কালের দেয়ালে… (২য় খণ্ড)

প্রথম প্রকাশের পর… (http://shorob.com/?p=11972)

হংকং বিরাট শহর। হারিয়ে না যাওয়াটা প্রায় অসম্ভব। তাই হংকং-এ আমি আরও বাস্ত হয়ে পড়ি। লেখাপড়ার পাশাপাশি হংকং এর মত একটা ভিন্ন শহরে, নতুন পরিবেশে নিজেকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় এতটাই ভুলো হয়ে পরি যে জীবনের অনেক সরলতা আমাকে একে একে ছেড়ে যেতে থাকে। মাকে মিরপুরে মামাদের সাথে ফেলে এসে আমি এই আজব শহরে হাজার মানুষ এর মাঝে একা। মা-এর কথা অনেক মনে পড়তো, মাঝে মাঝে কথাও হত টেলিফোনে কিন্তু বাড়ি ফিরবার ইচ্ছা থেকেই যেত। হংকং-এর ছুটি বাংলাদেশ এর ছুটির সময় এর সাথে প্রায় কোন মিলই খায় না। বাংলাদেশে যখন ঈদের ছুটি হংকং এ হয়তো তখন আমার পরীক্ষা চলছে আর যখন আমার ছুটি তখন আগামী সেমিস্টারের টিউশন ফি-এর একাংশ যোগাড়ে আমি ব্যস্ত, বন্যার আগাম বাণী পাওয়া খাদ্য অন্বেষী পিঁপড়ের মত। কাজেই এই চিন্তা করা নিছক আহ্লাদ মাত্র।

তাছাড়া টাকার বিষয়টা তো আর ফেলে দেয়া যায় না। হংকং থেকে ঢাকা যাতায়াত আমার চার মাসের খাই খরচের বেশি। একবার চিন্তা করেছিলাম দেশে ফিরবো ছুটি কাটাতে মা এর সাথে। যেই কথা সেই কাজ করবো স্থির করে টাকা বাঁচাতে শুরু করলাম। অজান্তেই হোস্টেলের ঘরের চুলায় জ্বলে উঠল আগুন আর হাতে তুলে নিলাম তেল-নুন। বাজার থেকে কেনা চাল ও ডাল রোজই চিরাচরিত হলদে বর্ণহীন খিচুড়িতে পরিণত হতে লাগলো। একবেলার রান্নায় আমার কোনদিন তিনবেলা আবার কোন কোন সময় এক দিনের বেশি চলে যেত। যদিও এর পেছনে অনেক সময় না খেয়ে থাকাটাই দায়ী যার মাশুল আমাকে গুণতে হয় কিছু দিন পরই। গ্যাসের সমস্যা প্রায় আলসার ছুই ছুই আর আমি হাসপাতালের বিছানায় হারালাম আমার জমানো প্রায় সব টাকাই। নিজেকে অসহায়ও বলতে পারলাম না।

হংকং এর মানুষদের সাথে অনেকটাই খাপ খাইয়ে নিতে হল ইতিমধ্যে। কিছু বন্ধুও জুটে গেছে যাদের সাথে এই আলো-আঁধারের শহরের বিকেল গুলো ভাঙ্গা ভাঙ্গা আড্ডায় ভালই কেটে যাচ্ছিল। ভাঙ্গা কারণ চীনেদের ইংরেজি বাঙ্গালীদের চেয়ে কোন দিক দিয়েই উন্নত না।  ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট বেনিফিট প্রোগ্রাম এর ফলে প্রতি বছরই ছাত্রদের জন্য ভালো কিছু সুযোগ গড়িয়ে আসে। এ বছর ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরিতে আমি আর আমার এক চীনা বন্ধু একটা কাজ পেয়ে গেলাম। এ সময়ে আমরা ইউনিভার্সিটির তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। মাকে গত কালই টেলিফোন করেছিলাম এ কথা জানাতে। মা-এর গলায় কেমন যেন এক অস্থিরতা অনুভব করলাম। কি হয়েছে জানতে চাইলে মা কেঁদে দিলেন কিন্তু বললেন “তেমন কিছুই না।” অশ্রুর কিছু ফোঁটা হয়তো আমার চোখ দিয়েও নেমে আসতো কিন্তু পারলাম না। মা অনেক একা হয়ে গেছেন বুঝেও কিছুটা না বুঝার ভান করতে হল, না হলে মাকে কাঁদার আরও একটা কারণ দিয়ে বসবো আমি। মা নিজেকে বাস্ততার মেলার এমন কোন ভিড়ে হারিয়ে ফেলতে পারেননি যেটা আমার পক্ষে করাটা বোধ হয় অনেক সহজ ছিল।

এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে গল্প, সাহিত্য-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , , , , , , , , , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

8 Responses to কালের দেয়ালে… (২য় খণ্ড)

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    আমার পড়ার কারণে কিনা জানি না, বেশ দ্রুত দৃশ্যপট বদলাচ্ছে। ঘটনা আরও সময় নিয়ে ঘটতে পারে মনে হয়! (ঠিক বুঝাইতে পারলাম কিনা জানি না!)

    শুরুতে, প্রথম প্রকাশের পর দিতে পারেন। লিঙ্ক সহ। এতে মানুষ বুঝবে, খুঁজে পাবে।
    শেষে চলবে লিখে দিলে ভালো

    • Chronose বলেছেনঃ

      দ্রুত দৃশ্যপট বদলানর কথা স্বীকার করছি। গল্পটি ছোট করে লিখার ইচ্ছা ছিল বলেই দৃশ্যপটে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে।
      লিঙ্ক এর বিষয়টা উল্লেখ করার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া… 🙂

  2. গাঙচিল বলেছেনঃ

    মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল পড়ে। একা মাকে দেশে রেখে প্রবাসে পড়াশুনা করতে যাওয়ার মত সিদ্ধান্ত যে মানুষকে কোন মুহূর্তে নিতে হয় আমার জানা নেই।

    🙁

  3. শারমিন বলেছেনঃ

    মনটা খারাপ হয়ে গেল
    🙁 🙁

  4. মাধবীলতা বলেছেনঃ

    ভাইয়া আগের পর্বের কমেন্টেই বলে দিয়েছি সব। প্রার্থনা থাকল।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।