যুগের সাথে ব্যাকরণের তাল – পর্ব ১ [লঘু মেজাজের পোস্ট, জ্ঞানী সাবধান]

সাদাকালো সিনেমার সেই যুগ। দূরদেশ যাত্রাক্ষণে প্রিয়তমের প্রতিজ্ঞা, হপ্তায় হপ্তায় লিখবে চিঠি প্রিয়তমাকে, পারলে প্রতিদিন! নায়কের পত্রের প্রতীক্ষায় নায়িকার দিবানিশি কাটে বিরহে।

চিঠি নিয়ে সে কী রোমান্টিকতা! প্রবাস হইতে বর তাহার সুদীর্ঘ প্রেমময় পত্রের সমাপ্তিকালে একখানি বৃত্ত আঁকিয়া কহে, “আমি এইখানে চুমু খাইয়াছি, তুমিও খাইও”, তাহা পড়িয়া কনের মুখ রক্তিম হইয়া উঠে লজ্জায়! সেই যুগে নাই মুঠোফোন নাই ফেসবুক– দারোয়ানকে দুটাকা ঘুষ দিয়ে, গৃহকর্তাকে লুকিয়ে, জীবন বাজি রেখে বাড়ির অপরূপা মেজ কন্যাকে প্রেমপত্র প্রেরণের অ্যাডভেঞ্চার কী জিনিস তা আমরা কেবল কল্পনাই করতে পারি!  :love:

স্বাভাবিকভাবেই চিঠিকে ব্যাকরণবিদগণ স্বীকৃতি দিলেন মনের ভাব প্রকাশের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে। বইয়ে চিঠি লিখার স্কিল প্রসঙ্গে আলোচনা এল; পরীক্ষায় লিখতে বলা হল  চিঠি, “তোমার ছোট ভাইকে পড়াশোনায় অধিকতর মনোযোগী হইবার উপদেশ দিয়া একখানি পত্র লিখ।” পূর্ণমান দশ।

যুগ এগিয়ে গেল, হায় ব্যাকরণ আগালো না 🙁 আর সবার কথা বাদ দিন, আপনি নিজেই সর্বশেষ কবে কাউকে একটি ব্যক্তিগত চিঠি লিখেছিলেন বলুন তো দেখি?

চিঠির স্থলে এখন যুগ এসএমএস আর চ্যাটের; দরখাস্তের পাশাপাশি অবস্থান ইমেইলের। এই যুগে এসএমএসের ‘shrtct’ মেজাজে ছেলেপুলে মনের ভাব প্রকাশ করে- vowel এর ব্যবহার যেখানে নিতান্তই ‘ক্ষ্যাত’ বলে গণ্য। বেচারা আম্মু তাই এসএমএস পড়তে গিয়ে দাঁত ভেঙ্গে ফেলে 🙁

দাবি: ব্যাকরণে মনের ভাব প্রকাশের আধুনিক মাধ্যমগুলোর স্বীকৃতি চাই। “তোমার কাজিনকে ছাগু পেইজে লাইক দেয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে একখানি চ্যাট বার্তা লিখ।” পূর্নমান পৌনে আড়াই। Seems legit.

আগামী পর্বে স্মাইলি প্রসঙ্গে দাবি উত্থাপিত হইবে।

রাইয়্যান সম্পর্কে

'এক্সট্রোভার্ট' শব্দটা আমার সঙ্গে বেশ মানিয়ে যায়-- পছন্দ করি নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে। একজন ভোজন বেরসিক; খেলাধুলায় Own Goal ও Wide Ball এক্সপার্ট। তড়িৎ প্রকৌশলের ছাত্র, স্বপ্ন দেখি জীবনটাকে অর্থবহভাবে কাজে লাগানোর।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে পাগলামি, রম্য, হাবিজাবি-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

13 Responses to যুগের সাথে ব্যাকরণের তাল – পর্ব ১ [লঘু মেজাজের পোস্ট, জ্ঞানী সাবধান]

  1. শাহরিয়ার বলেছেনঃ

    হি হি হি… মজা পাইছি!! =)) =)) 🙄

  2. মাধবীলতা বলেছেনঃ

    আহ চিঠি !! মনে পড়ে গেল ছেলেবেলায় নানুবাড়ি থেকে খালা-মামা বা নানুভাইয়ের চিঠিটা পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকতাম। পোস্টম্যানকে দেখলেই উত্তেজনা কাজ করত, আর আমাদের বাসায় কলিংবেল টিপে বসলে তো কথাই নেই। আম্মু পিয়নের কাছ থেকে চিঠিটা নিয়ে আসত, আর যেন উৎসবের ধুম পড়ে যেত। আমি বলতাম, আম্মু আমার চিঠি কই? আমার চিঠি কই? আম্মু বলত, এই যে তোমার খালামণি তোমার জন্য ছোট্ট কাগজে ছবি এঁকে চিঠি পাঠিয়েছে। আর সেইটা নিয়ে তো আমি খুশিতে বাকবাকুম। চিঠির শেষে লেখা থাকত, তাড়াতাড়ি উত্তর দিও আম্মু। অনেক আদর রইল। আমিও উত্তর লিখতে বসে যেতাম, খালা-মামা, নানা সবার জন্য একটি করে চিঠি লিখতাম, সাথে রঙ করা ছবি এঁকে দিতাম…

    দিনগুলো চোখের সামনে ভাসে। পৃথিবীটা বড় বেশি নিরাসক্ত হয়ে গেছে, মানুষগুলোও বদলে গেছে অনেক।

    সরি, পুরাই নস্টালজিক হয়ে গেলাম। 😳

    • রাইয়্যান বলেছেনঃ

      আমি বুঝতে পারি! আমারও ছেলেবেলা কেটেছে প্রবাসে, দেশ থেকে আসা একেকটা চিঠি ছিল আমাদের পুরো পরিবারের জন্য আনন্দের খনি! এখন স্কাইপের যুগ, যেকোন মুহূর্তে কথা সেরে নেয়া যায় ঠিক, কিন্তু একটি চিঠির প্রতিটি শব্দে যে পরিমাণ ভালোবাসা মিশে থাকত তার হদিস আর খুঁজে পাওয়া যাবে না! 🙁

  3. সুবর্ণরেখা বলেছেনঃ

    ছোটবেলা প্রতি সপ্তাহে আব্বুকে চিঠি লিখতাম । বোনদের কার হাতের লিখা সুন্দর হত, কার লেখা বেশী আব্বুর পছন্দ হবে, এগুলা নিয়ে তুমুল প্রতিযোগিতা থাকতো । আর আব্বুও যে কী আদর মাখা ভাষায় আমাদেরকে লিখত ! 😐
    এখন তো সেই আদর স্কাইপ এ আর ফোনে টেরই পাওয়া যায়না । 🙁

  4. শারমিন বলেছেনঃ

    বেশ মজার তো
    :happy:

  5. অচল পথিক বলেছেনঃ

    হুম। আর মাঝেমাঝে প্রিয়জনকে লিখা চিঠি তার বাবার হাতে পৌঁছাতো। লাইফ ওয়াজ ফুল অব সারপ্রাইজেস! ! 😯

  6. সামিরা বলেছেনঃ

    চিঠি এত ভালো লাগতো! 🙁

  7. মিজানুর রহমান পলাশ বলেছেনঃ

    তোমার মাথায় এই জিনিস আসলো কোত্থেকে? সুন্দর লেখা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।