একজন দার্শনিকে বলেছেন, “ নদী কখনও এক জায়গা দিয়ে দুইবার প্রবাহিত হয় না”। আরেকজন দার্শনিক বলেছেন, জীবনটাই একটা নদী! এক কথায় বলা যায় , আমাদের “জীবন” এর রূপক হিসেবে “নদী” শব্দটাই সবচেয়ে উপযুক্ত । তাই সবসময় মনে রাখা উচিত-
১/ আমাদের সবসময়ই এমন কিছু কাজ করতে হয়, যা আমাদের জন্য “ফার্স্ট টাইম”। যখন আমরা আমাদের উৎস ( জন্ম) থেকে পরিণতির ( মৃত্যু ) দিকে আগাই, তখন আমাদের চলার পথটা সবসময়ই নতুন। জীবনের ঘটনাগুলোর মুখোমুখি হওয়া উচিত আনন্দের সাথে, ভয়ের সাথে না। নিয়তিকে এড়ানো যায় না, তাই তাকে ভয় পেয়ে লাভ নেই। নদীর প্রবাহ কখনো বন্ধ হয় না।
২/ উপত্যকায় ধীরে চলতে হয়। যখন আমাদের চারপাশের সবকিছু আমাদের অনুকূলে থাকে, তখন নদীর প্রবাহ থাকে শান্ত, আমরা পরিপূর্ণ হই, আরও সতস্ফুর্ত হই।
৩/ নদীর তীর ঘেঁষে সবসময়ই উর্বর জমি থাকে। ফসল শুধু ওই জায়গাগুলাতেই জন্মে, যেখানে পানি পাওয়া যায় । সেরকমই আমরা! তৃষ্ণার্তকে দান করার মত সম্পদ সবসময়ই আমরা আমাদের মাঝে ধারণ করি।
৪/ প্রবাহের পথে পাথর সবসময় এড়িয়ে চলা উচিত । পানি অবশ্যই গ্রানাইট থেকে শক্তিশালী , তবুও পানি পাথরের মধ্য দিয়ে চলতে কিছুটা সময় লাগে। কখনও নিজেকে শক্ত বাধার সামনে দাড় করানো উচিত না অথবা অযথা বাধার মোকাবেলা করতে যাওয়া ঠিক না- কারণ এগুলা আমাদের শক্তির অপচয়। বরং প্রতিকূলতার মাঝে নিজের পথ খুঁজে সামনে এগিয়ে যাওয়াটাই সবচেয়ে ভাল উপায়।
৫/ প্রতিকূল পরিবেশে দরকার ধৈর্য্য। হঠাতই নদীর চলার পথে বাধা আসে , নদী আর আগের মত আনন্দের সাথে চলতে পারে না। এমন অবস্থায় উচিত সাহায্যের জন্য “সময়”এর উপর নির্ভর করা। কারণ সময় সব খাদকেই পূর্ণ করে, তখন নদী আবার আগের মত সামনে এগিয়ে যেতে পারে।
৬/ আমরা সবাই এক। আমাদের আত্তার জন্ম হয়েছিল এমন এক জায়গায়, যে জায়গা ছিল আমাদের জন্য উপযুক্ত । সে জায়গা আমাদের মাঝে সবসময়ই শক্তির যোগান দিবে, যাতে যখন আমাদের সামনে বাধা আসবে অথবা আমাদের জীবনে হতাশা নেমে আসবে, তখন আমরা ধৈর্য্য আর শক্তি নিয়ে সামনে আগাতে পারি। জীবনে চলার শুরুতে আমরা নাজুক থাকি; ছোট একটা পাতাও সেই নদীর প্রবাহ বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু যখন আমরা সেই মহান সত্তাকে বিশ্বাস করতে থাকি, যেই সত্তা আমাদেরকে প্রান দিয়েছেন; তাঁর উপর আস্থা স্থাপন করি, তখন একটু একটু করে আমরা জীবনে চলার জন্য সব রকম শক্তি অর্জন করি।
৭/ যদিও আমরা একই সত্তা থেকে এসেছি, তবুও আমরা ভিন্ন ভিন্ন রকমের। কখনো কখনো এমন মুহূর্ত আসে , যখন আমরা নিজেদের হারিয়ে ফেলি। বাইবেলে বলা হয়েছে- “ প্রতিটা নদীই সাগরের দিকে প্রবাহিত হয়”। একা একা নিজের মত নীরবতায় থাকাটাকে অনেক রোমান্টিকে মনে হলেও বাস্তবে তা সম্ভব না। অন্য নদীর স্রোতের মুখোমুখি আমাদের হতেই হবে, তাদের সাথে মিসতেই হবে- যখন আমরা এই ব্যাপারটাকে মেনে নেই, তখন আমরা ধীরে ধীরে বুঝতে পারি যে আমরা আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠছি । তখন আমরা আমাদের জীবনের বাধাগুলোকে আরো সহজে অতিক্রম করতে পারি, আমাদের জীবনের খাদ্গুলো পূর্ণ হতে তখন আগের চেয়ে কম সময় নেয়।
৮/ নদী যেমন গাছের পাতা, নৌকাকে প্রবাহিত করে, তেমনি আমরাও জ্ঞান, মহৎ চিন্তা চেতনা, ধারণার বাহক। আমাদের স্রোত যেন সবসময়ই উদার, উন্মুক্ত থাকে; আমাদের প্রবাহ যাতে সবকিছুকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে; যাদের আমাদের সাহায্য দরকার, আমরা যাতে তাদের সামনে এগিয়ে নিতে পারি।
৯/ আমরা নিজেরাই অনুপ্রেরণার উৎস । তাই ব্রাজিলিয়ান কবি, ম্যানুয়েল ব্যান্ডেইরার মত করে বলা যায় –
““To be like a river that flows
silent through the night,
not fearing the darkness and
reflecting any stars high in the sky.
And if the sky is filled with clouds,
the clouds are water like the river, so
without remorse reflect them too”
# পাওলো কোয়েলহো আমার খুবই পছন্দের লেখক, যদিও উনার লেখা খুব একটা পড়া হয় নাই এখনও । Alchemist পড়েই ওনার লেখার ভক্ত হয়ে গিয়েছি । সে কারণেই ওনার কিছু ছোট গল্প পড়ে দেখলাম। উপরের লেখাটা ওনার “ Nine steps to transform yourself into a river” এর অনুবাদ।
– রাত জাগা তারা
ভালো লাগলো। অনুবাদ একটু কঠিন অবশ্য, বুঝতে হলে একাধিকবার পড়তে হয়। আরেকটু সহজ করতে পারলে আরও ভালো লাগবে। কোয়েলহোর লেখা আমিও অনুবাদ করি মাঝেসাঝে, অত প্রিয় লেখক না যদিও!
আপু, আমার নিজেরও মনে হয়েছে অনুবাদটা আরেকটু সহজ ভাষায় লিখতে পারলে ভাল হত। কিন্তু লেখার সময় মাথায় সহজ শব্দগুলা আসতে চাচ্ছিল না! 🙁 এর পর থেকে আরও সহজ করে লেখার ট্রাই করব 🙂
ইংরেজি থেকে বাংলা করার পর বাংলাটা আবার বাংলা করার চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। আমি এভাবে করলে দেখি একটু সহজ হয়। 🙂
সরব এ স্বাগতম।
কোয়েলহোকে আধুনিক ঈশপ মনে হয়।
নিয়মিত করতে থাকলে ভালো হবেই। উপরে সরব সামিরা তো কমেন্ট দিয়েছেই। (আমাদের অনুবাদ স্বর!)
তবে অনুবাদ করা আসলেই কঠিন। (অন্তত আমার কাছে তো বটেই)
ধন্যবাদ ভাইয়া।:) সামনে অবশ্যই আরও ভালভাবে অনুবাদ করার চেষ্টা করব।
আপু ইংরেজি থেকে বাংলা করার পর বাংলাটা আবার বাংলা করার সিস্টেমটা অনেক ভাল মনে হচ্ছে । 🙂
ভাল লেগেছে
ধন্যবাদ ভাইয়া 🙂
:welcome:
ভালো লেগেছে
আশা করি নিয়মিত লিখবেন 😀
ধন্যবাদ আপুনি 🙂
ইনশাল্লাহ, নিয়মিত লেখার চেষ্টা করব ।