আজ থেকে প্রায় ৩২ বছর আগে যখন আমি গণধর্ষিত হয়ে একেবারে মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরে আসি, তখন আমি ছিলাম মাত্র ১৭ বছরের ফুটফুটে প্রাণোচ্ছল এক কিশোরী। সে সময় আমি থাকতাম বোম্বেতে। ধর্ষণের মত এমন স্পর্শকাতর একটা ব্যাপারে প্রতিটা মানুষের নিশ্চুপ আচরণ আর ধর্ষিতার প্রতি তাদের মিথ্যে ধারণা ও অযথা অপবাদ দেয়ার প্রবণতাকে সইতে না পেরে ঘটনার বছর তিনেক পরে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি আর্টিকেল লিখে ফেলি ভারতীয় এক ম্যাগাজিনে। সেই লেখাটার মাধ্যমেই তখন আমি নারী জগতে, এমনকি আমার পরিবারেও একটা তোলপাড় ফেলে দিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যের বিষয়, তোলপাড়টা ছিল ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন হারিয়ে যাওয়া পুরনো আলোড়নের উপস্থিতিটা টের পাই আমি- আমার মেইলবক্স দেখতে দেখতে। দিল্লিতে এক তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় কেউ একজন আমার আগের সেই আর্টিকেলটা অনলাইনে পোস্ট করে দেয় এবং মুহূর্তের মাঝে তা রাতারাতি বিস্ফোরণের মত ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন থেকে আমার মেইলবক্স ভেসে যেতে থাকে অসংখ্য মানুষের বার্তায় যারা মেইলে আমাকে তাদের সমর্থন জানান।
ধর্ষণের একটা ছাপ বয়ে নিয়ে প্রতিটি মানুষের সামনে বেঁচে থাকাটা আসলে কখনোই সুখকর নয়। তাছাড়া আমি কোন অভিজ্ঞ মানুষ নই, তাই নিজেকে উদাহরণ বানিয়ে জগতের সব ধর্ষিতার প্রতিনিধিত্বও করি না। যেহেতু দিল্লির সেই তরুণীর মত আরো অনেকে নৃশংসভাবে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে এবং হচ্ছে, তাদের জন্য এখন আমি কেবল সেই পুরনো গল্পটি আবারও বলতে শুরু করতে পারি, কারণ আমার সেই গল্পটি এখনো শেষ হয় নি।
সেই রাতে বেঁচে থাকার জন্য যখন আমি অমানুষিক যুদ্ধ করে যাচ্ছি, তখনও আমি জানতাম না যে আমি কীসের জন্য, ঠিক কী কারণে যুদ্ধটা করছি। আমার এক বন্ধুর সাথে সেই রাতে বাড়ির পাশের পাহাড় চূড়াটায় হাঁটতে গিয়েছিলাম আমি। একসময় চারজন অস্ত্রধারী লোক এসে আমাদের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় ধরে নিয়ে যায়। তারপর টানা কয়েক ঘণ্টা ধরে আমাকে ধর্ষণ করে ওরা, আমাদের দু’জনকেই খুব মেরেছিল তখন। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে কিনা এই বিষয়ে অনেকটা সময় নিয়ে নিজেদের ভেতর ঝগড়া করে একসময় আমাদের ছেড়েও দেয়।
১৭ বছর বয়সে আমি এইসব ব্যাপারে রীতিমত একজন শিশু ছিলাম। কিন্তু জীবন আমাকে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেয়ার জন্য ঠিকই ঢেলে উপহার দিয়েছিল। আমি যখন আহত হয়ে মানসিক বিকারগ্রস্তের মত বাড়ি ফিরে আসি তখন পাশে পাই আমার অসাধারণ পরিবারকে। তাদেরকে পাশে নিয়ে আমি নতুন করে জীবনকে দেখি। আমি জানতে পারি ‘ভালোবাসা’ কী, আবার আগের মত লিখতে শুরু করি, সবুজ-গহীন অরণ্যের মাঝে হারিয়ে যেতে যেতে ছোট্ট ক্যাঙ্গারুর দেখা পাই। আগের মতই আমি বাস ধরে যাওয়া-আসা শুরু করি, দেরি করে ফেলে আবার ট্রেন মিস করতে থাকি। আমার কোল জুড়ে একদিন ফুটফুটে একটি তারা জন্ম নেয়। তারপর সময় পালটে যেতে থাকে দ্রুত। একসময় চুলগুলোতে পাক ধরতে শুরু করে।
আমি জানি, তোমাদের ভেতর আরো অনেকেই আমার মত করে কখনো অনুভব করো নি, করতে পারো নি। তোমাদের ভেতর অনেকে কখনো জানতেই পারো নি যে জীবনে অনেক খারাপের পরেও আরো ভালো কিছু আসতে পারে এবং সেই দিন তখনই জীবনে আসে যখন ঐ কদর্য ঘটনাটি আর জীবনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে মনের মাঝে আসন গেড়ে বসে থাকে না। এইরকম দিন যখন তোমার জীবনে আসবে তখন তুমি টের পাবে যে চলতে চলতে একদল পশুর আক্রমণের শিকার হতে পারো ভেবে তুমি বারবার পেছন ফিরে তাকাচ্ছ না, কামিজের উপর রেশমী ওড়নাটা পরতে পরতে তোমার মনের ভেতর ফ্ল্যাশব্যাকের মত শ্বাসরোধ হয়ে মরে যাবার ভাবনাটাও আর আসছে না। সেইদিন, জীবনের সেই মুহূর্তে তুমি সবচেয়ে বেশি নির্ভয়, নির্ভার একজন মানুষ হবে!
জানো, ধর্ষণ ভীষণ ভয়ঙ্কর। কিন্তু যে কারণগুলো তোমাদের মত মেয়েদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হয় সেইসব কারণে নয়। ধর্ষণ ভয়ঙ্কর কারণ ঠিক সেই মুহূর্তে তুমি পৃথিবীর জঘন্যতর এক নিষ্ঠুরতার শিকার হচ্ছো, কারণ তুমি ভয় পাচ্ছো, কারণ অন্য কেউ একজন তোমার শরীরের প্রতিটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করছে! ধর্ষণের অনুভূতি ভয়াবহ কারণ তুমি আঘাত পাচ্ছো ঠিক ততটা অন্তরঙ্গভাবে, যতটা অন্তরঙ্গভাবে প্রিয় মানুষটির কাছ থেকে তোমার ভালোবাসা পাবার কথা ছিল। ধর্ষণ ভয়ঙ্কর এই কারণে নয় যে তুমি তোমার নারীত্ব কিংবা তোমার সততা হারাচ্ছ, অথবা তোমার বাবা আর ভাই সমাজের চোখে অসম্মানের পাত্র হিসেবে গণ্য হচ্ছে। মেয়েদের নারীত্ব কিংবা ছেলেদের বুদ্ধি যে প্রকৃতি প্রদত্ত একটিমাত্র বিশেষ অঙ্গেই আবদ্ধ থাকে- এই দু’ধরনের চিন্তাই আমার কাছে একই রকম হাস্যকর মনে হয়!
তবে এইসমস্ত গৎবাঁধা সমীকরণ থেকে বেরিয়ে এলেও ধর্ষণ ভয়ঙ্কর, যতটা না সামাজিকভাবে, তার থেকে অনেক বেশি ব্যক্তিগত অনুভূতিতে। এতকিছুর মাঝেও আমরা কিন্তু সেইসব নির্যাতিত নারীদেরকে সত্যিকার প্রয়োজনীয় জিনিসটা দিতেই পারি- তবে সেটা বস্তাপচা সেইসব ধারণা নয় যাতে তাদেরকে নিপীড়িত হয়েও লজ্জা বা অপরাধবোধে ভুগতে হয়, বরং তাদের সাথে সাথে নিজের মাঝেও একই অনুভূতি ধারণ করে তাদের পাশে থাকা, সাথে থাকার বোধটাই আমাদের মাঝে আজ সবচেয়ে বেশি দরকার।
৩২ বছর আগে আমি যে সপ্তাহে ধর্ষিত হই, ঠিক তার পরের সপ্তাহেই আমার মত আরেক মেয়ের ধর্ষিত হবার ঘটনা শুনতে পাই। মেয়েটা নাকি এরপর স্বাভাবিকভাবেই বাসায় ফিরে এসেছিল, এরপর রান্নাঘরে ঢুকে আগুন জ্বালিয়ে নিজেকে তার ভেতর ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে এক মুহূর্তে জীবনটাকে শেষ করে দিয়েছিল! যে মানুষটার মুখে আমি এই ঘটনাটা শুনেছিলাম, স্বামীর সম্মান রক্ষার্থে আত্মঘাতী হওয়ায় তিনি সেই মেয়েটার প্রশংসায় তখন পঞ্চমুখ ছিলেন! আমার বাবা-মাকে অসংখ্য ধন্যবাদ যে আমি কোনদিন এমন কিছু বুঝতে পারি নি, আমাকে কখনো এমন কিছু বোঝানোর জন্য কোনদিন বাধ্য করা হয় নি।
আমাদের বর্তমান সমাজে যে আইন আছে তা দিয়ে হয়তো কখনো কখনো ধর্ষকের শাস্তি কিংবা ধর্ষিতাকে পরবর্তী বিপদ থেকে কিছুটা রক্ষা করতে পারা যায়, কিন্তু শুধুমাত্র পরিবার আর সমাজই পারে তাকে মানসিকভাবে সমর্থন জোগাতে। একজন কিশোরী কেমন করে তার ধর্ষকের বিরুদ্ধে আদালতে এসে দাঁড়াবে যদি না তার পরিবার তার পাশে থাকে? একজন স্ত্রী কীভাবে তার ধর্ষকের বিচার চাইবে যদি তার স্বামী তার স্ত্রীর নির্যাতনের বিচার হওয়া দরকার না ভেবে উলটো নিজে অপমানিত বোধ করে পিছিয়ে যান?
১৭ বছর বয়সে আমি ভেবেছিলাম, ধর্ষণের মত একটা জঘন্যতর ঘটনার বলি হয়ে সকলের সামনে নিজের আত্মসম্মান হারানোটাই পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাপার। কিন্তু আজ, এই ৪৯ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে আমি বুঝতে পারছি যে আমার ধারণাটা ভুল ছিল। এখন আমার কাছে নিজের ১১ বছরের ছোট্ট শিশুটার পাশবিকভাবে আঘাত পাবার কল্পনা করাটাই আমার কাছে পৃথিবীর সবথেকে বড় ভয়াবহ ব্যাপার। এইজন্য নয় যে এরকম কিছু হলে আমাদের পরিবারের সম্মানহানি হবে, বরং কারণটা হলো- সে এই পৃথিবীকে, এই পৃথিবীর প্রতিটা মানুষকে বড্ড বিশ্বাস করে। আর মা হয়ে চোখের সামনে নিজের সন্তানের বিশ্বাসকে ধ্বংস হয়ে যেতে দেখার মত বড় কষ্ট জগতের আর কোথাও নেই। আজ যখন আমি পেছন ফিরে তাকাই তখন ১৭ বছরের ছোট্ট সেই আমাকে দেখতে পাই না, বরং দেখি আমার বাবা-মাকে, যারা দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে, রাতের পর রাত আমার পাশে জেগে থেকে আমার হৃদয়ের প্রতিটা ভাঙা বিশ্বাসের টুকরোকে পরম যত্নে আবার জুড়ে দিয়েছেন।
আসলে ঠিক এই জায়গাটাতেই আমাদের সকলের দায়িত্ব আর দায়বদ্ধতা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের প্রতি। আমাদের দায়িত্ব আমাদের সন্তানদের শেখানো যেন তারা স্বাধীনচেতা এবং আত্মমর্যাদাশীল মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে পারে, যারা জানবে, যেসব পুরুষ নারীদের আঘাত করে তারা তাদের নিজের ইচ্ছেয় তা করে এবং সেই নোংরা ইচ্ছের শাস্তিও সমাজে আছে।
আমি যখন ১৭ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তখন আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারি নি যে হাজার হাজার মানুষ কয়েক সপ্তাহ ধরে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে। কিন্তু এখনো অনেক কাজই বাকি রয়ে গেছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমরা পুরুষতন্ত্র আর বর্ণ, সমাজ ও লিঙ্গ বৈষম্যভিত্তিক বিস্তর সব নিয়মের জাল গড়ে তুলেছি, যা ধর্ষণের মত পাপাচারকে আরও বেশি ছড়ানোর সুযোগ করে দিচ্ছে। অথচ ধর্ষণ অস্বীকার করা কিংবা এড়িয়ে যাবার মত কোন বিষয় নয়, যেমন এড়ানো যায় না পরিবেশকে, অস্বীকার করা যায় না পৃথিবীর আলো-বাতাসকে। ধর্ষণের সাথে সম্মান আর নারীত্বকে জুড়ে দিয়ে এবং মেয়েটা কি তাকে প্রলোভিত করে নি অথবা ছেলেটা কি নিজেকে সামাল দিতে পারে নি- এই ধরণের প্রশ্ন তুলে অর্থহীন প্রলাপ বকে যাবার অভ্যাসটা এবারে সত্যিই আমাদের ত্যাগ করা উচিত। আমাদের দায়িত্বজ্ঞান সেখানেই কাজে লাগানো উচিত যেখানে পুরুষরা নারীদেরকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করছে এবং যেখানে আমরা প্রত্যেকে নির্যাতিতার দিকে আঙুল উঁচু করে প্রকৃত অপরাধীদের ছেড়ে দিচ্ছি।
লেখক পরিচিতি: সোহায়লা আবদুলালির জন্ম ভারতে হলেও পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চশিক্ষার পাঠ শেষ করেন। ২০ বছর বয়সে তাঁর লেখা ধর্ষণ সম্পর্কিত একটি আর্টিকেল ভারতে বেশ প্রশংসা কুড়ায়। পেশাজীবনের প্রথমদিকে তিনি সাংবাদিক হিসেবে ফিলাডেলফিয়া, বোস্টন এবং বোম্বেতে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে আন্তর্জাতিক এনজিও উবুন্তু এডুকেশন ফান্ডের সিনিয়র এডিটর এবং আন্তর্জাতিক অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান এইডস ফ্রি ওয়ার্ল্ডের যোগাযোগ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছেন। ২০১০ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘ইয়ার অব দ্য টাইগার’ প্রকাশিত হয়।
খুব ভালো লাগলো লেখাটা+অনুবাদ। তবে সতর্কবাণী দিয়ে যাই, বেশি অনুবাদ কইরো না কিন্তু! তাহলে আমারগুলা পড়বে না কেউ। :crying:
আমাদের সমাজ এরকম অনেক অর্থহীন, অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকর ট্যাবু আর প্রেজুডিসে ভর্তি। খুব ভালো লাগে যখন কেউ এসবের বিরুদ্ধে কথা বলে। যদিও সবার পক্ষে কথা বলাটা সমান সহজ হয় না, যেমন সোহায়লার এই আত্মবিশ্বাসের পেছনে পরিবারের সমর্থন ছিল পুরোপুরি। এইটাই তো অনেক বড় মনের জোর।
মেয়েদের ঘিরে যতসব প্রেজুডিস, সবই কিন্তু পুরুষতন্ত্র/মেয়েদেরকে নিচু চোখে দেখা/সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স থেকে উদ্ভুত। আর দুঃখজনক হচ্ছে, এই মনোভাবটা আমি রাস্তার টোকাই থেকে শুরু করে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী বিখ্যাত মানুষ, রক্ষণশীল-মুক্তমনা, অল্পবয়সী থেকে অতিবৃদ্ধ – সব শ্রেণীরই একটা বিশাল সংখ্যক পুরুষের মধ্যে দেখতে পাই। দোষ তাদের তো বটেই, সেই সাথে কিছু মেয়ে মেয়েদেরকে এক পা সামনে এগিয়ে নিলে বাকি যারা ১০ পা পেছনে টেনে ধরে, তাদেরও।
লেখিকার ২০ বছর বয়সের প্রবন্ধটা আমার কাছে আরও বেশি ভালো লাগছিল এটার চেয়ে, টুকরো টুকরো দর্শনের কারণে আর খুব সম্ভবত স্মৃতি এবং অনুভূতিগুলিও তখন অনেক বেশি দগদগে ছিল সেই লেখায়।
চমৎকার অনুবাদ আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য ফিনিক্স পাখিকে ধন্যবাদ! 😀
তাহলে সেটা অনুবাদ করে ফেল। আমরা পড়ি। 😀
মানুষ আমাকে নিয়ে মজা করে!
পড়ুয়ার অনুবাদ যদি মানুষ না পড়ে তাহলে আর কার অনুবাদ পড়বে?
কীসের সাথে কী? :wallbash:
“ধর্ষণ কেন ভয়ঙ্কর” তা নিয়ে লেখিকার চিন্তাগুলো খুবই ভালো লাগলো, নিজের বোধগুলোও সমৃদ্ধ হল…
আর অনুবাদের কথা কি বলব, অত্যন্ত সাবলীল এবং সুখপাঠ্য… ধন্যবাদ আপু অনুবদটির জন্য 😀
আর কৃতজ্ঞতা এমন পাঠকের জন্য! :beshikhushi:
“আমাদের দায়িত্বজ্ঞান সেখানেই কাজে লাগানো উচিত যেখানে পুরুষরা নারীদেরকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করছে এবং যেখানে আমারা প্রত্যেকে নির্যাতিতার দিকে আঙুল উঁচু করে প্রকৃত অপরাধীদের ছেড়ে দিচ্ছি।” – হুম। :thinking:
তবে লেখার শিরোনামটা অনেকক্ষণ ধরে বোঝার চেষ্টা করলাম, কিন্তু মাথায় ঢুকছে না। 🙁
“কিন্তু আমার সম্মান হয় নি” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
এবার বুঝেছি। 😀 😀
মূর্খ মানুষ তো, বুঝতে দেরি হয়। 🙁
আপনার কথায় শিরোনাম বদলে দিয়েছি ভাইয়া।
এবারে বুঝতে পেরেছেন? 🙂
তাই নাকি! ধন্য হয়ে গেলুম!! :penguindance:
বদলে দেয়ার পরই বুঝতে পেরেছিলাম, তখনই দ্বিতীয় কমেন্টটা করেছিলাম। 😀
আর… ইয়ে, মানে আপু… আমি আপনার চেয়ে অনেক ছোট মানুষ, তাই ‘আপনি’ করে না বললেই বোধহয় ভাল লাগবে। 🙂
ওহ্ আচ্ছা তাই নাকি? তাহলে কী বলব? তুমি/ তুই? 😛
যেটা খুশি… আপত্তি নেই… 😛 😛
ভালো কথা, আপনি কি আমার ফেসবুক লিস্টে আছেন? কেন যেন আপনাকে চেনা বলে মনে হচ্ছে। :thinking:
ওহ্ দুঃখিত, তুমি! 😛
হ্যাঁ, আছি তো। 8)
(বাই দ্য ওয়ে… পোস্ট এর মেজাজের সাথে বোধহয় আমার কমেন্টগুলোর মেজাজ ঠিক মিলছে না, দুঃখিত।)
তবে তো আমারও দুঃখিত বলা উচিত! কারণ আমিও তাহলে সমান অপ্রাধে অপরাধী! 🙁
আমাকে ফেসবুকে একটা ম্যাসেজ দিলে চিনতে সুবিধা হতো। আমার ফেসবুক লিস্টে আছেন (কেন ‘তুমি’ সম্ভাষণটা মুখে আসছে না? :crying: ) শুনে কৃতার্থ হলুম! :yahooo:
*অপরাধে
টাইপোর জন্য দুঃখিত! :wallbash:
অসাধারণ একটা অনুবাদ হয়েছে, হয়তো মেয়ে নই বলে অনুভূতির তীক্ষ্ণতাটা অনুভব করতে পারি নি, কিন্তু এই বোধটুকু, এই ভাবনাটুকু একই সাথে জরুরি, এই দুর্ঘটনা মানেই জীবনে শেষ হয়ে যাওয়া নয়, বরং বেঁচে থাকার জন্য নতুন একটা দিনের স্বপ্নই অন্যরকম কিছু এনে দিতে পারে…
তবুও একটা কথা আমি বারবার বলবো, যতদিন না একটা ভয়াবহ ধরণের শাস্তি এই অপরাধীদের জন্য চালু হচ্ছে, এমন অপরাধকে দমিয়ে রাখা অনেক বেশি কঠিন হয়ে থাকবে……
স্যালুট ফিনিক্সকে…
অসাধারণ অনুবাদটার জন্য…
সেটাই, প্রাণের মায়া বড় মায়া।
এই মায়ার টানে অন্য সব মায়া তুচ্ছ হয়ে যায়।
অনুবাদ অনেক সুন্দর হয়েছে। লাভ ইউর অনুবাদস!! 😀
শিরোনামটা বেশ ঝাঝালো!!
এ নিয়ে আমি কোন কমেন্ট করব না, কমেন্ট করবার বয়স আমার হয় নাই। আমার দুর্ভাগ্য আমাকে এই অল্প বয়সেই এগুলোর সাথে পরিচিত হতে হচ্ছে।
আমি কয়েকটা পয়েন্ট তুলে ধরি, এগুলো গত কিছুদিনের পত্রিকা পড়ে পাওয়া-
দেশের বিভিন্ন স্থানে গত ৪ বছরে প্রায় ১৩ হাজার ধর্ষিত হয়েছেন, নারী নির্যাতন ৬৭ হাজার। এই তথ্যটাতে কিন্তু কেবলমাত্র নির্যাতনের যে ঘটনাগুলো রিপোর্টেড হয়েছে, সেগুলোকে কাউন্ট করা হয়েছে।
নারীকে আমাদের সমাজে মানুষের মর্যাদা দেইনি কখনই। নারীকে ধরেই নেয়া হয় ভোগের বস্তু। “এত ধর্ষণ হচ্ছে কেন এবং তা থেকে পরিত্রানের উপায় কি?” এ প্রশ্ন যদি কোন যে কাউকে জিজ্ঞেস করা হয়, তার উত্তরটা হয় এমন- ভাল মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হয় না, যারা ধর্ষিত হয়েছে তাদের পোশাকে সমস্যা ছিল। ইসলাম ধর্মে, নারীকে পর্দা করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে পুরুষদেরও চোঁখ অবনত রাখতে বলা বয়েছে । তাহলে শুধু নারীর দোষ কেন?
একটা নতুন প্রবাদই দাঁড়িয়ে গেছে, ‘যত দোষ নারী ঘোষ’; কপাল মন্দ – এটাই সত্য বলে প্রতিয়মান হতে চলেছে।
ভারতের এক হিন্দু পুরোহিত ধর্ষণ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, ‘ধর্ষণের জন্য ধর্ষিতাই দায়ী’।
Fornication ev Adultery বা ব্যভিচার বা লাম্পট্য। এখন একটা পৈশাচিক ফ্যাশান। বিভিন্ন কারণে অনেক নারী জীবিকা উপার্জনের পন্থা হিসেবে বেশ্যাবৃত্তিতে লিপ্ত হয়। এটা আবার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মোতাবেক রীতিমতো লাইসেন্সধারী পেশা!
সূরা বনি ইসরাইলের ৩২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের ধারেকাছেও যেয়ো না, কারণ এটা একটা অশ্লীল এবং জঘন্য পন্থা।’
ছোট বেলায় শুনেছিলাম পৃথিবীতে এমনও দিন আসবে যখন যৌনতাড়িত মহিলাদের ভয়ে পুরুষ মাদার গাছে উঠতে বাধ্য হবে। মাদার গাছে সর্বত্র বড় বড় কাঁটায় ভর্তি। সেই সকল নারীরা এমনই দুর্ধষ ও অত্মাচারিত হবে যে তাদের যৌন নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে মাদার গাছের কাঁটাও তারা তুচ্ছ জ্ঞাণ মনে হবে। মনে হয়, পুরুষরা তাদের শোধ অগ্রীম সুদে-আসলে তুলে নিচ্ছে।
এই মুক্তবাজারের মধ্যে কোন নারী, এমনকি দুধের বাচ্চাটিও যদি হয় মেয়ে, আপনি তাকে একা পথে ছেড়ে দিতে পারবেন না। মানুষ আগুন নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবহার করতে শিখে সভ্যতার পথে এগিয়েছে। ঠিক একইভাবে যৌনশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা শিখে সঠিক পথে সভ্যতাকে আরও এগিয়ে নিতে পারি আমরা। অতএব যৌবনকে ভয় পেলে চলবে না, প্রমথ চৌধুরীর মতো বলুন, যৌবনে দাও রাজটিকা।
ধর্ষণের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে হলে কেবল আইনের কঠোর প্রয়োগও কোনো কাজ হবে না। এর জন্য প্রয়োজন জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে যার যার পারিবারিক বলয়ে ধর্মানুশীলনে একনিষ্ঠতা, পোশাকের শালীনতা, অশ্লীল সংস্কৃতিচর্চার পরিবর্তে শিক্ষণীয় বিনোদনমূলক শ্লীল ও শালীন সংস্কৃতি চর্চার প্রচলন নিশ্চিতকরণ। উচ্চকন্ঠে বক্তৃতা শুনতে চাই না, চাই কাজের মত কাজ!!
“চল আইজকা জলিলের বাড়ি ঘেরাও দিমু -কি করছে জলিল?
-মিনুরে এসিড মারছে –
আইনে আছে এসিড মারার বিচার নব্বই দিনের মধ্যে শেষ হয় … …”
এসিড নিক্ষেপ একটা সময় ঠিক এইভাবেই আলোচনায় উঠে এসেছিল। পত্রিকা খুললেই এসিড নিক্ষেপের সংবাদ। সেসময়েরই একটি টিভি অ্যাডভারটাইজ এইটা। এইরকম কিছু এফোর্ট যদি কন্টিনিউ করা যেত, হয়ত আমার মত দুর্ভাগা আমাদের পরের প্রজন্মটার আর হতে হবে না……
আমি তো একটাই অনুবাদ করলাম জীবনে!
লাভ ইউর অনুবাদস!!>> বহুবচন কেমনে হইলো? :thinking:
ধর্মকে যারা দোহাই বানায় তাদের অনেকেই এলিট স্তরের। সমস্যা এখানেই। ধর্ম আজকাল এলিট সমাজে তালাবদ্ধ হয়ে গেছে, দুর্ভাগ্য এটাই।
বিজ্ঞান স্কুলে সবসময় ‘অনুবাদস’ লেখার ফলাফল! সব দোষ অভ্রর!! আমার কুনু দুষ নাই!!
[ তবে এইটা যে তোমার ফার্স্ট তা জানতাম না আসলেই 😛 ]
এলিট সমাজটাকে ডিলিট করে নতুন করে গড়তে পারতাম যদি…
ডিলিট দ্য সমাজ অব এলিটস! 8)
চিন্তাশীল প্রবন্ধের প্রাঞ্জল অনুবাদ–খুব সুন্দর হয়েছে। পড়ে একদম মনটা ভরে গেল। লেখিকা মানুষ হিসেবে যেমন সাহসী তেমনি যুক্তিবাদী, একজন মানুষ যে এমন জঘন্য একটা স্মৃতিকে ব্যবহার করতে পারে সমাজের পচে যাওয়া অংশটার দিকে আঙ্গুল তুলে অন্যদের এ ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করতে- দেখে খুব ভাল লাগল।
শেষের এই লাইনটায় বর্তমান সমাজে উপস্থিত সকল ফাজলেমিকে একসাথে যেভাবে নিন্দা করেছেন তা একদম 100% নির্ভুল-
“ধর্ষণের সাথে সম্মান আর নারীত্বকে জুড়ে দিয়ে এবং মেয়েটা কি তাকে প্রলোভিত করে নি অথবা ছেলেটা কি নিজেকে সামাল দিতে পারে নি- এই ধরণের প্রশ্ন তুলে অর্থহীন প্রলাপ বকে যাবার অভ্যাসটা এবারে সত্যিই আমাদের ত্যাগ করা উচিত। আমাদের দায়িত্বজ্ঞান সেখানেই কাজে লাগানো উচিত যেখানে পুরুষরা নারীদেরকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করছে এবং যেখানে আমরা প্রত্যেকে নির্যাতিতার দিকে আঙুল উঁচু করে প্রকৃত অপরাধীদের ছেড়ে দিচ্ছি।”
ব্রাভো, সাহসী লেখিকাকে, আর তার এই চমৎকার লেখাটা পরার সুযোগ করে দিয়েছে যে সোনার মেয়েটা তাকে।
আমি কি তবে এই সুযোগে ‘সোনার মেয়ে’ উপাধি পেয়ে গেলুম আপু? :happy:
আপু ব্লগ ব্যাপার টা কি জানার পর অনেক লেখা পড়েছি, অনেক কিছু বলার হলেও বলিনি, কিন্তু আজকে এই লেখাতা পরে কিছু না লেখার লোভ সামলাতে পারিনি, অসম্ভভ ভালো একটা লেখা অনুবাদ করেছেন, সত্যি এভাবে যদি সবার মাথায় ঢোকানো যেত তাহলে হয়ত প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে পত্রিকাতা খুলতে হতনা, অনেক অভিনন্দন আপু আপনাকে, আর আপনার অনুমতি নিয়ে শেয়ার করতে চাই……।
সানন্দে শেয়ার করতে পারেন আপু।
অনুমতির প্রয়োজন নেই। 🙂
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। 🙂