স্বার্থপর

অভিশপ্ত! পুরাই অভিশপ্ত সময় ছিল সেটি!!

বছর দেড়েক আগে কোন এক অভিশপ্ত বিকেলে আবিষ্কার করেছিলাম মাননীয় শিক্ষা বোর্ড আমাকে স্বর্ণ-বালক হিসেবে মনোনয়ন দেয়নি, এইচ.এস.সিতে অতি আরাধ্য গোল্ডেন আমি পাইনি। অতিশয় উচ্চাভিলাষী এই আমার জন্য সেটি ছিল জীবনের প্রথম বড়সড় ধাক্কা।

দ্বিতীয় ধাক্কাটি এল কয়েক মাসের মধ্যেই, যখন আরেক অভিশপ্ত বিকেলে বন্ধু অনুজ জানালো আমার স্মৃতিশক্তির উপর মাননীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যথেষ্ট আস্থা নেই, আমাকে চিকিৎসা-পেশা বরণ করে নেবার অনুমতি দেয়া হয়নি।

দুঃখ, দুঃখ। ফেসবুকে স্ট্যাটাস মারলাম, “মনে আর সুর নেই।”

তবে স্রষ্টার অশেষ করুণা, যেটা মনেপ্রাণে চেয়েছি, সেটার দেখা মিলেই গেল–স্রষ্টা আমার জন্য প্রকৌশল পেশা নির্ধারণ করে রেখেছিলেন বলেই প্রতীয়মান হল।

আনন্দ, আনন্দ। ফেসবুকে স্ট্যাটাস মারলাম, “আলহামদুলিল্লাহ।”

যথেষ্ট হ্যাপি একটা এন্ডিং, ঘটনাটা এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু বাধ সাধল এক অবাধ্য পুত্রের কনফিউজড অপরাধবোধ।

চিকিৎসা পেশা অতি মহৎ, সন্দেহ নাই। অসুখে ধরলে বুঝা যায় কত গমে কত আটা, কত ডাক্তারে কত কেরামতি। যথারীতি তাঁদের সামাজিক মর্যাদাও সবার উপর, এবং অধিকাংশ পিতামাতাই নিজ সন্তানকে এই পেশায় দেখতে পেলে ব্যাপকভাবে পুলকিত হন।

তো আমার পিতামাতাও আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা পরিবারে চিকিৎসক পেলেই খুশি হন। কিন্তু অতি স্বার্থপর এই আমি মেডিকেল কোচিংটা ডাম্প করেই বসলাম। তখনও ধারণা ছিল হয়তো ভাল যেকোনো লাইনে ঢুকতে পারলেই তাঁদের চিকিৎসক-না-পাবার-বেদনা লাঘব হবে।

আফসুস। আমি বাবা-মায়ের মনের ভাষা বুঝতে নিদারুণ ব্যর্থ।

এক বছর কেটে গেছে, আজ আবারও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হল। বাসার কেউ আমাকে কিছু বলেনি, তবু অনেক দেরিতে হলেও এখন আমি সবার মনের কথা ঠিকই বুঝতে পারি।

কত ছেলেমেয়ে আজ বাবামায়ের মনের আশা পূরণ করবে।

. . .স্রষ্টা সবার জন্য কল্যাণ নির্ধারণ করুন!!

রাইয়্যান সম্পর্কে

'এক্সট্রোভার্ট' শব্দটা আমার সঙ্গে বেশ মানিয়ে যায়-- পছন্দ করি নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে। একজন ভোজন বেরসিক; খেলাধুলায় Own Goal ও Wide Ball এক্সপার্ট। তড়িৎ প্রকৌশলের ছাত্র, স্বপ্ন দেখি জীবনটাকে অর্থবহভাবে কাজে লাগানোর।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে হাবিজাবি-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

22 Responses to স্বার্থপর

  1. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    “অসুখে ধরলে বুঝা যায় কত গমে কত আটা, কত ডাক্তারে কত কেরামতি।” 😆

    হা হা, আমাকে এখনো বলে ডাক্তার তো হইলা না। 😛

    সরবে স্বাগতম। 😀 :welcome:

  2. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    হেহে!!! বাবা মায়ের এই স্বপ্ন গুলা নিয়ে আমার নিজের অনেক অভিযোগ (অনুযোগ হবে মনে হয়!) আছে! (আমি নিজেও বিয়ের আগেই স্বপ্ন দেখা শুরু করে দিছি আমার মেয়ে জেনেটীক ইঞ্জিনিয়ার হবে!! :cancer: )
    আমার ক্ষেত্রেও সেইম! তারাও সেই রকম চাইছিলেন! কিন্তু… :transforming:

    সরবে স্বাগতম! :welcome:

    তোমার লেখার হাত কিন্তু চমৎকার (ডাক্তারের কেরামতি 😛 ), গলা খুলে সরব হও!

    • রাইয়্যান বলেছেনঃ

      জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার!! :penguindance:

      আফসোসের গল্প শুনবেন? আমাদের ব্যাচে বুয়েটে থার্ড হল যে ছেলেটা, তারও মনেপ্রাণে স্বপ্ন ছিল জেনেটিকে পড়ার। ঢাবিতে প্লেস করে সেই অধিকারও অর্জন করে নিয়েছিল সে। কিন্তু বাধ সাধল ওর বাবা-মা, কোনভাবেই ছেলেকে বুয়েট ছেড়ে ঢাবিতে পড়তে দিতে উনারা রাজি হলেন না। হ্যাঁ, ওর মত মেধাবী ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং লাইনে ইনশাল্লাহ অনেক অনেক ভাল করবে, কিন্তু কে জানে আমরা হয়তো একটা নোবেল প্রাইজ মিস করলাম :wallbash:

  3. প্রজ্ঞা বলেছেনঃ

    ব্লগিং জগতে স্বাগতম ভাইয়া! :welcome:

    মনের হারানো সুর খুঁজে পেয়েছো তো? তাতেই হবে!
    সেই সুর আবার সরব স্বরে বেজে উঠুক তবে! :guiter:

    • রাইয়্যান বলেছেনঃ

      সুরগুলো তার ক্ষণে ক্ষণে বার হারিয়ে যেতে চায়
      আঁধার রাজ্যের জমকালো ভোর দিশা দেখিয়ে যায়!

      (btw, এখানে কমেন্টে লাইক মারা যায় না?? আপুর কমেন্টটায় একটা মারতাম!) :penguindance:

      থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু!!! :yahooo:

  4. অচেনা রাজ্যের রাজা বলেছেনঃ

    আমারে কেউ স্বাগতম জানাইলো না :wallbash: :wallbash: :wallbash:

  5. অচেনা রাজ্যের রাজা বলেছেনঃ

    @বোহেমিয়ান : নতুন পোষ্টটা শেষ হচ্ছে না….কয়েকদিনের মধ্যেই আশা করি শেষ হয়ে যাবে। আরেকটা পোষ্ট ছিল কিন্তু ওটা আপাতত দিচ্ছি না।

    @রাইয়্যানঃ একজন স্বাগতম জানাইছে রে….. :yahooo: :yahooo: :yahooo: :yahooo:

  6. কৃষ্ণচূড়া বলেছেনঃ

    সরবে স্বাগতম :welcome:

    ছোট্ট লেখা, কিন্তু অনেক কথা বলে দিসে। লাইক লাইক।

  7. ভাবের পাগল বলেছেনঃ

    দুঃখে মরিয়া যাইতে ইচ্ছা করিতেছে আপনার এই লেখাটি পড়ে।

    প্রথমে কম্পিউটার ইন্জ্ঞিনিয়ারিং অতঃপর জেনেটিক ইন্জ্ঞিনিয়ারিং এই দুই আমাকে ছাড়িতে হলো আমার পিতার কারণে।

    বর্তমানে মেডিকেলে পড়িয়া বলি, মেডিকেলে চান্স না পাইলে এক দিনের দুঃখ আর চান্স পাইলে সারাজীবনের দুঃখ। :brokenheart:

  8. অনাবিল বলেছেনঃ

    স্বাগতম সরবে!
    😀
    ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার না হলে আমাদের দেশে মেধাবী বলে প্রমাণ হওয়া কষ্ট….. 🙁
    বাবা-মা এর কথা বাদ-ই দিলাম—বন্ধুরা পর্যন্ত বলে– ডাক্তারী পড়ে, সুপার স্টুডেন্ট।ইঞ্জিনিয়ানরিং পড়ে-সুপার ব্রিলিয়ান্ট।
    আর কারো যেন মেধা নেই…. 🙁
    “…..যথারীতি তাঁদের সামাজিক মর্যাদাও সবার উপর, এবং অধিকাংশ পিতামাতাই নিজ সন্তানকে এই পেশায় দেখতে পেলে ব্যাপকভাবে পুলকিত হন।”
    আমাদের সমাজে নানা সমস্যার কথা আমরা বলি, সমস্যা’র শুরুটাও কিন্তু আমাদের-ই হাতে, সামাজিক বিভাজনে…..:(

  9. রাইয়্যান বলেছেনঃ

    অতি সত্য 🙁

  10. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    সমস্যাটা তখনই হয় যখন ডাক্তার তৈরি করবার জন্য বাবা-মায়ের প্রচেষ্টার কোন অন্ত না থাকলেও প্রশাসনিক চেষ্টার ঘাটতি অঢেলই থাকে। যেকয়টা ছেলেমেয়ে তাও পড়তে চায়, সরকারি বাদে বেসরকারিতে যাবার কোন সুযোগই থাকে না।
    আর বাবা-মায়েরও সাধ্য না থাকায়, ছেলে-মেয়ে অন্য কোন বিষয়ে সাফল্য দেখালেও তার রেহাই নেই। ডাক্তার বানাতে না পারার দুঃখ তাদের কোনদিনই ঘোচে না! (আমি ব্যতিক্রম, আমার বাবা-মা দুজনেই আমাকে খুব ভাল বোঝেন 😀 )

    আসল কথা বলতেই ভুলে গেছি! স্বাগতম। :welcome:

  11. কিনাদি বলেছেনঃ

    :welcome:

    লেখা দারুণ লাগলো। হাত খুলে লেখে যান 🙂

  12. মাসরুর বলেছেনঃ

    এ ব্যাপারটা নিয়ে আমারও অনেক অভিযোগ আছে…

    খুবই সুন্দর লেখা. অল্প কোথায় দারুণভাবে ব্যাপারটি ফুটিয়ে তোলার জন্য সাধুবাদ জানাই… :dhisya:

    আর সরবে স্বাগতম…
    :welcome:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।