কাল রসায়ন ২য় পত্র পরীক্ষা। হাতে সময় আছে প্রায় ১১ ঘন্টার মত। কিন্তু কিছুতেই পড়ায় মন বসাতে পারছি না। অ্যাল্ডিহাইড-কিটোন পড়তে গিয়ে মাথায় কেবলি ঘুরছে… উফ! আনবিয়ারেবল!!
প্রতিবাদ করার ভাষা, ক্ষমতা, শক্তি- কোনটাই আমার নেই। আমার সে বয়সও হয় নি। একটু কিছু বললে, সবাই আমাকে একটা কথাই বলবে, “ইচড়ে পাকা। নিজের পড়ায় মন দাও”। কিন্তু, আমার দুর্ভাগ্য আমাকে এই অল্প বয়সেই এগুলোর সাথে পরিচিত হতে হচ্ছে, এসব ভাবতে হচ্ছে। আমার প্রশ্ন, কেন আমাকে এসব দেখতে হচ্ছে?? কেন, আমি এগুলো নিয়ে কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি?
জানি, কেউ উত্তরগুলো দিতে পারবেন না। আর তাই, আমিও চুপ করে থাকবো না।
##
সেদিন একটু বেশিই রাত হয়ে গিয়েছিল, প্রায় পৌনে ১০ টা বাজে তখন। বনগাঁর পথগুলো তখন প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে। প্রতিদিনের মত মোড়ের পাশে মদের বোতল আর গাঁজা নিয়ে নুরু আর ওর কয়েকটা সাঙ্গপাঙ্গ বসে গেছে। এখানে বসে ওদের মাতলামী আর কুশ্রী বাক্যালাপ চলে রাতভর।
“ আরে গুরু, সবে শুরু!”
“ আরে ব্যাটা, ক্যায়া মাংস… ফাটাফাটি জিনিস! হ্যাঁ! বড় বড়… ”
“ গুরু, ঐ যে… আসছে… মাংস…”
কাঁধের উপর দোদুল্যমান মাথাটা নিয়ে মাতাল নুরু পিছন ফিরে তাঁকায়। দেখতে পায় রাবেয়াকে। রাবেয়ার কথাই বলছিল ওরা। নুরুর চোঁখে ঘোড় লাগে, কি ফিগার…
রাবেয়া ওদের দেখে এক মুহূর্তের জন্যে থমকে যায়। একেবারে ওদের বাড়ীর গলিটার মুখে বসে আছে নুরু আর ওর সাঙ্গপাঙ্গরা। দুশ্চরিত্র, লম্পট বলে সারা এলাকায় ওর ‘সুনাম’ করে লোকে। এই এলাকার মানুষ মূলত খেটে খাওয়া মানুষ, নুন আনতে পান্তা ফুঁড়োয় ওদের। কমিশনার বড় মানুষ, তার ছেলে বলে কেউ কিছুই বলতে পারে না নুরুকে! রাবেয়ার দিকেও ওর কুনজর পড়েছে।
রাবেয়া গার্মেন্টসে কাজ করে। বাড়ীতে অন্ধ মা ছাড়া আর কেউ নেই এই দুনিয়ায় রাবেয়ার। গার্মেন্টসের বেতন আর ওভারটাইম করে যা পায়, তাতে মা-মেয়ের ভালই চলে যায়। দেখতে-শুনতে রাবেয়া বেশ ভালই, শরীর-স্বাস্থ্যও বেশ ভাল। ভাল হয়েই পড়েছে বিপদে, লোকের চোঁখে পড়ে গেছে।
রাবেয়ার বুকের ভেতরটা ঢিব-ঢিব করছে। অন্য পথ দিয়ে যাবার উপায় নেই। জানুয়ারী মাসের রাত, বেশ শীত, কুয়াশাও পড়ছে চারদিকে। তবু রাবেয়ার ঠোঁটের উপর আর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে থাকে। ও কম্পিত পায়ে সামনে পা বাড়ায়।
নুরুর কাছে আসতেই নুরু উঠে দাঁড়ায়, রাবেয়ার পথ আটকে দাঁড়ায়। ওর হাতে একটা চ্যাপ্টা ধরণের মদের বোতল।
“আরে সুন্দরী, সব দিয়ে এলে? অ্যাঁ? আমাকেও কিছু দাও…”
রাবেয়া যেন বরফের মত জমে যায়।
হঠাৎ নুরু জোড়ে হাঁসতে হাঁসতে ওর হাতের মদের বোতলটা রাবেয়ার গায়ে ঢেলে দিতে থাকে।
রাবেয়া চিৎকার করে উঠে!
সামনের বিল্ডিঙের দু’টো জানালা বেশ শব্দ করে বন্ধ হয়ে যায়!
নুরু রাবেয়ার ওড়না টান দিয়ে সরিয়ে ফেলে ওকে জাপ্টে ধরে। রাবেয়া আরো জোড়ে চিৎকার করে উঠে। নুরু আর রাবেয়ার ধস্তাধস্তি দেখে পেছন থেকে নুরুর চেলারা দারুন আনন্দে হেঁসে ওঠে…
রাবেয়া সর্বশক্তি দিয়ে নুরু ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে দৌড় দেয়। নুরুও উঠে ওর পেছনে দৌড় দিতে যায়! কিন্তু মাতাল নুরু উঠতে না উঠতেই আবার পড়ে যায়।
রাবেয়া ততক্ষণে ওর বাড়ীর দরজায় পৌছে গেছে…
ঘরের দরজা খোলাই ছিল। রাবেয়া ঢুকেই জোড়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
“এলি, মা?” বিছানা থেকে রাবেয়ার অন্ধ মা বলেন
রাবেয়া কোন কথা বলে না। শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে ওর।
ওর থুঁতনির কাছে নুরুর দাঁতের দাঁগ। ধস্তাধস্তির সময় কাঁধের কাছ থেকে জামার বেশ খানিকটা ছিড়ে গেছে…
##
কুতুবপুর থানা।
মীরা দাঁড়িয়ে আছে থানার সামনে। ভেতরে ঢোকার সাহস পাচ্ছে না। আদৌ যাবে কিনা ভেতরে তাও বুঝতে পারছে না। কি করবে ও ভেতরে গিয়ে? কি বলবে?
“কি হল? এখানে ঘুরঘুর করছেন কেন? কি কেস?” থানার গেটে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ হাবিলদার জিজ্ঞেস করে,
মীরা আমতাআমতা করে বলে, “ইয়ে… মানে, ওসি সাহেব আছেন?”
হাবিলদার ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে, চোঁখগুলো লোলুভ হয়ে ওঠে তার। হাবিলদার সেটা লুকিয়ে রাখতে চাইলেও কিছুটা প্রকাশ পেয়েই যায়। কিন্তু ভীত-কম্পমান মীরার চোঁখে সেটা ধরা পড়ে না। হাবিলদার বলে, “ভেতরে যান”
মীরা অসংলগ্নভাবে ভেতরে যায়। কুতুবপুর ছোট থানা। থানার ভেতরটা যেন কেমন, জনমানবহীন। আসবাব-পত্রগুলো পুরোনো অনেকদিনের। সে শুনেছিল, থানায় নাকি আসামীদের জায়গা হয় না, সারাক্ষণ লোকে-লোকারান্য থাকে থানা, নানা লোক নানা কাজে আসে। কিন্তু এখানটা একদম খালি। ভেতর কোথাও হয়ত দু’একজন কথা বলছে। একজন লম্বা কাঁঠের মত দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু তার চোঁখে ঘুম।
হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে হালকা বেটে ধরণের এক লোক ভেতরের ঘর থেকে বেড়িয়ে এল। তার হাতের ট্রেতে চায়ের কাপ। মীরাকে তার দিকে চেয়ে থাকতে দেখে সে জিজ্ঞেস কর, “কি চাই?”
“ও…ওসি সাহেব আছেন?” মীরা ঠিকভাবে কথা বলতে পারে না। কেন জানি, আজ সে ভয়টাকে কাটাতেই পারছে না।
“উনি ব্যস্ত, পরে আসুন” লোকটা জবাব দেয়।
“উনি যে আমাকে এই সময় আসতে বলেছিলেন” মীরা বলে
“আপনাকে? নাম কি?”
“মীরা” মীরা নাম বলে।
“ও! আপনিই! যান, যান! ভেতরে যান, তেনারা অপেক্ষা করছে…” মুচকি হাঁসতে হাঁসতে লোকটা চলে যায়।
মীরা ঠিক কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।
মীরা ভেতরের ঘরের দরজা ধাক্কা দেয়।
ওসি সাহেবের পাশে সাদা পাঞ্জাবী পরা এক লোক বসে আছে। লোকটাকে ও চেনে, বড় নেতা, জাতিপার্টির রাজনীতি করে, নাম দবিরুদ্দীন। ফরিদ উনারই ছেলে। দু’জনের হাতেই সিগারেট। মীরাকে দেখেই ওসি সাহেব বললেন, “ও আপনি! আসুন, বসুন” বলেই সে সিগারেটে টান দেয়।
মীরা ওসি সাহেবের সামনে রাখা চেয়ারে এসে বসে।
ওসি সাহেব আর দবিরুদ্দীন, দু’জনেই ওর দিকে এক দৃষ্টে তাঁকিয়ে আছে। মীরা বিব্রত বোধ করতে থাকে।
ওসি সাহেব আস্তে কি যেন বলে ওঠেন। দবিরুদ্দীন চোঁখ বাঁকিয়ে ওসি সাহেবের দিকে তাঁকিয়ে মুচকি হাঁসে।
ওসি সাহেব আস্তে আস্তে বলতে শুরু করেন, “ইনি হলেন…”
“চিনি। দবিরুদ্দীন। জাতিপার্টির। ফরিদ ইনারই ছেলে”, মীরা বলে।
ওসি সাহেব অ্যাশট্রেতে সিগারেটের গোড়া চেপে ধরে বলেন,
“হ্যাঁ। চেনেন দেখছি।
উনি আবার আপনার অ্যাগেইন্সটে কমপ্লেইন অ্যারাইজ করেছেন। উনার ছেলেকে হ্যারাস করা, মারধোর করা…”
“না না, আমার ছেলের কেস যদি প্রমাণিত না হয়, তখন ঐটা নিয়ে আবার নতুন করে কেস! আমার একটা পলিটিক্যাল ইমেজ আছে” ওসি সাহেবের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলেন দবির।
“হ্যাঁ। সে যাকগে, উনার ছেলে যদি অন্যায় করেই থাকে, তাহলে ঠিক কি কি করেছে একটু খুলে বলুন তো!” ওসি সাহেব বলেন।
“কি কি করেছে মানে?” মীরা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে
“মানে হাত দিয়ে না কি দিয়ে কি না কি করেছিল…” দবির বলে ওঠেন।
“না মানে, আমাকে তো আবার কেসটা সাজাতে হবে…” ওসি সাহেব গাল ঘষতে ঘষতে বলেন
“হ্যাঁ, মানে… কোথায় কোথায় নাকি হাত দিয়েছে, উপরে, নিচে… কোথায় ক’বার দিয়েছে… এগুলো আরকি” দবির বলেন। মুখে কেমন যেন একটা হাঁসি।
মীরা দরদর করে ঘামতে থাকে। কিছু বলতে পারে না।
“কিছু তো বলুন” দবির বলেন।
“আমি… আমি লি…লিখে দেব নাহয়। এভাবে…”
“বা…বা…বা… বাহ… সবার সামনে বলতে পারছ, আমার ছেলে এই করেছে, সেই করেছে। আর আমাদের সামনে দেখাতে পারছ না, কোথায় কি করেছে?” দবির জোড়ে বলে ওঠেন!
“হ্যাঁ। ওগুলো আমরা আবার ময়না তদন্ত করব। দেখান, দেখান…” ওসি সাহেব আবারো গাল ঘষছেন।
মীরা লজ্জায় নীল হয়ে যায়। কিছুই বলতে পারে না ও।
ওসি কিছুক্ষণ পর বলে ওঠেন, “কি ভাবছেন? আমাদেরও কিছু…”
দবির এবারে হেঁসে ওঠেন। চেয়ারে একটু নড়ে চড়ে বসেন তিনি। আবার সাথে সাথেই উঠে দাঁড়ান। আস্তে আস্তে তিনি মীরার কাছে গিয়ে দাঁড়ান। মীরার পিঠে হাত রাখেন।
মীরা তার হাতের স্পর্শ পেতেই যেন ইলেক্ট্রিক শক খাওয়ার মত কেঁপে উঠে দাঁড়িয়ে যায়! কিন্তু মাথা তুলে তাঁকাতে পারে না। দবির আরো ঘনিষ্ঠভাবে ওর দিকে এগিয়ে আসে…
মীরা হঠাৎ দৌড়ে বের হয়ে যায়…
দবির রেগে ওঠেন। ওসি সাহেব জোড়ে হাঁসতে থাকেন…
##
বেলাল সাহেব দোকান থেকে কেবল ঘরে ফিরেছেন। বাজারে তার স্বর্ণের ব্যবসা। এই মফস্বলের বাজারে স্বর্ণের কিনুয়ে নেই, বেঁচা-কেনা হয় না বললেই চলে। তবু তিনি বাপ-দাদার ব্যবসা হালে ছেড়েও দিতে পারেন না। হাতে টাকা-কড়ি তেমন আসে না। বেশিরভাগ সময়ই তার মন মেজাজ ভাল থাকে না তাই। তবে আজ তার মনটা ভাল। হাতে ক’টা টাকা পেয়েছেন।
হাত-মুখ ধুঁয়ে স্ত্রীকে খাবার দিতে বলে তিনি বসলেন টিভি সেটের সামনে। এখানে এখনো ডিশ আসে নি, বিটিভির রাতের খবর দেখাচ্ছে। ২/৩ মিনিট পর স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে জোড়ে বললেন, “কই গো, খাওন কই?”
“আনতেছি” স্ত্রী চিৎকার করে জবাব দেন।
“তাড়াতাড়ি আন” বেলাল সাহেব আবার বলেন।
উনি টিভির দিকে মনোযোগ দেন। এখন টিভিতে খবরের মাঝখানে অ্যাডভারটাইজ হচ্ছে। অ্যাডভার্টাইজটা এমন-
“… … … … … … … … … … … … …
:চল, আইজকা জলিলের বাড়ি ঘেরাও দিমু
:কি করছে জলিল?
:মিনুরে এসিড মারছে
:আইনে আছে এসিড মারার বিচার নব্বই দিনের মধ্যে শেষ করতে হয়
: ফাঁসিও হইবার পারে
… … … … … … … … … … … …
লোভে পড়ে, যারতার কাছে এসিড বিক্রি করবেন না… …”
আবার খবর শুরু হয়েছে। স্ত্রী খাবার সাজিয়ে দিয়েছেন। বেলাল সাহেব খবর দেখতে দেখতে ভাত মাখছেন করলা ভাজি দিয়ে।
হঠাৎ দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ।
“ওহন আবার কেডা আইলো?” বেলাল সাহেব বলতে বলতে খাবার রেখে উঠে যান।
দরজা খুলতেই কেউ একজন বলে ওঠেন, “বেলাল কে?”
বেলাল সাহেব যেন বোকা হয়ে যান, দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে পুলিশ।
তিনি আমতাআমতা করে বলেন, “আ…আমি। কি হইছে?”
পুলিশ অফিসার বলেন, “আপনি আমাদের সাথে একটু আসুন”।
বেলাল সাহেব ভয় পেয়ে যান। তার স্ত্রীও উঠে এসেছেন এর মাঝে।
“উনি ক্যান যাইবো? উনি কি করছে? আপনেরা উনারা কই লইয়া যাইবেন?” বেলাল সাহেবের স্ত্রী যেন আর্তনাদ করে ওঠেন!
“এনায়েত সাহেবের মেয়ের গায়ে শরীফ এসিড মেরেছে। আপনাকে আমাদের সাথে একটু যেতে হবে”, পুলিশ অফিসার বলেন।
বেলাল সাহেবের মনে পরে, আজ দুপুরে তিনি শরীফের কাছে ১৫০ টাকায় এক বয়াম এসিড বিক্রি করেছেন। পেছন থেকে আরেকজন পুলিশ এসে বেলাল সাহেবের হাতে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে দেন।
বেলাল সাহেবকে পুলিশ নিয়ে যায়। তার স্ত্রী দরজার পাশে বসেই কাঁদছেন। টিভিতে অ্যাডটা আবার দিচ্ছে-
“… … … … … … … … … … … … … …
:মিনুরে এসিড মারছে
:আইনে আছে এসিড মারার বিচার নব্বই দিনের মধ্যে শেষ করতে হয়
: ফাঁসিও হইবার পারে
… … … … … … … … … … … … … … …”
বেলাল সাহেব ফিরে এলেন ঘন্টা চারেক পর। কিছুই করতে হয় নি তেমন, ওসি সাহেবকে দু’টো ৫০০ টাকার নোট ধরিয়ে দিতেই কাজ হয়ে গেছে।
##
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জের মানরা এলাকায় চলন্ত বাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন গার্মেন্টস কর্মী এক অষ্টাদর্শী তরুণী ((http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-01-27/news/324360))।
তরুণীটি ছিল এক মারাত্বক অপরাধে অপরাধী। তার অপরাধ, সে নারী। তরুণী শুভযাত্রার জন্যে ‘শুভযাত্রা পরিবহন’র একটি বাসে করে পাটুরিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। ভেবেছিল সে ঘরে ফিরবে। কিন্তু, অপরাধী তো আর ঘরে ফিরতে পারে না। তরুণীর অপরাধের যোগ্য সাজাই হয়েছে। সে ধর্ষিত হয়েছে।
সাজা দেবার এই বীরত্বপূর্ণ কাজটি করেছেন বাসের চালক দীপু আর হেল্পার কাশেম মিলে। মানিকগঞ্জে এসে বাসটি নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান চালক দীপু। এরপর বাসের সব যাত্রী বাস থেকে নেমে যায়। যাওয়ার সময় হেলপার আবুল কাশেমের কাছে টাকা ফেরত চান ওই তরুণী। টাকা না দিয়ে তাকে অপেক্ষা করতে বলেন হেলপার কাশেম। যাত্রীরা চলে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর বাসটি সচল হয়েছে বলে মেয়েটিকে গাড়িতে উঠে বসতে বলেন চালক-হেলপার। শুধুমাত্র তরুণীকে নিয়ে বাসটি রওনা হয় পাটুরিয়ার উদ্দেশে। এরই মধ্যে পালাক্রমে চালক-হেলপার মেয়েটিকে তার প্রাপ্য সাজা দান করে করে।
##
পথেঘাটে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার খবরগুলো নিয়ে যখন বিচলিত মানুষজন কিছু প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করছিলেন, ভাবছিলেন স্থায়ী সমাধানের কথা, তখন এসব ছাপিয়ে আসতে থাকল ধর্ষণের খবর। কিন্তু যে সমাজে নিতান্ত দুধের শিশুও ((http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=27&dd=2013-02-01&ni=124224)) নিরাপদ নয়, সে কি মানুষের সমাজ হতে পারে? স্বভাবতই কঠোর আইন আর কঠিন শাস্তির কথা উঠেছে। কিন্তু আইনের প্রক্রিয়াটি ভিকটিমের জন্য এমনই প্রতিকূল যে, তা ডিঙিয়ে শাস্তি আদায় করা প্রায় অসম্ভব। তার ওপর পুরুষশাসিত সমাজের আনুষঙ্গিক লাঞ্ছনা তো আছেই। ফলে ঘটনা প্রকাশ পায় কম, শাস্তি হয় আরও কম।
##
দুষ্টচক্র যে এ সমাজে পাকাপোক্ত আসন করে নিতে পারছে, তার কারণ যৌনতা সম্পর্কে আমাদের নীরবতা। নানা অসঙ্গতি, অদূরদর্শীতা, পরিকল্পনাহীনতার ফলে সমাজে অধিকাংশ দাম্পত্য সম্পর্ক বস্তুত ঘানিটানার মতো গতানুগতিক, যান্ত্রিক, একঘেঁয়ে ও ক্লান্তিকর ব্যাপারে পরিণত হয়। যার কুৎসিত একটি ফল হল যৌনতা। এ সমাজে যৌনতা সম্পর্কে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যকর মনোভাব তৈরি হতে পারে না। এ সমাজ অসুস্থ। অসুস্থ এই সমাজের অসুস্থতার মাঝে বেড়ে ওঠা অসুস্থ্য মানসিকতার ছেলেমেয়েরা নানা রকম অজ্ঞতা আর বয়সোচিত জৈবিক-মানসিক রোমাঞ্চ, শিহরণ ইত্যাদির মাঝে এক হ-য-ব-র-ল অবস্থার মধ্যে বড় হতে হতেই অনেকসময় ঘটনা-দুর্ঘটনার জন্ম দেয় বা তার শিকার হয়।
##
আমাদের সমাজটা হল একটা দারুন জ্ঞানী সমাজ। কিন্তু, সে ভান করে থাকে যেন সে কিছুই জানে না। ইতিহাস বলে, অতীতকাল থেকে সব রকম বুনো প্রাণীকে পোষ মানানোর কাজটার সূচনা করেছিল নারীরা। দার্শনিক উইল ডুরান্ট লিখেছেন, নারী বন্য পশু পোষ মানাতে মানাতে পুরুষকেও প্রায় বাগে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু সম্পদের ওপর প্রভুত্বের প্রয়োজনে তারা বল্গা ছিঁড়ে ফেলেছে। আমার বিশ্বাস, কিশোরকে সবচেয়ে ভালো ম্যানেজ করতে পারেন স্নেহশীল নারী।
##
দিনের পর দিন অপসংস্কৃতির আগ্রাসন আমাদের সমাজকে করছে মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। কিশোর ও যুবকদের খেলাধুলা ও জ্ঞানচর্চার প্রতি অনীহা, সুস্থ বিনোদনের অভাব, নারীর প্রতি ছেলেদের আসক্তি কে চরম পর্যায়ে তুলে দেয় ((http://www.amarblog.com/sakib-mohammad/posts/158283)) । আজকের সমাজে নারী কিংবা মেয়েদের প্রতি ছেলেদের লোভ লালসা দেখলে খুব বেশি বিব্রত বোধ করতে হয়। আমার বন্ধুদের দেখি, তাদের আড্ডার বিষয়বস্তু থাকে কোন মেয়ের বুকের সাইজ কত, বিছানায় কার পারফরমেন্স কেমন হবে তা নিয়ে । এমনকি প্রিয় বান্ধবিকে নিয়েও আড়ালে চলে এই ধরণের কুরূচিপূর্ণ আলোচনা ((http://shorob.com/?p=12222)) । সত্যি বলতে আমার আশেপাশের অধিকাংশ ছেলেদের মাঝেই মেয়েদের নিয়ে এসব আলোচনা হয়। আমার সামনে, এসব দেখে আমি চুপ করেই থাকি। কিছুই বলি না। পাছে, আমায় ওরা ‘কুলাঙ্গার’ উপাধি দিয়ে বসে!!
এসব দেখে মাঝে মাঝে বড্ড লজ্জা হয়, কারণ আমিও একটা ছেলে হয়েই জন্মেছি। আর আমিই কি এসবের উর্ধ্বে যেতে পেরেছি??
##
কিশোর যখন যৌনতাড়নায় ভোগে, তখন তাকে নিঃসঙ্গতা কিংবা কুসঙ্গে ঠেলে দেওয়া তো রীতিমত সামাজিক অপরাধ। যুগ যুগ ধরে এ অপরাধ তো আমরা করে আসছি। আজকে ডিভিডি, চ্যানেল, ইউটিউব এবং মেইলের মাধ্যমে যেভাবে যৌনতার মুক্ত ভয়ংকর প্রদর্শনী ও ছড়াছড়ি চলছে, তখন কোনো রকম শিক্ষা-সাহচর্য-পরামর্শ ছাড়া একটা সদ্য প্রবৃত্তিতাড়িত-পীড়িত কিশোরকে আমরা এর মধ্যে ছেড়ে দিয়ে তার কাছ থেকে সঠিক আচরণটি আশা করছি। কি হাস্যকর! ভাই, এর চেয়ে মুরগীর ডিম থেকে ঈগল আশা করা অনেক ভাল!
##
যৌনতা বিষয়ক নীরবতা ভাঙতে হবে। যৌনতা এমন এক উপাদান, যা নারী-পুরুষের জীবনে কখনো ভীষণ সহায়ক, কখনো প্রতিবন্ধক, কখনো শান্তি-প্রীতির আধার, কখনো সংঘাত-ঘৃণার হাতিয়ার হতে পারে। আমাদের সমাজ এর মন্দ দিকটি আড়াল করতে বদ্ধ অরিকর। ফলাফল, সমাজে যৌনতার বেপরোয়া প্রচণ্ড রূপটিই প্রকট হয়ে উঠছে।
##
নারী-পুরুষ একে অপরকে ভালবাসবেই, তারা কাছে আসবেই। এটাই প্রাকৃতিক, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই স্বাভাবিক ব্যাপারটারও একটা মাত্রা আছে। সেই মাত্রাটার দিকে নজর রাখা সবসময়ই খুব প্রয়োজন।
কিন্তু আজকালকার দিনে ভালবাসা কেবলি হালের ফ্যাশান কিংবা মোহ, এতে নেই কোন নান্দনিকতা নেই। আছে কেবলি শূন্যতা। ইদানিং প্রায়ই পাব্লিক প্লেসেও নারী পুরুষকে ঘনিষ্ট অবস্থানে দেখা যায়। ব্যাপারটা তাদের জন্যে ঘনিষ্ঠ অবস্থান হলেও, তার আশে পাশের মানুষগুলোর জন্যে কিন্তু তা নয়। যে কাউকেই দারুন বিব্রতকর অবস্থার মাঝে ফেলে দেয় এই দৃশ্যটা। আর সেটা যদি হয় কোন উঠতি বয়সের ছেলে বা মেয়ের সামনে, অবস্থাটার কি হয় তা আর বলতে চাই না। এই ঘটনাগুলো আসলে ভালবাসার মাহাত্ম্য বা সৌন্দর্য্যকে নষ্ট করে দেয়। কেন রে ভাই, এই ব্যাপারটা একান্তই ব্যক্তিগত। ব্যক্তিগত বিষয়, ব্যক্তিগত রাখাই ভাল, পাব্লিক করার দরকারটা কি?? নৈতিকভাবে ব্যাপারটিকে কোনভাবেই সমর্থন করা যায় না। ভালবাসা দেখানোর জিনিস না। বাসায় বই পড়া খুবই ভালো কাজ। কিন্তু পরীক্ষার কক্ষে বই বের করা অপরাধ। প্রতিটা জিনিসেরই একটা উপযুক্ত স্থান ও সময় আছে। যার বাইরে তা সৌন্দর্য হারায়। ভালবাসার এই আকালে আজ শুদ্ধ প্রেমের খুবই প্রয়োজন।
##
নারীত্ব বা মনুষ্যত্বের চরম সীমা অতিক্রমকারী অবমাননাকর যৌননির্যাতনের নাম হলো ‘ধর্ষণ’। তার চেয়েও জঘন্য হল ধর্ষণের পর ধর্ষিতাকে অমানুষিকভাবে হত্যা করা। আরো বেশি জঘন্য হল শিশুধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর ওই শিশুকে হত্যা করা! যৌননির্যাতন তথা ব্যভিচার সর্বযুগে সর্বধর্মমতে নিকৃষ্টতম পাপাচার। প্রসঙ্গক্রমে এখানে পবিত্র আল-কোরানের সুরা বনি ইসরাইলের ৩২ নম্বর আয়াতটি উল্লেখ করছি- ‘তোমরা ব্যভিচারের ধারেকাছেও যেয়ো না, কারণ এটা একটা অশ্লীল এবং জঘন্য পন্থা ((http://www.quran4u.com/Bengali/Arabic/017Isra_P.htm)) ” বৌদ্ধ ধর্মে বলা হয়েছে, যেকোন পুরুষের জন্যে নারীর প্রতি কুদৃষ্টি দেয়া মানবীয় পবিত্রতার পরিপন্থি।
##
পুরুষ যেহেতু ধর্ষণে সক্ষম, তাই তার পক্ষে ধর্ষকে পরিণত হওয়া সম্ভব। এর বিপরীতে হয়তো নারীর প্ররোচনার কথা তোলা হবে। মেয়েদের পোশাক-আশাক ও চলাফেরা ইত্যাদি নিয়ে কথা উঠবে¬। কিন্তু মূল বিষয়টি হলো বিপরীত লিঙ্গের মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষণ জৈবিক এবং স্বভাবগত। আমাদের সমাজে পুরুষ এর শতভাগ অর্জন করতে বদ্ধ পরিকর আর এর ভুক্তভোগী হল ‘অবলা নারী’।
##
সেদিন পত্রিকায় দেখলাম, ভারতের কোনো এক হিন্দু পুরোহিত এই ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, ‘ধর্ষণের জন্য ধর্ষিতাই দায়ী’ ((http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-01-07/news/319449))। এ মন্তব্য নিয়ে সেখানে জনগণের মধ্যে নতুন আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে। ব্রিটিশ উপনিবেশ হওয়ার আগ পর্যন্ত ভারতীয় হিন্দুসমাজ ছিল খুবই রক্ষণশীল। যদিও ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় সামন্ত প্রথার কারণে উচ্চবর্ণ ও নিম্নবর্ণের পার্থক্য ছিল প্রকট। তার পরও ধর্ষণ অপকর্মের এমন ‘পাইকারি’ নজির ছিল না।
##
যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার পরও অনেকে তা প্রকাশ করে না। তারা কলঙ্কের দাগকে ভয় করেন। কখনোবা সংঘর্ষের ভযে এড়িয়ে যান এসব ঘটনা। আবার কোথাও কোথাও ভিক্টিমকেই দায়ী করা হয়। এজন্যও অপরাধীরা উৎসাহবোধ করে। যার কারণে পরবর্তীতে ধর্ষণের মতো অপরাধগুলো আরও বেড়ে যায়। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে ধর্ষণের সাজা খুবই নিম্ন মানের ((http://www.bodlejaobodledao.com/archives/47779 )) । তাছাড়া সাজা প্রাপ্তির হার ৩৩ ভাগের বেশি নয়। যেখানে জাপানে এই হার ৯৯ ভাগ। আর সাজা না হওয়ার কারণে অপরাধীরা উৎসাহীত হয় অপরাধে। এজন্য যৌন হয়রানির ঘটনা আশঙ্কাজনভাবে বেড়েই চলেছে আমাদের দেশে।
##
ধর্ষণের স্বীকার নারীর কর্তব্য হলো- তার ধর্ষণের ঘটনাকে যথাসম্ভব পরিচিত কারো কাছে প্রকাশ করা এবং যত দ্রুত সম্ভব আইনের দ্বারস্হ হওয়া। মনে রাখা উচিত ধর্ষিতা অসম্মানিত নয়, ধর্ষক নিকৃষ্ট ((http://www.bbc.co.uk/bengali/news/2013/01/130102_mhrapesilence.shtml )) । ধর্ষণ হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য আত্মরক্ষা কৌশল আয়ত্ব করার সাথে সাথে নিজেকে সদা সতর্ক অবস্হায় রাখতে হবে। আর ধর্ষণের শিকার হয়ে গেলে নিজেকে কোন ভাবে গুটিয়ে রাখা যাবে না । প্রতিটি মেয়েরই উচিত নারি নির্যাতন ও পারিবারিক আইনের সাথে সম্পৃত্ত আইনের ধারা ও উপধারা সম্পর্কে ধারণা রাখা।
##
আমাদের সমাজ অতিমাত্রায় কনজারভেটিভ। যার ফলাফল হল- একটা ছেলের সাথে একটা মেয়ে অন্তরঙ্গে কথা বলছে, অন্যেরা তাদের নিয়ে নোংরা চিন্তা করে। আমাদের শেখানো হয়, একটা ছেলে আর একটা মেয়ে কখনোই ভাল বন্ধু হতে পারে না। সে জন্যে একটা ছেলে সহজভাবে একটা মেয়ের সাথে মিশতে পারে না কোনভাবেই। এরপর আবার সেই ছেলেটাকেই একদিন একটা অচেনা অপরিচিত মেয়ের সাথে বিয়ে করিয়ে দেয়া হয়, বলা হয় এই মেয়েটাই তার জীবনসঙ্গী। স্বাভাবিকভাবেই, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে দু’টি মানিয়ে নিতে পারে না। ফলাফল, তাদের মাঝে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয়। দৈহিক, মানসিক, আত্মিক- কোন চাহিদাই তাদের পূরণ হয় না। কাম প্রবৃত্তি তাদের মাঝে প্রবলভাবে জেগে ওঠে।
##
দেশের বিভিন্ন স্থানে গত ৪ বছরে প্রায় ১৩ হাজার নারী ধর্ষিত হয়েছেন, নির্যাতিত প্রায় ৭০ হাজার ((http://www.dailynayadiganta.com/new/?p=87852 )) । ৪ বছরে ১৩ হাজার, মানে বছরে গড়ে ৪ হাজারের কিছু বেশি। এ আর এমন কি? ১৬ কোটির দেশে বছরে ৪ হাজার নারীর সম্ভ্রম না হারালেই কি আর হারালেই বা কি?? আমেরিকায় তো বছরে ৯৫ হাজার ধর্ষণ হয়! ওরা করলে দোষ না, আমরা করলে দোষ!!
এই তথ্যটাতে কিন্তু কেবলমাত্র নির্যাতনের যে ঘটনাগুলো রিপোর্টেড হয়েছে, সেগুলোকে কাউন্ট করা হয়েছে। নারীকে আমাদের সমাজে মানুষের মর্যাদা দেইনি কখনই। নারীকে ধরেই নেয়া হয় ভোগের বস্তু। “এত ধর্ষণ হচ্ছে কেন এবং তা থেকে পরিত্রানের উপায় কি?” এ প্রশ্ন যদি কোন যে কাউকে জিজ্ঞেস করা হয়, তার উত্তরটা হয় এমন- ভাল মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হয় না, যারা ধর্ষিত হয়েছে তাদের পোশাকে সমস্যা ছিল ((http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-01-18/news/322208 ))। ইসলাম ধর্মে, নারীকে পর্দা করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে পুরুষদেরও চোঁখ অবনত রাখতে বলা বয়েছে । তাহলে শুধু নারীর দোষ কেন? একটা নতুন প্রবাদই দাঁড়িয়ে গেছে, ‘যত দোষ নারী ঘোষ’; কপাল মন্দ – এটাই সত্য বলে প্রতিয়মান হতে চলেছে।
##
Fornication ev Adultery বা ব্যভিচার বা লাম্পট্য- এটা এখন একটা পৈশাচিক ফ্যাশান। বিভিন্ন কারণে অনেক নারী জীবিকা উপার্জনের পন্থা হিসেবে বেশ্যাবৃত্তিতে লিপ্ত হয়। এটা আবার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মোতাবেক রীতিমতো লাইসেন্সধারী পেশা ((http://www.somewhereinblog.net/blog/galibullahazary2010/29225329)) !
##
ছোট বেলায় শুনেছিলাম পৃথিবীতে এমনও দিন আসবে যখন যৌনতাড়িত মহিলাদের ভয়ে পুরুষ মাদার গাছে উঠতে বাধ্য হবে। মাদার গাছে সর্বত্র বড় বড় কাঁটায় ভর্তি। সেই সকল নারীরা এমনই দুর্ধষ ও অত্মাচারিত হবে যে তাদের যৌন নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে মাদার গাছের কাঁটাও তারা তুচ্ছ জ্ঞাণ মনে হবে। মনে হয়, পুরুষরা তাদের শোধ অগ্রীম সুদে-আসলে তুলে নিচ্ছে।
##
মানুষ অভ্যাসের দাস, আর অভ্যাস মানসিকতার। ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিধান করাটা খুবই জরুরী। কিন্তু আমাদের মানসিকতা বদলানোও অনেক অনেক বেশি জরুরী। যে সমাজে একটা ছেলে ঘুম থেকে উঠে পত্রিকার পাতায় দেখে ধর্ষনের খবর, ইচ্ছুক হোক বা না হোক ফেইসবুকে লগ ইন করে ১৮+ পেইজের পোস্ট দেখে, দোকান থেকে নতুন মুভির সিডি কিনে এনে দেখে তার ভেতরে অন্য কিছুর সিডি- তার কাছ থেকে ভাল কিছু আশা করা যায় না, তার মন-মানসিকতা নষ্ট হয়ে যায়, অসুস্থ হয়ে যায় সে। সে ভাল হতে চাইলেও ভাল হতে পারে না, ভালটা শিখবে কোত্থেকে সে? আগাছার পাতা ছেটে দেয়া যায়, তাকে উপড়ে ফেলা যায়। কিন্তু তার চেয়েও ভাল, আগাছা যেন না জন্মায় সেদিকে নজর দেয়া। যা আগাছা আছে, তা উপড়ানোর সাথে সাথে পাশে যেন আর নতুন কোন আগাছা না জন্মায়, সেটাও দেখতে হবে। নইলে মোটের উপর লাভের খাতায় ঋণাত্বক চিহ্ন বৈকি শূন্যও জুটবে না।
##
কিছুদিন আগে একটা লেখা পড়েছিলাম ((https://www.facebook.com/KoranOHadis/posts/515551168468190 )) । সেখান থেকে কিছু লাইন আমি এখানে কপি-পেস্ট করছি-
“যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানী, ফ্রান্স – So called নারী অধিকারের তীর্থভূমি এই দেশগুলি ধর্ষন সংখ্যায় শীর্ষ দশে অবস্থান করছে। অন্যদিকে হিজাব ও ইসলামী শরিয়ার দেশ সৌদি আরব নারীদের জন্য পৃথিবীর অন্যতম নিরাপদ দেশ। … … যুক্তরাষ্ট্রে মোট রিপোর্টেড ধর্ষনের সংখ্যা ছিল ৯৫,১৩৬, আর সৌদি আরবে ছিল মাত্র ৬৯। … … ২০০৯ সালে প্রত্যেক লাখে যুক্তরাষ্ট্রে ধর্ষণের হার ছিল ২৮.৬, যুক্তরাজ্যে ২৪.১ আর সুইডেনে ৫৩.২”।
এই তথ্যগুলো ((http://en.wikipedia.org/wiki/Rape_statistics)) সম্পুর্ণ সঠিক। কিন্তু সমস্যা হল, এখানে শুধুমাত্র রিপোর্টেড রেইপ কেইসগুলোকে কাউন্ট করা হয়েছে। সৌদি আরবে তো ধর্ষনের রিপোর্টই হয় না বলতে গেলে ((http://www.topix.com/forum/religion/islam/TB11PD6GPEFAKJLVQ)) ! যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০০০ টি রেইপ কেসের মাঝে ৯৬৭ টি রিপোর্টেড হয়, সেখানে সৌদি আরবে সেই সঙ্খ্যাটা মাত্র ১১৯!! এই পরিসঙ্খ্যানটা তাই আর খাঁটে না।
পথে নেমে আর চিৎকার করতে চাই না, “বদলে যাও, বদলে দাও”। বদলে যেয়ে বদলে দিতে চাই। আমার মত দুর্ভাগা পরের প্রজন্মটার, আমার ভাই-বোনগুলোর যেন হতে না হয়। আমরা যেন তার আগেই আমাদের সমাজটাকে ধুঁয়ে মুছে পরিষ্কার করে ওদের যোগ্য করে গড়ে দিতে পারি……
♂♀ কিছু লিঙ্ক শেয়ার করছিঃ
< ধর্ষণ বৃদ্ধির ৬ কারণ
< ধর্ষণের শিকার
< জোনাথন ট্রুলি
সাঈদ আনোয়ার অনুজ
ঢাকা,
২৬ জানুয়ারী, ২০১৩।
[লেখাটা প্রকাশ করবার ইচ্ছে ছিল না। তবু করে ফেললাম, দেরীটা সেজন্যেই। ভুল ত্রুটি হলে মাফ করবেন। বেশ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত বানান ভুল থাকতে পারে, আমি চেক করে দেখিনি। চোঁখে পড়লে ধরিয়ে দেবেন দয়া করে।]
বাসায় বই পড়া খুবই ভালো কাজ। কিন্তু পরীক্ষার কক্ষে বই বের করা অপরাধ।
খুবই চমৎকার একটা কথা বলছো
বেশ কিছু ভালো কথা বলছ।
কয়েকটা স্টেপ এ কাজগুল করা উচিৎ
#১ একটা প্রতিরোধ
কী করে আগে আগেই আমরা সুন্দর নৈতিকতার মানুষ তৈরি করতে পারি
(দ্বিমত আছে অনেকের অনেক ভাবে… সৌদির উদাহরণটাই যেমন…সৌদির জায়গা না বুঝে একেক জন উদাহরণ দিচ্ছে…তুলনা করতে হলে সেই রকম পরিস্থিতি তো থাকা লাগবে!
পোশাকই সব , অথবা পোশাক কিছুই না ২ টাই আমার কাছে একটু কেমন কেমন লাগে। একটা ব্যালান্স করা যায়… খামাখা ফোর্স প্রয়োগ করে আমরা আসল আলোচনা থেকে দূরে সরে যাই )
#২ প্রতিষেধক
শাস্তি ঠিক মতো দেয়া। কিছু উদাহরণ ঠিক করা
(এইখানে দ্বিমত নাই। খালি কাজ টাই নাই)
লেখায় এত পয়েন্ট আসছে, আলোচনা করা হার্ড। মানুষের মাথাতেও থাকবে না! 😛
পয়েন্ট এর নাম্বার + লিঙ্ক রেফারেন্স আগে দিতে পারো সরব স্টাইলে
সরব স্টাইল কেন যেন হচ্ছে না আমার!! 🙁 🙁
পোশাক অবশ্যই একটা কারণ, কিন্তু এটাই মূল কারণ তা কোনভাবেই হতে পারে না।
সেইটাই!! তুলনা করতে হলে যেটুকু ন্যুনতম সাদৃশ্য থাকা দরকার, তার এক চিলতে পরিমানও নাই! কিন্তু এইটা নিয়ে কদিন আগে দেখলাম পুরো ফেইসবুক সায়লাব হয়ে গেছে!! কারো মাথায় এই নরমাল ব্যাপারটাই আসে নাই!!
একেবারেই অপরিপক্ক্ব লেখা। আসল ব্যাপার হল লিখার সময় একটা সোর্সও ছিল না সামনে। আগে যা যা দেখেছি, বসিয়ে দিয়েছি। পাব্লিশ করার ইচ্ছাই ছিল না আসলে। যা মাথায় আসছে ধুম-ধাম লিখেছি। পরে আপুকে দেখানোর সময় মনে হল লিঙ্কগুলো দেই, তখন বুকমার্ক থেকে খালি কপি পেস্ট করে নিচে বসিয়ে দিয়েছি। আপু দেখে বললেন পাব্লিশ করতে। দিলাম এইখানে, এডিটও করি নাই। ‘মানুষ অভ্যাসের দাস…” এই প্যারা অবশ্য যোগ করেছি দেবার সময়, আগে ছিল না। বাকিটা পড়েও দেখি নাই আর। পড়ার ইচ্ছেও নাই। 🙁
উপরে তুলে দিয়েছি সব। বাকিগুলো এমনি। 🙂
খুব ভালো লেগেছে লেখাটা। তবে র্যান্ডম পয়েন্ট না হয়ে, একেকটা টাইটেলের নিচে বিষয়গুলিকে ধারাবাহিকভাবে আনতে পারলে মাথায় গেঁথে নিতে সুবিধা হত পাঠকদের।
রেফারেন্স সরবের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণই বলা যায়। তাই শেষদের দিকের পরিসংখ্যানে রেফারেন্স আশা করছিলাম (লিঙ্কের লিস্টটায় কি রেফারেন্স ছিল ওগুলির? এতগুলি খুলে দেখা হল না, ফুটনোট আকারে দিলে চোখের জন্য ভালো!)।
আমি জানি, ৯৯% ধর্ষণের পেছনেই হয়তো কারণ হিসেবে পোশাক থাকে না। তবে সেটা প্রমাণের জন্য সৌদি আরব নিয়ে যেই কথাটা বললে সেটা কি ঠিক? সৌদি আরবে ধর্ষণ রিপোর্ট করা হয় না আসলেই? যেই দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ৬০-৭০%ই মেয়ে (এবং সংখ্যাটা বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশের তুলনায়ই বেশি), সেখানে মেয়েদের এই ব্যাপারে এত পশ্চাৎপদ হওয়ার কারণটা কী?
প্রস্টিটিউশন বৈধ – এটা জেনেও আমরা কেন নিশ্চুপ সেটা আমার নিজেরও প্রশ্ন। 🙁
ওহ্ আর হ্যাঁ! বানান নিয়ে আরেকটু যত্নশীল হওয়ার অনুরোধ রইলো। 🙂
আমার খুব বাজে একটা অভ্যাস, আমি বানানের প্রতি যত্নশীল নই। জানা বানানও প্রায়শই ভুল করি।
অভ্যাস ত্যাগ করতে চেষ্টা করছি। 🙂
পশ্চাৎপদ হবে না কেন?? সেখানে তো ধর্ষকের সাজা হবার আগে ধর্ষিতার সাজা হয়!!!
< সৌদি আরবে যৌন হয়রানির বা ধর্ষনের রিপোর্ট হয় না
পরিসংখ্যানটা আমি পেয়েছি সদ্য ইতালি ফেরত আমার এক দুলাভাইয়ের আনা একটা ম্যাগাজিনে। আমি কোন লিঙ্ক এখানে তাই দিতে পারছি না। তবে এইটুকু বলতে পারি, এক সমীক্ষায় দেখা গেছে,
< শতকরা ২৩ ভাগ আরব্য নারী কখনো না কখনো ধর্ষিতা হন। আর সেইদেশের ৪৬% শিক্ষার্থী হোমোসেক্সুয়াল
আর ইন্ডিয়ান ডিফেন্স ফোরামের বক্তব্য অনুসারে সৌদি আরবের শতকরা ৯০% রেইপ কেইসের কোন রিপোর্ট হয় না।
< আরেক মুসলিম দেশ পাকিস্তানের চিত্রটাও খুব একটা ভাল নয়
এই লিঙ্কগুলোর নির্ভরযোগ্যতা কতটুকু?
মুসলিম ইস্যু নামের যেই ব্লগের লিঙ্ক তুমি দিলে, সেখানে লেখা: “Islam under the guise of Sharia law and the Quran endorses rape of women, and incest of infants and children. The effect of this is a massive number of sexual assault cases on women and children.”
গুগল করে যা কিছু পাওয়ায় যায় তার সবই কিন্তু রেফারেন্স না। পুরোপুরি পরস্পরবিরোধী রেফারেন্স হরহামেশাই পাওয়া যায় খুঁজলে। আর সৌদি আরবের সাথে আমার বিশেষ কোন ভালোবাসার সম্পর্ক নেই কিন্তু! 😀 হতে পারে তোমার কথাই ঠিক। আমি শুধু নির্ভরযোগ্য একটা সূত্র চাইছি। ঐ দেশে থাকেন/থেকেছেন এমন অনেক মানুষকেই চিনি আমি, তাদের কাছে সেখানকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেই বৃত্তান্ত শুনেছি তার সাথে মেলাতে পারছি না বলেই কৌতূহলী।
পাকিস্তানের চিত্র তো ভালো হওয়ার কথাও না! 🙁
সত্যি কথা বলতে আমিও প্রথমে মেলাতে পারি নি। বিশ্বাস করতেও ইচ্ছে করে নি।
রেফারেন্স হিসেবে এদের তথ্য কতটুকু নির্ভরযোগ্য তা জানি না। তবে এই ব্লগটা মুসলিম ব্লগ হিসেবে বেশ নামী বলে জানতাম। আর গত ১ বছরে নানা কিছু দেখে এখন ‘পরম নির্ভরতা’ নিয়ে এইটুকু জানি, সৌদি আরব নামের দেশটার ভেতর আর বাহির সম্পূর্ণ আলাদা।
< এই তথ্যগুলো যথেষ্টি পীড়া দেয়!
আবারো বানান ভুল। দুঃখিত। 🙁
উইকিইসলামের লিঙ্ক দিলে তুমি আমাকে ভাইয়া?
উইকিইসলাম উইকিপিডিয়ার কোন শাখা না। এটা ইসলামবিদ্বেষীরা তৈরি করেছে ইসলাম নিয়ে ভুল ধারণা ছড়ানোর জন্য।
সরবে এর আগেও একজন রেফারেন্স হিসেবে উইকিইসলামের লিঙ্ক শেয়ার করেছিল পোস্টে। মুসলিমরাও এসব যখন ধরতে পারে না, কষ্ট লাগে একটু। অবশ্য যারা জানে তাদের অন্যকে না জানানোর দায় আছে নিশ্চয়ই এর পেছনে।
সৌদি আরবের সাথে ইসলামের দূরত্ব অনেক। তার মানে এই না যে যেই দোষ ওদের নেই সেটাও আমরা প্রচার করবো। বাংলাদেশ দুর্নীতিবাজ দেশ এটা বলার অধিকার পৃথিবীর যে কারোরই আছে, কিন্তু বাংলাদেশে কন্যাভ্রূণ হত্যা প্রচলিত এমন কথা কেউ বলতে পারবে না।
বোহেমিয়ান আর সামিরা অনেকগুলো কথা ইতিমধ্যে বলে ফেলেছে। নতুন করে বলার কিছু নাই। আলাদা করে পয়েন্ট করলে মানে যেটা জরুরি, সেই কথাগুলো পয়েন্ট আউট করলে স্ক্রিনিং এ সুবিধা হয়। এটা পরে মাথায় রাখতে চেষ্টা করিস।
সমাধানগুলোর প্রস্তাবনা ভালো লেগেছে। বাস্তবায়নের আশা রাখি।
লেখার থিম নিয়ে বলার কিছুই নাই। আমি বিষয়টা নিয়ে লিখতে লিখতে আমি আজকাল অসুস্থ বোধ করি।
I just want to sleep.
A coma would be nice.
Or amnesia.
Anything, just to get rid of this, these thoughts, whispers… … Did anyone rape my head, too?
Oh, sorry! I’m a male boy!! I can’t be raped, rather I can rape any female beings!!
I can not bear it anymore!!
বাস্তবায়নটুকু আমার হাতে থাকলে অনেক আগেই কিছু একটা করে ফেলতাম… 🙁
আমিও! 🙁
হাহ… একদিন পারব…
ফিনিক্স apu বলেছেন :লেখার থিম নিয়ে বলার কিছুই নাই। আমি বিষয়টা নিয়ে লিখতে লিখতে আমি আজকাল অসুস্থ বোধ করি।
লেখাটা ভালো হয়েছে এতোদূর জানি। এতো পয়েন্ট যে পুরো পড়ে মন্তব্য করতে আসতেই ভুলে গেছি 😛
থিমের ব্যাপারে বলতে গেলে বলা যায়, আসলেই খুব অসুস্থ। ভয়ঙ্কর রকমের অসুস্থ একটা জিনিস।
অসংলগ্ন চেতনায় লিখেছি, আর হয়েছেও খুব র্যান্ডম। 🙁
বাটও, থ্যাঙ্কস অ্যা লট !! 😐