কালের দেয়ালে… (৩য় খণ্ড)

২য় প্রকাশের পর – (http://shorob.com/?p=12053)

ইউনিভার্সিটির শেষ কয়েক সপ্তাহ গুনতে গুনতেই এসে গেল। ইন্টার্নশীপ শেষ,আর মাত্র কিছু দিনেরই অপেক্ষা। অবশেষে মা-এর সাথে দেখা হবে। আবার সে দিন গুলো ফিরে আসবে যখন মায়ের কোলে মাথা রেখে আমি ঘুমাতে পারতাম, আবারও পারবো হয়তো মাকে নিয়ে আজিমপুরে যেতে, আবার ঠিক চার বছর পর বাবার সাথে দেখা হবে। বাবা অনেক রাগ করবেন আমি জানি, মাকে এভাবে একা ফেলে চলে যাবার অনুমতি বাবা আমাকে কখনই দেন নি। পুরানো দিন এবং পুরানো স্থানগুলো আবার আমার হবে চিন্তা করে ভালই লাগছিল। কিন্তু প্রতিটি খুশির মুহূর্ত আমাকে কিছু হারানোর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল সেদিন। আমার ইউনিভার্সিটি ও ডরমের বন্ধুদের আমি অনেক মনে করবো। আমার মাথায় ওদের থেকে আলাদা হবার কথা কখনোই আসেনি আজকের আগে। এখন আমরা সবাই ব্যস্ত এই হিসাব কষতে যে কবে আবার দেখা হবে আর কবেই বা আবার এক চোট আড্ডা মারা যাবে।

ইউনিভার্সিটির শেষের দিনগুলো চলে আসলো আর এরই সাথে এসে গেলো আমার বাংলাদেশে ফিরবার দিন। মন সামান্য ভারি ভারি লাগলেও দেশে ফিরবার চিন্তায় আবার খুশি হয়ে উঠছিলাম। আমার সব বন্ধুরাও এয়ারপোর্টে উপস্থিত। এদের অনেকেই আজ ফেরত যাবে তাদের নিজ নিজ দেশে। মায়ের টানে সবাই চলেছে মায়ের দেশে, এ কথা কেউ না বললেও আমরা সবাই জানি। ব্যাগ গুলো চেকিংএ জমা দিয়ে বোর্ডিং এরিনায় গিয়ে বসলাম। এর আগেই সবার কাছ থেকে বিদায় নেয়া হয়ে গেছে। কিছু সময় অপেক্ষা করার পর বোর্ডিং পাসটা সংগ্রহ করতে গেলাম। কার্ডটা হাতে আসতেই মনে হল এই একটুকরো কাগজের চেয়ে ভারি বোধহয় আর কিছু হতে পারে না এ মুহূর্তে। চার বছরের যত ঘটনা যত কথা সবই এই একটা কাগজে বয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

টেকঅফ এর সময় রানওয়ের দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম কত সহজে বিমানটা আমার এত চেনা শহর ছেড়ে মেঘের সাথে মিলে গেল। যখন বাংলাদেশে অবতরন করলাম তখন প্রায় সন্ধ্যে হয়ে গেছে। মামারা এয়ারপোর্ট এসেছিলেন আমাকে মিরপুর নিয়ে যেতে। পরিচিত ঢাকাকে সেদিন বেশ অচেনা লাগছিল। বাসায় ঢুকেই মায়ের কান্না আর খুশি একাকার হতে দেখলাম। মা আমাকে জরিয়ে ধরে চার বছরের আমার পাওনা আদরে পুরোটাই প্রায় চার মিনিটে দিয়ে দিলেন। রাতে বসে আমরা শুধুই গল্প করলাম। মা আমার কথা শুনতে ব্যস্ত আবার কোন সময় নিজেই কোন কথা বলতে এতটাই বিভোর যেন শ্বাস নেবার প্রয়োজনটাও বোধ করছিলেন না। বাসায় আমার মামাতো ভাই-বোনরাও ছিল। এতটা সময় পর তাদের সাথে আড্ডা মারতে আর গল্প গুজব করতে ভালই লাগছিল। জানিনা কেন মাকে আগের থেকে অনেক স্থির মনে হচ্ছিলো। হঠাৎ কেমন জেনো আনমনে হয়ে গেলেন। আমি বুঝছিলাম মা আমাকে কিছু বলতে চাইছেন। আমি আড্ডার মাঝ থেকে উঠে একটু সরে গিয়ে মাকে প্রশ্ন করলাম মা কী বলতে চাইছেন। মা একটু হেসে বললেন, “মাত্র আসছিস বিশ্রাম নে, পরে বলার আছে তোকে অনেক কথা।” মা কথা এড়িয়ে গেলেন বুঝে আমি বসে পরলাম।

এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে গল্প, সাহিত্য-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , , , , , , , , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

2 Responses to কালের দেয়ালে… (৩য় খণ্ড)

  1. সামিরা বলেছেনঃ

    ভালো লাগছে লেখা। 😀
    একটু ছোট পর্বগুলি, আরেকটু বড় করে আরেকটু বিরতি দিয়ে কি দেওয়া যায়?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।