অদৃশ্য যুদ্ধ(The Invisible War) এবং ঘরের শত্রু

কির্বি ডিক (Kirby Dick) এর যে ডকুমেন্ট্রিটা আমি প্রথম দেখেছিলাম তার বিষয় ছিল একটু অন্যরকম । মুভি রেটিং নিয়ে । ডকুমেন্ট্রির নামছিল “This Film Is Not Rated Yet” । এই প্রামাণ্যচিত্রের বিষয় এবং আলোচনা একটু অন্যরকম এবং ভাবনা জাগানোর মত । কিন্তু যখন এই প্রামাণ্যচিত্রটি দর্শকরা দেখেছে তখন কির্বি ডিক এর একটি ক্ষমতা তারা উপলব্ধি করেছে তা হল, খুব সহজ ভাবে সত্য উপস্থাপন করা । পরবর্তী প্রায় অনেকগুলো ডকুমেন্ট্রিতে তিনি সমাজের কিছু পুরানো সত্যকেও প্রশ্ন বিদ্ধ করেছেন । বর্তমান সমাজ পরিবর্তনের এই ধারায় তার অনায়াসে সত্য প্রকাশ করা অনেকেই পছন্দ করেননি ।

তার নতুন ডকুমেন্ট্রিটি হল ”The Invisible War(2012)” , এবং তিনি আবারও পৃথিবীকে স্তম্ভিত করেছেন আর একটি নিগড় সত্য দিয়ে । এই বারের বিষয় বস্তু হল ইউ এস সেনাবাহিনী,  এবং ভিলেন হচ্ছে সেই কথিত যৌন শিকারিরা যাদের কোন শাস্তি হয়না ।এই  নাজুক বিষয়ে কারও নাম প্রকাশ  বা অনুমান করা তার জন্য একটি আইনি ঝামেলার বিষয় । তাই বলে তিনি কিন্তু হাল ছাড়েননি , তিনি তার করণীয় কাজটা করেছেন এমনকিছু মহিলার সাক্ষাৎকার নিয়ে যারা সেই স্তম্ভিত অন্ধকার থেকে উঠে  এসেছেন, যারা প্রতিনিধিত্ব করছেন  শতকরা বিশ শতাংশ মহিলা(সংখ্যাটা কম মনে হতে পারে , এখানে আমরা প্রায় দেড় মিলিয়নের কথা বলছি) সৈনিকের ,যারা তাদের দায়িত্ব পালনকালে তাদের সহকর্মী(পুরুষ) দ্বারা যৌন আক্রমণের শিকার হয়েছেন । অ্যামেরিকার সরকারের নিজের  পরিসংখ্যান ব্যাবহার করে The Invisible War দেখিয়েছে যে এটা আর কোন “বিচ্ছিন্ন ঘটনা” নয়, এটা একটা ”প্রকৃত” ব্যাধি ।

 

পুরো ডকুমেন্ট্রি জুড়েই দেখানো হয়েছে  যে ,মহিলা সৈনিকরা তাদের জীবনের সেই অন্ধকার কাহিনী গুলো বর্ণনা করছেন ,যা হয়তবা অনেকের চোখকে না ভেজালেও তাদের রক্ত গরম করে দিবে । তাদের কথা বলার  ভঙ্গিতে একটা মুহূর্তে গিয়ে  তাদের শব্দ ঝাপসা হয়ে যায় …

”He was my superior …. Drinking buddies … drugged and raped … gonorrhea … pregnant … dislocated my jaw … locked in a hotel room … If I said anything they were going to kill me … “You’re meat on a slab”… He said, “I own all of this”…”

যে মহিলা সৈনিকের  চোয়ালের হাড় স্থানচ্যুত হয়েছে সে একের পর ফোন কল করেছেন বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে, বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন শাখাকে, বিচার পাওয়ার আশায় সে মহিলা অনেক চেষ্টা করেছেন । প্রত্যুত্তরে সেই “কর্তৃপক্ষ” মহিলার আহত(মানসিক এবং শারীরিক) হওয়ার ঘটনাকে এই বলে সমাধান দেয় যা হল “ Not our problem” ।

“তারা ধর্ষণের আলামত হারিয়ে ফেলেছে …..তারা ইন্ভেস্টিগেট করল আমি নাকি মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছি……তারা আমার বিরুদ্ধে এডাল্টারির অভিযোগ আনল অথচ আমি বিবাহিত না, সে(ধর্ষক) বিবাহিত, …….সেই লোকটা পরে প্রমোশন পায়……..”

কির্বি ডিক এর ভাষায়, প্রায় ১৫ শতাংশ পুরুষ সৈনিকের বিরুদ্ধে নানা রকম যৌন হয়রানির অভিযোগ আছে । তাদের যে মানসিক সমস্যা আছে এটা দৃশ্যমান , তারা এমন একটি সংস্কৃতির অনুসরণ করছে যাকে তিনি বলছেন pervasive S&M[1] ritual. তাদের ব্যাবহার দেখলে মনে হবে  তারা হল আলফা পুরুষ আর, এলকোহল…….এটা তো আছেই ।

ডকুমেন্ট্রির শেষের দিকে দেখানো হয় যে, কিছু ভিকটিম কংগ্রেসে যায় এবং কিছু সদস্য(রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেট দুটোই)  তাদেরকে সমবেদনা  প্রকাশ করে ।তারা তাদের এই মামলাটা বেসামরিক আদালতেও উপস্থাপনা করে । বেসামরিক আদালত তাদের বিরুদ্ধে রায় দেয় এই বলে যে “ ধর্ষণ হচ্ছে সেনাবাহিনীর পেশাগত ঝুঁকি” । পেশাগত ঝুঁকির দায়ভার শুধু ভিকটিমকে নিতে হবে । এই ভিকটিমগুলো প্রথমে তাদের সহকর্মী দ্বারা এবং পরবর্তীতে তাদের রাষ্ট্রের দ্বারা হেনস্থার শিকার হয়েছেন শুধুমাত্র বিচার চাইতে গিয়ে ।

সাইমন দি বোভোয়ার (Simone de Beauvoir) একটি কথা  “ মানব সভ্যতার আদি থেকে শুধু “পুরুষরাই” যুদ্ধ করেছে, ধর্মের জন্য হোক আর রাজ্যের জন্য হোক । কিন্তু যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারীরা । কেউ বিধবা হয়ে , কেউ সন্তান হারা  মা হয়ে , কেউ ভাই হারা  বোন হয়ে ।”কিন্তু সেই যুদ্ধ ক্ষেত্রে যখন নারীই স্বয়ং অস্ত্র হাতে উপস্থিত থাকে ,সহযোদ্ধা হওয়ার জন্য,  তখন  প্রতিপক্ষের দরকার হয়না নারীর ক্ষতি করার জন্য ।

 

1. S&M – Sadomasochism(Sadism and masochism combined in one person)

পেট্রিক এডলস্টেইনের মুভি ক্রিটিক অবলম্বনে লেখা ।

 

 

 

সুখী মানুষ সম্পর্কে

সুনীল আকাশ শ্যামল কানন, বিষাদ জোছনা কুসুম কোমল , সকলি আমার মত তারা, কেবলি হাসে কেবলি গায়, হাসিয়া খেলিয়া মরিতে চায়, না জানে বেদন না জানে রোদন, না জানে সাধের যাতনা যতন, .................................রবি ভাই
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চিন্তাভাবনা-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

3 Responses to অদৃশ্য যুদ্ধ(The Invisible War) এবং ঘরের শত্রু

  1. ওয়াহিদ সুজন বলেছেনঃ

    ……’কিন্তু সেই যুদ্ধ ক্ষেত্রে যখন নারীই স্বয়ং অস্ত্র হাতে উপস্থিত থাকে ,সহযোদ্ধা হওয়ার জন্য, তখন প্রতিপক্ষের দরকার হয়না নারীর ক্ষতি করার জন্য’ ।

    খুবই সত্য কথা।

    যারা অন্য দেশের নারীদের উদ্ধারকে দেশ দখলের অন্যতম প্রনোদনারূপে দেথায়- তাদের ভণ্ডামীর এর চেয়ে ভালো উদাহরণ কি হতে পারে?

  2. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    কী বীভৎস! সামান্য একটু শুনেছিলাম। কিছু লিঙ্কও জুড়ে দিতে পারেন?
    বুঝেনই তো ফেইসবুকের যুগের মানুষ- সময় নেই পুরো মুভি ডাউনলোড করে দেখার

  3. পাহাড়ি কন্যা বলেছেনঃ

    ‘The General’s Daughter’ (1999) মুভিতেও তেমনটিই দেখিয়েছিলেন পরিচালক।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।