঃ তুমি আমায় নেবে ভবিষ্যতে-
তোমার একত্রিংশ শতকে?
ঃ না, ও জগত তোমার জন্যে নয়।
ওই যান্ত্রিক পৃথিবীতে-
কোনো কবি নেই- কবিতা লিখবে বলে;
কোনো প্রেমিক নেই- ভালোবাসা দিতে।
ঃ চলি তবে। বিদায়, ভবিষ্যতের মানুষ।
আর হয়তো দেখা হবে না আমাদের-
ঃ হয়তো, হয়তো না।
তবু তোমায় খুঁজে নেবো নিশ্চিত-
জীবনবাবুর কবিতায়, প্রতিটি শব্দবন্ধে।
তুমি থেকো সুরঞ্জনা, কবির কাব্যমানসী হয়ে।
ঃ কিন্তু…কবি কে যে চিনি না আজো!
কোথায় থাকে সে, কোন সুদূরে?
ঃ সে আসবে সুরঞ্জনা, সে আসবে-
সে আসবে তোমায় শুদ্ধপ্রেমের ছন্দসুধা দিতে।
দূর থেকে দূরে – আরও দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেয়ো নাকো আর।
কী কথা তাহার সাথে? – তার সাথে!
আকাশের আড়ালে আকাশে
মৃত্তিকার মতো তুমি আজ;
তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে।
ঃ আমি অপেক্ষায় থাকলাম।
ঃ আমিও। বিদায় সুরঞ্জনা…
পূর্বের লেখাঃ নিঃসঙ্গ বাইশগজ(http://shorob.com/2012/06/%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%83%E0%A6%B8%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B6%E0%A6%97%E0%A6%9C/)
– সুম