উইমেন অনলি বাস সার্ভিস

আমি কর্মজীবী মেয়ে নই । অনার্স পড়ছি । যদিও শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মজীবন শুরু করার সময় হয়ে এসেছে, কিন্তু সেশনজটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন কবে নাগাদ শেষ করতে পারবো জানিনা । তাই কর্মজীবী নারীদের মত বাসে চড়ে নাজেহাল হওয়ার অবস্থায় খুব বেশী পড়তে হয়নি এখনও । বাসা থেকে রিকশায় চড়েই স্কুল আর কলেজ জীবনের পুরোটা শেষ করেছি । ভার্সিটি জীবন ও প্রায় শেষের দিকে । কিন্তু বাসা পাল্টানোর দরুণ ইদানিং বাসে করেই যাতায়াত করতে হচ্ছে । এবং বাসে মেয়েদের যাতায়াতের আসল অবস্থাটা স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য হচ্ছে আমার । শুধু দেখাই নয়, যেহেতু প্রথম প্রথম বাসে চড়ছি, একেবারেই আনাড়ি, তাই সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট আর গ্রোপিং এর শিকার হতে হচ্ছে নানা ভাবে । আমার সেই সময়ের অনুভূতিগুলো হয় একদম অন্যরকম । সেই অনুভূতিগুলো ভাষা পায়না আমার, নিজেদের রূপ দেখানোর । আমার মত আরো অনেক মেয়েকেই এই অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয় আরো বেশী সংখ্যকবার । ভাবতেই আরো বেশী কষ্ট লাগতে থাকে ।

তো, একদিন বাসে চড়তে গিয়ে ভাবতে লাগলাম শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য বাসের ব্যবস্থার কথা । এরপর বাসায় গিয়ে মেয়েদের হ্যারাসমেন্ট এর উপর নেট ঘেঁটে পেয়ে গেলাম উইমেন ওনলি প্যাসেঞ্জার কারের কথা । তার মানে এইটা আগে থেকেই আছে ! আবার যেটা কিনা বিশ্বের অনেক দেশেই প্রচলিত ! সেই মুহূর্ত থেকে মনে হতে লাগলো আমাদের কেন নেই ? মনে হল, আমাদেরও এই ব্যবস্থা থাকা খুবই প্রয়োজন । তার আগে চলুন, একবার দেখে নেই, কেন আমাদের দেশেও জরুরী এই ব্যবস্থা ।

দেশের একটা বিশাল পার্সেন্টেজের নারীই এখন কর্মজীবী । তাদেরকে প্রায় সময়ই যেতে হয় বাসে চড়ে । সাধারণত, অফিস টাইম এ বাসে এ যারা উঠেন, তারা জানেন, কী রকম উপচে পড়া ভীড় থাকে তখন সব বাসেই । ভীড়ের মধ্যে হুড়মুড় ও ঠেলাঠেলি করে উঠতে না পারলে অবশ্যই দেরী হয়ে যাবে গন্তব্যে পৌঁছতে । যারা উঠতেও পারেন তাদেরকে অবশ্যই আর দশজন পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে উঠতে হয় । এবং কোনভাবে উঠে যেতে পারলেও, অবশ্যই সীট পাওয়া যায়না, এবং পুরুষদের সাথে কোনমতে গা বাঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করেন তারা, যেইটা আদৌ কতটুকু করতে পারেন জানিনা । আর লোকাল বাসের অনেক হেল্পারই এই সময় মুখের উপরে বলে থাকেন, মহিলা উঠাই না ! মহিলা নাকি উঠাতেও ঝামেলা, নামাতেও ঝামেলা ! দোষটা যে শুধুই হেলপারের তা নয় । অনেক সময় পুরুষ যাত্রীরাই হেলপারকে ধমক দেন, মহিলা যাত্রী উঠালে, যখন বাসে ভীড় বেশি থাকে । সরকারি বেসরকারি অফিসে বিভিন্ন ছোট-বড় পদে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা । দায়িত্ব পালনে রাখছেন মেধার স্বাক্ষর । সেই তারাই আবার এখন “ঝামেলা” ।

এবার আসি মহিলা সীটের কথায় । বাসে মহিলা সীট থাকার কথা নয়টা । যেইটা মেয়েদের সংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল ।  তাই অনেক মেয়েদেরকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় পুরুষদের শরীর ঘেঁষে । এই অবস্থায় যখন পিছন থেকে যাত্রীরা নামতে যায় তখনই হয় সমস্যা । এমনিতেই দুজন দাঁড়ানোর কারণে মাঝখান দিয়ে অন্যদের যাওয়ার রাস্তা থাকেনা, তার মধ্যে যদি একজন মেয়ে হন, তাহলে তাদের মধ্য দিয়ে যেতে হলে একজন পুরুষকে হয়ত স্বভাবতই চাপ দিয়ে যেতে হয় । অনেক পুরুষই আছেন, যারা এই অবস্থাটার সুযোগ নিয়ে থাকেন, যেটা মেয়েদেরকে সহ্য করতে হয় । মেয়েদের নামার সময়ও একই ব্যাপার । সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসংখ্য পুরুষের মধ্য দিয়েই বের হতে হয় তাদের । এবং তখনও একই কাহিনীর পুনরাবৃত্তি । এইসব ক্ষেত্রে প্রতিবাদ করতে গেলেই সমস্যা । উলটা নানান আজেবাজে কথা শুনতে হয় । দেখা গেছে, চুপচাপ মুখ বুজে সহ্য করেন যারা, তারাই অন্তত আজেবাজে কথা থেকে রেহাই পান !

আবার সবসময় যে সংরক্ষিত সীটে যায়গা পাওয়া যায় তাও নয় । সেগুলো দখল করে রাখে পুরুষ যাত্রীরাই । মেয়েরা উঠলেই তাদের সরে যাওয়ার কথা । কিন্তু অনেকেই এমন আছেন, সরে যেতে বললেই, তাদের মুখে চলে আসে সমানাধিকারের কথা । যেই সমানাধিকারের কথা তারা হয়ত আর কোন ক্ষেত্রেই ভুলেও মনে আনেন না !

এইভাবে অনেকেই মেয়েদের  সীট দখল করে রাখেন । এইসব ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে যে অন্য পুরুষরা এগিয়ে আসেন না, তা নয় । কিন্তু প্রায়ই এমনটা হতে দেখা যায়, অন্য পুরুষরাও মেয়েটার প্রতি মারমুখী হয়ে যান । তখন হয়ত মেয়েটাকে বাধ্য হয়ে গন্তব্যের অনেক আগেই নেমে যেতে হয় বাস থেকে ।

অনেক লোকাল বাসেই মেয়েদেরকে যেই সীটগুলো দেয়া হয়, সেগুলো থাকে ইঞ্জিনের উপর । এগুলো পরে লাগানো বাড়তি সীট এবং অস্বাস্থ্যকর । ইঞ্জিনের গরমে তাদের বসতে দেওয়াটাও যেন অনেকের দয়ায় পাওয়া । এই গরমে না বসে কেউ যদি মাঝামাঝির দিকে বসতে চান, তখন আবার তাদেরকে শুনতে হয় পুরুষ যাত্রীদের নানান বিশ্রী মন্তব্য । সব ক্ষেত্রেই প্রতিবাদী নারীর বিপদ বেশী !

বাসে যারা ওঠেন, সেই মেয়েদের সবচেয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা হল বাসে ওঠা-নামার সময় হেলপারের বিকৃত মানসিকতার শিকার হওয়া । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাস চলন্ত অবস্থায় যাত্রী নেয় । এ সময় ওঠা বা নামার সময় দরজায় হেলপার দাঁড়িয়ে থাকে । তাদের নেমে দাঁড়ানোর নিয়ম থাকলেও অন্য অনেক নিয়মের মতই এই নিয়মও মানা হয় না । এই ওঠা নামার সময় হেলপার মেয়েদের নানাভাবে নাজেহাল করে ।

এখন আসা যাক সমাধানের চিন্তায় । শুধুমাত্র সামাজিক সচেতনতা তৈরী করে কতটা সম্ভব মেয়েদের প্রতি এই অনাচারের প্রতিরোধ করা ? পত্রপত্রিকা কিংবা ব্লগ কারা পড়ছে ? যারা এই অন্যায়ে জড়িত থাকে তাদের ১০% এর মাঝেও কি এইভাবে সচেতনতা তৈরী সম্ভব ? সমাজ কি পারবে এইভাবে অসহায় মেয়েদের অধিকার আদায় করে দিতে ? পারছে ? ঠিক কবে নাগাদ পারবে ?

আগেই বলেছি, শুধুমাত্র নারীদের জন্য বাস এর আইডিয়াটা মোটেও নতুন কিছু নয় । বিশ্বের অনেক দেশেই এই ব্যবস্থা আছে । এমনকি বিশ্বব্যাপী অনেক দেশেই উইমেন ওনলি প্যাসেঞ্জার কারের জন্য আন্দোলন চলছে ।

উইকিপিডিয়া থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মিসর, জাপান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, পাকিস্তান, মেক্সিকো , ফিলিপিন, মালয়শিয়া, ইরান, দুবাই, তাইওয়ানসহ নানা দেশে উইমেন ওনলি প্যাসেঞ্জার কার আছে ।

মিসর এর কায়রো মেট্রো ট্রেইনের মাঝখানের ৪ এবং ৫ নম্বর বগী দুইটা শুধুমাত্রই মেয়েদের জন্য । তবে মেয়েরা চাইলে অন্য বগীতেও উঠতে পারে ।

জাপান এর অথরিটি মেয়েদেরকে গ্রোপিং এর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বেশ সোচ্চার । অথরিটি গ্রোপিং কমাতে ব্যর্থ হয়ে মেয়েদের জন্য ব্যবস্থা করেছে বেশ কিছু সাবওয়ের আলাদা কারের । Keio Electric Railway, JR East, JR West, Hankyu Railway, Keihan Railway, Osaka municipal Subway ইত্যাদি কোম্পানীর আছে উইমেন অনলি কার ।

জাপানে নারীদের জন্য আলাদা প্যাসেঞ্জার কার

ভারতের মুম্বাই, আর ব্যাঙ্গালোরে আছে লেডিস স্পেশাল ট্রেইনের ব্যবস্থা অনেক আগে থেকেই । পরে জায়গায় না কুলানোর কারণে সংখ্যায় দ্বিগুণ করা হয় এগুলো ।

Ladies Special Train, Bangalore, India

ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তাতে PT kerata Api  নামক এক কোম্পানী চালু করেছে মেয়েদের জন্য KRL Jabotabek Commuter Train ।

KRL Jabotabek Commuter Train, Jakarta, Indonesia

তাইওয়ানের আছে TRA’s Local Service ।

TRA’s Local Service, Taiwan

পাকিস্তানের লাহোরে আছে মেয়েদের জন্য পিঙ্ক বাস সার্ভিস ।

Pink Bus Service, Lahore

ব্রাজিলে আছে উইমেন ওনলি সাবওয়ে কার Rio de Janeiro Metro তে ।

Women-only subway car at Rio de Janeiro Metro

ইসরায়েলের অনেক জায়গাতেও চলছে মেয়েদের জন্য আলাদা পরিবহন ব্যবস্থার আন্দোলন ।

এইবার আসি আমাদের দেশে । বিআরটিসি ঢাকার কয়েকটা রুটে গত বছর নারীদের জন্য আলাদা বাস চালু করেছিল । কিন্তু পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় লোকসানের কারণে মহিলা বাস বন্ধ করে দেয়া হয় । বাসের ইজারাদার জানান, প্রচারণা ভাল হলে হয়ত বাস বন্ধ করতে হতোনা ।

অবশ্য উইমেন ওনলি বাস কিংবা কারই যে সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট কমিয়ে দিতে পারবে পুরোপুরি, সেটা মোটেও সঠিক নয় । কিন্তু আমার মতে, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে, মেয়েদেরকে যেভাবে ছেলেদের সাথে যুদ্ধ করে বাসে উঠতে হচ্ছে, সেই ক্ষেত্রে সমানাধিকারের কথা চিন্তা করাটা বেমানান এবং হাস্যকর । ঢাকা শহরের জনসংখ্যা যেখানে এক কোটির উপরে, সেখানে যত যাই বলা হোক না কেন, পুরুষদের সাথে বেশীরভাগ সময়েই পাল্লা দিয়ে বাসে উঠতে হয় মেয়েদের, এবং ঘরের বাইরে মেয়েদের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে এই হারও বাড়ছে । এই দেশের বেশীরভাগ নাগরিক ইংল্যান্ড কিংবা আমেরিকার মত শিক্ষিত, রুচিশীল নন । অনেকেই হয়ত বলবেন, জেন্ডার সেগ্রেগেসন মেয়েদের জন্য অপমানজনক । কিন্তু পুরুষদের সাথে যেখানে শারীরিকভাবে প্রায় যুদ্ধে নামতে হয় মেয়েদের, সেখানে তো ছেলেমেয়েতে আলাদা হওয়াই বাঞ্ছনীয় । নইলে হয়ত অলিম্পিকে ছেলে আর মেয়েদের একসাথেই প্রতিযোগিতা হত, রেসলিং এ ও ছেলে আর মেয়েদের আলাদা ব্যবস্থা থাকতো না । আমার সাথে যারা একমত নন, তাদের কাছে আমার দাবী, আপনারা কি চান না, আপনার মা, বোন কিংবা স্ত্রী  বাসে অন্য পুরুষের কাছ থেকে নিরাপদ থাকুক ? যদি চেয়ে থাকেন, তাহলে আসুন, আমরা সরকারের কাছে কিছু উইমেন ওনলি বাসের দাবী জানাই । পাবলিক আর লোকাল বাসে মেয়েদের হ্যারাসমেন্ট যদি কোনদিন কমে যায়, তখন সমানাধিকারের কথা ভাবা যাবে !

আর যারা উইমেন ওনলি বাসের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন, তাদের কাছে আমার বক্তব্য, আমাদের এখনই সময় এই দাবীকে জোর গলায় প্রকাশ করার ।  অন্তত প্রধান প্রধান শহরগুলোর ব্যস্ত রুটগুলোতে উইমেন অনলি বাস থাকাটা এখন সময়ের দাবী । শুধুমাত্র সরকারেরই নয়, এগিয়ে আসা উচিৎ বেসরকারী বাস মালিকদেরও । আর এগিয়ে আসা উচিৎ সকল সচেতন নাগরিকের । মেয়েদের অধিকার আদায়ের এটাই উপযুক্ত সময় ।

মুনীরা মারদিয়া সম্পর্কে

একজন ঘুমকুমারী ।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে উদ্যোগ, সচেতনতা-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

25 Responses to উইমেন অনলি বাস সার্ভিস

  1. রাইয়্যান বলেছেনঃ

    কলেজ জীবন থেকেই বাসে চড়ার অভ্যেস, আপনার কথাগুলো যে কতটা সত্য নিজ অভিজ্ঞতা থেকেই জানি! উইমেন্স অনলি গাড়ির ব্যবস্থা থাকলে দারুণ হবে!

  2. সিসোরো বলেছেনঃ

    বেশ ভালো লিখেছেন , নিজের গত চার বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলি , অনিচ্ছা সত্তেও
    অনেকসময় গায়ে ধাক্কা লেগে যায় । সবচেয়ে লজ্জা লাগে যখন এসব ঘটনা মা বয়েসী
    আন্টিদের সাথে হয় । এটা হওয়া খুবই জরুরী । তবে সমস্যা হল অফপিক আওয়ারে এগুলা খালি যাবে , তাই কোন কোম্পানীই রাজি হয় না । তাই পিক আওয়ার ( ৮-১০ টা ) এবং ( ৫-৮) পর্যন্ত শুধু মেয়েদের জন্য এটা করা যেতে পারে ।

    • সুবর্ণরেখা বলেছেনঃ

      হ্যাঁ, ভাইয়া । পিক আওয়ারে করাটাও বিশাল ব্যাপার আসলে ।
      উপরে যেই উদাহরণগুলো তুলে দিয়েছি, সেগুলোর বেশিরভাগই চলে পিক আওয়ারে । সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ওই গাড়িগুলোতে সবাই উঠতে পারে ।
      এখন শুধু উদ্যোগ নেয়াটাই জরুরী ।

  3. মাধবীলতা বলেছেনঃ

    অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা ইস্যু তুলে ধরেছেন সুবর্ণরেখা !! সেইজন্য আপনাকে সাধুবাদ। মুসলিম অমুসলিম এত দেশে যে এই সিস্টেম চালু আছে জানতাম না আসলেই। এখানে অধিকার খর্ব বা মেয়েদের মর্যাদাহানির কিছু আছে বলে আমার মনে হয় নি। বরং এটা তাদের সম্মান ও নিরাপত্তা পাবার অধিকার থেকেই চালু হওয়া উচিত। বিশেষত ধর্ষণের এই লীলাখেলার যুগে তো এটা আরও দরকারি।

    এই লেখা ছড়িয়ে দেয়া উচিত।

    • সুবর্ণরেখা বলেছেনঃ

      অনেক ধন্যবাদ আপু ।
      আমিও জানতাম না আগে । তাই জানার পর মনে হল, আমরা অনেক আগে থেকেই আমাদের একটা ন্যায্য অধিকার থেকে দিনের পর দিন ধরে বঞ্চিত হচ্ছি ।
      মেয়েরাই বুঝতে পারবে যে, এখানে মেয়েদের অধিকার খর্ব নয়, বরং, তাদের সম্মান ও নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে । কিন্তু এক শ্রেণীর মানুষ তো সবসময়ই থাকে, যারা কিনা মেয়েদের অধিকার নিয়ে একটু বাড়াবাড়ি মাত্রায় সচেতন থাকে, অথচ তারা ঠিকই মেয়েদের হ্যারাসমেন্ট এর কোন সমাধান দিতে পারেনা ।

  4. সাঈদ আনোয়ার অনুজ বলেছেনঃ

    অনেক ধন্যবাদ লেখাটির জন্যে। 🙂
    বাসা থেকে বেশ দূরের কলেজে পড়াশোনা করছি, ফলে যাতায়াত মূলত বাসেই করতে হয়। নিয়মিত বাসে চলাচল করার কারণে বাসের ভেতরের পরিবেশটুকু চোঁখের সামনেই বর্তমান।
    উইমেন ওনলি বাস সার্ভিস চালু হলে সমানাধিকার না কি হবে জানি না, তবে এইটুকু বুঝি মেয়েদের অনেক কম হ্যারাসমেন্ট সইতে হবে আর এক শ্রেণির লোক ‘হাউকাউ’ করে বলবে ‘এটা শুধুই একটা বাড়তি আড়ম্বর!’, যদিও এটা এখন সুস্থ সময়ের দাবি।

  5. সুবর্ণরেখা বলেছেনঃ

    অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া । 🙂
    সমানাধিকার এর নামে যেই দেশে মেয়েদের হ্যারাসমেন্ট এর সুবিধা বেশি হয়, সেই দেশে সমানাধিকার মূল্যহীন ।
    তার চেয়ে মেয়েদের যথাযোগ্য সম্মান দেয়ার জন্যেই আমাদের সমাজকে এখন এগিয়ে আসতে হবে ।

  6. গাঙচিল বলেছেনঃ

    খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্বের এতগুলো দেশে ‘উইমেন অনলি বাস সার্ভিস’-এর ব্যবস্থা আছে!!! বলেন কী? 😯
    জীবনে যে কয়বার পাব্লিক বাসে চড়ার প্রয়োজন হয়েছে, অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর ছিল না। এই বিষয়গুলোর দিকে যে কবে নজর দেয়া হবে…… 🙁

  7. ডালিম কুমার বলেছেনঃ

    অনেক সুন্দর একটি লেখা । খুবি গোছানো ।
    আশার কথা হোল আমাদের দেশে এখন বাস সার্ভিস ভালো করার জন্য নতুন প্রযুক্তি আসছে । সম্ভবত ক্যালটেক উনিভারসিটির অনেকে কাজ করছে এই নিয়ে ।
    সত্যি সত্যি সেটা প্রয়োগ করে গেলে হয়তো অবস্থার অনেক উন্নতি হবে
    যে যাই হোক, এমন সুন্দর আরো লেখার অপেক্ষায় থাকলাম ^_^

  8. শাহরিয়ার বলেছেনঃ

    প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর নিয়মিত প্রতিদিন ঢাকা-গাজীপুর পাবলিক বাসে যাতায়াত করেছিলাম। এছাড়া ছোটখাটো দূরত্বে যাতায়াত তো এখনও চলছেই। পুরুষ হলেও অভিজ্ঞতা থেকে জানি, আপনার প্রতিটি কথাই কতটা সত্য ও বেদনাদায়ক। 🙁

    আপনি বলেছেন, “এইসব ক্ষেত্রে প্রতিবাদ করতে গেলেই সমস্যা । উলটা নানান আজেবাজে কথা শুনতে হয় । দেখা গেছে, চুপচাপ মুখ বুজে সহ্য করেন যারা, তারাই অন্তত আজেবাজে কথা থেকে রেহাই পান !” – কিন্তু আমার তো তাও মনে হয় না যে চুপচাপ মুখ বুজে সহ্য করলেই তারা আজেবাজে কথা থেকে রেহাই পান!! 🙁

    তাই আমার মনে হয়, যেহেতু প্রতিবাদ না করলেও কথা শুনতেই হয়, সেহেতু প্রতিবাদ করাই শ্রেয়। আরেকটা ব্যাপার আমি দেখেছি। এমনিতে হয়ত প্রতিবাদ করার লোক খুঁজে পাওয়া যায় না, তবে শুরুটা একজন করলেই কিন্তু আজকাল অনেককেই পাশে পাওয়া যায়।

    পরিবর্তন আনতে হলে তাই… আসুন প্রতিবাদী হই। :fire: :dhisya:

    • সুবর্ণরেখা বলেছেনঃ

      আমি সবসময়েই প্রতিবাদ করে দেখেছি । অনেক কথা শুনতে হয় ।
      তবে ব্যাপার সেইটা না । আমি অবশ্যই প্রতিবাদ করার ই পক্ষপাতী । প্রতিবাদ করেও যে কোন কাজ হয়না, সেই ব্যাপারটায় আমি হতাশ । এইটাই আমি বুঝাতে চেয়েছি ব্লগে ।
      আপনার কথার সাথে আমি একমত ।
      তবে এইভাবে পরিবর্তন কতদিনে আসবে, সেই ব্যাপারেও আমি সন্দিহান ।

      তাই আমার মনে হয়েছে, অধিকার আদায়ের অনেক বিকল্প পথ ও খোলা আছে আমাদের সামনে । যদি সবাই চায়, তাইলে হয়ত, সেইটা খুব বেশী অসম্ভব হবেনা । 🙂

  9. কানন বলেছেনঃ

    আমার মনে হয়, কোন রুটে দুই একটা বড় বাস দিয়ে সার্ভিস দেওয়ার চেয়ে ছোট ছোট মিনিবাস বা লেগুনা দিয়ে সার্ভিসটা চালু করা যেতে পারে, যেগুলো সংখ্যায় অনেক থাকবে। বিভিন্ন নির্দিষ্ট স্টপেজে লাইন ধরে অপেক্ষা করা যাত্রীদেরকে নিয়ে সেগুলো যাতায়াত করবে। পিচ্চি টাইপের হেল্পারগুলা ভাড়া কালেক্ট করবে। আমার কাছে এটাই মহিলা বাস সার্ভিসের জন্য বেশি উপযোগী মনে হয়।

    • সুবর্ণরেখা বলেছেনঃ

      খুবই ভালো লাগলো আপনার পরামর্শ আপু । তবে বেসরকারী বাস মালিকরা কতখানি মেয়েদের কথা চিন্তা করে এই উদ্যোগ নিবে, তাই ভাবনার বিষয় ! 🙁
      যতদূর দেখি আমি, যত কম শিক্ষিত আর কম যোগ্যতা সম্পন্ন চালক আর যত বেশী পুরনো বাস দিয়ে রাজধানীর মধ্যে কত বেশী লাভ করা যায়, সেইটাতেই তারা ব্যস্ত থাকে ।
      মেয়েদের জন্য তারা এতদূর চিন্তা করলে তো খুবি ভালো হত ! কারণ এইটা জানা কথা, এতে তাদের লাভ হয়ত আগের চেয়ে একটু হলেও কম হবে ।

  10. দারাশিকো বলেছেনঃ

    বছর ৫ আগে চট্টগ্রামে মহিউদ্দিন যখন মেয়র তখন মেয়েদের জন্য বাস সার্ভিস চালু করা হল। প্রথম কয়দিন ভালোভাবে চললেও পরে এক অদ্ভুত সমস্যা দেখা গেল। মেয়েরা দাড়ায় থাকে, বাসের দেখা নাই, কারণ সব মিলিয়ে সম্ভবত ৪টা বাস চালু করা হয়েছিল। আবার, এমনও হল, বাস চলে যাচ্ছে, তারপরও মেয়েরা বাসে উঠছে না। কারণ কি? কারণ মেয়েদের সাথে পুরুষ সঙ্গী আছে- স্বামী, ভাই, বাবা, বন্ধু ইত্যাদি। আবার, অফিস টাইম ছাড়া অন্য সময় বাস ফাকা যায়। ফলে মাসকয়েকের মধ্যেই ওমেন ঔনলি বাসকে দুইভাগে ভাগ করা হল। সামনের দরজায় মেয়ে, পেছনের দরজায় ছেলে। সেটাও বেশীদিন চলল না। পরে বাস সার্ভিসই বন্ধ হয়ে গেল।
    ঢাকা শহরে আশা করা যায় এই সমস্যা হবে না।

    • সুবর্ণরেখা বলেছেনঃ

      হ্যাঁ, ভাইয়া । ঠিক বলেছেন । ঢাকার মত জায়গায় এই সমস্যা হবে না আশা করি । আর যথাযথ প্রচারণা ও তখন দরকার হবে ।

      সামনের দরজায় মেয়ে, পেছনের দরজায় ছেলে, এই আইডিয়াটাও ভাল ।
      তবে আমাদের বাসগুলো এত বেশী স্পেইসাস হয়না, এইটাই হল, সমস্যা ।

  11. সামিরা বলেছেনঃ

    দারুণ টপিক নিয়ে লিখছিস! অনেকের মত আমি নিজেও জানতাম না বাইরের এত দেশে উইমেন অনলি বাস সার্ভিস আছে।

    আজকে একটা দুঃখজনক আর্টিক্‌ল পড়লাম, আমেরিকাতেও কত গ্রোপিং হয় সেটা নিয়ে লেখা। আমি আরও ভাবতাম আমাদের মত আধা-সভ্য দেশেরই শুধু এই সমস্যা।

    ফেবুতে একজন এই লেখা শেয়ার করায় যেই মন্তব্য করেছিলাম, এখানেও সেটা কোট করি। নতুন পাবলিক বাসে উঠতে শুরু করার পর প্রায় সব মেয়েরই তোর মত রিঅ্যাকশন হয়, তুই যেসব কথা লিখলি সেইসব মনে হয়। ফাইনালি অবস্থার কোন পরিবর্তন না দেখতে পেয়ে আপনাতেই ডিফেন্স মেকানিজ্‌ম গড়ে ওঠে! বলেছিলাম তো তোকে এইগুলা নিয়ে আগেও। 🙁

    • সুবর্ণরেখা বলেছেনঃ

      হওয়ার ই কথা । রেইপ এর হার এত মারাত্মক হইতে পারলে, গ্রোপিং ও হওয়ার কথা ।
      ফাইনালি কোন পরিবর্তন না পেয়ে আমার মনে হয়, আরও একটা মারাত্মক জিনিস হয় । সেইটা হল, ইউজড টু হয়ে যাওয়া । অর্থাৎ প্রথম প্রথম যেগুলাতে খুব দুঃখ লাগত, পরে মনে হয়, এইটা তো নরমাল । এত খারাপ একটা ব্যাপারে ইউজড টু হয়ে যাওয়াটা কতটা দুঃখজনক ! 🙁

  12. ম্যানীফোল্ড বলেছেনঃ

    পুরোটা সত্য এবং বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে অত্যন্ত বাস্তবসম্মত একটা প্রস্তাব। বিষয়টা দেশের নীতি নির্ধারক মহল বরাবর পেশ করে তারা এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিলে খুবই ভালো হতো।

    অসাধারণ একটা পোস্ট আপু। পাঁচ তারকা সম্বলিত লাইক :beshikhushi:

    • সুবর্ণরেখা বলেছেনঃ

      অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, এত সুন্দর করে অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্য । :love:
      দেশের নীতি নির্ধারকদের কাছে কেউ নিশ্চয়ই একদিন পৌঁছে দেবে আমাদের দাবী, এই আশা করেই লিখেছি । ইনশাআল্লাহ, কোন একদিন এই পদক্ষেপ হয়ত নেয়া হবে আমাদের আসলেই । 🙂

  13. রাজু বলেছেনঃ

    বিষয়াটা বাস্তব সময় উপযোগী হলেও, আমার কাছে মনে হয় আমাদের দেশের নারীবাদী সংগঠন গুলি চায় না দেশে এই রকম বাস সার্ভিস চালু হোক। কেননা তারা এই ধরনের ইস্যু জিইয়ে রাখতে চায়, আর এর থেখে ফায়দা নিতে চায়। কেননা এই সব নারী নেত্রীদের তো আর এই সমস্যার সম্মুক্ষিন হতে হয় না।

    • সুবর্ণরেখা বলেছেনঃ

      নারী নেতাদের যাদের কথা বলছেন আপনি, তাদের হাতেই সর্বময় ক্ষমতা থাকেনা । উপরের কমেন্টগুলো পরলে দেখতে পাবেন, আমাদের দেশে অনেক জায়গাতেই এই রকম বাস সার্ভিস চালু হয়েছিল । আমরা একটু চেষ্টা করলেই হয়ত পারি !

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।