১
– মাংসের তৈরি ওরা!
– মাংস?
– তো আর বলছি কী! রীতিমত মাংসের তৈরি!
– মাংস?!
– আর কোন সন্দেহই নেই তাতে। গ্রহের নানান জায়গা থেকে জনাকয়েককে তুলে নিয়েছি, আমাদের অনুসন্ধান যানে তুলে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছি ওদের। আপাদমস্তক মাংস!
– অবিশ্বাস্য! বেতার তরঙ্গগুলোর মানে কী তাহলে? আর তারায় পাঠানো বার্তাগুলো, সেগুলো কারা পাঠিয়েছে?
– ওরাই তো কথা বলার জন্য বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে হে! তবে সেগুলো ওদের শরীর থেকে বেরোয় না। যন্ত্র থেকে আসে সংকেতগুলো।
– তাই বলো! যন্ত্রগুলো কারা বানিয়েছে? তাদের সাথেই না আমাদের যোগাযোগ করার কথা!
– আরে ওরাই বানিয়েছে যন্ত্র। এ কথাটাই তো তোমাকে বলার চেষ্টা করছি এতক্ষণ ধরে, মাংসরাই যন্ত্র বানিয়েছে!
– হাস্যকর! মাংস কেমন করে যন্ত্র বানাতে পারবে? আমাকে বুদ্ধিমান মাংসে বিশ্বাস করতে অনুরোধ করছো বুঝি!
– অনুরোধ করবো কেন, জানাচ্ছি বরং তোমাকে। মহাকাশের এই অংশে থাকা একমাত্র বুদ্ধিমান জাতি এরা, তার ওপর আবার মাংসের তৈরি!
– আচ্ছা…মনে হচ্ছে এরা ওরফোলেইদের মত কিছু; ঐ যে, কার্বনভিত্তিক যেই বুদ্ধিমান প্রাণগুলো জীবনচক্রের একটা সময়ে মাংসল পর্যায়ের ভেতর দিয়ে যায়।
– না না! এরা মাংস হয়েই জন্মায়, মাংস অবস্থাতেই মারা যায়। এদের বেশ কিছু প্রজন্মের ওপর নজর রেখেছি আমরা, আয়ু কম বলে খুব বেশি সময় লাগে নি তাতে। তোমার কোন ধারণা আছে মাংসের আয়ুষ্কাল কেমন হতে পারে সে ব্যাপারে?
– মাফ চাই! আচ্ছা, এমন কি হতে পারে, যে ওরা আধ-মাংসল ওয়েডিলেইদের মত? ঐ যে যাদের মাংসল মাথার ভেতর ইলেকট্রন প্লাজমার মগজ থাকে?
– উঁহু, অমন মনে হয়েছিল আমাদেরও শুরুতে, মাংসের তৈরি মাথাগুলো দেখে। কিন্তু বললামই তো, গবেষণা হয়েছে ওদের ওপর, পুরোটাই মাংস।
– কী?! কোন মগজই নেই বলছো?
– আরে না, মগজ তো আছেই একটা যথাস্থানে! কিন্তু সেই মগজও মাংসের তৈরি। এই কথাটাই তো বার বার করে বলতে চাইছি আমি!
২
– হুমম…চিন্তাটা করে কোথায় তাহলে ভাবছি।
– তুমি আসলে বুঝতেই পারো নি কিছু, তাই না? আমার বলা কথাগুলো নিয়ে ভাবতেই চাইছো না তুমি। আরে মাংসল মগজটাই তো চিন্তা করে সব, মাংসটাই চিন্তা করে!
– চিন্তাশীল মাংস! তুমি আমাকে চিন্তাশীল মাংসে বিশ্বাস করতে বলছো!
– হ্যাঁ চিন্তাশীল মাংস! সচেতন মাংস। প্রেমময় মাংস। স্বপ্নবাজ মাংস। মাংসই সবকিছু! তুমি কি পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারছো এখন, নাকি আমি আবার প্রথম থেকে শুরু করবো?
– হায় খোদা! তুমি কৌতুক করছো না তাহলে? আসলেই মাংসের তৈরি ওরা!
– ধন্যবাদ, অবশেষে! হ্যাঁ, ওরা নিশ্চিত মাংসের তৈরি। আর ওদের হিসেবে, প্রায় একশ’ বছর ধরে আমাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছে ওরা।
– হায় খোদা! মাংসগুলো চায়টা কী বলো তো!
– শুরুতে আমাদের সাথে কথা বলতে চায় এরা। তারপর আমার ধারণা, মহাকাশে ঘুরে বেড়াতে, অন্য সব বুদ্ধিমান প্রাণের সাথে যোগাযোগ করতে আর চিন্তা, তথ্য বিনিময় করতে চাইবে – অন্যরা যেমনটা চায় আর কি!
– আমাদেরকে তাহলে মাংসের সাথে কথা বলতে হবে!
– ব্যাপার তো সেটাই, বেতারে এই বার্তাটাই পাঠাচ্ছে ওরা। ‘হ্যালো! কেউ কি আছো? বাড়ি আছো কেউ?’ – এ ধরনের কথাবার্তা।
– তারা আসলেই কথা বলতে পারে তাহলে? শব্দ, ভাবনা, ধারণা এসব ব্যবহার করে কথা বলে?
– সেটাই করে, কেবল কাজটা সাধিত হয় মাংসের সাহায্য নিয়ে, এই যাঃ!
– মাত্রই না বললে বেতার ব্যবহার করে ওরা?
– করে তো, কিন্তু বেতারে কী থাকে বলে তোমার ধারণা? মাংসের শব্দ থাকে! মাংসে চাপড় দিলে কিংবা কোথাও মাংস দিয়ে বাড়ি দিলে কেমন একটা শব্দ হয় না, জানো তো? ওরাও ওদের মাংস একটা আরেকটার সাথে বাড়ি দিয়ে কথা বলে, এমন কি মাংসের ফাঁকে বাতাস ছুঁড়ে গানও গাইতে পারে!
– হায় খোদা! গায়ক মাংস? ব্যাপারটা মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে আসলে। এখন তোমার পরামর্শ কী, কী করবো আমরা?
– আনুষ্ঠানিক পরামর্শ, নাকি অনানুষ্ঠানিক?
৩
– দুটোই।
– আনুষ্ঠানিকভাবে, কোনরকম কুসংস্কার, ভয় কিংবা পক্ষপাত ছাড়াই আমাদের উচিত যে কোন এবং সব বুদ্ধিমান জাতি আর বহুসত্ত্বার সাথে যোগাযোগ করা, তাদেরকে স্বাগত জানানো ও মহাকাশের এই চতুর্থাংশে প্রবেশ করতে দেওয়া। অনানুষ্ঠানিকভাবে আমি বলবো, ওদের খোঁজ পাওয়ার সব প্রমাণ মুছে ফেলে পুরো ব্যাপারটাকে ভুলে যাওয়া।
– আমার মনে হচ্ছিল তুমি এমন কিছু বলবে।
– শুনতে রুক্ষ লাগছে জানি, কিন্তু সবকিছুরই তো একটা সীমা আছে, তাই না? আমরা কি আসলেও কোন মাংসের সাথে যোগাযোগ করতে চাই?
– তোমার সাথে শতভাগ একমত আমি। ওদের সাথে বলার মত কী কথা আছে বলো? ‘হ্যালো, মাংস! কেমন চলছে দিনকাল?’ কিন্তু এতে কি কাজ হবে কোন? আচ্ছা, ওদের এরকম গ্রহ ক’টা আছে বলো দেখি?
– একটাই কেবল। অন্য গ্রহগুলোতে ওরা বিশেষ মাংসবাহী যানে চেপে যেতে পারে, তবে সেখানে বাস করতে পারে না। তাছাড়া মাংস হওয়ার কারণে শুধু মহাকাশের সি-অংশেই ওদের বিচরণ, আর তাই আলোর গতিকে ডিঙিয়ে যেতে পারে না, আমাদের সাথে পরে যে আবার যোগাযোগ করতে পারবে সে সম্ভাবনাও তাই ক্ষীণ; ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সম্ভাবনা আছে বলতে পারো।
– তাহলে আমরা ভান করবো যেন মহাকাশে এমন কোন বসতি নেই, তাই তো?
– সেটাই বলছি আমি।
– কী নিষ্ঠুর! কিন্তু তোমার ঐ কথাটাও ঠিক, কে-ই বা মাংসের সাথে দেখা করতে, কথা বলতে চায়? তবে আমাদের যানে যাদেরকে তুলে নিয়েছি পরীক্ষা করার জন্য, তাদের কী হবে? ওদের যে পরে কিছু মনে পড়বে না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত তুমি?
– মনে পড়লে ওদেরকে পাগল বলবে অন্য মাংসেরা। আমরা ওদের মাথার ভেতর ঢুকে মিলিয়ে দিয়ে এসেছি সবকিছু, যেন আমাদেরকে কেবল স্বপ্ন বলেই মনে হয় পরে।
– মাংসের স্বপ্ন! কী আশ্চর্য অথচ বাস্তব একটা ব্যাপার, আমরা তবে মাংসের স্বপ্ন হতে যাচ্ছি!
– আর পুরো গ্রহটাকে প্রাণহীন হিসেবে চিহ্নিতও করে দিয়েছি আমরা মানচিত্রে।
– ভালো করেছো। রাজি আমি এই সিদ্ধান্তে, আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক দু’ভাবেই। মামলা ডিসমিস! আর কেউ? ছায়াপথের ঐ প্রান্তে আগ্রহী কেউ আছে?
– হ্যাঁ, জি৪৪৫ এলাকার নবম শ্রেণীর একটা তারায় একটু লাজুক কিন্তু মিষ্টি এক হাইড্রোজেন কোর ক্লাস্টার বুদ্ধিমান প্রাণ আছে। দুই ছায়াঘূর্ণন আগে দেখা হয়েছিল একবার এর সাথে, আবারও বন্ধু হতে চাইছে।
৪
– বার বারই ফিরে আসে ওরা, তাই না?
– কেন আসবে না বলো? এই মহাকাশে কাউকে একলা থাকতে হলে তার জন্য এটা কেমন এক অসহ্য, অবর্ণনীয় কঠিন জায়গা হতো চিন্তা করো…
[মূল গল্প: টেরি বিসনের They’re Made out of Meat
এক কি দুই বছর আগে পড়া গল্প, এমন ছাপ রেখে গিয়েছিল মনে, যে এতদিন পরও খুঁজে বের করলাম সবার সাথে ভাগ করে পড়বো তাই। ]
অদ্ভুত সুন্দর গল্প এবং দারুন অনুবাদ…….. শুভেচ্ছা রইলো….. :love:
তোমার জন্যও শুভেচ্ছা। 😀
সাধারণত এই জাতীয় গল্পগুলায় একটা ধাক্কা আশা করি। সেই তুলনায় ভিন্ন শেষ।
সুস্বাদু হইছে 😀
সামিরা এখন সাইফাইও অনুবাদ করে! 😀 কঠিন 😀
🙂
“বুদ্ধিমান মাংস! চিন্তাশীল মাংস! সচেতন মাংস! প্রেমময় মাংস! স্বপ্নবাজ মাংস! গায়ক মাংস! মাংসের স্বপ্ন!” – টার্মগুলো চরম!!! 😀 =)) =))
‘হ্যালো, মাংস! কেমন চলছে দিনকাল?’ 🙄 🙄
ব্যাপক বিনোদিত হলাম। তবে শেষ লাইনটার মধ্যে একটা গভীর তাৎপর্যও খুঁজে পেলাম। – ” এই মহাকাশে কাউকে একলা থাকতে হলে তার জন্য এটা কেমন এক অসহ্য, অবর্ণনীয় কঠিন জায়গা হতো চিন্তা করো…” :thinking:
হাহা। আমি নিজেও হাসছিলাম অনুবাদ করতে করতে। :happy:
অসাধারণ গল্প 😀
আর সেই সাথে অসাধারণ অনুবাদ :love:
অসাধারণ মন্তব্য! :happy:
ভিন্ন রকম একটা সাই-ফাই। খুব-ই সুন্দর লাগলো 😀
শেষ লাইনটা ভাবনায় নাড়া দিলো……
অনুবাদ নিয়ে আর কি বলবো!!?? :beshikhushi: :beshikhushi:
:beshikhushi:
“চিন্তাশীল মাংস! সচেতন মাংস। প্রেমময় মাংস। স্বপ্নবাজ মাংস। মাংসই সবকিছু ! ”
বইটা পড়তে হবে । অনুবাদ ভাল লেগেছে 🙂
বই না তো, গল্প! পুরোটাই আছে এখানে। 🙂
দুর্দান্ত আর ঝরঝরে অনুবাদ। গোগ্রাসে গিলে খেলাম 😀
ধন্যবাদ আপুনি! 😀 আপনার মন্তব্য পেলে বড় ভালো লাগে। :beshikhushi:
থ্যাঙ্কুস 🙂
মাংস শব্দটা শুনে কেন জানি আজকাল শুধু মনে হয় আমি একজন মেয়ে, আমি আমার নিজের দেশে একটা মাংস ছাড়া কিছু না। স্যরি তোমার সুন্দর অনুবাদ নষ্ট করে ফেললাম। গল্পটা ভালো লেগেছে, তবে ঐ যে কানে কেবলই বাজছে “মাংস মাংস লোভনীয় মাংস”।
🙂
আপু, ঠিক কোন্ দেশে যে মেয়েরা মাংসের চেয়ে বেশি কিছু সেটা নিয়ে আমার কৌতূহল আছে। পরিবেশ দূষণ যেমন করে উন্নত দেশগুলো আর খেসারত দেই আমরা গরীব দেশের মানুষ, ঠিক সেরকমই হয়তো মেয়েদের জন্য তথাকথিত নিরাপদ দেশগুলোর কিছু মেয়ে (কিংবা ছেলে)র জন্য আমাদের দুর্ভাগা দেশের নির্দোষ মেয়েদেরকে ভুগতে হয়।
ঠিকই বলছ। সব দেশেই এক, কোন দেশে মেয়েরা স্বেচ্ছায়, আর কোন দেশে অন্যের জোরজবরদস্তিতে… 🙁
সুন্দর অনুবাদের জন্য অভিনন্দন, বুদ্ধিমান মাংস! 😀
এই পোস্টের সেরা মন্তব্য! 😛
ধন্যবাদ মাংস, কেমন চলছে দিনকাল? 8)
ঘুমন্ত মাংস হতে চিন্তাশীল মাংসে কনভার্ট হওয়ার চেষ্টা চলছে আপাতত । 8)
সরবে আসলাম অনেকদিন পর কারণ পিসি পেলাম অনেকদিন পর!! উদ্দেশ্য ছিলো একটাই, সামিরাপুর অনুবাদ পড়া!! অভিযান সফল!! ভালো লিখেছেন আপু :clappinghands: :clappinghands:
ভাগ্যবতী অনুভব করছি! 😐
থ্যাঙ্কু মেঙ্কু!
“THEY’RE MADE OUT OF MEAT” by Terry Bisson
ইংরেজিটুকু আগে পড়েছিলাম।
অনুবাদটুকু পড়ে… দারুন অনুবাদ করেন আপনি!! লাইকড ইট!
ধন্যবাদ ভাইয়া। :guiter:
🙂
ব্লগে প্রকাশিত আপনার একটি লেখা প্রকাশ প্রসঙ্গে যোগাযোগের বিশেস প্রয়োজন।
যোগাযোগ করলে আনন্দিত এবং কৃতার্থ হতাম।
আপনার কলমসহ ভালো থাকুন …
যোগাযোগ তো এখানেই করতে হবে ভাই।
ধন্যবাদ।
আপনার একটি লেখা আমাদের পত্রিকায় প্রকাশ করতে চাচ্ছিলাম। লেখাটি প্রসঙ্গে আলাপের জন্যই আপনার সাথে যোগাযোগ করতে চাইছি। আপনি আমার সাথে ই মেইলে ([email protected]) যদি যোগাযোগ করেন খুশি হব।
‘সালমান খান শেখার ধরন বদলে দিচ্ছেন যেভাবে’ লেখাটি একটি ম্যাগাজিনে প্রকাশ
অনুবাদ ভালো পেলাম !
লেখিকা মাংস কে এক বস্তা হিংসা
ধন্যবাদ মন্তব্যকারিণী মাংস! 😛 😛
ধন্যবাদ মন্তব্যকারিণী মাংস! 😛
8)
“চিন্তাশীল মাংস! সচেতন মাংস। প্রেমময় মাংস। স্বপ্নবাজ মাংস। মাংসই সবকিছু!”
কী অদ্ভূত রকমের সুন্দর!
ধন্যবাদ প্রেমময় মাংস! 😛
হিহিহি! 😛